Skip to main content

মরমি কবিতার গরজি ছবিঘর 'হমাজি'


একটি A3 আকারের কাগজকে ত্রিভাজে মোট ছয় পৃষ্ঠার রঙিন ত্রিভাষিক লিফলেট পত্রিকা ‘হমাজি’। বেরোচ্ছে ২০২২ সাল থেকে। প্রকাশিত হয়েছে সাম্প্রতিক ৪র্থ সংখ্যা, জুন ২০২৪। পুরো কর্মকাণ্ডের একটি রূপরেখা পাওয়া যায় প্রথম পৃষ্ঠার সম্পাদকীয় থেকে - ‘সাহিত্যই সমাজের দর্পণ। তাই প্রতিটি সমাজের প্রত্যেক মানুষের দায়িত্ব সাহিত্যের ভাণ্ডারকে ভরপুর করে তোলা। মহিলাদেরও সেই দায়িত্বের ভার নিতে গিয়ে ‘হমাজি’ ত্রিভাষিক সাহিত্য পত্রিকার উদ্ভব। ‘হমাজি’র প্রতিশব্দ ‘বান্ধবী’। এই সাহিত্য পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যাটি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর করিমগঞ্জ বইমেলা… সেখানে উন্মোচন করা হয়। বর্তমান সংখ্যায় প্রকাশিত কবিতাগুলো প্রেম, আক্ষেপ, হারিয়ে যাওয়ার বেদনা, সংকটের বেড়াজালে আবদ্ধ মানুষের আর্তি তুলে ধরার পাশাপাশি বর্তমানের অস্থির এক সময়ের বার্তাও বহন করে। কবিতা শুধু শিল্পের জন্য নয়, কবিতার দায়বদ্ধতা অনেক। কবিতা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কথাও বলবে, রাস্তার পাশে খাদ্য কুড়িয়ে খাওয়া ছেলেটার কথাও বলবে কবিতা…।’ নিঃসন্দেহে স্বল্প পরিসরের মধ্যেও এক ব্যতিক্রমী সম্পাদকীয়। বস্তুত শুধু সম্পাদকীয়ই নয়, পুরো পরিকল্পনাই এক অসাধারণ গরজ ও নান্দনিকতার বার্তা বহন করে।
ছয় পৃষ্ঠার সন্নিবিষ্ট খতিয়ান এরকম - প্রথম পৃষ্ঠায় সম্পাদকীয় ও তিনটি শুভেচ্ছা বার্তা। যাঁরা পাঠালেন তাঁরা হলেন করিমগঞ্জ থেকে লেখক ও সমাজকর্মী গীতা মুখার্জি, ডিস্ট্রিক্ট প্রেস ক্লাবের সভাপতি তথা ইংরেজি ‘দ্য বরাক ক্রনিকল’ সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক পি কে রায় এবং ড. ভূপেন হাজরিকা সাংস্কৃতিক সমন্বয় মঞ্চ, গুয়াহাটির সম্পাদক প্রভাত চন্দ্র দাস। ‘হমাজি’ প্রকাশিত হয় বাংলা, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ও অসমিয়া ভাষার সাহিত্য সম্ভারের সমন্বয়ে। এ সংখ্যায় আছে মোট ২৮ টি কবিতা। এর মধ্যে রয়েছে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষায় লেখা ১১ টি, অসমিয়া ভাষার ৯ টি এবং বাংলা ৮ টি কবিতা। 
ভিন্ন স্বাদের কবিতা যাঁরা লিখেছেন তাঁদের মধ্যে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষায় রয়েছেন অনিতা সিংহ, অপর্ণা সিংহ, অর্চনা, তপতী সিংহ, বিনিতা সিংহ, সুচরিতা সিংহ (বেবি), পূর্ণিমা সিংহ, তপতী সিংহ, বিজয়লক্ষ্মী সিংহ, স্বপ্না সিংহ (বাসন্তী) ও পহেলী মুখার্জী। অসমিয়া কবিতা লিখেছেন বেবী সোনোয়াল হাজরিকা, রুণুমা দাস, অলকা মহন্ত, ববী বড়া, ভূমিকা লহকর, মণিকা আইমণি, লীনা শর্মা, ড. বন্দনা খাটনিয়ার ও ড. অপরাজিতা ডেকা। বাংলা বিভাগে আছেন টুম্পা ব্যানার্জী, নিবেদিতা চক্রবর্তী, সুমা গোস্বামী, দেবলীনা কর, রূপালী দত্ত, ছন্দা দাম, অকেলা মধুশ্রী ডি ও চিত্রা চ্যাটার্জী।
যে বিষয়টি এই পত্রিকার সবচাইতে উল্লেখযোগ্য তা হল পত্রিকার অলংকরণ। পৃষ্ঠাসংখ্যা হিসেবে বিশাল এই সম্ভারে প্রত্যেক কবির ছবি ও ঠিকানা রয়েছে কবিনামের সঙ্গে এবং সবকিছুই বিন্যস্ত অলংকরণেও। পত্রিকা নামে রয়েছে একটুকরো প্রচ্ছদচিত্রও। বাংলা বিভাগে স্থানীয় কবিদের অভাব পরিলক্ষিত হলেও শুদ্ধ বানানে সার্বিক এক মনোমোহা সংকলন ‘হমাজি’।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
সম্পাদক - সুচরিতা সিংহ, মূল্য - ৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৬০০০০৪৭০৯৬

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়

নান্দনিক ও গোছালো আয়োজন দ্বিতীয় সংখ্যা ‘সম্পর্ক’

‘…বলা যায়, একটি বই-ই পারে গোটা বিশ্বের কিছু জীর্ণ প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিতে। বইয়ের এই অমোঘ শক্তি সর্বজনবিদিত। বেদের ঋষি থেকে শুরু করে সমকালীন সময়ের অনেক লেখক তাঁদের সৃষ্টিসম্ভার দিয়ে কিছু প্রচলিত ধারণাকে সময়ে সময়ে বদলে দিয়ে এক নতুন পথের সন্ধান দিতে সক্ষম হয়েছেন। বই পড়ার মধ্যে রয়েছে এক অপার্থিব আনন্দ। বই আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত করে। এই যান্ত্রিকতার যুগে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে বিচলিত মানুষের বইয়ের প্রতি রয়েছে অকৃত্রিম টান। আজকের সামাজিক মাধ্যমের বাড়বাড়ন্ত অবস্থায় বই পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেলেও, বই প্রকাশের কাজটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। বরং পূর্বের তুলনায় তা অনেকটাই বেড়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে পাঠকের সংখ্যা বই প্রকাশের তুলনায় তেমন হারে বৃদ্ধি পায়নি। এই পাঠক সংকট বিশ্বব্যাপী…।’ - এমনই কিছু মূল্যবান তত্ত্ব ও তথ্যের সমাহারে এক প্রাসঙ্গিক সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের মধ্য দিয়েই শ্রীগণেশ হল বাংলা সাহিত্য সভা, অসমের লংকা শাখার দ্বিতীয় বার্ষিক মুখপত্র, বিশ্ব বই দিবস সংখ্যা ‘সম্পর্ক’ -এর । সৌরভ চৌধুরীর নান্দনিক প্রচ্ছদটি প্রথমেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে পাঠকের। এবং এই নান্দনিকতা ছড়িয়ে আছে শেষ পৃষ্ঠা অবধি