লেখালেখির জগতে একটি কথা প্রচলিত আছে। তা হল - সত্য ঘটনা কখনও সাহিত্য
হয় না। অর্থাৎ
কিছুটা হলেও কল্পনার রং না মেশানো অব্দি তা সাহিত্য পদবাচ্য হয়ে ওঠে না। কথাটি কতটা যুক্তিসংগত তা নিয়ে এই
আলোচনা নয় যদিও কবিতার ক্ষেত্রে অন্তত যথেষ্ট সংগত - এ অনস্বীকার্য। এছাড়াও গদ্য ও পদ্যের ভাষা এক নয়। নিখাদ গদ্য যেমন কবিতায় খাপ খায় না
তেমনি কাব্যিক ভাষায় উপস্থাপিত গদ্যও সুখপাঠ্য না হয়ে উঠতে পারে। এই দুয়ের যথাযথ পরিমাপ বজায় রেখে লেখা
সাহিত্য সততই পঠনস্বাদু ও গ্রহণযোগ্য।
সম্প্রতি একযোগে প্রকাশিত হয়েছে কবি জিতেন্দ্র নাথের দুই দুইটি কাব্যগ্রন্থ। কবির পরিচিতি সময় ও ভৌগোলিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটাই বিস্তৃত। বরাক, ব্রহ্মপুত্র, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য মহলে এক পরিচিত নাম। কবিতা লিখছেন বহুদিন ধরে। প্রত্যেকেরই লেখালেখির ধরন কিছুটা হলেও স্বতন্ত্র। কবি জিতেন্দ্র নাথের ক্ষেত্রেও এমনটাই। কয়েক মাসের ব্যবধানে গ্রন্থিত এই গ্রন্থদুটির সম্যক আলোচনায় যাওয়ার আগে কিছু কথা ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে এই পরিসরে যা উভয় গ্রন্থের জন্যই সমান ভাবে প্রযোজ্য। দুটি গ্রন্থেরই প্রকাশক শিলচরের শীতালং পাবলিকেশন। ৫৬ পৃষ্ঠার গ্রন্থগুলিতে রয়েছে মোট ৪৬ টি করে কবিতা। তবে এই কাব্যগ্রন্থদুটি এক কথায় বিষয়ভিত্তিক নয়। তাই বিবিধ প্রসঙ্গ, আবহ এসে জায়গা করেছে গ্রন্থে। প্রকাশকের তরফ থেকে উভয় গ্রন্থেরই শেষ মলাটে রয়েছে সম্যক কবি-পরিচিতি ও গ্রন্থের নির্যাস। জ্যাকেট বাঁধাই গ্রন্থের ব্লার্ব দুটি খালি থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। এক্ষেত্রে এই শেষ মলাটের বক্তব্যকে বিন্যস্ত করাই যেত ব্লার্বে।
(১) অসীমকে ছুঁতে মগ্ন থাকি
প্রথম দর্শনেই এই কাব্যগ্রন্থটির অনুপম প্রচ্ছদ পাঠকের দৃষ্টি তথা মনন আকর্ষণ করতে বাধ্য। রাজদীপ পুরীর প্রচ্ছদ সততই প্রাসঙ্গিক। এটি কবির ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। কোথাও এক পরম প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা কবির কবিতায় এসে ধরা দিয়েছে বারংবার যা কবির ভাষায় অসীম। এই অসীমকে ছুঁতে গিয়ে কবির কলমে নিঃসরিত হয়েছে অধিকাংশ কবিতা। এই পর্বে গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে লেখা কবির কিছু নির্বাচিত কবিতা যার অধিকাংশই পূর্বপ্রকাশিত। ‘কবিকথা’ শীর্ষক ভূমিকায় কবি লিখছেন - ‘চাতক পাখি এক ফোঁটা বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তেমনি আমিও অনন্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে অসীমকে ছুঁয়ে নিতে মগ্ন থাকি সারাক্ষণ। আচমকা ইথার তরঙ্গে ঈশ্বরীর কপাট খুলে যায় আর আমার কবিতার ভেতরে নিয়ে আসে এক অনন্য সৃষ্টি, অমৃত-বৃষ্টির ধারা। আমার প্রার্থনা সেই অমৃতের কাছে। সেই ঈশ্বরীর কাছে...।’
কবি বিজিৎকুমার ভট্টাচার্য কবিতার আকাশে এক উজ্জ্বল নাম। তাঁরই ভাবশিষ্য জিতেন্দ্রর কবিতায় যে সেই ধারার কিছু ছায়া এসে জায়গা করে নেবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাই কবি জিতেন্দ্রর কবিতায় আমরা পাই নদীর অনুষঙ্গ, পাই নিসর্গকে, পাই ভাষামায়ের প্রতি অকুণ্ঠ গরজ ও সোচ্চার উচ্চারণ। গ্রন্থের চারটি কবিতাও উৎসর্গিত হয়েছে সদ্য প্রয়াত কবি বিজিৎকুমারের প্রতি। রয়েছে প্রেম নিয়ে বেশ কিছু কবিতা - সবই প্রথম পুরুষে -
ডাক দিয়েছি অবশ্য/ সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছ অনেকটা পথ/ হাত বাড়িয়ে রেখেছি/ তুমিও দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছ নিঃশব্দে/ বিপরীত দিকে মুখ ফেরাতে পারো না, জানি/ আমিও পারি না/ সঙ্গে আছি চৈতন্য সত্তায়/ লেগে আছি পরস্পর/ তবে শর্তহীন ভালোবাসায়। (কবিতা - মুখ)। এভাবেই প্রতিটি কবিতা অত্যন্ত মার্জিত ভাষ্যে লেখা হয়েছে যদিও এই গ্রন্থের অন্তর্গত কবিতায় সপাট উচ্চারণের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে গেছে কাব্যিকতা। ভূমিকায় লেখা মতো বহু গদ্যশব্দের ব্যবহার প্রত্যক্ষ করা যায় এখানে। গ্রন্থনাম শীর্ষক কবিতার মতো বেশ ক’টি কবিতা আবার ছুঁয়ে যাবে পাঠকের অন্তর - এও নিশ্চিত।
(২) ঈশ্বরী একটি নক্ষত্রের নাম
কবির এই সপ্তম কাব্যগ্রন্থে পাঠক লক্ষ করবেন বহুলাংশে এক স্পষ্ট রূপান্তর। এখানে বাস্তবকে দূরে রেখে কবি মজেছেন কল্পনায়, ঈশ্বরী-প্রেমে। স্বভাবতই ফিরে এসেছে কাব্য সুষমা। একের পর এক ঈশ্বরী-বিষয়ক কবিতা। কে এই ঈশ্বরী ? খুঁজে নিতে নজর রাখা যাক ‘কবিকথা’য়। গ্রন্থ বিষয়ে কবি লিখছেন - ‘কাল্পনিক ঈশ্বরী এবং আপন ঈশ্বরীকে নিয়ে একটি কবিতার সিরিজ। আমার জীবন যাপনে ঈশ্বরী প্রভাব বিস্তার করেছে নানাভাবে নানাদিকে... কবিতা খুব অভিমানী... ঈশ্বরপ্রদত্ত... যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জোর করে কবিতা লেখা যায় না। ফলে যথার্থ কবিতা নির্মাণ করা এক কঠিন কাজ। আমি সেই অসাধ্য সাধনে লেগে আছি...।’ কবির এই সাধনা এখানে বহুলাংশে ফলপ্রদ হয়েছে বলে বলা যেতেই পারে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ কার্যকালে লেখা কবিতাগুলি এখানে স্থান করে নিয়েছে। এখানেও কিছু কবিতার শরীরে কিছু নিখাদ গদ্য-উচ্চারণ থেকে গেলেও, কিছু ভিন্ন আবহের কবিতা সন্নিবিষ্ট হলেও অধিকাংশ কবিতাই ঈশ্বরীর এক নিরন্তর সাধনায় ফুটে উঠেছে অনবদ্য প্রকাশে। একের পর এক কাব্যময় পঙ্ক্তি, শব্দ সংযোজনে ঈশ্বরী যেন কল্পনার অবয়ব ছেড়ে হয়ে উঠেছেন মূর্ত - পাঠক মননে।
বিচ্ছিন্ন ভাবে নেওয়া কিছু শব্দ সন্ধানে এভাবে পাওয়া যায় ঈশ্বরীকে - ঈশ্বরী একটি নক্ষত্রের নাম, একদিন যাব ঈশ্বরীর কাছে, ঈশ্বরী আমৃত্যু তোমার আশ্রয়ে আছি... ইত্যাদি। কবির কল্পনায় ঈশ্বরী কখনও সেলিব্রিটি তো কখনও দেবী দুর্গা। কিছু পঙ্ক্তি -
ঈশ্বরীর স্পর্শে লতা পাতা বৃক্ষ প্রাণ ফিরে পায়/ সঙ্গে সেই প্রিয় মানুষটিও
ঈশ্বরী আমার ভোরের প্রথম আলো/ বিকেল বেলার পড়ন্ত সোনালি রোদ/ জীবনের ধারাপাত
ঈশ্বরী এক প্রেরণার স্রোত/ যেদিকে তার দৃষ্টি পড়ে দুহাত বাড়ায়/ সোনা ফলে/ দিকে দিকে।
ভিন্ন আবহে কিছু কবিতাও দাগ রেখে যায় মগ্ন পঠনে। উল্লেখ্য - মুখচ্ছবি, কুসুম কলিতে, বড়াইল পাহাড় ছুঁয়ে, এক সন্ন্যাসিনী ইত্যাদি। এই কবিতাগুলির ভিতরে লুকিয়ে থাকা চমৎকারিত্বের আস্বাদ নেওয়ার অধিকার তোলা রইল শুধুই পাঠকের জন্য। সন্নিবিষ্ট হয়েছে প্যারাগ্রাফ আকারে দুটি নিখাদ গদ্যকবিতাও।
স্বপন নন্দীর প্রচ্ছদ মানানসই। সব মিলিয়ে উভয় কাব্যগ্রন্থের ক্ষেত্রেই ছাপা, বাঁধাই, শব্দ বিন্যাস আদি যথাযথ হলেও অক্ষর-আকার (ফন্ট সাইজ) সামান্য বড় হলে অধিক পঠন-সুখকর হতো। বানানের শুদ্ধতা বজায়ের প্রচেষ্টা লক্ষণীয় হলেও ফাঁক গলে থেকেই যায় কিছু - অনিবার্য। তবু বলা যায় প্রকাশনার জগতে শীতালং পাবলিকেশন আত্মপ্রকাশেই প্রত্যাশা জাগাতে সফল হয়েছে নিশ্চিত।
সম্প্রতি একযোগে প্রকাশিত হয়েছে কবি জিতেন্দ্র নাথের দুই দুইটি কাব্যগ্রন্থ। কবির পরিচিতি সময় ও ভৌগোলিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটাই বিস্তৃত। বরাক, ব্রহ্মপুত্র, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য মহলে এক পরিচিত নাম। কবিতা লিখছেন বহুদিন ধরে। প্রত্যেকেরই লেখালেখির ধরন কিছুটা হলেও স্বতন্ত্র। কবি জিতেন্দ্র নাথের ক্ষেত্রেও এমনটাই। কয়েক মাসের ব্যবধানে গ্রন্থিত এই গ্রন্থদুটির সম্যক আলোচনায় যাওয়ার আগে কিছু কথা ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে এই পরিসরে যা উভয় গ্রন্থের জন্যই সমান ভাবে প্রযোজ্য। দুটি গ্রন্থেরই প্রকাশক শিলচরের শীতালং পাবলিকেশন। ৫৬ পৃষ্ঠার গ্রন্থগুলিতে রয়েছে মোট ৪৬ টি করে কবিতা। তবে এই কাব্যগ্রন্থদুটি এক কথায় বিষয়ভিত্তিক নয়। তাই বিবিধ প্রসঙ্গ, আবহ এসে জায়গা করেছে গ্রন্থে। প্রকাশকের তরফ থেকে উভয় গ্রন্থেরই শেষ মলাটে রয়েছে সম্যক কবি-পরিচিতি ও গ্রন্থের নির্যাস। জ্যাকেট বাঁধাই গ্রন্থের ব্লার্ব দুটি খালি থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। এক্ষেত্রে এই শেষ মলাটের বক্তব্যকে বিন্যস্ত করাই যেত ব্লার্বে।
(১) অসীমকে ছুঁতে মগ্ন থাকি
প্রথম দর্শনেই এই কাব্যগ্রন্থটির অনুপম প্রচ্ছদ পাঠকের দৃষ্টি তথা মনন আকর্ষণ করতে বাধ্য। রাজদীপ পুরীর প্রচ্ছদ সততই প্রাসঙ্গিক। এটি কবির ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। কোথাও এক পরম প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা কবির কবিতায় এসে ধরা দিয়েছে বারংবার যা কবির ভাষায় অসীম। এই অসীমকে ছুঁতে গিয়ে কবির কলমে নিঃসরিত হয়েছে অধিকাংশ কবিতা। এই পর্বে গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে লেখা কবির কিছু নির্বাচিত কবিতা যার অধিকাংশই পূর্বপ্রকাশিত। ‘কবিকথা’ শীর্ষক ভূমিকায় কবি লিখছেন - ‘চাতক পাখি এক ফোঁটা বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তেমনি আমিও অনন্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে অসীমকে ছুঁয়ে নিতে মগ্ন থাকি সারাক্ষণ। আচমকা ইথার তরঙ্গে ঈশ্বরীর কপাট খুলে যায় আর আমার কবিতার ভেতরে নিয়ে আসে এক অনন্য সৃষ্টি, অমৃত-বৃষ্টির ধারা। আমার প্রার্থনা সেই অমৃতের কাছে। সেই ঈশ্বরীর কাছে...।’
কবি বিজিৎকুমার ভট্টাচার্য কবিতার আকাশে এক উজ্জ্বল নাম। তাঁরই ভাবশিষ্য জিতেন্দ্রর কবিতায় যে সেই ধারার কিছু ছায়া এসে জায়গা করে নেবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাই কবি জিতেন্দ্রর কবিতায় আমরা পাই নদীর অনুষঙ্গ, পাই নিসর্গকে, পাই ভাষামায়ের প্রতি অকুণ্ঠ গরজ ও সোচ্চার উচ্চারণ। গ্রন্থের চারটি কবিতাও উৎসর্গিত হয়েছে সদ্য প্রয়াত কবি বিজিৎকুমারের প্রতি। রয়েছে প্রেম নিয়ে বেশ কিছু কবিতা - সবই প্রথম পুরুষে -
ডাক দিয়েছি অবশ্য/ সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছ অনেকটা পথ/ হাত বাড়িয়ে রেখেছি/ তুমিও দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছ নিঃশব্দে/ বিপরীত দিকে মুখ ফেরাতে পারো না, জানি/ আমিও পারি না/ সঙ্গে আছি চৈতন্য সত্তায়/ লেগে আছি পরস্পর/ তবে শর্তহীন ভালোবাসায়। (কবিতা - মুখ)। এভাবেই প্রতিটি কবিতা অত্যন্ত মার্জিত ভাষ্যে লেখা হয়েছে যদিও এই গ্রন্থের অন্তর্গত কবিতায় সপাট উচ্চারণের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে গেছে কাব্যিকতা। ভূমিকায় লেখা মতো বহু গদ্যশব্দের ব্যবহার প্রত্যক্ষ করা যায় এখানে। গ্রন্থনাম শীর্ষক কবিতার মতো বেশ ক’টি কবিতা আবার ছুঁয়ে যাবে পাঠকের অন্তর - এও নিশ্চিত।
(২) ঈশ্বরী একটি নক্ষত্রের নাম
কবির এই সপ্তম কাব্যগ্রন্থে পাঠক লক্ষ করবেন বহুলাংশে এক স্পষ্ট রূপান্তর। এখানে বাস্তবকে দূরে রেখে কবি মজেছেন কল্পনায়, ঈশ্বরী-প্রেমে। স্বভাবতই ফিরে এসেছে কাব্য সুষমা। একের পর এক ঈশ্বরী-বিষয়ক কবিতা। কে এই ঈশ্বরী ? খুঁজে নিতে নজর রাখা যাক ‘কবিকথা’য়। গ্রন্থ বিষয়ে কবি লিখছেন - ‘কাল্পনিক ঈশ্বরী এবং আপন ঈশ্বরীকে নিয়ে একটি কবিতার সিরিজ। আমার জীবন যাপনে ঈশ্বরী প্রভাব বিস্তার করেছে নানাভাবে নানাদিকে... কবিতা খুব অভিমানী... ঈশ্বরপ্রদত্ত... যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জোর করে কবিতা লেখা যায় না। ফলে যথার্থ কবিতা নির্মাণ করা এক কঠিন কাজ। আমি সেই অসাধ্য সাধনে লেগে আছি...।’ কবির এই সাধনা এখানে বহুলাংশে ফলপ্রদ হয়েছে বলে বলা যেতেই পারে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ কার্যকালে লেখা কবিতাগুলি এখানে স্থান করে নিয়েছে। এখানেও কিছু কবিতার শরীরে কিছু নিখাদ গদ্য-উচ্চারণ থেকে গেলেও, কিছু ভিন্ন আবহের কবিতা সন্নিবিষ্ট হলেও অধিকাংশ কবিতাই ঈশ্বরীর এক নিরন্তর সাধনায় ফুটে উঠেছে অনবদ্য প্রকাশে। একের পর এক কাব্যময় পঙ্ক্তি, শব্দ সংযোজনে ঈশ্বরী যেন কল্পনার অবয়ব ছেড়ে হয়ে উঠেছেন মূর্ত - পাঠক মননে।
বিচ্ছিন্ন ভাবে নেওয়া কিছু শব্দ সন্ধানে এভাবে পাওয়া যায় ঈশ্বরীকে - ঈশ্বরী একটি নক্ষত্রের নাম, একদিন যাব ঈশ্বরীর কাছে, ঈশ্বরী আমৃত্যু তোমার আশ্রয়ে আছি... ইত্যাদি। কবির কল্পনায় ঈশ্বরী কখনও সেলিব্রিটি তো কখনও দেবী দুর্গা। কিছু পঙ্ক্তি -
ঈশ্বরীর স্পর্শে লতা পাতা বৃক্ষ প্রাণ ফিরে পায়/ সঙ্গে সেই প্রিয় মানুষটিও
ঈশ্বরী আমার ভোরের প্রথম আলো/ বিকেল বেলার পড়ন্ত সোনালি রোদ/ জীবনের ধারাপাত
ঈশ্বরী এক প্রেরণার স্রোত/ যেদিকে তার দৃষ্টি পড়ে দুহাত বাড়ায়/ সোনা ফলে/ দিকে দিকে।
ভিন্ন আবহে কিছু কবিতাও দাগ রেখে যায় মগ্ন পঠনে। উল্লেখ্য - মুখচ্ছবি, কুসুম কলিতে, বড়াইল পাহাড় ছুঁয়ে, এক সন্ন্যাসিনী ইত্যাদি। এই কবিতাগুলির ভিতরে লুকিয়ে থাকা চমৎকারিত্বের আস্বাদ নেওয়ার অধিকার তোলা রইল শুধুই পাঠকের জন্য। সন্নিবিষ্ট হয়েছে প্যারাগ্রাফ আকারে দুটি নিখাদ গদ্যকবিতাও।
স্বপন নন্দীর প্রচ্ছদ মানানসই। সব মিলিয়ে উভয় কাব্যগ্রন্থের ক্ষেত্রেই ছাপা, বাঁধাই, শব্দ বিন্যাস আদি যথাযথ হলেও অক্ষর-আকার (ফন্ট সাইজ) সামান্য বড় হলে অধিক পঠন-সুখকর হতো। বানানের শুদ্ধতা বজায়ের প্রচেষ্টা লক্ষণীয় হলেও ফাঁক গলে থেকেই যায় কিছু - অনিবার্য। তবু বলা যায় প্রকাশনার জগতে শীতালং পাবলিকেশন আত্মপ্রকাশেই প্রত্যাশা জাগাতে সফল হয়েছে নিশ্চিত।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
প্রতিটি গ্রন্থের মূল্য - ১৫০ টাকা করে
যোগাযোগ - ৯৩৬৫১৬০৭৩৩
যোগাযোগ - ৯৩৬৫১৬০৭৩৩
Comments
Post a Comment