Skip to main content

স্বল্পাবয়বে সুচয়িত সম্ভার শারদীয় সংখ্যা ‘সাঁকো’


উত্তর-পূর্বের সাহিত্যবিশ্বে নিরলস সাহিত্য সাধনায় ব্রতী হয়ে লেখক, কবিদের জুড়ে রেখেছেন যেসব সম্পাদক তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম সুশান্ত মোহন চট্টোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে নিজস্ব লেখালেখির বাইরেসাঁকোনামক একটি পত্রিকা, যার নিয়মিত অনলাইন সংস্করণের বাইরেও প্রকাশিত হয় বছরে দুটি ছাপা সংখ্যা, প্রকাশের মাধ্যমে এক চমৎকার ধারাবাহিকতার পরিচয় ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছেন তিনি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছেসাঁকোপত্রিকার বিংশতিতম বর্ষ, পূজা সংখ্যা প্রকাশক - বেবী চট্টোপাধ্যায়।
পূজা সংখ্যা মানেই ভারে ও আয়তনে ঢাউস হতে হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই যদিও কলেবর নির্বিশেষে তার এক আলাদা মর্যাদা, মাদকতা আছে এ নিশ্চিত সাধ ও সাধ্যের বৈপরীত্য এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতেই পারে শারদীয় সংখ্যাসাঁকোধারে ও ভারে না হলেও প্রয়াসে, নিবেদনে অনন্য বরাবরের মতোই অনন্য এবারেরও প্রচ্ছদ সৌজন্যে বিশ্ব রায় শরৎ ও শারদীয় পূজা নিয়ে স্টেটমেন্ট সাইজের ৪৪ পৃষ্ঠার সংখ্যায় সম্পাদক সুশান্ত মোহন লিখছেন - ‘...আমাদের সাঁকো সাহিত্য পত্রিকা দুই দশকের বিরামহীন পথ চলায় এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। সীমিত সংখ্যক লেখা হলেও গুণমানে ভরপুর এবারের বিংশতিতম বর্ষের পূজাসংখ্যা...’।
সূচিপত্র অনুযায়ী এগোলে দেখতে পাওয়া যায় এখানে প্রথমেই আছে দুটি নিবন্ধ। সি. এস. মোহন লিখেছেন - ‘অষ্টমীনবমীযোগ রাত্রিযোগে প্রশস্যতে... দুর্গাপূজার ছোট সংস্করণ সন্ধিপূজা’। যদিও এখানে ‘সন্ধিপূজাই’ মূল বিষয় তবে এই পর্ব লেখক স্বল্পতেই সেরেছেন। সন্ধিপূজার যাথার্থ্য যথাযথ বজায় রেখে আনূষঙ্গিক যতটুকু লিখেছেন তা আজকের দিনে বিশাল তাৎপর্যময়। গড্ডলিকায় গা না ভাসিয়ে বাস্তবকে করেছেন উন্মোচিত। অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও মুগ্ধপাঠের নিবন্ধ। পূরবী চক্রবর্তীর নিবন্ধ ‘পূজার অনুভূতি’। এখানে তিনি সাবেক ও আধুনিক দুর্গোৎসবের যথাযথ বিশ্লেষণ লিপিবদ্ধ করেছেন।
দুটি ছোটোগল্প এবং পাঁচটি প্রায়-অণুগল্প মিলিয়ে মোট সাতটি গল্পের সম্ভার। লিখেছেন ড. সুকান্ত পাল, মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম, সুব্রত দত্ত, শঙ্করী পুরকায়স্থ চক্রবর্তী, মাধবী শর্মা, বাহারুল ইসলাম মজুমদার ও সুশান্ত মোহন চট্টোপাধ্যায়বিষয় ভিন্ন, লিখনশৈলী ভিন্ন। ছোটগল্পের নির্মাণশৈলী, আধুনিকতা ও সংজ্ঞার বিশ্লেষণ অনুযায়ী মীনাক্ষির বাইরে অন্যান্য গল্পে আধুনিক শৈলী ও ভাবের ছোঁয়া অপেক্ষাকৃত কম অনুভূত হয়েছে। অধিকাংশই চেনা প্লটে আবর্তিত বর্ণনাত্মক গল্পসুশান্ত মোহনের বিস্তৃত গল্প সুখপাঠ্য। বৃদ্ধাশ্রমের নাম ও আবাসিকের জীবনগাথা একাকার হয়ে গেছে।
কবিতা বিভাগে রয়েছে মোট ১৪টি কবিতা। ব্যতিক্রমী উল্লেখ কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্যের গুচ্ছ কবিতা - ‘কেবল খেলা সিরিজ’। ভালো লাগবে সৌমেন কুমার চৌধুরী, ঋতা চন্দ, অনামিকা শর্মা, জয়শ্রী ভট্টাচার্য ও কবিতা দাসের কবিতা। এছাড়াও আছে যাঁদের কবিতা তাঁরা হলেন কিরণ মজুমদার, অরুন্ধতী দেব কর পুরকায়স্থ, সুপ্রতিম ভৌমিক, বন্দনা সেনগুপ্ত, পূরবী নাথ, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, অরুন্ধতী দেব ও সুদীপ সাহার কবিতা। শেষে আছে সম্পাদক রচিত ‘সাঁকো সংগীত’ ও অঞ্জন ভট্টাচার্য রচিত একটি আধুনিক সংগীত। এক ব্যতিক্রমী সংযোজন নিঃসন্দেহে।
নিউ ভারত প্রিন্টিং প্রেস-এর সৌজন্যে ছাপার স্পষ্টতা উল্লেখনীয় হলেও লাইন স্পেসিং কমিয়ে অধিক বিষয়ের সংযোজন সম্ভব ছিল। যথাযথ শব্দ/অক্ষর/বর্ণ বিন্যাস - সৌজন্যে আজমল হুসেন লস্কর। বানানের দিকে অধিক সজাগতা ও সম্পাদনার সুযোগ রয়েছে। যুগোপযোগী সাহিত্য সাধনায় আধুনিক বানানের বিকল্প নেই। সব মিলিয়ে এক স্পষ্ট দায়বদ্ধতা ও গরজের শারদীয় পত্রিকা ‘সাঁকো’। এই দায়বদ্ধতা পাঠকমনে নিশ্চিতই জাগিয়ে তুলবে ভবিষ্যতে এক বর্ধিত কলেবরযুক্ত শারদ সংখ্যা।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ১২০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫৩৭৭৩৯৪/৮১৩৪০৯৬৯০৯ 

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়