Skip to main content

Posts

কী হবে এই রাঙা জীবনের - আমি জানি না... 'কবিতার চারণভূমি শাদ্বল ১০০'

শাদ্বল - রোজকার সাহিত্য চর্চায় একটি অপ্রচলিত শব্দ, তাই শব্দার্থ লিখে দিতে হয়েছে সম্পাদকীয়তে। কিন্তু আলোচ্য সাময়িকীর জন্য হয়তো এর চেয়ে ভালো নাম আর হতেই পারে না। এর মানে হচ্ছে - শস্পাবৃত ভূমি। অর্থাৎ কচি ঘাসে আবৃত ভূমি। হ্যাঁ, একটা সময় কচি ঘাসেই আবৃত ছিল তাঁর যাপনভূমি, যাপনবেলা। হঠাৎ করেই ছন্দপতন। অনাহূত, অবাঞ্ছিত ঘটনায় ছন্দহীন হয়ে গেল সেই ভূমি, উপড়ে গেল সেই ভূমি থেকে একটি শস্প, একটি উদীয়মান প্রতিভা। সেই থেকে এই শাদ্বল, কবিতার এক নতুনতর চারণভূমি - যেন দিগন্ত বিস্তৃত হয়ে জানান দিচ্ছে - ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই। এক থেকে বহুধাবিস্তৃত হতে হতে অধিকতর প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে সেই হারিয়ে যাওয়া শস্প, সেই অকালে ঝরে যাওয়া কোমলবেলার না-ফোটা পুস্প। কবি তথা শাদ্বল পত্রিকার সম্পাদক (অবৈতনিক) রানা চক্রবর্তীর পুত্র ঋতর্ণবের অকাল প্রয়াণ বদলে দিয়েছে তাঁর যাপনকাল। এই বদলে যাওয়া যাপিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এবং শততম সংখ্যার গরিমা ষো লো আনা বজায় রেখে শতাধিক কবির কবিতায় সম্প্রতি প্রকাশিত হল ‘শাদ্বল-১০০’ বিশেষ সংখ্যা। বর্ষ ১১, সংখ্যা ১। কবিতার এই পরিচিত চারণভূমি থেকে প্রায় ২ ০০ জন কবির কবিতায় পুষ্ট হ য়ে প্রকাশিত
Recent posts

শেকল ভাঙা দরজায় রোদ্দুর মাখা সংলাপ…… ‘আহত ঝিনুক’

শেষ থেকে শুরু হোক আলোচনা । গ্রন্থের শেষ প্রচ্ছদে কবি জাহানারা মজুমদারের বিস্তৃত পরিচিতির পাশাপাশি আছে আলোচ্য গ্রন্থ নিয়েও কিছু কথা - ‘ কবি জাহানারার কবিতায় সমাজের নিপীড়িত মানুষের হাহাকার মনকে নাড়া দেয় । মানুষের দুঃখ , কষ্ট , জরা , মৃত্যু কবিকে ব্যথিত করে । নারী পুরুষের বৈষম্যকে তুলে ধরে এক মানবিক পৃথিবীর প্রত্যাশা করেন কবি । মানুষের প্রতি অদম্য ভালোবাসা তাঁকে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া অন্যায়ে গর্জে উঠতে নাড়া দেয় । কবিতার মাধ্যমে তিনি বরাবরই এইসব তুলে ধরার চেষ্টা করেন … । ’ প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ হৃদপিণ্ডের ব্যথা ’ র পর সদ্য প্রকাশিত হল কবির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ আহত ঝিনুক ’ । প্রথম থেকে দ্বিতীয়তে পৌঁছাতে গিয়ে কবি এক চুলও সরে আসেননি তাঁর বক্তব্য থেকে । একই ধারায় তাঁর একের পর এক কবিতায় ঝরে পড়েছে অন্যায় , অবিচার , বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা , শ্লেষ , প্রতিবাদ । পাশাপাশি প্রত্যাশার শিখরে অবস্থান করেন কবি । এক সুস্থ সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশা , এক প্রেমবিজড়িত সৌহার্দময় পৃথিবীর প্রত্যাশা । ৯৮ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থে রয়েছে মোট ৯২টি এক পৃষ্ঠার কবিতা । অধিকাংশ কবিতায়ই ধরা আছ

গৌরবগাথার সমৃদ্ধ আয়োজন ‘বিয়ান’

সিলেট বা শ্রীহট্ট , কবিগুরুর লেখনীতে ‘ সুন্দরী শ্রীভূমি ’ । সেই সিলেট অঞ্চলের ভাষা , আঞ্চলিক বাংলা ভাষা সিলেটি । উত্তরসূরীদের মুখে মুখে আজও প্রবহমান । উত্তরসূরীদেরই এক সম্মিলিত মঞ্চ সর্বভারতীয় শ্রীহট্ট সম্মিলনী ফেডারেশন । সম্প্রতি ‘ সিলেটি সম্মেলন , গুয়াহাটি ’ আয়োজিত চতুর্থ শ্রীহট্ট উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে একটি স্মরণিকা - ‘ বিয়ান ’ । বিয়ান অর্থে সকাল । শিক্ষা , সংস্কৃতি , সাহিত্য , ভক্তি আন্দোলন , বিজ্ঞান ইত্যাদি সর্ববিষয়ে শ্রীহট্টের অবদান সর্বকালীন এবং সর্বজনস্বীকৃত । সংগীত জগতের কৃতি শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরীর স্মৃতিতে উৎসর্গিত এই স্মারকগ্রন্থের প্রচ্ছদে তাই নির্মলেন্দুর প্রতিকৃতির পাশাপাশি রয়েছে একতারা ও ঢোল । প্রতিটি পৃষ্ঠার উপরে অঙ্কিত আছে শ্রীচৈতন্যের ছবি। ৯৮ পৃষ্ঠার স্মারক গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে শ্রীহট্ট সম্বন্ধীয় একাধিক রচনা যা এক গর্বিত অতীতের সাক্ষ্য বহন করে । প্রথমেই রয়েছে এবারের সম্মেলনে সম্মানিত কয়েকজন কৃতি সিলেটির পরিচয় । এঁদের মধ্যে আছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ড . কালীপ্রদীপ চৌধুরী , শিক্ষাবিদ ও পক্ষী বিশেষজ্ঞ প্রফেসর পরিমল ভট্

সান্ধ্য চায়ের প্রহসন

পথের ধারের সান্ধ্য চায়ের আড্ডা বড্ড প্রিয় আমার, বসে থাকি প্রায়শ একটিমাত্র নিয়ন বাতি, একা কুম্ভ দোকানদার প্রিয় মানুষ দরাজদিল আর সাগর - মায়ার।   বেঞ্চে বেঞ্চে রোজ সন্ধ্যায়, কথায় কথায় মরে যায় কত রাজা, কত মন্ত্রী সান্ত্রি উজির জেগে ওঠে কত নতুন দেশ, আসর ওঠে মেতে কত দেশ যায় গোল্লায়, কত কাল - কত পাত্র, চুমুকে চুমুকে ছলকে ছলকে দমকা তুফান ছুটে আজ যে নেতা কাল সে ফকির ঘোর প্রহসন মাত্র।   একদিন এক সন্ধ্যা বেলায়, নিয়ন বাতির তলায় চায়ের কাপে তুফান উঠেছে বেজায় ছলকে পড়েছে চুমুকের চা, বিষম উঠেছে বিষম কোন অজানার পার হতে আসে কোন সে সুরের তান কোন মিলনের গান। উঠেছিল বেজে হৃদয়তন্ত্রী জুড়ে চায়ের কাপের জলতরঙ্গ বান।   প্রহসন শেষে চোখের পাতায় নেমেছে যেদিন ঘুম সেদিন থেকেই চায়ের দোকানে নেমেছে সন্ধ্যা নিঝুম।

কিচিরমিচির

আমার মা পাখিদের ভাষা বুঝতেন । কাঁঠালের লেজঝোলা হোক কিংবা শিমূলের মগডাল জুড়ে উড়ে - এসে - জুড়ে - বসা সব পাখিদের ভাষা মা বুঝতেন । মায়ের কিছু পোষা পাখিও ছিল , মায়ের কথা বুঝত মা ডাকলেই এসে বসত উঠোন জুড়ে , রান্নাঘরে । আকালের ধন বহুমূল্য তণ্ডুল থেকে কিছু তণ্ডুল , কিছু খুদকুঁড়ো ছড়িয়ে দিতেন মা পাখিরা পরমানন্দে খেয়ে দেয়ে সাজিয়ে রাখা জলের পাত্র থেকে আকণ্ঠ পান করে উড়ে যেত আস্তানায় ‘ অন্য কোথা , অন্য কোনখানে ’ - বনে বা খাঁচায় ।   পাখিরা কথা বলত নিজেদের মাতৃভাষায় সবাই সবার কথা বুঝত , আমরা একটা নাম দিয়েছিলাম সে ভাষার - কিচিরমিচির । মায়ের পোষা পাখিরা কিচিরমিচিরে মগ্ন সারা দিন আদর সোহাগ যত্নআত্তি , খুনশুটি আর ঝগড়াঝাঁটি ।   সব পাখিদেরই একটা মা থাকে , মাতৃভাষা থাকে আমরা মায়ের চারটি পোষা পাখি ছিলাম মায়ের জঠরপিঞ্জর থেকে উদ্ ‌ গত বক্ষপিঞ্জরের ধন আমাদেরও মাতৃভাষা আছে , ভাষার গরিমা আছে আমাদের ইষ্টিকুটুম আছে , টিয়ে ময়না আছে । আমরা আজও গান শুনি , গান শোনাই - মাতৃভাষার গান , স …… ব মাতৃভাষার জয়গান ।

পারাবত সন্ধ্যা

সেই এক পাগলপারা সান্ধ্য ছায়ার শুভ্র ছটা , আপাদকণ্ঠ শ্বেতবসনার ঘুরন্ত কপোত আবাহনে দীর্ঘ খেলানো মুহূর্তগুলির আচ্ছন্নতা বয়ে শৈত - শিহরণে ঝরো ঝরো অঝোর স্বেদবিন্দু ।   কপোল বেয়ে অবাধ্য চুলের শাসন মেনেছে কেউ ? অসহ্য শ্বসন যন্ত্রণায় পুড়ে খাক এ জীবন কে দিয়েছে দিব্যি সেই স্বর্গ - সুষমা যাপনে ? তিল তিল দহনে দগ্ধ যাপন শেষ দহনেও হবে কি শেষ ? এমন দহন পোড়ায় যাপন , পোড়ায় জীবন , পোড়ায় আজীবন জলজ বেহাগ , গগনবিদারী মেঘমল্লার সব ফিরে গেছে হেরো পথ ধরে স্তব্ধ আস্তানায় ।   ললিত সন্ধ্যা জুড়ে তাই রোজ বাজে ইমন বসে সান্ধ্য আসর , পেয়ালায় ঝড় তোলে সুধাময়ী রাত গভীর হয় , ঘুম আসে চোখে মন্দ্রসপ্তকে দ্রিমিদ্রিমি বাজে গভীর রাতের দরবারী কানাড়া … আবারও নতুন ভোর , ভাঙে পারাবত আড়মোড়া ।

বিশ্বদর্শন

সে চোখের দৃষ্টি সেদিন মেপে উঠতে পারিনি কেউ পারেনি । মহাশূন্যের পানে শূন্য উদাস চাউনি অথচ …… ঘিরে থাকা এতগুলো চোখ এতগুলো স্বজন অবয়ব - সব সব দৃষ্টির বাইরে অদৃশ্য । এ কোন মায়া ? পার্থিব মায়া থেকে অন্য এক মায়াসমুদ্দুরে স্বেচ্ছা অবগাহন পর্ব , নাকি বাধ্যবাধকতার সাড়ম্বর আয়োজন ? এ দ্বন্দ্ব , এ ধন্দ অপরিমেয় , অজর অমর আত্মাহুতির আয়োজন ।   আজও খুঁজি সেই কুসুমপথ । বিশ্বদর্শন ? এ পথে ফেরার কথা নেই , একমুখী এ জীবনপথ কুসুম বা কণ্টক , নিজেই আত্মপথিক বাকি সব মিছে মায়া , এ শ্বেতবিশ্বে কোনো কালো নেই , নেই ছায়া পথজোড়া শুধু গুচ্ছ শাদা ফুলের পাপড়ি বিছানো কুসুম - কুহক সমারোহ ।   দৃষ্টি বিহীন খোলা চোখে অনন্ত বিশ্বরূপ এই তো জীবন , বাকি সব ছাই , মিথ্যা মোহ ।

রিক্ত সোনার তরী

তুমি ক ’ বার গেছো কয়েদখানার বদ্ধ কুঠুরিতে ? আমার আজীবন হাজতবাস । অক্ষর বেড়াজালে মিথ্যে মায়ায় আটকে আছি বহু যুগ হতে , এপার ওপার - অপার মুগ্ধ মোহে । এক একটা মুখ মুখোশ হয়ে সেঁটে গেছে মুখমণ্ডলে সেই মুখোশে কতটা মাপা যায় ইহকাল ? মিথ্যা মোড়কে নির্মোহ সব সত্য কথার কী বা ইহ , কী বা পরকাল ? তরী বেসামাল মাঝদরিয়ায় , কলরোল জলরোল সব একাকার ।   অথচ সেদিনও অলিরা গেয়েছে গান অতসী বসন্তে ফুলে ফুলে ওড়ে করেছে মাধুরী পান কেন তবে আজ সোনার তরী রিক্ত ভাবনাময় এই নরদেহ , এই পথ চলা , দিশাহীন নিশিদিন কবেকার কোন সুখকর হাত , মুচকি নয়নঠার অচল পয়সা কুড়িয়ে কুড়িয়ে জীবন করেছি পার ।   হেঁটেছি বহুদিন সাগরবেলায় ঝিনুকসরণি ধরে নিষ্ফলা সব হেমন্তশেষে মুক্তোবিহীন শূন্যসার সব পেরিয়ে , সব হারিয়ে একদিন তুমিও দাঁড়াবে এসে এপারে , ধরে ফের হাতে হাত এটুকুই সম্বল , বাকি সব মিছে ইতিহাস হাজত কিংবা কয়েদখানা , হোক একত্রবাস ।

শ্মশানের স্তব্ধতা

- যা , আরেকবার খুঁচিয়ে দিয়ে আয় দেহটা দেখিস না কেমন বেঁকে গেছে পা-টা ?   সেদিন চোখের ভিতর ' তিনকা ' পড়ে সে কী জ্বালা গরম জলের একটি বিন্দু তুলেছে ঢাউস এক জলটম্বুর ফোসকা দিন সাতেকের দহন যন্ত্ৰণা।   - আরে আরে পড়ে যাবে ' বডি ', শীগগির যা ভালো করে গুঁজে দে কাঠখড়ি   সেবার খাটের কোণে পা লেগে যে পড়েছিল দেহ মাস্টার বেডরুমে ভেঙেছিল কড়ে আঙুল ( তবু রক্ষা ভাঙেনি মেঝে ) ফুলে কলাগাছ হয়ে রইল দিন দুই কুড়ি। এই নরদেহ পলকে ভোকাট্টা আকাশের ঘুড়ি নচেৎ পথের ধারঘেঁষা সব অচল পাথর , নুড়ি।   - কই রে গোপাল ? যা তো দেখ চেয়ে - ফাটছে কপাল। আপাত নীরব যাত্রাপথে শব্দের কোলাহল। কপাল খুঁজে খুঁজে ফেরে মাতাল গোপাল হাঁক দেয় কেউ - ক ' পেগ টেনেছিস মাল ?   আগেও একবার ফেটেছিল এ কপাল ছেড়েছিল দেশ - হানাহানি উত্তাল ছেড়েছিল সব সম্ভ্রম, শেষ পারানির সম্বল সব হারিয়ে নিঃস্ব অকিঞ্চন ছিল শুধু এই দেহ, এই নাম তকমা জুটেছে শিরোপরি - ভাগ্যের পরিণাম প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে উদ্‌বাস্তু শিরোনাম। আজ শেষবার ফাটছে কপাল শেষ যাত্রায় এই দেহ, এই নাম - ছাড়ছে ইহকাল।   মাঝে মাঝেই উঠছে রোল হরি বল , হরি বল চলছে নতুন ‘বডি’