Skip to main content

ডাইনি হত্যা, আসাম ও বিরুবালা রাভা

 

অন্যান্য রাজ্যের মতোই আসাম দেশের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য। একটা সময় ছিল যখন দেশের বাকি অংশে বসবাসরত জনগণ এই ঈশান কোণে পড়ে থাকা রাজ্যটির সম্পর্কে প্রায় কিছুই অবহিত থাকতেন না বা ছিলেন না। এই রাজ্যেরও আছে এক বিস্তৃত ইতিহাস। বস্তুত দেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত প্রতিটি রাজ্যই মূল স্রোত থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। এর কারণ ভিন্ন হলেও সরকারি স্তরে উদাসীনতাও যে অন্যতম ছিল তাও অস্বীকার করার নয়। ফলত এ রাজ্যের বিচিত্র ইতিহাস, সমাজ, ভাষা-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না দেশের অন্যান্য অংশে বসবাসরত জনগণ। সেই চিত্র এখন অনেকটাই পালটেছে। দেশের সমসাময়িক রাজনীতিতে আসাম, ত্রিপুরা ইত্যাদি রাজ্য এখন বহুল চর্চিত। স্বভাবতই দেশের জনগণও আসাম সম্পর্কে এখন অনেকটাই ওয়াকিবহাল। পাদপ্রদীপের আলোয় উত্তরণের এই কাহিনির প্রেক্ষাপটও নিশ্চিতভাবেই একদিনে তৈরি হয়নি। শিক্ষাদীক্ষার প্রভূত উন্নতির পাশাপাশি ভাষা সাহিত্যে নিরন্তর উৎকর্ষ সাধন এবং রাজ্যের সাংস্কৃতিক পরম্পরার বহুল প্রচার এর অন্যতম কারণ। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সদিচ্ছাও এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য বিষয়।
অন্য আরোও পাঁচটি রাজ্যের মতোই ভাষা-সংস্কৃতির এক উল্লেখনীয় বৈচিত্র আসামেও বিদ্যমান। প্রাণপুরুষ শ্রীমন্ত শংকরদেবের একশরণ ধর্মকর্মে দীক্ষিত, প্রভাবিত এ রাজ্যের জনগণের সাংস্কৃতিক পরম্পরা এতটাই উন্নত যে নিজস্ব সত্রীয়া নৃত্য আজ শাস্ত্রীয় নৃত্যের শিরোপায় অভিষিক্ত। বিহু নৃত্য আজ সর্বভারতীয় স্তরে বহুল সমাদৃত। ভাষা সাহিত্যে বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একাডেমি পুরস্কার এক নিয়মিত ধারায় পর্যবসিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্তরের স্বীকৃত ভাষাসমূহের পাশাপাশি আদিবাসী - বিশেষ করে চা বাগানে বসবাসরত আদিবাসী ও স্থানিক বহু ভাষাভাষী মানুষের বিচিত্র অবস্থান এই রাজ্যে। এবং পাশাপাশি দুর্ভাগ্যজনক ভাবেই আরোও পাঁচটি রাজ্যের মতোই বলতে গেলে এই সেদিন অবধি এই রাজ্যেও বিদ্যমান ছিল এক কালো প্রথার উপস্থিতি।
ভৌগোলিক ভাবে রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকাই অরণ্যে ঘেরা। একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অন্যদিকে এক নৈসর্গিক বাতাবরণ। এই বাতাবরণের ভালো দিকটি এতদিন অনুন্মোচিতই ছিল। প্রাকৃতিক সম্পদের যথোপযুক্ত ব্যবহার অথবা পর্যটন শিল্পের উন্নতি সেই অর্থে হয়নি বললেই চলে। বর্তমানে এদিকেও যথেষ্ট উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। প্রতিটি পরিস্থিতিরই যেমন একটি ভালো দিক থাকে তেমনি একটি খারাপ দিকও। এইসব অরণ্যঘেরা অঞ্চল বা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শিক্ষাদীক্ষার প্রসার ছিল না বলেই অশিক্ষাজনিত কিছু অন্ধবিশ্বাস ও কুপ্রথা গড়ে উঠেছিল বা কিছুটা এখনও বহাল আছে বলা যায়। এর মধ্যে একটি হল ডাইনি হত্যা।
প্রথমেই দেখা যাক ডাইনি হত্যা ব্যাপারটি আসলে কি ? ডাইনি শব্দের অভিধানগত অর্থ হচ্ছে লোকবিশ্বাস মতে মায়াবিদ্যায় পারদর্শী নারী (বা পুরুষ)ডাকিনি শব্দটি থেকেই এই শব্দের উৎপত্তি বলে অনুমান করা হয়। অশিক্ষাজনিত কুসংস্কারে আবদ্ধ মানুষ দেশের বহু অঞ্চলে আজও ঝাড়ফুঁক, মায়াবিদ্যা আদির উপর বহুলাংশে নির্ভর। শিক্ষার আলো সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার বহু বছর ধরে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে এলেও একশো ভাগ সাফল্য আসেনি এখনও। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের অনীহাও এর জন্য বহুলাংশে দায়ী। দেশের পশ্চিমবঙ্গ এবং ছত্তিশগড় আদি রাজ্যের মতো আসামেও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল তথা চা বাগান এলাকায় তাই ডাইনিবিদ্যা বা মায়াবিদ্যার প্রচলন আজও চোরাগোপ্তা ভাবে পরিলক্ষিত হয়। গ্রামের কোনও বৃদ্ধা যিনি ঝাড়ফুঁক বা জলপড়া, নুনপড়া আদি তথাকথিত জনকল্যাণমূলক কাজে সদাই সম্মান পেয়ে থাকেন, এক বিশেষ সময়ে জনগণের চোখে তিনিই ডাইনি হিসেবে আখ্যায়িত হন। গ্রামে যখন দুঃখ, দুর্দশা, রোগ-শোক কিংবা ব্যক্তিবিশেষের কোনও দুর্ঘটনা বা অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে তখন জনগণ সেই মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ করতে না পেরে সেই মায়াবিদ্যায় পারদর্শী মানুষটিকেই সন্দেহ করতে শুরু করে। বলা হয় সেই ডাকিনীর কুদৃষ্টি, কুকর্মের জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে। ফলে সেই নারীকে দলবদ্ধ ভাবে আক্রমণ করে তাঁর প্রাণনাশ করার যে অপকর্ম তাকেই বলা হয় ডাইনি হত্যা।
ভারতের প্ৰায় সব রাজ্যেই অতিপ্ৰাকৃত বিশ্বাসের ধারণা অতিশয় শক্তিশালী, এবং এর ফলে সময়ে সময়ে সংবাদ মাধ্যমে ডাইনিবিদ্যার জন্য ডাইনি হত্যার খবর পাওয়া যায়। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে কেবল আসাম ও পশ্চিমবঙ্গেই প্ৰায় ৭৫০ জন লোককে ডাইনি সন্দেহে হত্যা করা হয়েছিল।  ২০০৮ সালে ছত্তিশগড় রাজ্যের আধিকারিক তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর কম করে হলেও ১০০ জন মহিলার সঙ্গে সন্দেহযুক্ত ডাইনি হিসেবে দুর্ব্যবহার করা হয়। এবং এই সংখ্যা আংশিক মাত্র।
ডাইনিবিদ্যা বা ডাকিনীবিদ্যা বা Witchcraft হচ্ছে এমন এক বিদ্যা বা অনুশীলন যার অনুশীলনকারী (ডাইনি বা ডাকিনী) নিজের ভিতর এক অতিপ্ৰাকৃত দক্ষতা ও সামৰ্থ্য আছে বলে বিশ্বাস করে এবং প্রচার করে। এদের কৌশল হল মন্ত্ৰ প্ৰয়োগ এবং জাদুকরী রীতি-নীতির প্ৰদৰ্শন। ঐতিহাসিকভাৱে, এই বিদ্যার অনুশীলন না করা লোকদের মধ্যে ডাইনিবিদ্যার প্ৰচলিত অৰ্থ হচ্ছে নিরীহ লোকের ক্ষতি করার জন্য অতিপ্ৰাকৃত উপায়ের ব্যবহার। এই ডাইনিবিদ্যার প্রচলন শুধু আসাম বা ভারতেই নয় বিশ্বব্যাপী এর উপস্থিতি। অধিকাংশ পরম্পরাগত সংস্কৃতি, বিশেষ করে আফ্ৰিকার স্থানীয় সংস্কৃতি ও আফ্ৰিকান প্ৰবাসী, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আমেরিকার অঙ্গরাষ্ট্রসমূহে এটাই ডাইনিবিদ্যার অৰ্থ। ফিলিপাইনছ দেশে ডাইনিদের পবিত্ৰতার বিরোধী হিসেবে গণ্য করা হয়। যুগ যুগ ধরে শিক্ষার অপ্রতুল প্রসার, বহুল প্রব্রাজন এবং রাষ্ট্রীয় অবহেলার ফলে আসামেও স্বভাবতই প্রান্তিক জনপদে গড়ে ওঠে এইসব কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস যার কুপ্রভাব আজও স্তিমিত পর্যায়ে হলেও আংশিক বিদ্যমান।
জাদুকরী বিদ্যা শিক্ষার অভ্যাস প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আসামকে জর্জরিত করেছে। স্থানীয় বিশ্বাস অনুসারে, অসমিয়া ভাষায় ডাইনি বা দাইনি  হল এমন একজন পুরুষ বা মহিলা যার জাদুকরি ক্ষমতা রয়েছে এবং যা স্থানীয় জনগণের উপর দুর্ভাগ্য ডেকে আনে। অসুরক্ষিত নারী, পুরুষ ও শিশু, বৃদ্ধ এবং মানসিকভাবে অসুস্থদের ডাইনি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং অন্যায় ভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১০ এবং ফেব্রুয়ারি ২০১৫-এর মধ্যে তথাকথিত ডাইনি হত্যার ফলস্বরূপ ৭৭ জন লোকের মৃত্যু হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৩৫ জন মহিলা। এছাড়াও এই কাণ্ডে প্রায় ৬০ জন আহত হয়েছিল, যেখানে ভুক্তভোগীদের হত্যা করা হয়নি, তাদের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এক দশক আগেও আসামে ডাইনি সন্দেহে প্রতি বছর গড়ে ১২-১৫ জনকে খুন করা হত। আসাম সরকারের নথি বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মোট ১০৭ জনকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়। আসামের কারবি আংলং জেলায় বছর পঞ্চাশের এক বিধবা এবং ২৮ বছর বয়েসি মানসিক বিপর্যস্ত এক যুবককে ডাইনি সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে খুন করা হয় কয়েক বছর আগে। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই সংখ্যা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে, যার অন্যতম প্রধান কারণ আসাম সরকার প্রণীত আইনের উপযোগ, বিভিন্ন বেসরকারি ও সরকারি সংস্থার উদ্যোগ এবং এক মহীয়সী নারী বিরুবালা রাভা।
ইতিমধ্যেই ২০২১ সালে বিরুবালা রাভা তাঁর এই অসামান্য অবদানের জন্য ভারত সরকার প্রদত্ত ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে বিভূষিত হয়েছেন। এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে তিনি খুশি হয়েছেন। সম্মান প্রাপ্তির খবরে বিরুবালা বলেছিলেন, এই সম্মান পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। গত কয়েক বছরে যে কাজ করে চলেছি, তার জন্য অনেক সংগ্রাম এবং জীবনের ঝুঁকি পোহাতে হয়েছে। দুঃসময়ে যাঁরা সাহায্য করেছেন, এই স্বীকৃতি তাঁদেরই আশীর্বাদে এসেছে।
বিরুবালার জন্ম ১৯৪৯ সালে অসম-মেঘালয় সীমান্তের এক গ্রামে। তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পেরেছেন এবং খুব অল্প বয়সেই আসামের গোয়ালপাড়া জিলার এক কৃষক পরিবারের সঙ্গে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়ে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীকালে প্রতিবেশীদের মৃত্যুর জন্য সেখানেও তাঁকে ডাইনি বলে দোষারোপ করেন গ্রামবাসী। সমাজে তাঁকে একঘরে করার সঙ্গে সঙ্গে মোটা জরিমানা চাপায় স্থানীয় পঞ্চায়েত
ডাইনি অপবাদ মাথায় নিয়েও কিন্তু সাহস হারাননি বিরুবালা রাভা। উলটে সমাজের এই অন্যায় মেনে না নিয়ে তার বিরুদ্ধে তিনি জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং অসহায় নারী-পুরুষদের উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কম বয়স থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে তিনি ভালোবাসতেন। তিনি সমাজে প্ৰচলিত ডাইনি প্ৰথার বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেছিলেন। প্ৰথমে গোয়ালপাড়া জিলার ডাইনি হত্যার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে গত দুই দশক ধরে তিনি এই অন্ধবিশ্বাস দূর করার জন্য সংগ্ৰাম করে এসেছেন। ১৯৮৫ সালে তিনি ঠাকুরভিলা মহিলা সমিতির সেক্ৰেটারি হিসেবে দায়িত্ব গ্ৰহণ করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন প্রান্তিক জনপদে গিয়ে ডাইনি হত্যার মতো অন্ধবিশ্বাসসমূহের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করে এসেছেন। ২০০০ সাল থেকেই প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে পৌঁছে তিনি অসহায় এবং আরোপিত ব্যক্তিদের উদ্ধারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ২০০৬ সালে তিনি অসম মহিলা সমিতির এই বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে থকা বিভাগে যোগদান করেন। শেষ দিন অবধি বিরুবালা রাভা প্ৰায় ৩৪ জন লোকের প্ৰাণ রক্ষা করেছেন। ২০১১ সালে ডাইনি হত্যাৰ বিরুদ্ধে তিনি গোয়ালপাড়া জেলায় মিশন বিরুবালা আরম্ভ করেন। ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর এই মিশনকে রাজ্যিক অভিযান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
সর্বেশ্বর দত্ত স্মৃতি পুরস্কার, আনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকন পুরস্কার সহ বিভিন্ন পুরস্কারে তিনি অভিষিক্ত হয়েছেন। ২০০৫ সালে নর্থ ইস্ট নেটওয়র্ক নামের এক অগ্রগণ্য সামাজিক সংস্থা তাঁর নাম নোবেল পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করেছিল। পদ্মশ্রী পাওয়ার পরে স্বয়ং বিরুবালা বলেন, আমার জীবন ও কাজ অন্যদের জন্য উৎসর্গীকৃত। দীর্ঘ সংঘর্ষপূর্ণ হলেও তৃপ্তি লাভ না করে যে অভিযানে নেমেছি, তা শেষ না করে বিশ্রাম নেব না। ২০২৪ সালের ১৩ মে তারিখে দুরারোগ্য কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন এই মহীয়সী নারী। লৌকিক অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে জাগ্রত এই নহান আত্মার কাছে আসাম তথা দেশের লোকসমাজ চিরঋণী হয়ে থাকবে।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
(তথ্যসূত্র ও উদ্ধৃতি - আন্তর্জাল

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়

নান্দনিক ও গোছালো আয়োজন দ্বিতীয় সংখ্যা ‘সম্পর্ক’

‘…বলা যায়, একটি বই-ই পারে গোটা বিশ্বের কিছু জীর্ণ প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিতে। বইয়ের এই অমোঘ শক্তি সর্বজনবিদিত। বেদের ঋষি থেকে শুরু করে সমকালীন সময়ের অনেক লেখক তাঁদের সৃষ্টিসম্ভার দিয়ে কিছু প্রচলিত ধারণাকে সময়ে সময়ে বদলে দিয়ে এক নতুন পথের সন্ধান দিতে সক্ষম হয়েছেন। বই পড়ার মধ্যে রয়েছে এক অপার্থিব আনন্দ। বই আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত করে। এই যান্ত্রিকতার যুগে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে বিচলিত মানুষের বইয়ের প্রতি রয়েছে অকৃত্রিম টান। আজকের সামাজিক মাধ্যমের বাড়বাড়ন্ত অবস্থায় বই পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেলেও, বই প্রকাশের কাজটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। বরং পূর্বের তুলনায় তা অনেকটাই বেড়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে পাঠকের সংখ্যা বই প্রকাশের তুলনায় তেমন হারে বৃদ্ধি পায়নি। এই পাঠক সংকট বিশ্বব্যাপী…।’ - এমনই কিছু মূল্যবান তত্ত্ব ও তথ্যের সমাহারে এক প্রাসঙ্গিক সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের মধ্য দিয়েই শ্রীগণেশ হল বাংলা সাহিত্য সভা, অসমের লংকা শাখার দ্বিতীয় বার্ষিক মুখপত্র, বিশ্ব বই দিবস সংখ্যা ‘সম্পর্ক’ -এর । সৌরভ চৌধুরীর নান্দনিক প্রচ্ছদটি প্রথমেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে পাঠকের। এবং এই নান্দনিকতা ছড়িয়ে আছে শেষ পৃষ্ঠা অবধি