Skip to main content

কলকাতায় উন্মোচিত বৃষ্টিকথা



অবশেষে বৃষ্টিকথার ঢেউ আছড়ে পড়লো সাহিত্য সংস্কৃতির পীঠস্থান কলকাতায়ও। কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট অব কালচারের তুরীয়ানন্দ হলে ১৩ই নভেম্বর ২০২১ তারিখে ISISAR (International Society for Intercultural Studies And Research), কলকাতা আয়োজিত (সহায়তায় সুচেতনা শিলচর, প্রোগ্রেস লিটারারি ক্লাব এবং প্রাচ্য পাশ্চাত্য) "ওয়ার্ল্ড থিঙ্কারস্ এন্ড রাইটার্স পীস মীট" শীর্ষক অনুষ্ঠানে একঝাঁক গুণীজনের উপস্থিতিতে পুনর্ন্মোচিত হলো বরাকের সাহিত্য মাইল ফলকবৃষ্টিকথা
বরাকের ২৫৩ জন কবির বৃষ্টি বিষয়ক কবিতা সংকলন 'বৃষ্টি কথা' বইটি উন্মোচন করেন বিশিষ্ট কবি, অনুবাদক এবং পরিব্রাজক অমরেন্দ্র চক্রবর্তীউন্মোচনের পূর্বে বৃষ্টিকথানিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেন সঞ্চালক তথা বিশিষ্ট কবি, ডাক্তার সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়। এ উপলক্ষে বরাকের কবি সাহিত্যিকদের এক প্রতিনিধি দলও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন কল্লোল চৌধুরী, সুপ্রদীপ দত্তরায়, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ও দোলনচাঁপা দাসপাল। আকস্মিক মাতৃবিয়োগের ফলে বরাকের বিশিষ্ট কবি তথা সুচেতনার কর্ণধার সুশান্ত ভট্টাচার্য ও তাঁর সহধর্মিণী কবি পম্পা ভট্টাচার্য এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি। এর বাইরেও কলকাতায় বাসরত বরাকের একঝাঁক কবি ও বাচিক শিল্পীদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এদিনের অনুষ্ঠান। ‘বৃষ্টিকথা’ উন্মোচন চলাকালীন সঞ্চালকের অনুরোধে বরাক সংশ্লিষ্ট সবাই এবং উদ্যোক্তারাও মঞ্চে উঠে সাক্ষী হয়ে থাকেন এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের। নিঃসন্দেহে এই মুহূর্ত বরাকবাসীর জন্য এক গর্বের মুহূর্ত হয়ে রইল।
‘বৃষ্টিকথা’র বাইরেও এদিনের অনুষ্ঠানে উন্মোচিত হয় বরাকের উপরোক্ত কবি সাহিত্যিকদের সদ্য প্রকাশিত মোট পাঁচটি গ্রন্থ। কল্লোল চৌধুরীর কাব্যগ্রন্থ ‘মেহগনি অন্ধকার’ উন্মোচন করেন খ্যাতনামা ওড়িয়া কবি স্বপ্না বেহেরা। কল্লোল চৌধুরী ও পঞ্জাবের কবি জার্নেল সিং আনন্দ-এর যৌথ সম্পাদনায় লিখিত গ্রন্থ The Walls of Flesh উন্মোচন করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক তথা কালজয়ী সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের পুত্র অমিতাভ সিরাজ। সুপ্রদীপ দত্তরায়ের কাব্যগ্রন্থ সময় অসময়উন্মোচন করেন বিশিষ্ট কবি, অনুবাদক, সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ কাওসার জামালবিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কাব্যগ্রন্থ মাটির পৃথিবীউন্মোচিত হয় ISISAR এ সভাপতি তথা বিদগ্ধ সাহিত্যিক ডঃ শান্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়-এর হাত ধরে। দোলন চাঁপা দাসপালের গল্প সংকলন রামধনুর উন্মোচন করেন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক শাহজাদ ফিরদৌস। যাঁদের বই উন্মোচিত হয় তাঁরা সবাই মঞ্চে তাঁদের স্বরচিত কবিতাও পাঠ করেন। বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ‘সুচেতনা’র হয়ে উপস্থিত গুণীজনদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।
এছাড়াও কবিতা পাঠ করেন বরাকের কবি অমিতাভ দত্ত, অনিতা দাস ট্যান্ডন, কপোতাক্ষী ব্রহ্মচারী চক্রবর্তী, কুন্তলা দে, সুজাতা চৌধুরী এবং অলক চক্রবর্তী। সবার হাতে উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে তুলে দেওয়া হয় শংসাপত্র এবং ইসিসারের জার্নাল।
ISISAR একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। পৃথিবীর নানা প্রান্ত জুড়ে গ্লোবাল পিস এবং আগামী পৃথিবীকে দুষনমুক্ত করে মানুষের বাসযোগ্য করে তোলার উদ্দেশে মানুষে মানুষে শিল্প সংস্কৃতির মেল বন্ধন ঘটানোই এই সংস্থার কাজ। এই সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আছেন বিদগ্ধ শিক্ষাবিদ ডঃ শান্তিলাল চট্টোপাধ্যায়, যিনি তাঁর শিক্ষা, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একাই এক প্রতিষ্ঠান। আছেন নিরলস পরিশ্রমী বিদগ্ধ কবি চিকিৎসক শ্রী সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় যিনি ছিলেন এদিনের অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায়ও। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকার বিশিষ্ট সমাজকর্মী Dr.Richard Dale Sharp. এঁদের ছাড়াও মঞ্চে এদিন উপস্থিত ছিলেন ঝাড়খণ্ডের সাঁওতালি ভাষার লেখক জবা মুর্মু।  রূপান্তরকামী শিল্পীদের প্রতি সম্মাননা জ্ঞাপন এবং তাঁদের পরিবেশিত অনুষ্ঠান ছিল এক কথায় অনবদ্য। 
পরদিন 'হাওড়া কবিতা উৎসব' উপলক্ষে ব্রহ্মানন্দ ভবনে আয়োজিত কবি অরুণ সরকার স্মৃতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত কবিতা পাঠের আসরেও আমন্ত্রিত হয়ে নিজেদের স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন বরাকের প্রতিনিধিগণ এবং কবি অনিতা দাস ট্যান্ডন। এই অনুষ্ঠানের আয়োজকরা ছিলেন কলকাতার যিশু’, ‘ইসিসার’, ‘পুরাশ সারঙ্গএবং মেটেফুল প্রত্যেক আমন্ত্রিত অতিথিদের হাতে উদ্যোক্তাদের তরফ থেকে তুলে দেওয়া হয় সম্মাননা স্মারক, শংসাপত্র এবং পাটজাত ঝোলাব্যাগ। বিকেলে এক সান্ধ্য আসরে বৃষ্টিকথার উপস্থিত কবিরা সবাই এক আড্ডায় মিলিত হন কবি অমিতাভ দত্তের কামালগাজিস্থিত বাসভবনে। আড্ডার বাইরেও কবিতা পাঠ করেন বৃষ্টিকথার সব কবিরা - বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, কল্লোল চৌধুরী, সুপ্রদীপ দত্তরায়, দোলনচাঁপা দাসপাল, অমিতাভ দত্ত, অনিতা দাস ট্যান্ডন, কুন্তলা দে, উজ্জ্বল দত্ত চৌধুরী এবং অরূপ রতন আচার্য।
এর আগে গুয়াহাটিতেও এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে মিলিত হয়েছিলেন বৃষ্টিকথার গুয়াহাটিবাসী কবিরা। এভাবেই বরাকের সব কবিদের এক মঞ্চে নিয়ে আসার জন্য বৃষ্টিকথার যে উদ্যোগ তা বাস্তবায়িত হতে চলায় আনন্দ ও স্বস্তি প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট উদ্যোগীরা।
- - - - - - - - - - -
সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক।

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়