Skip to main content

সৃষ্টিসুখের কাব্যিক প্রকাশ - ‘অরুণোদয়’



কিছু গল্প, কিছু প্রবন্ধ লিখলেও এবং এসব নিয়ে ডিজিটাল প্রিন্টের এক ফর্মার বই বেরোলেও মধুমিতা দত্ত মূলত কবি সম্প্রতি এমনই আকারে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কাব্যগ্রন্থঅরুণোদয় সম্ভবত প্রথম কাব্যগ্রন্থ নিবেদক নীরব আলো প্রকাশনী, কলকাতা
মধুমিতার কবিতা মূলত স্মৃতিচারণ নির্ভর জীবনের সুখ দুঃখ, চাওয়া পাওয়া, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তিকে শব্দবন্দি করে রাখার গরজ কবি হতে চাওয়া নয়, কবিতায় জীবনটাকে ধরে রাখার প্রয়াস। তাই কোনও নির্দিষ্ট বিষয় নয়, বিস্তৃত ভাবনায়, অনুষঙ্গে সাজাতে চেয়েছেন অনুভব-অনুভূতি। বইয়ে কোনও ভূমিকা নেই যদিও সেই ভূমিকা শেষ মলাটে প্রথম পুরুষে আছে লিপিবদ্ধ। কবিতার অন্দরে প্রবেশ করার আগে সেখানে একটু চোখ রাখা যাক - ‘...বিবিধের ভিড়ে অতি ছোট্ট একটি পরিচয়, সৃষ্টিসুখের আনন্দে আপন খেয়ালে লিখে যাই - ছড়িয়ে দিই পরিচিত মহলে। কখনও ভালোবাসার কবিতা উচ্চারণ করি খোলা গলায়, কখনও বা গান। ...আবার মাঝে মধ্যে মানবাত্মার অন্বেষণের মধ্য দিয়ে নিজেকে চিনে নেওয়ার এক প্রতিশ্রুতি, নানা ধরনের লেখার সাথে চলছে অন্তরের নিবিড় অন্বেষণ আর ভালোবাসার নিবিড় অনুধ্যান...।’
এই অন্বেষণ, এই প্রাণের অস্তিত্বেরই আখরছবি হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থে কবি সন্নিবিষ্ট করেছেন মোট ২২টি কবিতা। কবিতা পাঠে কবির গভীর অনুভূতিসম্পন্ন প্রকাশই বেশি করে উঠে এসেছে এমন ধারণা প্রতীয়মান হয়। এবং কবিতাই যে সেই অনুভব, অনুভূতির একমাত্র নিবিড় যোগসূত্র তার প্রমাণ পাঠক খুঁজে পাবেন প্রথম কবিতাতেই। কবিতার শিরোনাম ‘অনুভব’ -
...কবিতা, তুমি তো সত্যের প্রতিবিম্ব,
আমার অন্তরের নিবিড় অনুভবে
পেতে চাই তোমার সৌরভ,
আমার ভালোবাসার পথটি বেয়ে।
কবি মাত্রই প্রেম ও প্রকৃতিপ্রেমী। এ নিগূঢ় সত্য। পরিণত সময়ে এ উচ্চারণ থেকে দূরে সরে গেলেও একে অস্বীকার করার উপায় নেই। আলোচ্য গ্রন্থে কবি মধুমিতা উভয়কে ধরে রেখেছেন আপন বৈভবে। তাই দেখা যায় ফাগুন, চৈত্র, শ্রাবণ, শরৎ নিয়ে যেমন রয়েছে বহু কবিতা তেমনি রয়েছে কিছু ভালোবাসা ও বাস্তবভিত্তিক অনুভবের কাব্যিক প্রকাশও। কিছু কবিতা বিশেষ হয়ে উঠেছে শৈলী ও উচ্চারণের নিরিখে। যেমন - রিমঝিম, ফাগুন দোলা, আমিই সেই, মধ্যরাতের আলাপন, সায়াহ্নে, শিক্ষার বিবর্তন ইত্যাদি। মধ্যরাতের ভাবনারা অক্লেশে আসে কবিভাবনায়, কিছু মোহাবেশমণ্ডিত পঙ্ক্তি জুড়ে -
তুমুল বেগে বইছে তুফান সাথে ঝড়ো হাওয়া
ভেজা রাতের আঁধার চিরে বিজুলি চমকায়;
বৃষ্টির ফোঁটা নৈশব্দ্যকে করে তুলেছে আরো জমাট
ঘুম আসে হঠাৎ করেই
মধ্যরাতে বজ্রপাতের শব্দবেশে
আসে হারিয়ে যাওয়া ব্যথার পরশ
ছুঁয়ে থাকে একলা ঘরের কপাটে
 আকাশটা কি সত্যি শূন্য হয়ে গেল ? (কবিতা - রিমঝিম)
কিংবা -
মধ্যরাতের কবিতা তো লিখেছিলে তুমি,
গোধূলির লাল আলোতে চিনতে পারো যদি;
সে হবে আমার অহংকার
পৃথিবীতে জেগে থাকবে অন্তহীন ভালোবাসা (কবিতা - মধ্যরাতের আলাপন)
শেষ কবিতায় মাতৃভাষার গরজ ধরে রেখেছেন যদিও একুশে পাশাপাশি উনিশকেও স্থান দিলে অধিকতর প্রাসঙ্গিক হতো।
স্পষ্ট ছাপা, শব্দবিন্যাসে বিন্যস্ত গ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছেন তাঁর জীবনসঙ্গী, দাদা, দিদি ও কন্যা রুদ্রাণীকে। মনোজুল ইসলামের প্রচ্ছদ মানানসই। কিছু বানান ভুল, ফাঁক গলে কিছু তৎসম শব্দের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সজাগতার প্রয়োজন রয়েছে যদিও নিশ্চিত এক প্রত্যাশার বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছেন কবি
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
মূল্য - ৭০ টাকা, যোগাযোগ - ৯৮৬৪১৯৪৪৩১ 

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়

নান্দনিক ও গোছালো আয়োজন দ্বিতীয় সংখ্যা ‘সম্পর্ক’

‘…বলা যায়, একটি বই-ই পারে গোটা বিশ্বের কিছু জীর্ণ প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিতে। বইয়ের এই অমোঘ শক্তি সর্বজনবিদিত। বেদের ঋষি থেকে শুরু করে সমকালীন সময়ের অনেক লেখক তাঁদের সৃষ্টিসম্ভার দিয়ে কিছু প্রচলিত ধারণাকে সময়ে সময়ে বদলে দিয়ে এক নতুন পথের সন্ধান দিতে সক্ষম হয়েছেন। বই পড়ার মধ্যে রয়েছে এক অপার্থিব আনন্দ। বই আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত করে। এই যান্ত্রিকতার যুগে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে বিচলিত মানুষের বইয়ের প্রতি রয়েছে অকৃত্রিম টান। আজকের সামাজিক মাধ্যমের বাড়বাড়ন্ত অবস্থায় বই পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেলেও, বই প্রকাশের কাজটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। বরং পূর্বের তুলনায় তা অনেকটাই বেড়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে পাঠকের সংখ্যা বই প্রকাশের তুলনায় তেমন হারে বৃদ্ধি পায়নি। এই পাঠক সংকট বিশ্বব্যাপী…।’ - এমনই কিছু মূল্যবান তত্ত্ব ও তথ্যের সমাহারে এক প্রাসঙ্গিক সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের মধ্য দিয়েই শ্রীগণেশ হল বাংলা সাহিত্য সভা, অসমের লংকা শাখার দ্বিতীয় বার্ষিক মুখপত্র, বিশ্ব বই দিবস সংখ্যা ‘সম্পর্ক’ -এর । সৌরভ চৌধুরীর নান্দনিক প্রচ্ছদটি প্রথমেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে পাঠকের। এবং এই নান্দনিকতা ছড়িয়ে আছে শেষ পৃষ্ঠা অবধি