একটি জীবন। বহুধা বিভক্ত সত্তা।
কোন সত্তা যে কোনটিকে কখন ছাপিয়ে ওঠে বুঝে ওঠা মুশকিল। ব্যক্তি সুশান্ত, ব্যবসায়ী
সুশান্ত নাকি কবি সুশান্ত ? অর্থাগমের পথটি প্রশস্ত না হলে পুরুষ-সত্তা পূর্ণ
বিকশিত হয় না। অনাকাঙ্ক্ষিত মনে হলেও বাস্তবের পৃথিবীতে এটাই অমোঘ সত্য। সেই অর্থে
সুশান্ত ভট্টাচার্য এক সফল ব্যবসায়ী নিঃসন্দেহে কিন্তু তাঁর এই সত্তাটি কবেই চাপা
পড়ে গেছে অপর দুই সত্তার আড়ালে। জীবনের পথে তিনি এগিয়েছেন ব্যক্তিসত্তা ও কবি
সত্তা সঙ্গে নিয়ে। আর এখানেই মুখ্য ও গৌণ সত্তার ধারণাটি সামনে এসে পড়ে। ব্যক্তি
সুশান্তর সারল্য, অকপট আন্তরিকতা, সত্যের সাহচর্য এসব কিছুও হয়তো চাপা পড়ে থাকত
সীমিত পরিসরেই যদি না তাঁর কবিসত্তা তাঁকে বরাক, ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা পেরিয়ে নিয়ে
না যেত সাত সমুদ্দুর পেরিয়ে। এই যে তাঁর ব্যাপ্তি, স্থানিক পর্যায় থেকে শুরু করে
দেশে বিদেশে তাঁর জনপ্রিয়তা এর মূলেই কিন্তু তাঁর অকপট কবিসত্তা।
কবিতায় ছন্দ নিয়ে যুদ্ধ করার চাইতে সহজ কথায় সরাসরি পৌঁছে যেতেন পাঠকের অন্তরে। সুখ, দুঃখ আদি জাগতিক যত ভাবনা সেসব কিছুই অকপটে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন কবিতায়। কেউ তাঁর কাছে কবিতা চেয়ে বিমুখ হয়নি কোনোদিন। বৌগোলিক সীমা পেরিয়ে তাই অগুনতি কবিতা তাঁর জীবন্ত হয়ে আছে অসংখ্য পত্র পত্রিকায়। অথচ নিজে থেকে কবিতা পাঠাতেন না কখনও। কেউ চাইলে তবেই দিতেন। বলতেন - ‘নিজে যা লিখি নিজেই জানি না তা কতটুকু কবিতা হয়ে ওঠে। তাই নিজে থেকে পাঠাই না কোথাও পাছে প্রত্যাখ্যাত হয়। এর চাইতে ভালো আমার কবিতাকে ভালোবেসে কেউ চাইলে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া।’ কতটুকু কবিতা হয়ে ওঠে তাঁর কবিতা তা কোনও বোদ্ধা নন, নির্ণয় করেছেন গড়পড়তা পাঠক, যাঁরা ভালোবেসেই ডেকে নিতেন তাঁকে একের পর এক কবিতার আসরে। আর সেখানেই বাজিমাত করে দিতেন কবি সুশান্ত। তাঁর আন্তরিকতা আর কথা ও কবিতার ছোঁয়ায় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন শ্রোতা দর্শকদের। এক্ষেত্রে তাঁর দেবোপম চেহারাটিও হয়ে উঠত সোনায় সোহাগা।
কোভিড কালে নিজের সৃষ্ট ফেসবুক গ্রুপ ‘সুচেতনা’য় লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। সহজেই মন জয় করে নিয়েছেন অগণিত কবি সাহিত্যিক শিল্পীবৃন্দ ও আপামর জনগণের।
বাইরে চরম ফুর্তিবাজ, আড্ডাবাজ ধরনের মানুষ হলেও অন্তরে ধরে রাখতেন এক বিশাল কোমল হৃদয়। দুঃস্থ, বিপদাপন্ন মানুষের আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসতে ভাবতেন না এতটুকু। এই সহৃদয় সত্তার, এই অকপট স্বীকারোক্তির পরিচয় তিনি রেখে গেছেন অজস্র কবিতায়। অথচ সেই অর্থে গ্রন্থায়িত করে যাননি কোনও এক রহস্যময় কারণে। সাকুল্যে তিনটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। কবিতার বই ‘কিছু ছড়া - কিছু কবিতা’, ‘বরাক সুরমার তীরে তীরে’, Blue Horizon. সম্পাদনা করেছেন ‘বৃষ্টিকথা - বরাকের কবিতা সংকলন’। সম্পাদনা সহযোগী হিসেবে ছিলেন বৃষ্টিকথা -‘বরাকের ছোটগল্প সংকলন’-এরও। ইংরেজি কবিতার হাত ধরে আন্তর্জাতিক কবিতা মঞ্চে তাঁর সদর্প উপস্থিতি লক্ষণীয়। বাংলা কবিতার ক্ষেত্রেও প্রচলিত ছন্দ বা ছকের ধার না ধেরে অনর্গল লিখে যেতেন কবিতা। এবং প্রতিটি কবিতাই কোনও না কোনোভাবে কবিতা হয়ে উঠত। তাঁর কবিতায় মূর্ত হয়ে উঠত প্রেম, ভালোবাসা, প্রকৃতি ও বাস্তব। প্রেম বিষয়ক কবিতাগুলো বাস্তব ভিত্তিতে হয়ে উঠত ব্যতিক্রমী -
প্রিয়তমা তুমি এসো
প্রেমের শিহরণ সঙ্গে নিয়ে
শ্রাবণের বৃষ্টিধারার মতো
আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজব বলে।
এসো হঠাৎ করে কোনো মেঘলা বিকেলে...
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে...। (কবিতা - শ্রাবণ বৃষ্টিধারা)।
দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্রপত্রিকায় ও সংকলনে স্থান পেয়েছে তার বহু কবিতা, পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা। কবিতা-অন্ত প্রাণ এই মানুষটি কবিতাকে লিখা একটি কবিতায় এভাবেই লিখছেন -
তুমি আমার প্রতিদিনের সাধনা
তোমাকে স্বপ্নে পাই - তোমাকে বাস্তবে পাই
তোমাকে ভালোবেসে জীবন কাটাই, কবিতা...
আমার চেতনায় উন্মাদনা ছড়াও তুমি
শব্দমালার উদ্দাম স্রোতের তরঙ্গে
আমি বিবশ হই; তোমার কাছে বিস্ময়ে
মননের গভীর থেকে তুমি উঠে আস
শুধু প্রেম নিয়ে
নতুন আকাঙ্ক্ষা জাগে হৃদয়ে আমার
কবিতা শুধু তোমার জন্যে...। (কবিতা - আমি তোমার জন্যে বেঁচে আছি)।
তাঁর বিখ্যাত ‘ত্রিপদী’ শীর্ষক কবিতায় কবি লিখছেন -
কবিতা আমার দিনলিপি
আমার কণ্ঠস্বর - আমার আত্মমন্থন
আমার জীবন কথা - আমার নির্মাণ।...
লিখেছেন ছন্দহীন কবিতা বিষয়ক দীর্ঘ প্রবন্ধও (‘রবীন্দ্রনাথ ও গদ্য কবিতা - পুনশ্চ কাব্যগ্রন্থের একটি আলোচনা’, প্রকাশিত সুচেতনা পত্রিকার সর্বশেষ সংখ্যা)। ‘সুচেতনা’ ফেসবুক গ্রুপের কর্ণধার হয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যাওয়া সুশান্ত ভট্টাচার্য নিজেই সম্পাদনা করতেন ‘সুচেতনা’ নামের লিটল ম্যাগাজিন। আরেকটি সংখ্যা প্রকাশের সব কাজ শেষ করে এনেছিলেন সম্প্রতি। আরেকটি কবিতার বইয়ের কাজও চলছিল। ‘শেষ রাত্রি’, ‘দ্বিরালাপ’ আদি কয়েকটি ভিন্ন আঙ্গিকের গল্পও তিনি লিখেছেন।
জীবন সম্পর্কে কবি ছিলেন এক বিশাল মনস্তত্ত্বের অধিকারী। বহু কথায় উঠে এসেছে জীবন সম্পর্কিত নানা ঘাত প্রতিঘাতের পঙ্ক্তি। কোথা থেকে যেন এক দুঃখবোধ মূর্ত হয়ে উঠত তাঁর নানা কবিতায়। অথচ তার আঁচ খুঁজে পাওয়া যেত না বাইরে। এই রহস্যেরই আবর্তে কোথাও তিনি লিখছেন -
সেই রূপকথা চলে গেছে
রাঙা পথ মাড়িয়ে......
এখন ধূসর জীবনের চারপাশে
শুধু মরীচিকা ছড়ানো ...।। (কবিতা - ঠাকুরমার গল্প)।
আবার কোথাও -
দুঃখের জলকণা নিয়ে বৃষ্টি ঝরে
আমার ভুবনে।
রাগ হয় অভিমান হয় দুঃখ হয়......
কোথায় যাব আমি - কোন সুদূরে ?...
শরীরের ভেতরে অনেক অসুখ বিসুখ
মন ভালো নেই আমার ...।। (কবিতা - মন ভালো নেই আমার)।
পাঁচ পাঁচটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর এই কবির সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির ধারক, বাহক, পূজারি হয়ে হেসে খেলে কাটিয়ে দেওয়া এই জীবনদীপ যে এভাবে আচমকা নির্বাপিত হয়ে যাবে তা কল্পনার অগোচরে ছিল তাঁর গুণমুগ্ধদের। আজ তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে তাই শোকস্তব্ধ এই কবিতাবিশ্বের পদাতিকবৃন্দ। খোলামেলা প্রাণবন্ত এই মানুষটি, এই সাম্যের কবি, প্রেমের কবি তাঁর যাবতীয় কবিতার সম্ভার নিয়ে এভাবে শেষ কথা না বলে চলে গেলেন পরপারে এই বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে, এই কষ্টের ভার থেকে পরিত্রাণ পেতে তাই আজ গঙ্গাজলেই হোক গঙ্গাপূজা -
...... জানি, এই স্বপ্নের পৃথিবী
এই কল্পনার পৃথিবী -
সোনালি ভোর নিয়ে আসবে
আরো বহু শতাব্দী পরে
আরো যুদ্ধ, রক্তপাত, হত্যা
মৃত্যু এবং ধর্ষণের পরে
তবুও, একদিন আসবে শান্তির পৃথিবী
সাম্যের পৃথিবী - হিরণ্ময় প্রেম নিয়ে। (অপ্রকাশিত কবিতা - প্রাণবন্ত প্রাণশিখা)।
কবিতায় ছন্দ নিয়ে যুদ্ধ করার চাইতে সহজ কথায় সরাসরি পৌঁছে যেতেন পাঠকের অন্তরে। সুখ, দুঃখ আদি জাগতিক যত ভাবনা সেসব কিছুই অকপটে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন কবিতায়। কেউ তাঁর কাছে কবিতা চেয়ে বিমুখ হয়নি কোনোদিন। বৌগোলিক সীমা পেরিয়ে তাই অগুনতি কবিতা তাঁর জীবন্ত হয়ে আছে অসংখ্য পত্র পত্রিকায়। অথচ নিজে থেকে কবিতা পাঠাতেন না কখনও। কেউ চাইলে তবেই দিতেন। বলতেন - ‘নিজে যা লিখি নিজেই জানি না তা কতটুকু কবিতা হয়ে ওঠে। তাই নিজে থেকে পাঠাই না কোথাও পাছে প্রত্যাখ্যাত হয়। এর চাইতে ভালো আমার কবিতাকে ভালোবেসে কেউ চাইলে সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া।’ কতটুকু কবিতা হয়ে ওঠে তাঁর কবিতা তা কোনও বোদ্ধা নন, নির্ণয় করেছেন গড়পড়তা পাঠক, যাঁরা ভালোবেসেই ডেকে নিতেন তাঁকে একের পর এক কবিতার আসরে। আর সেখানেই বাজিমাত করে দিতেন কবি সুশান্ত। তাঁর আন্তরিকতা আর কথা ও কবিতার ছোঁয়ায় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন শ্রোতা দর্শকদের। এক্ষেত্রে তাঁর দেবোপম চেহারাটিও হয়ে উঠত সোনায় সোহাগা।
কোভিড কালে নিজের সৃষ্ট ফেসবুক গ্রুপ ‘সুচেতনা’য় লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। সহজেই মন জয় করে নিয়েছেন অগণিত কবি সাহিত্যিক শিল্পীবৃন্দ ও আপামর জনগণের।
বাইরে চরম ফুর্তিবাজ, আড্ডাবাজ ধরনের মানুষ হলেও অন্তরে ধরে রাখতেন এক বিশাল কোমল হৃদয়। দুঃস্থ, বিপদাপন্ন মানুষের আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসতে ভাবতেন না এতটুকু। এই সহৃদয় সত্তার, এই অকপট স্বীকারোক্তির পরিচয় তিনি রেখে গেছেন অজস্র কবিতায়। অথচ সেই অর্থে গ্রন্থায়িত করে যাননি কোনও এক রহস্যময় কারণে। সাকুল্যে তিনটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। কবিতার বই ‘কিছু ছড়া - কিছু কবিতা’, ‘বরাক সুরমার তীরে তীরে’, Blue Horizon. সম্পাদনা করেছেন ‘বৃষ্টিকথা - বরাকের কবিতা সংকলন’। সম্পাদনা সহযোগী হিসেবে ছিলেন বৃষ্টিকথা -‘বরাকের ছোটগল্প সংকলন’-এরও। ইংরেজি কবিতার হাত ধরে আন্তর্জাতিক কবিতা মঞ্চে তাঁর সদর্প উপস্থিতি লক্ষণীয়। বাংলা কবিতার ক্ষেত্রেও প্রচলিত ছন্দ বা ছকের ধার না ধেরে অনর্গল লিখে যেতেন কবিতা। এবং প্রতিটি কবিতাই কোনও না কোনোভাবে কবিতা হয়ে উঠত। তাঁর কবিতায় মূর্ত হয়ে উঠত প্রেম, ভালোবাসা, প্রকৃতি ও বাস্তব। প্রেম বিষয়ক কবিতাগুলো বাস্তব ভিত্তিতে হয়ে উঠত ব্যতিক্রমী -
প্রেমের শিহরণ সঙ্গে নিয়ে
শ্রাবণের বৃষ্টিধারার মতো
আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজব বলে।
এসো হঠাৎ করে কোনো মেঘলা বিকেলে...
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে...। (কবিতা - শ্রাবণ বৃষ্টিধারা)।
দেশ বিদেশের অসংখ্য পত্রপত্রিকায় ও সংকলনে স্থান পেয়েছে তার বহু কবিতা, পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা। কবিতা-অন্ত প্রাণ এই মানুষটি কবিতাকে লিখা একটি কবিতায় এভাবেই লিখছেন -
তোমাকে স্বপ্নে পাই - তোমাকে বাস্তবে পাই
তোমাকে ভালোবেসে জীবন কাটাই, কবিতা...
আমার চেতনায় উন্মাদনা ছড়াও তুমি
শব্দমালার উদ্দাম স্রোতের তরঙ্গে
আমি বিবশ হই; তোমার কাছে বিস্ময়ে
শুধু প্রেম নিয়ে
নতুন আকাঙ্ক্ষা জাগে হৃদয়ে আমার
কবিতা শুধু তোমার জন্যে...। (কবিতা - আমি তোমার জন্যে বেঁচে আছি)।
তাঁর বিখ্যাত ‘ত্রিপদী’ শীর্ষক কবিতায় কবি লিখছেন -
কবিতা আমার দিনলিপি
আমার কণ্ঠস্বর - আমার আত্মমন্থন
আমার জীবন কথা - আমার নির্মাণ।...
লিখেছেন ছন্দহীন কবিতা বিষয়ক দীর্ঘ প্রবন্ধও (‘রবীন্দ্রনাথ ও গদ্য কবিতা - পুনশ্চ কাব্যগ্রন্থের একটি আলোচনা’, প্রকাশিত সুচেতনা পত্রিকার সর্বশেষ সংখ্যা)। ‘সুচেতনা’ ফেসবুক গ্রুপের কর্ণধার হয়ে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যাওয়া সুশান্ত ভট্টাচার্য নিজেই সম্পাদনা করতেন ‘সুচেতনা’ নামের লিটল ম্যাগাজিন। আরেকটি সংখ্যা প্রকাশের সব কাজ শেষ করে এনেছিলেন সম্প্রতি। আরেকটি কবিতার বইয়ের কাজও চলছিল। ‘শেষ রাত্রি’, ‘দ্বিরালাপ’ আদি কয়েকটি ভিন্ন আঙ্গিকের গল্পও তিনি লিখেছেন।
জীবন সম্পর্কে কবি ছিলেন এক বিশাল মনস্তত্ত্বের অধিকারী। বহু কথায় উঠে এসেছে জীবন সম্পর্কিত নানা ঘাত প্রতিঘাতের পঙ্ক্তি। কোথা থেকে যেন এক দুঃখবোধ মূর্ত হয়ে উঠত তাঁর নানা কবিতায়। অথচ তার আঁচ খুঁজে পাওয়া যেত না বাইরে। এই রহস্যেরই আবর্তে কোথাও তিনি লিখছেন -
সেই রূপকথা চলে গেছে
রাঙা পথ মাড়িয়ে......
এখন ধূসর জীবনের চারপাশে
শুধু মরীচিকা ছড়ানো ...।। (কবিতা - ঠাকুরমার গল্প)।
আবার কোথাও -
দুঃখের জলকণা নিয়ে বৃষ্টি ঝরে
আমার ভুবনে।
রাগ হয় অভিমান হয় দুঃখ হয়......
কোথায় যাব আমি - কোন সুদূরে ?...
শরীরের ভেতরে অনেক অসুখ বিসুখ
মন ভালো নেই আমার ...।। (কবিতা - মন ভালো নেই আমার)।
পাঁচ পাঁচটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর এই কবির সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির ধারক, বাহক, পূজারি হয়ে হেসে খেলে কাটিয়ে দেওয়া এই জীবনদীপ যে এভাবে আচমকা নির্বাপিত হয়ে যাবে তা কল্পনার অগোচরে ছিল তাঁর গুণমুগ্ধদের। আজ তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে তাই শোকস্তব্ধ এই কবিতাবিশ্বের পদাতিকবৃন্দ। খোলামেলা প্রাণবন্ত এই মানুষটি, এই সাম্যের কবি, প্রেমের কবি তাঁর যাবতীয় কবিতার সম্ভার নিয়ে এভাবে শেষ কথা না বলে চলে গেলেন পরপারে এই বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে, এই কষ্টের ভার থেকে পরিত্রাণ পেতে তাই আজ গঙ্গাজলেই হোক গঙ্গাপূজা -
এই কল্পনার পৃথিবী -
সোনালি ভোর নিয়ে আসবে
আরো বহু শতাব্দী পরে
আরো যুদ্ধ, রক্তপাত, হত্যা
মৃত্যু এবং ধর্ষণের পরে
তবুও, একদিন আসবে শান্তির পৃথিবী
সাম্যের পৃথিবী - হিরণ্ময় প্রেম নিয়ে। (অপ্রকাশিত কবিতা - প্রাণবন্ত প্রাণশিখা)।
বিদ্যুৎ
চক্রবর্তী
Comments
Post a Comment