Skip to main content

নান্দনিক কাব্য সংকলন ‘একরাশ ভালোবাসা’

এই নিয়ে তৃতীয়বার। কবিতা নিয়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে হাইলাকান্দির ‘দৃঢ়বন্ধন’ অনলাইন কবিতা পত্রিকা গোষ্ঠী। সাপ্তাহিক কবিতা পত্রিকা প্রকাশের বাইরেও উৎসবে পার্বণে, নক্ষত্র পতনে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে নিয়মিত। প্রতিষ্ঠিতদের পাশাপাশি তুলে আনা হচ্ছে প্রতিভাসম্পন্ন গুচ্ছ গুচ্ছ নবীন কবিদের। প্রতিটি সংখ্যায় সম্মাননা জানানো হচ্ছে একজন করে কবিকে। অনুষ্ঠিত হচ্ছে কবিতার বার্ষিক সম্মেলন। আর এই নিয়ে সদ্য প্রকাশিত হল কবিতার তৃতীয় সংকলন। অর্থাৎ এর আগে প্রকাশিত হয়েছে আরোও দুটি।

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে নির্বাচিত তৃতীয় কবিতা সংকলন - ‘একরাশ ভালোবাসা’। সম্পাদনায় ‘দৃঢ়বন্ধন’-এর পক্ষে গীতশ্রী ভট্টাচার্য ও পম্পা গুহ ঠাকুরতা। এই সংকলনে অন্যতম সম্পাদক গীতশ্রীর কবিতা থাকলেও নেই পম্পার কোনও কবিতা। রয়েছেন নবীন প্রবীণ মিলিয়ে আরোও এগারোজন অর্থাৎ সব মিলিয়ে বারোজন কবির কবিতা। প্রত্যেকেই লিখেছেন দশটি করে কবিতা। এখানে সব কবিতা গ্রন্থ-নাম অনুযায়ী শুধুই ভালোবাসা নিয়ে নয়, তবে কবিতার প্রতি ‘একরাশ ভালোবাসা’ থেকেই সংকলনটির গ্রন্থনাম। সম্পাদকীয়তে এমনই কিছু বলা হয়েছে অনাবিল বর্ণনায় - ‘... প্রত্যেক সচেতন সংবেদনশীল মানুষের মধ্যেই কবিতার প্রতি আকর্ষণ তীব্র। মানুষের বিশ্বাস, স্মৃতি, স্বপ্ন, কল্পনার এক অপরূপ মিশ্রণে কবিতার সৃষ্টি। ... খুব অল্প পরিসরে জীবনবোধের গাথা তুলে ধরা যায় কবিতায়...... আমরা কবি না হলেও প্রত্যেকে কিন্তু এক একটি কবিতা হয়ে উঠতে পারি...।’ আহা ! কী অনাবিল অভিব্যক্তি।  

দেবোপম গুহ ঠাকুরতার চমৎকার প্রচ্ছদ ও প্রচ্ছদ পরিকল্পনা এক নজরেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে পাঠকের। কাগজের মান থেকে শুরু করে, ছাপাই, হার্ড বোর্ডের জ্যাকেট কভার বাঁধাই, অক্ষর, শব্দ, পঙ্‌ক্তি এমনকি কবিতার বিন্যাসও যথাযথ। মাত্র ছয় লাইন থেকে শুরু করে পৃষ্ঠা পেরোনো কবিতার এমন একটি সংকলন এ অঞ্চলে যথার্থই ব্যতিক্রমী হবার দাবি জানাতে পারে।

যে কবিদের কবিতায় ভরে উঠেছে এই সংকলন তাঁরা হলেন - শ্যামলী কর ভাওয়াল, সুপ্রদীপ দত্তরায়, রঘুনন্দন ভট্টাচার্য্য, ড. দেবাশীষ গুহ ঠাকুরতা, গীতশ্রী ভট্টাচার্য্য, ছন্দা দাম, মিলি চক্রবর্তী, সুমা দাস, দেবযানী ভট্টাচার্য, ড. শমিতা ভট্টাচার্য, সুদীপ্তা পাল ও স্বাতীলেখা রায় (পদবি হিসেবে ভট্টাচার্য্য বানানটি দুজনের ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত রাখা হল)। প্রত্যেকের কবিতাপর্ব শুরু হওয়ার আগে রয়েছে সচিত্র পরিচিতি। এই পরিচিতি পাঠকদের সঙ্গে অনেকটাই পরিচয় করিয়ে দেয় কবির লেখালেখির বিষয়ে, তাঁর পছন্দ-অপছন্দ, কবিতাকালের খতিয়ান ইত্যাদির। বেশ কিছু বিচিত্র পরিসংখ্যান উঠে আসে এখান থেকেই। কবিকে আরোও বেশি করে জানতে পারেন পাঠক।

যেসব কবির কবিতা এই সংকলনে সন্নিবিষ্ট হয়েছে তাঁদের মধ্যে অনেকেই এ অঞ্চলের কাব্যজগতে ইতিমধ্যেই নিজেদের পরিচিতি গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছেন। কয়েকজন কবিকে হয়তো পাঠকবৃন্দ নতুন করে জানার, তাঁদের কবিতার সঙ্গে নতুন করে পরিচিত হবার সুযোগ পাবেন। একটি সংকলনের তো সার্থকতা এখানেই।

এইসব সূত্র থেকেই আমরা জানতে পারি কবি শ্যামলী কর ভাওয়াল মূলত ইংরেজি সাহিত্যের যাপনসাথি এবং ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর দুই দুইটি ইংরেজি কবিতার সংকলন। অথচ কবির কবিতায় ধরা থাকে এমনও পঙ্‌ক্তি - ভালোবাসার শেষ দিনে / নিঃশ্বাস আলগা হলে, / চিরকালীন শব্দরা বলে- / এতোটা নস্টালজিক হওয়া / ভালো কথা নয়...। হিন্দি ভাষায় লেখালেখির সূত্রপাত হলেও কবি সুদীপ্তা লেখেন - ক্ষুধার্ত রামধনুর দানবীয় দূষণে / বিলুপ্ত হচ্ছে গ্রন্থ-কীট - / এভাবে গান্ধারী-গামী / হওয়া কি ঠিক ? জানতে পারি কবিতাকে ভালোবেসে কবি সুপ্রদীপ দত্তরায় লেখেন - শুধু একটা কবিতা লিখব তাই / গুনে গুনে ছত্রিশ পাতা নষ্ট করেছি আজ / অসংখ্য কাটাকুটি...... / একটা কবিতাকে জন্ম দিতে পৃথিবীতে / গুনে গুনে ছত্রিশটা স্বচ্ছ পাতার লাশ- / খালাস করেছি নিজে। আমরা পড়তে পারি কবি ছন্দা দামের - ‘অনেক কিছু বুঝতে নেই’ কিংবা ‘কেয়ার অফ বৃদ্ধাশ্রম’ জাতীয় হৃদয় নিংড়ানো অসাধারাণ কিছু কবিতা। বস্তুত প্রত্যেক কবিরই রয়েছে ব্যতিক্রমী কিছু পঙ্‌ক্তি, কিছু কবিতা।

এভাবেই একরাশ অনুভব, অনুভূতি, চমৎকারিত্বে ভরপুর অসংখ্য কিছু পঙ্‌ক্তি আর অনিয়ম, অনাচারের বিরুদ্ধে বজ্রনির্ঘোষ প্রতিবাদ ঝরে পড়েছে প্রত্যেক কবির কবিতায়। নবীন কবিদের অনেক কবিতায় ফুটে উঠেছে প্রত্যয়, প্রত্যাশা আর গরজের অনির্বচনীয় রূপ।

সামান্য কিছু বানান ভুলের বাইরে এক স্বচ্ছ তথা আবশ্যিক পাঠের উপযোগী সংকলন। পাঠশেষে দৃঢ়তর বন্ধনে জড়িয়ে পাঠকের তৃপ্তিসুখ আর উচ্ছ্বাস - শুধু ‘একরাশ ভালোবাসা’।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

 

মূল্য - ২০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫৩৭৯৭৮০ 

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়