Skip to main content

Posts

Showing posts from August, 2024

সংগ্রহযোগ্য বিশেষ সংখ্যা ‘বাক্প্রবাহ’

ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে বাংলা ছোট পত্রিকা বেরোয় হাতে গোনা কয়েকটি। তার মধ্যে নিয়মিত বেরোয় কিছু সংখ্যকই। বরপেটা রোড থেকে অধ্যাপক ড. শংকর কর সম্পাদিত ত্রিভাষিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা ‘বাক্‌প্রবাহ’-এর সবে পথ চলা হয়েছে শুরু। এ যাবৎ প্রকাশিত হয়েছে মোট তিনটি সংখ্যা। পত্রিকা প্রকাশের বহুবিধ সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে এই সফল উদ্যোগ নিঃসন্দেহে এক অনন্য কৃতিত্বের দাবি রাখে। ‘বাক্‌প্রবাহ’ পত্রিকা সততই বিষয়ভিত্তিক, গবেষণামূলক এবং সুচয়িত লেখকসমৃদ্ধ। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকার তৃতীয় সংখ্যা। জুন ২০২৪ বিশেষ সংখ্যা। এবারের বিষয় - ‘ভূপেন হাজরিকা ও মানবতাবাদ’। সুচিন্তিত এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়। মানবতার যে বার্তা ছড়িয়ে গেছেন এই মহান শিল্পী তার রেশ ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। একের পর এক মানবতা, মানবিকতা ও একতার জয়গান গেয়ে বহুমুখী প্রতিভাধর এই শিল্পী ভুবন জুড়ে রেখে গেছেন চিরকালীন ছাপ - আমি গঙ্গার থেকে মিসিসিপি হয়ে ভল্গার রূপ দেখেছি, অটোয়ার থেকে অষ্ট্রিয়া হয়ে প্যারিসের ধুলো মেখেছি। আমি ইলোরার থেকে রং নিয়ে দূরে শিকাগো শহরে দিয়েছি, গালিবের শায়ের তাসখন্দের মিনারে বসে শুনেছি। মার্ক টোয়েনের সমাধিতে বসে গোর্কির কথা ব

গরজে-প্রত্যয়ে, বিশুদ্ধ বানানে বিন্যস্ত ‘বরাক নন্দিনী’

সদ্য প্রয়াত কবি সুশান্ত ভট্টাচার্য লিখেছেন - রক্তে রঞ্জিত এই শহর এই ভূমি এই ঘাস এইখানে ভাষা শহিদদের পড়েছিল শেষ নিঃশ্বাস... তারপর সময় গড়িয়ে গেছে কুড়ি কুড়ি বছরের পার এখন আর সময় আছে কার এসব নিয়ে ভাববার... (কবিতা আত্মকথা) আবার কবি শতদল আচার্য লিখছেন - একদিন সংসদে হবে উনিশের শ্রদ্ধাঞ্জলি। ভারত জুড়ে উনিশের বেদি হবে পথে পথে... এসব আমার স্বপ্ন স্বপ্ন দেখা শিখিয়েছে উনিশ... (কবিতা - উনিশের গান) এভাবেই কবিতায় কবিতায়, স্মৃতিচারণে, প্রবন্ধ-নিবন্ধে প্রত্যয় ও আত্মবিশ্বাসের সুরে, কথায়, স্বপ্ন দেখার অভিলাষায়, অধিকারে সেজে উঠেছে বরাক উপত্যকা নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্রের নিয়মিত ‘বরাক নন্দিনী’ পত্রিকার সাম্প্রতিক চতুর্বিংশতিতম কৃষ্ণচূড়া উৎসব সংখ্যা, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। প্রথমেই যে বিষয়টি নজরে এল তা হচ্ছে পত্রিকার আকার। এবারই প্রথম বারের মতো প্রচলিত ঢাউস সাইজের পত্রিকাটি হয়ে উঠেছে তন্বী তথা পঠনবান্ধব। এমন একটি দাবি সম্ভবত পাঠকমহল থেকে উচ্চারিত হয়েছিল সম্প্রতি। সেই সাড়ায় সহমত হয়েছেন সম্পাদকমণ্ডলী। এ সংখ্যার প্রচ্ছদে বীর শহিদ কমলা ভট্টাচার্য ধরা দিয়েছেন জ্যোতির্ময়ী আলোকে আলোকিত হয়ে। মূলত উনিশ নিয়েই ‘বরাক নন্দিনী’

মরমি কবিতার গরজি ছবিঘর 'হমাজি'

একটি A3 আকারের কাগজকে ত্রিভাজে মোট ছয় পৃষ্ঠার রঙিন ত্রিভাষিক লিফলেট পত্রিকা ‘হমাজি’। বেরোচ্ছে ২০২২ সাল থেকে। প্রকাশিত হয়েছে সাম্প্রতিক ৪র্থ সংখ্যা, জুন ২০২৪। পুরো কর্মকাণ্ডের একটি রূপরেখা পাওয়া যায় প্রথম পৃষ্ঠার সম্পাদকীয় থেকে - ‘সাহিত্যই সমাজের দর্পণ। তাই প্রতিটি সমাজের প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব সাহিত্যের ভাণ্ডারকে ভরপুর করে তোলা। মহিলাদেরও সেই দায়িত্বের ভার নিতে গিয়ে ‘হমাজি’ ত্রিভাষিক সাহিত্য পত্রিকার উদ্ভব। ‘হমাজি’র প্রতিশব্দ ‘বান্ধবী’। এই সাহিত্য পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যাটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর করিমগঞ্জ বইমেলা… সেখানে উন্মোচন করা হয়। বর্তমান সংখ্যায় প্রকাশিত কবিতাগুলো প্রেম, আক্ষেপ, হারিয়ে যাওয়ার বেদনা, সংকটের বেড়াজালে আবদ্ধ মানুষের আর্তি তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমানের অস্থির এক সময়ের বার্তাও বহন করে। কবিতা শুধু শিল্পের জন্য নয়, কবিতার দায়বদ্ধতা অনেক। কবিতা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কথাও বলবে, রাস্তার পাশে খাদ্য কুড়িয়ে খাওয়া ছেলেটার কথাও বলবে কবিতা…।’ নিঃসন্দেহে স্বল্প পরিসরের মধ্যেও এক ব্যতিক্রমী সম্পাদকীয়। বস্তুত শুধু সম্পাদকীয়ই নয়, পুরো পরিকল্পনাই এক অসাধারণ গরজ ও নান্দনিকতার বার্তা

সমকালিক সাহিত্যে স্বাতন্ত্র্যে ভাস্বর কবি, গল্পকার অমিতাভ সেনগুপ্ত

‘ কবিই তো ঈশ্বর , ইশ্বর কবি আঁধারিতে ইন্দু , দিবসে রবি । ’ শাস্ত্রে আছে ঈশ্বর নিজে নাকি একজন কবি । আবার প্রত্যেক কবিই নাকি এক একজন ঈশ্বর । কবির সংজ্ঞা নিরূপণ যার তার কাজ নয় । যাঁরা বলেন সবাই কবি নয় , কেউ কেউ কবি - তাঁরাও হয়তো প্রকৃত কবির সংজ্ঞা নিরূপণে অপারগ । কোটি কোটি মানুষের মধ্যে কবিতা লিখতে পারা মানুষের সংখ্যা এতটাই সীমিত যে তাঁদের সবাইকেই কবি হিসেবে ধরে নিলেও মহাভারতখানা একেবারেই যে অশুদ্ধ হয়ে পড়বে তেমন আশঙ্কা করার কিছু নেই । প্রতিষ্ঠিত কবিদের অবশ্য এতে আপত্তি থাকারই কথা তবে বাকি জনসংখ্যার কাছে এটা এমন কোনও দোষণীয় ব্যাপার নয় । কবি অমিতাভ সেনগুপ্ত সেই অর্থে ঈশ্বরই বটে । তাঁর কবিতায় ঈশ্বরের অস্তিত্ব, ঈশ্বরের প্রতি দায়বদ্ধতা, সমর্পণ, অভিযোগ ইত্যাদি প্রতিটি আঙ্গিকের উপস্থিতি অনুভব করা যায়। ঈশ্বরকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে যাঁরা উপস্থাপন করেন, বলা ভালো বিনির্মাণ করেন তাঁদের কৃতকর্মকেও খুঁজে পাওয়া যায় অমিতাভের কবিতায়। কবি হিসেবে কতটুকু প্রতিষ্ঠিত অমিতাভ ? কেনই বা তাঁকে নিয়ে কলম ধরা ? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলেই অবধারিত ভাবে এসে পড়ে আনুষঙ্গিক বেশ কিছু প্রশ্ন। এর বিচার করবে কে ? এক

বাংলাদেশ - কিছু অবলোকন, মিথ্যাচার ও অসহিষ্ণুতা

প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অশান্তি, হিংসা ও পালাবদলের পালা চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এ নাকি নব্য স্বাধীনতা। এই নিয়ে বহুবার স্বাধীন হল দেশটি, তবু কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছোতে পেরেছে কিনা তা সে দেশের জনগণই ভালো বলতে পারবেন। বাংলাদেশ নিয়ে মাতামাতি আমাদের খানিকটা বেশিই। সে হবে নাই বা কেন ? পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে কি আর চোখ কান বুজে ঘুমোনো যায় ? তবে সব ব্যাপারে নাক গলানো ঠিক নয় জেনেই আমরা কিছু কিছু ব্যাপারে অপেক্ষাকৃতভাবে নীরব থাকি। একটি দেশের সরকার কার হবে, কে হবেন দেশনেতা সে বিচারের ভার সংশ্লিষ্ট দেশটির জনগণই ঠিক করবেন। আমাদের সেখানে বলার কিছু নেই। কিন্তু এবারের ঘটনাপ্রবাহ এমনই যে এই ব্যাপারেও বেরিয়েই এল কিছু কথা, আমাদের অন্তর থেকে, স্বতঃস্ফুর্ত ভাবেই। এর পিছনে যে কারণটি মুখ্য তা হল বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিমূর্তি ভেঙে ফেলার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ঈশান বাংলার অধিবাসী হওয়ার সূত্রে ১৯৭১ এর মুক্তি সংগ্রাম ও তৎকালীন পরিস্থিতির কথা আমরা আমাদের পূর্বজদের মুখ থেকে শুনেছি। কীভাবে একটি দেশের স্বাধীনতা আনতে মুজিবের অবদানকে আজ অস্বীকার করা হচ্ছে সে কারোও বোধগম্

কবি বিজিৎকুমার ভট্টাচার্য স্মরণ সংখ্যা ‘ঈশান’

জন্মান্তর থাক বা না থাক আমি কিন্তু জন্ম নেব পুনর্বার এই বলে রাখি তোমাকেই হল না দেখা পুরোপুরি আরো কত ভালোবাসা বাকি । … ( কবিতা - জন্মান্তর ) কিংবা - তুমি ফিরে এসো এ কথা বলেনি কবি কোনোদিন, যখন বলার মতো হয় এই কথা, তার আগে সকলই হারায়। কবি চেয়েছিল তুমি বলে যাবে কেন এই যাওয়া সেই চাওয়াটুকু এতকাল পরে ছাড়ে না যে তারে।... (কবিতা - কবি একা একা খোঁজে) এই ইহকাল, এই সংসারনদীর বয়ে যাওয়া, জীবন আর মরণকে আবহে অনুষঙ্গে ভিন্নতর চোখে প্রত্যক্ষ করা, মৃত্যুকে নিজের মতো করে অনুশাসনের মোড়কে প্রস্ফুটিত করার মতো দৃপ্ত সাহসী উচ্চারণ যাঁর কবিতায়, গদ্যে প্রত্যক্ষ করে এসেছে ঈশানের এই সাহিত্য-বিশ্ব সেই যুগন্ধর কবি বিজিৎকুমার ভট্টাচার্যের প্রয়াণ যেন স্তব্ধ করে দিয়ে গেল কোনও এক কিংবা একাধিক নাম না জানা নদীর সহজ চলার পথ। নদীকে তিনি দেখেছিলেন এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টিতে। তাঁর অসংখ্য কবিতায় ফুটে উঠেছে নদীর অসংখ্য আবহ। জীবন নদীর চলার পথে তিনি এঁকেছিলেন জীবনবোধের এক ব্যতিক্রমী চিত্রপট। সেই ব্যতিক্রমী কবি সাহিত্যিকের সদ্য প্রয়াণের পর তাঁরই স্মৃতি রোমন্থনে, তাঁকে উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে প্রকাশিত হয়েছে ‘ঈশান’ পত্রিকার

বৃষ্টি হলেই কবিতা-ছাঁট পাঠিয়ে দিই তোমার ছাদে...... ‘অনর্থক কাটাকুটি’

এখানে বৃষ্টি আসে না প্রায়শই, গুমোট জমে আছে মেঘও–   নারকেলের মালার মতো ছোট দুই টিলার ওপরে ঝুঁকে আছে আকাশ স্তব্ধ চরাচর, উন্মুক্ত জমি- কাঁধে লাঙল, কৃষক এগোন নির্দ্বিধায়   মুখ রাখি নদীখাতে, সোজা হয়ে আসে শিরদাঁড়া বর্ষা নামে দিগন্তে– মেতে উঠি কৃষিকাজে। (কবিতা - কৃষিকাজ) রূপকের এমন সার্থক প্রয়োগ সহজে দেখা যায় না। বিশেষ করে এতদঞ্চলের কাব্য-কবিতায়। তবে শুধুই রূপক কিংবা দ্যোতনা নয়, রত্নদীপ দেব-এর কবিতার সতর্ক পাঠে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় অজস্র শব্দ ও শব্দদ্বিত্বের এক অসাধারণ প্রয়োগ, এক জাগলারি যা স্পর্শ করে যায় পাঠক মন। অনর্থক তো নয়ই, শব্দের কাটাকুটিও নয় - বলা ভালো শব্দের কারিকুরি যা আকছার জুড়ে আছে পঙ্‌ক্তির পর পঙ্‌ক্তির শরীরে। গ্রন্থনামের উল্লেখ থাকা কবিতাটিও এমনই এক অনাবিল উপস্থাপন - ছুঁয়ে দেখেছি নীহারিকা জলের কাছে পুনর্জন্মের স্বাদ– ভার্সিটির পথে অন্ধকার চিবুক ধোয়া সন্ধ্যায় তোমার নীরব নিঃশ্বাস, আর বাকি সব অনর্থক কাটাকুটি রাতের পালকেও এরপর খুঁজে পাই অস্পষ্ট ঘুমের দাগ   তবু, বৃষ্টির গন্ধে ভোরের ইশারা এলে আরও জলসুখে নোঙর তুলি... (কবিতা - জলসুখ)। ‘অনর্থক কাটাকুটি’। কবি রত্নদীপ দেব-এর সদ্য প্রকাশিত