Skip to main content

ভালোবাসা... আজও


বসার জায়গায় এদিকে ওদিকে সাজিয়ে রাখা বেঞ্চগুলো সব চার-চেয়ারযুক্ত অর্থাৎ চারজনের বসার উপযুক্ত ধাতুনির্মিত হওয়ার সুবাদে ভালো করে হেলান দিয়ে বসে থাকা যায় না ক্রমাগত নীচের দিকে পিছলে চলে আসে শরীর তবু বসে থাকতে হয় এখানে, এই বেসরকারি হাসপাতালের অপেক্ষাগৃহে বসে থাকাটাই একমাত্র কাজ মাঝে মাঝে খবরাখবর কিছু এলে উঠে গিয়ে কাজ সমাধা করে ফিরে এসে আবার সেই বসে থাকা পরিচিত কিংবা কাছের মানুষ কেউ থাকলে কথাবার্তায় মজে থাকা যায় অন্যথা নীরবে একাকী শুধুই কালযাপন
তেমনি বসে রয়েছিল সৌম্যদীপ, ওরফে কিট্টু কিট্টু অবশ্য ডাকনাম তবু খানিকটা অস্বস্তি হতো তার প্রথম প্রথম অর্থহীন একটা নাম কে যে রেখেছিল শুনলে মনে হয় যেন কিপ্টু অর্থাৎ হাড়কিপ্টে অথচ আদপেই তা নয় সৌম্য তাছাড়া সৌম্যদীপের সাথে কিট্টুর কী বা সাদৃশ্য ? ভালো নামটাকে কেটেছেঁটে কত কিছুই তো হতে পারত এই যেমন - সোমু, সৌম্য, সোম, দীপ ইত্যাদি…… তবে এই একটি জায়গায় মানুষ সত্যিই বড় অসহায় নিজের সবচাইতে বড় সম্পদের ক্ষেত্রেও নিজের কিচ্ছুটি করার থাকে না অন্যের ইচ্ছেয় নামকরণ হয় শুধু মুখে মুখে নয়, সারা জীবনের জন্য একেবারে দলিলপত্র করে যার নামকরণ হচ্ছে বড় হয়ে সে কীভাবে নেবে নামটি সে চিন্তা কারো মাথায় আসেই না যেন কিছু একটা নিজেদের পছন্দ অনুসারে ঠুকে দিলেই হল তাই হয়েছিল সৌম্যের বেলায়ও এরপর শৈশবে একটা সময় এলে সবাই নিজের নামটি জানতে পারে সৌম্যও জেনেছিল একদিন এবং মেনেও নিয়েছিল স্বাভাবিক ছন্দেই তবে ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সাথে সাথে নিজের নামের প্রতি একটা অপছন্দের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছিল ভেতরে ভেতরে এভাবেই এক টানাপোড়েনের মধ্যে অতিবাহিত হল অনেকগুলো বছর এরপর একটা সময়, সময়ের সাথে গা সওয়া হয়ে গেছে এসব থাক বাবা, নামে কী এসে যায় তবু কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে সে আজও বলে - সৌম্যদীপ, সৌম্য ভালো নামটির সঙ্গে সঙ্গে নিজের পছন্দের ডাকনামটিও বলে দেয় ইচ্ছে করেই এর ফলে এখন অনেকেই; অন্তত বাইরের লোকের কাছে - যারা অনেকটাই কাছের, তারা সৌম্য বলেই ডাকে
যে দেয়ালটির সঙ্গের চেয়ারে বসেছিল সৌম্য, তার পাশের দেয়ালটির উল্লম্বে ঘেঁষে থাকা অন্য একটি চারের-এক চেয়ারে মলিন মুখে বসে রয়েছে নন্দিতা, ওরফে নীতা - এবং সংক্ষেপে নীতু প্রথম দিন থেকেই এই নামে সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিল সৌম্য অর্থগত না হলেও অন্তত ধ্বনিগত সাযুজ্য তো আছে শুধু নামের সাদৃশ্যই নয় সৌম্য খুঁজে পেয়েছিল আরোও অনেক কিছুই সেসব কথা ভাবলে অজানিতেই বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস জীবনপথের দীর্ঘ সফর শেষে আজ, এই মুহূর্তেও মুহুর্মুহু দীর্ঘশ্বাস ফেলেই চলেছে সৌম্য নীতুরও কি তাই ?
গতকাল বিকেলেই ফোনটা এসেছিল ফোন করেছিল সঞ্জীব কণ্ঠে একরাশ উৎকণ্ঠা - “সৌম্য, কোথায় আছিস এখন ?” সাধারণত প্রথম প্রশ্নটা থাকে - কেমন আছিস ? এক্ষেত্রেকোথায় আছিসপ্রশ্নে স্বাভাবিকভাবেই সৌম্য বুঝে যায় যে ব্যাপারটা গম্ভীর ধরনের কিছু হবে এবং তাই সঞ্জীবের গলায় উদবেগের ছোঁয়া স্পষ্ট অনুভব করে সৌম্য জীবনের এক দীর্ঘ সময় ধরে সহপাঠী হওয়ার সুবাদে হাড়ে মজ্জায় চেনে একে অপরকে
- অফিসে আছি, বল… 
- শোন, কাল নীতুর বরের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে
- বলিস কি ? - প্রায় চিৎকার করে বলতে গিয়েও এক লহমায় নিজেকে যতটা সম্ভব সংযত করে সৌম্য
- হ্যাঁ রে রাত প্রায় আটটায় এমনটা হল
- এখন কোথায় তোরা ?
- বলছি শোন - রাতেই হাসপাতালে নিয়ে যেতে ওরা বাইরে পাঠানোর সুপারিশ করল তাই প্রায় এগারোটা নাগাদ ওরা রওয়ানা হয়ে গেছে আমার শরীরটা ঠিক সায় দিল না, তাই যেতে পারিনি তাছাড়া ভাবলাম তুই তো সোনাপুরেই আছিস কথা হয়েছে নাইটিঙ্গল হাসপাতালের সঙ্গে পৌঁছোতে পৌঁছোতে সকাল দশটার মতো হয়ে যাবে
- সঙ্গে কারা আসছে ? এবার সৌম্যর কণ্ঠে উদবেগের পাশাপাশি খানিক কম্পনও স্পষ্ট শুনতে পেল সৌম্য নিজেই সম্ভাব্য আগন্তুকের চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই সম্ভবত এমন বিপত্তি
- নীতু আর ওর ছেলে অভিষেক তুই একটু প্লিজ সময় মতো হাসপাতালে থাকিস ভাই
- সে আর বলতে ? তুই চিন্তা করিস না তুই এক কাজ কর, অভিষেকের ফোন নম্বরটা আমাকে পাঠিয়ে দিস আমি থাকব সেখানে যথাসময়ে আর আমার নম্বরটিও ওকে দিয়ে রাখিস
- ঠিক আছে - বলেই ফোন কেটে দিল সঞ্জীব
বার্তালাপ শেষ হতেই সৌম্যর সামনে একসাথে দুটি বিষয় এসে একে অপরের উপর চেপে বসল প্রথমত কাল সকালেই অফিসে ফোন করে ছুটি ম্যানেজ করতে হবে আর দ্বিতীয়ত হাসপাতালে সে কী করে মুখোমুখি হবে নীতুর মনে মনে হিসেব কষে সৌম্য প্রায় চারটি দশক পর দেখা হবে নীতুর সঙ্গে অথচ এমন এক বিচিত্র পরিবেশে দেখা হতে যাচ্ছে যা কল্পনায়ও আসে না কারো কী বলবে সে নীতুকে ? কী বলে সাহস জোগাবে ?
হাজারো প্রশ্ন এসে ঘুরপাক খাচ্ছে মাথার মধ্যে এতদিন পর দেখা হবে কেমন দেখতে হয়েছে নীতু এখন, এই যৌবনোত্তীর্ণ সময়ে ? ছেলেটাই বা কেমন ? আজকের যুগের উদ্ধত যুবকদের মতো ? নাকি নম্র, বিনীত ? দেখতেই বা কার মতো ? নীতুর সেই চার দশক আগের চেহারাটাই এখনও মনের মণিকোঠায় সযত্নে রক্ষিত আছে সৌম্যর আয়নায় নিজের চেহারার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে না, আগেরই মতো আছে সে এখনও; যদিও চেহারায় এসেছে ভারিক্কি ভাব আর চুল দাড়িতে পাক ধরেছে প্রকৃতিরই নিয়মেতবু গঠন কিংবা মুখাবয়ব মোটামুটি একই আছে। পালটে যায়নি আমূল। নীতুও কি আছে আগেরই মতো ? নাকি বয়স এসে বদলে দিয়েছে সব কিছু ?
সে রাতে স্বভাবতই আর ঘুম এল না ঠিকঠাক ওই শেষরাতের দিকে যা কিছু সময় ঘুমিয়েছে সকালে ঘুম ভাঙতেই ঘড়ির দিকে তাকাল সৌম্য সকাল সাড়ে ছটা বাজে মাত্র আরো খানিকটা সময় বিছানাতেই গড়িয়ে আটটা নাগাদ উঠে প্রাত্যহিক কাজকর্মগুলো তড়িঘড়ি শেষ করে ফোন করল অফিসে এক দিনের ছুটি নিয়ে এবার তৈরি হতে লাগল হাসপাতালে যাবার জন্য নীতুর ছেলের কোনো ফোন আসেনি এখনও রাস্তার সফরের ধকলে কেমন আছে রোগী ? একবার ফোন করা ঠিক হবে ভেবে নম্বরটা লাগালো নীতুর ছেলের কিন্তু কানেক্ট হল না নেটওয়র্ক এর বাইরে বলছে তার মানে ওরা এসে পৌঁছোতে খানিকটা সময় আরোও লাগবে
ধীরে ধীরে তৈরি হয়ে এবার হাসপাতালের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে সৌম্য ওখানে গিয়ে পৌঁছোতেও কিছুটা সময় তো লেগেই যাবে রাস্তায় খুব জ্যাম হয় আজকাল বস্তুত ভেতরে ভেতরে এক অস্বস্তির বন্ধনে জড়িয়ে পড়ছে সৌম্য এ এমন এক অস্বস্তি, এমন এক পরিস্থিতি যার কোনও ব্যাখ্যা নেই সৌম্যর কাছে এর থেকে বেরিয়ে আসারও কোনো পথ নেই হৃদয়ের এক কোনায় সযত্নে গচ্ছিত রাখা একটুকরো ভালোবাসা, প্রথম প্রেমের অমর অনুভব - এ তো হারিয়ে যাবার নয় কখনও এর অবাধ গতিপথ সম্ভবত চিতা অবধি বিস্তৃতপাশাপাশি এক কঠোর বাস্তববড় বিপন্ন এই সময়। 
###
ঠিক সময়েই হাসপাতালে পৌঁছে গেল সৌম্য এবং প্রায় একই সময়ে নীতুদের অ্যাম্বুল্যান্সটিও এসে দাঁড়াল রিসেপশনের সামনে নিজের গাড়িটাকে পার্কিং-এ রেখে সৌম্য ছুটে এল রিসেপশনে ততক্ষণে ইমার্জেন্সি স্টাফরা এসে রোগীকে স্ট্রেচারে তুলে নিয়ে ভিতরে নিয়ে যেতে উদ্যত হয়েছে কাছেই দাঁড়িয়ে নীতু ও ওর ছেলে এই মুহূর্তে অন্য কিছু ভাবার সময় নেই নীতুর দিকে এক পলক তাকিয়েই ছেলেকে কাছে ডেকে সৌম্য বলে - আমি সৌম্য নমস্কার করে অভিষেক এগিয়ে যায় কাউন্টারের দিকে কিছু ফর্মালিটি সেরে নিতে হবে প্রথমেই সৌম্য এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় অভিষেকের কাছে নীতু দাঁড়িয়ে থাকে পিছনে সৌম্যর চোখ এড়ায় না নীতুর উদাস চেহারা এত বড় একটি সংকট তার উপর সারা রাতের ধকল অ্যাম্বুল্যান্সের পিছনে ঠায় বসে থেকে এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয় সেই ধকলের ছবিও ফুটে উঠেছে নীতুর চেহারায় অথচ
সৌম্যর মনমানস স্ন্যাপশটের মতো ক্ষণে ক্ষণে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে যেন টেনিস বলের মতো এদিক ওদিক ঘুরপাক খাচ্ছে নীতুর একটি অপাপবিদ্ধা কোমল, সহজ চেহারাটাই একদিন দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল সৌম্যর এ চেহারাকে অতি উজ্জ্বল কিংবা সুন্দরীসুলভ বলা যায় না হয়ত, তবু কোথায় যে লুকিয়ে রয়েছিল এক দুর্বার ভালোমানুষি আজও সেই রহস্য সৌম্যর কাছে এক অনির্ণীত রহস্য হয়েই থেকে গেছে বয়সের বিস্তর ফারাক সত্ত্বেও এক শারদ সান্ধ্য অনুষ্ঠানে কোনও এক নির্ণীত ক্ষণে চার চোখের ঝটিতি দৃষ্টি বিনিময়ের মাধ্যমে দুটি হৃদয়েই একসাথে বেজে উঠেছিল প্রেমের তারসানাই একেবারেই আচমকা সেই ঘটনা সৌম্য অবাক বিস্ময়ে যেন পুনরাবিষ্কার করল নিজেকে নীতুর এ চাহনি যে নিশ্চিত প্রশ্রয় এতে আর কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয় সুতরাং কোথা থেকে যেন ভেসে এল এক মাভৈ বাণী - এগিয়ে চল্‌ …
কাউন্টারের কাজ শেষ হতেই একজন ডাক্তারের পরামর্শে রোগীকে স্ট্রেচারে করেই নিয়ে যাওয়া হলো আই সি ইউর উদ্দেশে অভিষেক ও নীতু এগিয়ে গেল সাথে সৌম্য একটু ইতস্তত বোধ করে দাঁড়িয়েই রইল খানিকটা এগিয়ে নীতু একবার পিছন ফিরে তাকাল সৌম্যর দিকে চোখের ইশারায় নীতুকে এগিয়ে যেতে বলল সৌম্য ভীত বিহ্বল নীতু নীরবে অনুসরণ করল স্বামী-পুত্রের সৌম্য খানিকটা পিছিয়ে এসে একটি বেঞ্চে বসে আত্মমগ্ন হয়ে রইল নীতুর পিছন ফিরে তাকানোর ভঙ্গিমা যেন খানিকটা বিচলিত করে গেছে তাকে সেই একই চাউনি আজ এতগুলো বছর পরেও কী করে একই থাকতে পারে ? আত্মহারা হরিণীর চোখের মতো নীতুর চোখে যেন অনন্ত কাল ধরে লেগে রয়েছে সেই আহ্বান রব, সেই আকুল আর্তি যে আর্তি একদিন কাছে টেনে নিয়েছিল সৌম্যকে কতটুকু কাছে ? সৌম্য জানে না, জানতে চায় না দৈহিক নৈকট্য সৌম্যর কাছে কোনোদিনই মুখ্য হয়ে ওঠেনি অথচ মানসিক নৈকট্য এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছিল যে প্রত্যহ একবার চোখের দেখা না হলে কোথা থেকে যেন একরাশ নৈরাশ্য এসে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরত তাকে একটুখানি কাছে এসে বসা, দুটি মুখের কথা, খানিকটা সময় ধরে চোখে চোখ রেখে নীরব ভালোবাসার যেন নেশায় পেয়ে বসেছিল সৌম্যকে ঘন ঘন সে সুযোগ আসত না নানারকম প্রতিবন্ধকতা এসে আটকে দিত সাহচর্য আর এতেই যেন অন্তরের আকুলতা বেড়ে উঠত চক্রবৃদ্ধি হারে আজ যুবক পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে মরণাপন্ন স্বামীর অনুগামী হয়ে এসেছে নীতু সৌম্য আজ কাছে থেকেও যোজন দূরত্বে তার অবস্থান সময় কী নিদারুণ
অনেকটা সময় পর অভিষেক এসে বলল - ‘মামা, বাবাকে তো আই সি ইয়ুতে ভর্তি করে দিয়েছে বাইরে শুধু একজন বসতে পারে তাই মাকে বসিয়ে এসেছি আমি ক্যান্টিন থেকে কিছু একটা খেয়ে আসি তুমি কি আছো খানিকক্ষণ ?’
সৌম্য মাথা নেড়ে সায় দিল
- ঠিক আছে আমি আসি তাহলে তুমি বসো
- এখানে তো তোমাদের থাকতে হবে কয়েক দিন মনে হচ্ছে এভাবে হাসপাতালে তো থাকতে পারবে না কিছু ভেবেছ ? - জিজ্ঞেস করে সৌম্য অভিষেক বলে -
- ওই পাশেই একটা হোটেল আছে সেখানে আমি একটা রুম বুক করে রেখেছি অনলাইনে আমি খেয়ে একবার হোটেল থেকে গিয়ে আসছি ততক্ষণ তুমি থেকো কিছু দরকার হলে মা নীচে চলে আসবে তোমার কাছে তুমি একটু দেখো
- ঠিক আছে তুমি নিশ্চিন্তে যাও - বলে সৌম্য তাকিয়ে থাকে অভিষেকের দিকে এইটুকু বয়সে আজকালকার ছেলেরা কতটা দায়িত্বশীল হতে পারে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না এখনও প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠেনি অভিষেক দাড়িগোঁফ গজায়নি এখনও, মুখে চোখে লেগে রয়েছে কৈশোরের কোমলতা অথচ কত আপডেটেড, কত সপ্রতিভ
অভিষেক চলে গেল একটা সময় ফিরেও এল ইতোমধ্যে নীতু আর নীচে নামেনি অভিষেক মায়ের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে তা দিতে উপরে চলে গেল সৌম্য বসে রইল নীরব পর্যবেক্ষকের মতো মাঝে একবার সঞ্জীবের সঙ্গে কথা হল ফোনে সহপাঠী বন্ধু সৌম্য থাকায় বোনের ব্যাপারে সঞ্জীব অনেকটাই নিশ্চিন্ত তাকে আশ্বাস জোগায় সৌম্যও নীতুর দেখভালের দায়িত্বও এখন তারই অথচ একটা সময় শুধু এই সঞ্জীবের বোন বলেই প্রেমের পথটিকে কণ্টকাকীর্ণ মনে হতো দুজনেরই সঞ্জীবের চোখ এড়িয়ে মেলামেশার রাস্তাটি সত্যিই ছিল এক চ্যালেঞ্জ নীতু এক্ষেত্রে অত্যধিক রকমের সতর্ক ছিল তবে তখনই বুঝতে পেরেছিল সৌম্য - ‘চুরি করা মিষ্টি খেতে ভালো 
ভালোবাসার মানুষটির সবকিছুকেই ভালোবাসতে হয় নীতুর স্বামীর এই বিপদ কাটিয়ে ফিরে আসাটাই এখন সবচাইতে মুখ্য বিষয় এখানে ওদের কদিন থাকতে হবে কে জানে ? সৌম্যর ঘর এখান থেকে অনেকটাই দূরে বারবার আসা যাওয়াটা কষ্টকর তবু মন চাইছে এখানেই এই বেঞ্চে বসেই কাটিয়ে দেয় অনন্ত কাল নীতু যখন কাছে থাকে তখন ভরাট হয়ে থাকে অন্তরাত্মা দীর্ঘ চার চারটি দশক জুড়ে যখন কাছে ছিল না তখন নির্জলা মরুভূমির মতো একভাবে কেটে গিয়েছে দিন কিন্তু এখন আর এখানটা ছেড়ে যেতে মন চাইছে না নীতুকে একবার ছেড়ে আসতে কতটা কষ্ট সইতে হয়েছে সেদিন তা শুধু সে-ই জানে অন্য কোনও পথও ছিল না নিজের আর্থিক অসঙ্গতি, সমাজের রক্তচক্ষুর ভয় - সব মিলিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছিল সৌম্য নীতুও হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিল ব্যাপারটা তাই সেই বিচ্ছেদ ছিল দুই পক্ষের মধ্যে এক বোঝাবুঝির ছাড়াছাড়ি চোখের জলে সেই যে শেষ বিদায় জানিয়েছিল সৌম্য সেই দিনটির কথা ভাবলে আজও ব্যথা অনুভূত হয় হৃদয়ে সেদিন থেকেই সৌম্যর জীবনধারা পালটে গিয়েছিল আমূল বেঁচে থাকার লড়াইয়ে পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে সেই প্রথম এবং একমাত্র প্রেমের বিসর্জন দেওয়া সহজ ছিল না মোটেও
এরপর কেটে গেছে বহু যুগ মাঝে মাঝে খবরাখবর পেলেও খুব একটা আগ্রহ দেখাত না সৌম্য যেন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজেরই এক অঘোষিত লড়াই এভাবেই এক রকম কেটে যাচ্ছিল দিন কিন্তু আজ কী যে এক বিচিত্র পরিস্থিতিতে মুখোমুখি এসে দাঁড়াতে হল তাকে সেই চিন্তাতেই বিভোর হয়ে বসে রইল বহু সময় নীরব যাপনে চোখে নেমে এসেছিল ঘুম হঠাৎ করেই উপলব্ধি হল যেন কেউ এসে দাঁড়িয়েছে সামনে চোখ খুলতেই নীতু কখন নেমে এসেছে টেরও পায়নি সৌম্য
 - খাবে না ? খেয়ে এসো, যাও
খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সৌম্য এ যেন বহু যুগের ওপার থেকে ভেসে আসা এক পরিচিত কণ্ঠ, যে কণ্ঠে ভেসে আসত গরজের প্রেমগান আজ এই জীবনপথের শেষ মোড়ে এসে সেই বেলাশুরুর আবদার যেন দ্বিতীয়বারের মতো আছড়ে পড়তে থাকল তার বুকের বেলাভূমিতে তাকিয়ে থাকে সৌম্য অপলক বহু কথা, বহু প্রশ্ন এসে আটকে যায় ঠোঁটের কাছে কী জিজ্ঞেস করবে সে ? দীর্ঘ অদর্শনের পর চিরাচরিত সেই প্রশ্ন - কেমন আছ - আজ নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক নীতুর কাছে নিঃশব্দে তাই উঠে দাঁড়ায় সৌম্য পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় ভাতের হোটেলের দিকে নীতু বসে পড়ে পাশের বেঞ্চে
খাওয়াদাওয়া সারতে ইচ্ছে করেই কিছুটা সময় নিল সৌম্য কেমন এক অপার্থিব অনুভূতি এসে মুহুর্মুহু তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে অতীতের নানা ঘটনা এসে বারবার ধরা দেয় মনের অন্দরমহলে সেই পূর্ণিমা রাতের কথা এ জীবনে ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারবে না সৌম্য সেই একদিন, শুধু সেই একটি দিনই নীতুর খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল সে প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় দিয়েই রেখেছিল নীতু তবু আড়ষ্টতা এসে বেঁধে রেখেছিল তাকে নানা চিন্তায় সৌম্য জানত নীতুকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম যেসব পাহড়প্রমাণ বাধা আছে তার সামনে সে সবকিছুকে ডিঙিয়ে যাওয়া একেবারেই অসম্ভব তবু ভালোবাসা আঁকড়ে ধরেই সে বাঁচতে চেয়েছিল তাই আধো আঁধারিতে যখন নীতু নিজেকে তার হাতে সঁপে দিয়েছিল নিজেকে সেই আবেগঘন মুহূর্তেও বহু কষ্টে নিজেকে সংযত করে শুধুই নীতুর দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল তার হাত এবং নীতু হাত বাড়াতেই তার হাতে এঁকে দিয়েছিল জীবনের প্রথম ও শেষ চুম্বন নীতুকে পাপবিদ্ধ হতে দেয়নি সৌম্য ইচ্ছে করলেই নীতুর শরীরটাকে নিয়ে খেলা করতে পারত সেদিন কিন্তু নীতু তার ভালোবাসার ধন তাকে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না সৌম্যর সংস্কার এসে তাকে সজাগ করে দিয়েছে এরপর এক মুহূর্ত দেরি না করে সেখান থেকে চলে এসেছিল সৌম্য নীতু কি সেদিন অবাক হয়েছিল ? কী জানি ?
নীতু আজ আবার সেই রহস্যময়ী, নিস্পাপ চেহারা নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে সামনে প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলে কী হবে ? ভালোবাসার তো মৃত্যু হয় না সন্ধে হয়ে গেছে বহু আগেই অভিষেক উপরে আই সি ইয়ুর বাইরে আছে নীচে দুই দিকে কোনাকুনি পেতে রাখা বেঞ্চে বসে সৌম্য আর নীতু অনেকটা সময় ধরে শুধু চোখে চোখেই হচ্ছিল কথা কিন্তু কতক্ষণ আর এভাবে বসে থাকা যায় ? একটা সময় সৌম্য উঠে গিয়ে নীতুর বসে থাকা বেঞ্চে বসে মাঝে একটা সিট খালি রেখে বসে প্রথমে সৌম্যই কথা বলে এতদিনের কোনো কথাই তার জানা ছিল না কী করে কী হল এক এক করে জিজ্ঞেস করতে থাকে নীতু জবাব দেয় সব কথার
মাঝে মাঝে নীতুও এটা সেটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় সৌম্যর দিকে জবাব দেয় সৌম্য আচমকা নীতু জিজ্ঞেস করে বসে - বিয়ে করোনি কেন ?
এ প্রশ্ন যে নীতুর দিক থেকে আসতে পারে তা কল্পনাতেও ছিল না সৌম্যর তার মানে সৌম্যর সব খবরাখবর এতদিন ধরে রেখে আসছিল নীতু ? আজ এত দিন পরেও ? নিজের বিয়ে হল, সন্তান হল, সেই ছেলে বড় হল তবু আজও… ?
- এমনি
দায়সারাভাবে জবাব দেয় সৌম্য নিশ্চুপ থাকে নীতু সৌম্য চটজলদি প্রসঙ্গ পালটানোর চেষ্টায় বলে - আমার মনে হয় দিন দুয়েকের মধ্যেই উনি ভালো হয়ে যাবেন খুব ভালো হাসপাতাল এটা
মাথা নেড়ে সায় দেয় নীতু চোখে তার কত যে কথা লুকিয়ে আছে তা আঁচ করতে পারে সৌম্য
এরই মধ্যে অভিষেক এসে জানায় - বাবাকে ভেন্টিলেশনে নিয়ে যেতে হবে বলছে ডাক্তাররা ম্যাসিভ অ্যাটাক হয়েছে
ত্রস্ত পায়ে উঠে দাঁড়ায় নীতু সৌম্যও মাকে নিয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠে যায় অভিষেক সৌম্য ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে রাত হলে অভিষেক একবার নীচে এসে বলে - মামা তুমি এবার ঘরে চলে যাও আমি আমরা দুজনের জন্য কিছু একটা খাবার নিয়ে আসছি রাতটা এখানেই কাটাবো ভাবছি হোটেলে যাব না কখন কী হয়
কী করবে সৌম্য ভেবে পায় না অভিষেকের সঙ্গে এতটা খোলামেলা হওয়াও যায় না অগত্যা ঘরেই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বলে -
- আমি যাচ্ছি তবে কাল সকালে আবার আসব ইতিমধ্যে কিছু প্রয়োজন হলে অবশ্যই ফোন করো কিন্তু সায় দেয় অভিষেক সৌম্য ধীরে ধীরে ফিরে আসে ঘরে বিকেলের খাওয়াটা এখনও হজম হয়নি ঠিকঠাক তাই রাতে আর কিছু খাবে না বলে এক গ্লাস জল খেয়ে সারাদিনের ধকলে বিধ্বস্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দেয় চিন্তারা সব ছবি হয়ে ভাসতে থাকে বুজে আসা চোখের সামনে
সকাল প্রায় আটটা হবে হয়তো মোবাইলে রিংটোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে সৌম্যর আড়ষ্ট চোখে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখে সঞ্জীবের ফোন
- হ্যালো, সঞ্জীব ?
- সৌম্য, সব শেষ হয়ে গেল ভাই - চমকে ওঠে সৌম্য কী বলছে সঞ্জীব ?
- কী হয়েছে ?
- কাল শেষ রাতেই চলে গেছে নীতুর বর ওরা আজ ভোরেই রওয়ানা হয়ে গিয়েছে তোকে জানাতে পারেনি, তাই ফোন করলাম কাল সারা দিন কষ্ট করলি ……
আর শুনতে পারছে না সৌম্য সারাটা শরীর যেন অবশ হয়ে আসছে তার চোখের সামনে সমস্ত চরাচর জুড়ে শুধু একটাই মুখ মলিন সেই মুখমণ্ডলে দুগাল বেয়ে নীরবে গড়িয়ে পড়ছে যেন দুফোঁটা অশ্রু ঘোরের মধ্যেই কেটে গেল একটি দিন কত অব্যক্ত কথা, কত চোখের দেখা রয়ে গেল অসমাপ্ত বুকের ভেতরটা মুচড়ে ওঠে সৌম্যর নীতুর যাবতীয় দুঃখ ব্যথা যেন নিজের হয়ে ধরা দেয় এসে হৃদয় জুড়ে দ্বিতীয়বারের মতো তার জীবন থেকে হারিয়ে গেল প্রথম প্রেম নীতুরও এখন থেকে অপ্রেমে জীবনযাপন - তারই মতো কিন্তু এর কি কোনো প্রয়োজন ছিল ?
এবার কোন ছকে বইবে নীতুর জীবন ? যে হাতে একদিন একান্ত ভরসায় সঁপে দিয়েছিল নিজের হাত সেই হাতটি তো আজও রিক্ত কিন্তু এই পড়ন্ত বিকেলে কতটুকু সামর্থ্য আছে এতটা ভার বইবার
বিধাতার এ জটিল ছকের সমীকরণ বোঝার সাধ্য একমাত্র সময়ের বাইরে আর কারোরই নেই

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়