Skip to main content

জল-ছলছল কথা

এ মন বড় নরম মাটির তাল, কেউ বলে, যা শিখেছ - সব মিথ্যে ইতিহাস
কেউ বলে, তাই ? বৃথা এত পরিহাসএ মাটি আবাদ করেছে কেউ
গড়েছে আপন করে, ভেঙে করে চৌচির। আজ সবকিছু হয়েছে স্থির
 
কথার ভেতর লুকিয়ে থাকে কত কথা। ছন্নছাড়া কিছু, কিছু পরিপাটি নিটোল
কারো সবেতেই তালগোলসব থেকে যায় লুক্কায়িত, ঋদ্ধ ভেতরমহল
মনের মধ্যে নিত্য হিসেবনিকেশ, বাইরে শুধুই বাহবা, বাহবা, বেশ
মন ভুলেনি কথার সাগর, মিথ্যে বড়াই। হোক না মিছে তবু তোমার, আমার
সেই ইতিহাস চাইআজ, মাথার ভেতর শুধুই নিরেট ছাই
আর আছে শুধু জল, শেষের বেলায় - এ দুটোই সম্বল
 
একদিন তো শব হবে সব। লেখা আছে কপালে, অমোঘ সত্য সার
ছাই হবে দেহ কিংবা মেলাবে মাটিতে, মিছে আসা ধরণীতে।
মিছে শুধু আসা যাওয়া, মিছে এ তরণী বাওয়া
 
কুড়িয়ে নেওয়া টুকরো সুখেই আত্মহারা সেই বেলা, কিছু খুনশুটি খেলা।
যতটা সুখ, বহুগুণ দায়, প্রজন্মসুখের নির্মাণ-সুখ দায়।
স্বেদবিন্দুধারা ঝরেছে অঝোর ধারায়।
শুধু ছোটাছুটি এধার ওধার, খুঁজে মরা শুধু পায়ের তলায় শক্ত মাটির আধার।
কত নদীপথে বয়ে গেছে কত জল, গর্ভজল থেকে চিতাজল
সেই নদী জানে সব কথা, গহ্বরে যার ধরা আছে সব অনন্ত পারাপার কথা।
 
এ জীবন নিছকই এক জলকথা। এই যে গর্ভজল থেকে চিতাজল সফর, এটাই তো নির্মোহ সত্য। জলজ জীবন আমাদের। জলেই জন্ম, জলেই বিসর্জন। আর ধরাজলে নিত্য সাঁতার কাটা, নিত্য তরণী বাওয়া। জলহীন এ জীবন মুহূর্তের খেলাঘর। এই তাসের ঘর উচ্ছন্নে যেতে কয়েকটি পল মাত্র। ইমাম হুসেইনকে হত্যা করতে এজিদের অন্য কিছু করতে হয়নি, শুধু ফোরাত নদীর জল হুসেইনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
অথচ সব ভুলে কেমন আমরা জলেরই করি অপচয়। বাথরুমের শাওয়ার খুলে জলের ধারা বইয়ে দিই। যেখানে এক মগ জলের প্রয়োজন সেখানে অবলীলায় ব্যবহার করি এক বালতি জল। এ অনাসৃষ্টি প্রকৃতিই বা সইবে কেন ? সুতরাং শুরু হয়েছে প্রকৃতির প্রতিশোধ। দেশে দেশে, অঞ্চলে অঞ্চলে শুকিয়ে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ জল। শুকিয়ে যাচ্ছে নদী নালা। এক কালে প্রবাহিত কত নদীর উপর দিয়ে এখন পাহে হাঁটা, গাড়ি চলা পথ। কত শহর, কত জনপদ হয়ে গেছে জলশূন্য। বৃষ্টির জল হয়েছে অনিয়ন্ত্রিত। কথাও অনাবৃষ্টি, কোথাও বন্যা। সব ধ্বংসের খেলা।
আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে এই ধ্বংসযজ্ঞ। বেঙ্গালুরু শহর এখন জলহীন হওয়ার পথে। আমরা তো নিজের পায়ের তলার মাটি না সরা অবধি সচেতন হব না। করোনা যেদিন নিজের ঘরে প্রবেশ করেছে সেদিনই আমরা মেনেছি যে কোভিড সত্যিই এসেছে পৃথিবীতে। যেদিন চোখের সামনে নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু ঘটেছে সেদিন স্বীকার করেছি যে সত্যিই কোভিড এক ভয়ানক রোগ। না হলে সরকারের ফন্দি কিংবা বিশ্বজোড়া ভাওতাবাজি বলেই বিশ্বাস করেছি। ঠিক এমনি কাছের কেউ কিংবা হয়তো একদিন নিজেরই ঘরে কেউ জলের জন্য ছটফট করতে করতে পাড়ি দেবেন পরপারে সেদিন আমরা বিশ্বাস করব যে সত্যিই জলের অভাব হয়েছে। সেদিনও কি আমরা পরিতাপ করব আমাদের মূর্কাহ্মির জন্য ? আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা কতই না চিন্তিত। তাদের উচ্চশিক্ষা, উচ্চপদে চাকরির জন্য আমরা লালায়িত। ধরাকে আমরা সরাজ্ঞান করে স্বার্থপরের মতো নিজেদের সন্তানদের ঠেলে দিই ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতায়। আমরা পাগলের মতো তাদের ভালো থাকার চিন্তায় মশগুল হয়ে থাকি। অথচ আমরা এতটাই নির্বোধ যে আমরা এই ভালো থাকাকথাটির অর্ধেকটাই শুধু বুঝি। ভালোশব্দটিতেই আমাদের পাখির চোখ। থাকাঅর্থাৎ বেঁচে থাকার প্রশ্নে আমরা আকাট মূর্খ। কী করে একটি প্রজন্ম জলহীন এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে এই কথাটি আমরা চিন্তাই করি না। যথেচ্ছ অপব্যবহার করি জলের। অথচ যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই জল ব্যবহার করব, অপচয় নয়এই একটি সামান্য পদক্ষেপই বাঁচিয়ে দিতে পারে একটি প্রজন্ম।
আজ রাজস্থান, দিল্লি সহ বহু জায়গায় জলের অভাবে মানুষ হাহাকার করছে। বেঙালুরুর পর এক এক করে বাড়তেই থাকবে এই হাহাকার। আমরা কবে হব সজাগ ?
 
কত জল সেদিনও তো ছিল ওই পাষাণীর কাজল চোখে
টলমল জল মোতির মালা খাল বিল নদ পুকুর নালা
জল ছিল ফোরাতেও, তবু ছিল কি ? পাষাণীর গভীর রাতে
দুই কাঁখে আজ সলিল ছলকে একই
কোন সুদূরের জলের কিনারায় প্রহরের পর প্রহর বয়ে যায়
বুকে তার সাত সাগরের জল চোখে তাঁর ইতিউতি আঁখিজল
পাষাণী অম্বা বাই, স্বপ্নে ফটিক-জল প্রস্রবণের বুদবুদ মোতিজল
সব জল শেষে চাতক চোখে হায় পাষাণী আজ পিপাসায় অসহায়
 
একদিন - জল ছিল সবখানে, ফোরাত নদী - রাজস্থানে
তবু কেউ বলে হায় হায় - অম্বা বাই জল আনতে যায়
সন্ধে হতেই দুই কাঁখে তার চৌচির পথে কলসি শোভা পায়
জল দাও জল দাও, পরান চলে যায়
শুকিয়ে গেছে ধরণী গর্ভ, হাহাকার রব ঘরে ঘরে শোনা যায়

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...