Skip to main content

বিন্যস্ত সাহিত্য সম্ভারে উচ্চারিত হৃদয়ের কথা - ‘হৃদিকথা ৩’


“আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল শুধাইল না কেহ’ - কবির কলমে ঝরেছিল আত্মসমীক্ষার ক্ষোভ, আকুল হয়ে ব্যক্ত করতে চেয়েছিলেন যাপিত জীবনের কথকতা। তাই আমরাও জন্মলগ্ন থেকে কবির পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেদের বোধোদয়ের জন্য সৃষ্টি করে চলেছি হৃদয়ে জারিত সকল কথামালা, সঙ্গে কিছু পাঠককুলের সাহস ও উৎসাহে সাহিত্যের সাগরে বৃষ্টিবিন্দুসম আমাদের এই পথচলা’।
‘আমাদের হৃদিকথাশিরোনামে এই হল সংক্ষিপ্ত, ছিমছাম ভূমিকা/সম্পাদকীয়। সাহিত্য পত্রিকা ‘হৃদিকথা’র তৃতীয় সংখ্যা। সারকথা বলা হলেও খানিক সাহিত্যগুণ ও বিস্তৃতিসম্পন্ন সম্পাদকীয় হয়তো বাঞ্ছনীয় ছিল। সম্পাদক শর্মি দে ও সহ-সম্পাদক মীরা পাল। প্রকাশক - হৃদমাঝারে সাহিত্য পরিবার। মুদ্রণ - কোয়ালিটি গ্রাফিকস্‌, শিলচর। ১/৮ ডিমাই রেগুলার সাইজের ১২৪ পৃষ্ঠার এক সাহিত্য সম্ভার যেখানে রয়েছে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের কবি লেখকদের বিভিন্ন রচনা। কবিতা, গল্প ও অণুগল্পে কলম ধরেছেন মোট ৮২ জন কবি-লেখক। প্রায় দুই পৃষ্ঠাজোড়া সূচিপত্রের প্রাক্কালে সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে প্রকাশ সহায়ক, লেখক-লেখিকা ও বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতি যদিও বিজ্ঞাপনের বাহুল্য নেই পত্রিকায় যা সরল পঠনে মঝে মাঝেই ক্ষণিক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে প্রায়শ।   
প্রথমেই চোখ রাখা যাক কবিতা বিভাগে। এখানে এক বা একাধিক কবিতা যাঁরা লিখেছেন তাঁরা হলেন - আরণ্যক বসু, আর্যতীর্থ, দেবাশীষ দাশগুপ্ত, রাজীব ভট্টাচার্য, শর্মি দে, রত্নদীপ দেব, বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য, অজয় কুমার রায়, ডি জি বনি, শঙ্কর ঘোষ, জাহানারা মজুমদার, চৈতালী রায়, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সঞ্জিতা দাস, জয়া সান্যাল, শম্পা চট্টোপাধ্যায়, ভোলানাথ সাহা, মেখলা ঘোষ দস্তিদার, সুমা দাস, চান্দ্রেয়ী দেব, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, ছন্দা দাম, রণতোষ দে, শিবানী গুপ্ত, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, অভিজিৎ পাল, দীপায়ন পাল, জয়ন্তী দত্ত, চম্পা নাগ, দীপান্বিতা ভট্টাচার্য, স্বাতীলেখা রায়, পৌলমী পাল, শ্যামলী ভট্টাচার্য পাল, রিংকু পাল চৌধুরী, দীপান্বিতা ঘোষ, অর্পিতা কামিল্যা, স্বপ্না দাস পাল, অমিতাভ চক্রবর্তী, প্রণব রায়চৌধুরী, নদেরচাঁদ হাজরা, মাধুরী সাহানা, অনন্যা পুরকায়স্থ ভূমি, সুমি দাস, চিত্রা চ্যাটার্জী, শ্বেতা ব্যানার্জী, সুমা গোস্বামী, শুভজিৎ দাস দাঁ, কাশীনাথ মালিক, মধুমিতা রায়, স্বরূপ চক্রবর্তী, ফুজাইল আহমেদ রাজ, সুপ্রতিম ভৌমিক, সুখেন দাস, মিঠু বারিক (শ্রীমতী মিঠু), সপ্তমিতা নাথ, অভিজিৎ পাল (চিরসবুজ অভিজিৎ), দেবাশীষ গুহ ঠাকুরতা, বরুণ কুমার দে, মীরা পাল, গীতশ্রী ভট্টাচার্য ও বনানী চৌধুরী।
গল্প বিভাগে রয়েছেন দেবাশীষ সেনগুপ্ত, মঞ্জরী হীরামণি রায়, মহুয়া মিত্র, রাখী দেব, অমিতাভ দত্ত, সুপ্রদীপ দত্তরায়, অলকা গোস্বামী, মৌসুমী চক্রবর্তী, নদেরচাঁদ হাজরা, শৈলেন দাস, সুবীর পাল, মনীষা পলমল, আদিমা মজুমদার, মধুমিতা বক্সী, সুশান্ত মোহন চট্টোপাধ্যায় ও মধুমিতা রায় এবং অণুগল্প লিখেছেন সুদীপ্তা ভট্টাচার্য, দেবলীনা রায়, শিপ্রা দাস, সত্যজিৎ নাথ ও দীপায়ন পাল।
কবিতা বিভাগে নানা আঙ্গিকের কবিতার সমাহার রয়েছে। অন্ত্যমিল, গদ্যকবিতা ইত্যাদির পাশাপাশি আধুনিক কবিতার সুচারু উপযোগ প্রত্যক্ষ করা গেছে। পাশাপাশি এটাও অনস্বীকার্য যে ছোট পত্রিকার বাধ্যবাধকতা থেকে সম্পাদকের বেরিয়ে আসা একপ্রকার অসম্ভব। গল্প ও অণুগল্প বিভাগে সন্নিবিষ্ট গল্পগুলিও এক নির্দিষ্ট মান ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে। কিছু গল্প, কবিতার মান এতটাই ভালো যে বিশেষোল্লেখের দাবি রাখে। কিন্তু পরিসরের স্বল্পতায় আলাদা করে নামোল্লেখ না করেই বলা যায় অধিকাংশ কবিতা এবং প্রতিটি গল্প ও অণুগল্প সুচয়িত ও সুচিন্তিত বিষয়ে, বিন্যাসে বিন্যস্ত। মঞ্জরী হীরামণি রায়ের গল্পকে বিস্তৃতির প্রেক্ষিতে অনায়াসে অণুগল্প বিভাগেই রাখলে যথাযথ হতো। প্রতিটি বিভাগে প্রবীণ থেকে নবীনের সমাহার একদিকে যেমন পত্রিকাটিকে এনে দিয়েছে বৈচিত্র্যের সমাহার তেমনি ফুটে উঠেছে ছোটপত্রিকার দায়বদ্ধতাও।
এবারের এই সংখ্যার সবচাইতে আকর্ষণীয় দিক হল এর সার্বিক মান। উচ্চমানের কাগজ, প্রায় ত্রুটিহীন ছাপার স্পষ্টতা, অসাধারণ প্রচ্ছদ (পরিকল্পনায় পিনাকী), অক্ষর-শব্দ-বাক্য-পঙ্‌ক্তি বিন্যাস, ভেতরের পাতার অলংকরণ - সবই যথাযথ। বানানের শুদ্ধতা পঠনসুখের জন্ম দেয়। প্রচ্ছদশিল্পীর নামোল্লেখ বাঞ্ছনীয় ছিল। সব মিলিয়ে এক নান্দনিক সাহিত্য পত্রিকা ‘হৃদিকথা - ৩’।
 
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
 
মূল্য - ২০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫৩৯৯২১৮ 

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়