Skip to main content

ভাষা সাহিত্যের প্রতি দায়বদ্ধতার নিদর্শন ‘প্রতীতি’


/৪ ক্রাউন পেপারের ৫৬ পৃষ্ঠার পত্রিকাটি প্রথম নজরে দেখলে বোঝাই যাবে না তার ভেতরের সম্পদ এর পর ৫৩ পৃষ্ঠা জোড়া সাহিত্য সম্ভার কিন্তু পাঠককে নিশ্চিতভাবেই প্রলুব্ধ করবে পাতা উলটে যেতে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের বহু শাখা আছে অসমে বিভিন্ন শাখা থেকেই নিয়মিত প্রকাশিত হয় সাহিত্য পত্রিকা তথা মুখপত্র মূলত নববর্ষ ও দুর্গোৎসব উপলক্ষে তার মধ্যে তিনসুকিয়া শাখাটি তার ৫০তম বর্ষ উদ্যাপনের দোরগোড়ায় এসে পৌঁছেছে যদিও সম্প্রতি নববর্ষ ১৪৩১ উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে শাখার পত্রিকাপ্রতীতির ৪০তম সংখ্যা
প্রথম নজরেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেয় তারকা শিল্পী ত্রিদিব দত্তের রবীন্দ্রময় নান্দনিক প্রচ্ছদ এমন না হলে আর নববর্ষ সংখ্যা ? নববর্ষ মানেই তো বৈশাখ আর বৈশাখ মানেই একমেবাদ্বিতীয়ম কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ সম্পাদকীয়তে এমনই বহু কথা আছে লিপিবদ্ধ সাহিত্য, সংস্কৃতি বিশেষত মাতৃভাষা বিষয়ক গরজ ও উৎকণ্ঠা যথার্থই ফুটে উঠেছে সম্পাদকীয়তে। আছে শাখা আয়োজিত ‘সকলকে একসাথে করে সমাজ সেবার মাধ্যমে মাতৃভাষায় শিক্ষা, পঠন, চলনে, বলনে ও চর্চার উৎকৃষ্ট পরিবেশ সৃষ্টি’ বিষয়ক কিছু প্রয়াসের কথা।
ভেতরে কবিতা, গল্পের বাইরেও রয়েছে গুণমানসমৃদ্ধ একাধিক প্রবন্ধ নিবন্ধ। লেখালেখির সূচনা হয়েছে দুটি ভ্রমণ কাহিনি বা ভ্রমণ-বিষয়ক নিবন্ধ দিয়ে। কাহিনি না বলে নিবন্ধ এজন্যই বলা হল যেহেতু তথ্যে ভরপুর উভয় রচনাই। সুদীপ মুখার্জীর ‘শ্রী রামকৃষন মিশন, সারগাছি’ এমনই এক নিবন্ধ যেখানে লেখার আদল পুরোপুরি ভ্রমণ কাহিনির সমপর্যায়ের। কিন্তু এরই মধ্যে লেখক সারগাছি মিশনেই সীমাবদ্ধ না থেকে তথ্যাদির উল্লেখ সহ নিকটবর্তী অন্যান্য দ্রষ্টব্য স্থানসমূহের প্রতিও প্রসারিত করেছেন তাঁর লেখার সীমানা। প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য একই ধারায় লিখেছেন মূল্যবান নিবন্ধ - ‘যোশী মঠ’। ইতিহাস ও বাস্তব উভয়কেই ধরে রাখতে পেরেছেন এক ধারায়। উভয় রচনাই সংগহযোগ্য। এরপর রয়েছে এ সংখ্যার একমাত্র গল্প- বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর ‘বিদ্রোহী’। রঞ্জিতা চক্রবর্তীর তুলনামূলকভাবে লেখা সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ ‘বাংলা সাহিত্যে নাটক ও নাট্যশালার উদ্‌ভবে গেরাসিম লেবেডফ ও মধুসূদন দত্তের অবদান’। অগতানুগতিক হলেও প্রয়োজনীয় বিষয়। তথ্যাদি এখানেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে প্রয়োজনানুসারে। গীতা দে স্মৃতিচারণে ধরে রেখেছেন ‘শ্রী শ্রী ১০৮ স্বামী জানকীদাসজি কাঠিয়াবাবাজী মহারাজকে দর্শন করার সৌভাগ্য’। ১৯৬২-তে চিনের ভারত আক্রমণের প্রভাব এ অঞ্চলে কেমন পড়েছিল তার এক বাস্তব অভিজ্ঞতা স্মৃতিচারণ করেছেন জ্যেষ্ঠ লেখক অবনীন্দ্র কুমার নন্দী। এক পৃষ্ঠার এই স্মৃতিচারণ পাঠে আন্দোলিত হতে বাধ্য পাঠক হৃদয়। সান্ত্বনা দেবসেন লিখেছেন নিবন্ধ ‘স্বামী বিবেকানন্দ ও শিকাগো ধর্ম সম্মেলন’। বহুলিখিত, বহুচর্চিত বিষয়লেখক ইচ্ছে করলেই খাবিকটা বিস্তৃত করতে পারতেন নিবন্ধের পরিসর। পুলকেশ বোসের রম্যরচনার পরেই রয়েছে এক ব্যতিক্রমী নিবন্ধরণনিপুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আমার কাব্যচর্চার সেকাল ও একাল’। বাস্তবের নিরিখে এক নির্ভেজাল ব্যক্তিগত গদ্য। নির্মলেন্দু রায় উত্তরপূর্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিবন্ধকার। এই সংখ্যায় স্বামী বিবেকানন্দের গৌহাটি ভ্রমণ বিষয়ক রয়েছে তাঁর একটি দশ পৃষ্ঠাব্যাপী বিস্তৃত নিবন্ধ ‘’ঘূর্ণিঝড় সন্ন্যাসীর গুয়াহাটি ভ্রমণ’। তত্ত্ব, তথ্য ও নিজস্ব অধ্যয়নসঞ্জাত বিচার বিশ্লেষণের সুবাদে সুলিখিত এই নিবন্ধটিকে এ সংখ্যার শ্রেষ্ঠ রচনা বললেও অত্যুক্তি হয় না। ‘বাঙালির সালতামামি’ নিবন্ধে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় প্রিয় এবং অপ্রিয়র মিশেলে কিছু ‘সত্য’ কথা তুলে ধরেছেন এক ব্যতিক্রমী আঙ্গিকে। কিছু পাঠক হয়তো কিছু অস্বস্তি, কিছু স্ববিরোধিতা, কিছু আঞ্চলিকতা খুঁজে পেতেও পারেন। সে দায় পাঠকেরই। তবে লেখক বাঙালিয়ানার সবগুলো দিকের উল্লেখ করে নিবন্ধটিকে করে তুলেছেন অবশ্যপাঠ্য।
কবিতার বিভাগে যাঁরা কলম ধরেছেন সেইসব কবিরা হলেন - পীযূষ চক্রবর্তী, শঙ্কর গুপ্ত, রাজ পুরকায়স্থ, রণজিৎ চৌধুরী, নিরুপম পাল (নীল পাহাড়), বাণীব্রত দে ও শান্তা চক্রবর্তী রায়। এবারের সংখ্যার সম্পাদক শঙ্কর গুপ্ত। কাগজ ও ছাপার মান, বর্ণবিন্যাস, বাঁধাই যথাযথ হলেও পরবর্তীতে উৎকর্ষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বানান সচেতনতার দিকে অধিক দৃষ্টিনিক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গল্পের সংখ্যা ন্যূনতম অনুভূত হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে কালাতিপাত করেও বলা যেতেই পারে বাংলা ভাষা সাহিত্যের প্রত্যি দায়বদ্ধতার এই প্রচেষ্টা ও প্রয়াস সর্বৈব প্রশংসনীয়। এমন প্রতীতি নিশ্চিতভাবেই অনুভূত হবে পাঠকমননে।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - অনুল্লেখিত
যোগাযোগ - ৯৪৩৫৫২৭৯৬৪ 

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...