Skip to main content

আত্মপ্রকাশেই পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় ‘সংযোগ’



বাংলা সাহিত্য সভা, অসম এ রাজ্যের বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতির ধারক ও বাহক যাঁরা, তাঁদের কাছে এক বহুপ্রতীক্ষিত অরাজনৈতিক সংগঠন আপন পরিমণ্ডলে সহচরী ভাষাসমূহের যখন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার সুবাদে সুদৃঢ় হচ্ছে ভিত তখন একটি সার্বিক সংগঠন না থাকায় এতদিন ধরে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছিল বাংলা ভাষা সাহিত্যের চর্চা, প্রচার ও প্রসারকে। দীর্ঘ কালের প্রতীক্ষার অবসানে অতঃপর গঠিত হল অসমের বাংলা ভাষাভাষীদের অতি আপন ‘সাহিত্য সভা’। সবে দু’বছর পেরিয়েছে এই সংগঠন। নেতা-কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সময়োপযোগী চিন্তাভাবনার ফলশ্রুতিতে ইতিমধ্যেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে শুরু হয়েছে শুভযাত্রা। এই যাত্রাপথের শুভারম্ভে সভার প্রথম রাজ্য সম্মেলন উপলক্ষে মার্চ ২০২৩-এ প্রকাশিত হয় সভার মুখপত্র তথা সাহিত্য পত্রিকা ‘সংযোগ’। প্রকাশিত হতে হতে অবশ্য তা আর পত্রিকা হয়ে না থেকে পরিণত হয়েছে এক বিশাল সাহিত্য সম্ভারে, ধারে ও ভারে এক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থে। আর এতেই প্রমাণিত হয়ে যায় যে ‘সংযোগ’ হচ্ছে দীর্ঘ দিনের খরার শেষে তৃষ্ণাবারির আত্মপ্রকাশ। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খোলামেলা হাতে কলম ধরেছেন বিশাল সংখ্যক কবি, লেখকরা। স্বভাবতই দীর্ঘ হয়েছে সূচিপত্র।
প্রথমেই একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সূচিপত্রে। এ ফোর আকারের ৮৩ পৃষ্ঠার এই পত্রিকায় রয়েছে গুণগত মানসম্পন্ন ২৩টি প্রবন্ধ, ২৫টি কবিতা, ৪টি গল্প, ১টি অনুবাদ গল্প ও ১টি একাঙ্ক নাটক। যেহেতু প্রথম সংখ্যা, তাই স্বাভাবিক ভাবেই সাহিত্য সভা গঠনের উদ্দেশ্য প্রাঞ্জলভাবে উঠে এসেছে সম্পাদকীয়তে - ‘বাংলা সাহিত্য সভা, অসম নিছক একটা সাহিত্যের আড্ডামূলক সাধারণ সভা নয়, এটা অসমের বাঙালির জাতীয় সত্তা ও স্বাভিমানের দলিল স্বরূপ। অসমের বাঙালিদের সামগ্রিক উন্নয়ন, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির অস্তিত্ব রক্ষা, সর্বোপরি বাঙালির নিজস্ব সত্তা ও স্বাভিমানের মর্যাদা রক্ষার তাগিদেই এই সভা তবে এই সভা ও স্বাভিমান কোনো সংকীর্ণতায় সীমেবদ্ধ নয়, বরং একটা উদার ও মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই সভার পথ চলা শুরু হয়েছে - অসমের সমগ্র জাতি-জনগোষ্ঠীদের সত্তা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে বাঙালির জাতীয় জীবনের সত্তা গঠন করা এই সভার মূল লক্ষ্য।’
‘পথ ও পথিক’ শিরোনামে সভার কার্যকরী সভাপতি তথা বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক খগেনচন্দ্র দাস সনাতন ভারতের শাশ্বত বৈদিক বাণীর উদ্ধৃতি থেকে শুরু করে কিংবদন্তি শিল্পী ভূপেন হাজরিকার গানের পঙ্‌ক্তি সহযোগে লিখেছেন মাতৃভূমি অসমের সার্বিক ঐক্য ও সমন্বয়ের উপর একটি প্রাসঙ্গিক ও বিস্তৃত প্রতিবেদন। যাঁর চিন্তাভাবনার ফলস্বরূপ এবং যাঁর হাত ধরে জন্ম হয়েছে এই সভার, সেই বিশিষ্ট সাহিত্যিক তথা সভার রাজ্যিক সাধারণ সম্পাদক ড. প্রশান্ত চক্রবর্তীর প্রতিবেদনে ধরা রয়েছে এই সৃষ্টির গোড়ার কথা, গরজের কথা। তাঁর ভাষায় এ এক ‘রূপকথার উত্থান’এ সংখ্যায় সাহিত্য বিভাগে তাঁর কোনও লেখা না থাকায় বঞ্চিত হয়েছেন পাঠক। পরবর্তী সংখ্যায় সাহিত্য বিভাগে তাঁর উপস্থিতি আশা করা যেতেই পারে। এরপর রয়েছে সম্মেলনের অভ্যর্থনা সমিতির কার্যকরী সভাপতি অজিত কুমার সেন লিখিত সম্মেলন উপলক্ষে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ও প্রতিবেদন তথা সভার রাজ্যিক যুগ্ম সম্পাদক সন্দীপন দত্ত পুরকায়স্থের প্রতিবেদন। শেষোক্তজন এখানে তুলে ধরেছেন বরাক উপত্যকায় সভার বিগত দুই বছরের কাজের খতিয়ান।
সাহিত্য বিভাগটি শুরু হয়েছে প্রবন্ধ দিয়ে। প্রথম প্রবন্ধ বিশিষ্ট সাহিত্যিক তথা রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্যের ‘গোরা’এ কথা অনস্বীকার্য যে উপন্যাস সহ কবিগুরুর যাবতীয় রচনার মধ্যে ‘গোরা’র স্থান স্বকীয়। এই উপন্যাস হৃদয়ঙ্গম করে এর উপর মন্তব্য, আলোচনা বস্তুত এক দুরূহ কাজ। সংক্ষিপ্ত হলেও লেখক এখানে তথাদি সহ তুলে ধরেছেন উপন্যাসটির বিভিন্ন আঙ্গিক। একটি মূল্যবান তথা অতি অবশ্যই এক প্রাসঙ্গিক রচনা নিঃসন্দেহে। সভার তৎকালীন সভাপতি অতীন দাস লিখেছেন ‘বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সংকট’ নিয়ে একটি পুনঃপ্রকাশিত নিবন্ধ। মুক্তগদ্যের আদলে এক পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ ‘আমার না-লেখা’ লিখেছেন বিশিষ্ট নাট্যকার প্রদ্যোত চক্রবর্তী। সুলিখিত নিবন্ধ। অসমের বাংলা ও বাঙালি নিয়ে সাহিত্যিক হিমাশিস ভট্টাচার্য লিখেছেন একটি বাস্তবভিত্তিক নাতিদীর্ঘ নিবন্ধ। স্বভাবতই এসেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও। এই প্রেক্ষাপটে সভার উত্থান ও কার্যপন্থা নিয়েও আছে লেখকের প্রত্যাশা। ‘বাংলাভাষার সংকটজনক অবস্থান ও সমাধান’ শীর্ষক বিস্তৃত নিবন্ধে সাহিত্যিক সমরবিজয় চক্রবর্তী লিখেছেন বহু কথা। নিবন্ধে উঠে এসেছে অসমে বাংলা ভাষার সংকট সৃষ্টির কিছু নেপথ্য কথা। একটি অবশ্যপাঠ্য নিবন্ধ। সমন্বয় আমাদের সত্তার শত্রু নয়, মিত্র - একথা লিখছেন নিবন্ধকার সুব্রত দাস তাঁর ‘সত্তা, সাহিত্য ও সমন্বয়’ শীর্ষক নিবন্ধে। এটাই নিবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য। ‘অনন্তের সুর’ শিরোনামে বিশিষ্ট সাহিত্যিক মনোমোহন মিশ্র ভারতের ঐতিহ্যপূর্ণ, শাস্ত্রীয় পরম্পরার আধুনিকীকরণের উপর একাধিক উদাহরণ সহ লিখেছেন একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ। এই নিবন্ধটিও নিঃসন্দেহে এ সংখ্যার অন্যতম একটি সম্পদ। ঈশানের বাঙালিদের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে সমন্বয়ের সূত্রসন্ধানে ব্রতী হয়েছেন নিবন্ধকার সংহিতা দত্ত চৌধুরী। শিরোনাম ‘বাঙালির বারোমাস্যা’৪০০তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে বীর লাচিতকে নিয়ে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছেন ড. সুলেখা চক্রবর্তী ভট্টাচার্য। লাচিত বরফুকনের জীবনের প্রতিটি দিক নিয়ে করেছেন বিস্তৃত আলোচনা। একটি মূল্যবান প্রবন্ধ অবশ্যই। এখানে শিরোনামে বানান ভুল দৃষ্টিকটু হয়েছে। সম্ভবত এড়িয়ে গেছে প্রুফ রিডারের চোখ। বরাক উপত্যকায় কথক নৃত্যের প্রসার ও চর্চা নিয়ে দেবতোষ নাথ-এর নিবন্ধ তথ্যভিত্তিক। পরবর্তীতে সন্নিবিষ্ট হয়েছে প্রয়াত শ্যামলবরণ মুখোপাধ্যায়ের একটি নিবন্ধ ‘এল বিহুর বাতাস’বিহুর পাশাপাশি এ অঞ্চলের অন্যান্য উৎসবকেও ছুঁয়ে গেছেন লেখক। অধ্যাপক তিমির দে কলম ধরেছেন ‘অসমের বাঙালি’দের নিয়ে। অসমিয়া ও বাংলা সাহিত্যের তুলনাত্মক বিশ্লেষণের মাধ্যমে লিখিত একটি তথ্যনির্ভর সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ। ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিদেশ ভ্রমণ’-এর বিস্তৃত বিবরণ নিয়ে সুচিন্তিত নিবন্ধ লিখেছেন ঝর্না বন্দ্যোপাধ্যায়। মীনাক্ষি চক্রবর্তী সোম লিখেছেন ‘ডিমা হাসাও জেলায় বাংলা সাহিত্যচর্চা - একটি অনুসন্ধান’বিস্তৃত এই নিবন্ধে তিনি তুলে এনেছেন বহু তথ্য, বহু অশ্রুত কথা। নিশ্চিত ভাবেই একটি ব্যতিক্রমী নিবন্ধ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উপর একটি সুলিখিত নিবন্ধ লিখেছেন উঠতি প্রজন্মের সাহিত্যিক দেবলীনা রায়। অপূর্ব শোভামণ্ডিত তাওয়াং নিয়ে ভ্রমণ কাহিনির আদলে সুপাঠ্য নিবন্ধ লিখেছেন স্বপনকুমার চক্রবর্তী। অলকা গোস্বামী আধ্যাত্মিক মানসে লিখেছেন কামারপুকুর, জয়রামবাটী ও বিষ্ণুপুর ভ্রমণের কাহিনি ‘যেখানে জুড়ায় মন প্রাণ সব’বিস্তৃত নিবন্ধ। ডালিয়া সিংহের সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ ‘জুঁইর আত্ম-অনুশীলন’ ছোটগল্পের আদলে লিখা একটি মনোগ্রাহী রচনা। সংক্ষিপ্ত রচনায় সুদেষ্ণা (দেব রায়) চন্দ লিখেছেন ‘বাংলা সাহিত্য সভা’ গঠনের সর্বপ্রথম চিন্তাচর্চার মুহূর্তটির কথা। খুবই প্রাসঙ্গিক। হাতে স্মার্টফোন নিয়ে আজকের স্মার্টনেসের সঙ্গে প্রকৃত স্মার্টনেসের এক তুলনামূলক আলোচনা করেছেন নিবেদিতা চক্রবর্তী তাঁর নিবন্ধে। সুপাঠ্য। মাম্পি গুপ্ত ভাবনার আলোকে শিশুদের সেকাল ও একাল নিয়ে লিখেছেন নিবন্ধ। মানব জীবনের বিশেষ একটি স্তর শৈশবের পরিপ্রেক্ষিতে একটি চিন্তাপ্রসূত নিবন্ধ। রাখাল দাসের নিবন্ধ ‘সেকুলারজম ও কিছু বাঙালি’বৃহৎ বিষয়ের উপর অতি সংক্ষিপ্ত একটি নিবন্ধ। স্বভাবতই অনুল্লেখিত রয়ে গেছে বহু প্রসঙ্গ। শিরোনামের সঙ্গেও সামঞ্জস্য স্থাপিত হয়নি সঠিক অর্থে। এই বিভাগের শেষ নিবন্ধ সভার অন্যতম সদস্য সদ্যপ্রয়াত সুদর্শন গুপ্তকে নিয়ে লিখা শতদল আচার্যের স্মৃতিচারণমূলক রচনা
কবিতা বিভাগের প্রায় সব ক’টি কবিতাই সুখপাঠ্য হয়েছে। বহু কবিতায় উঠে এসেছে মাতৃভাষার আকুতি। প্রথম কবিতা বিশিষ্ট কবি বিকাশ সরকারের ‘রক্তের দাগ থেকে উঠে আসে মাতৃভাষা’ এক কথায় অনবদ্য। ব্যতিক্রমী লিখনশৈলীতে জীবন্ত হয়ে উঠেছে কবিতার কথা। এছাড়াও যেসব কবিদের কবিতা এ সংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাঁরা হলেন - উমা ভৌমিক, রতীশ দাস, তুষারকান্তি সাহা, শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ দেব, শাশ্বতী ঘোষ দস্তিদার, অঞ্জনা দাস, সঞ্জয় ভট্টাচার্য, শান্তনু সরকার, রাজকুমার দাস, পীযূষকান্তি সাহা, জয়া ঘটক, লিপি চক্রবর্তী, অনুরাধা দাস পাত্র, বিমলেন্দু চক্রবর্তী, সুশান্ত মোহন চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ কুমার নন্দী, মধুমিতা দত্ত, সীমা রায়, মনোজকান্তি ধর, অশিমা সিংহ চৌধুরী, জ্যোতির্ময় নাথ, তারাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও অদিতি দত্ত বাগ।
গল্প বিভাগের প্রথম গল্প শিশির সেনগুপ্তের লিখা অন্তর্গত স্মৃতির ঝুলি থেকে - ১০৭’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখা একটি আকর্ষক অণুগল্প। কিন্তু ১০৭ সংখ্যাটি কেন এল তা বোঝা গেল না। পরিতোষ তালুকদারের গল্প ‘বৃক্ষতর্পণ’ বুনোট, বিষয় ও বয়ানে সমৃদ্ধ একটি সার্থক ছোটগল্প। ইতিপূর্বে প্রকাশিত যদিও এই গল্প এই বিভাগের মর্যাদা বাড়িয়ে তুলেছে অনেকখানি। নিদারুণ বাস্তবের প্রেক্ষাপটে লিখা রুমী লস্কর বরার অসমিয়া গল্প ‘সিদ্ধান্ত’অনুবাদক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সজল পালের লিখা গল্প ‘দুই মেরু’ বাস্তবধর্মী আরোও একটি সুন্দর গল্প। খানিকটা বিস্তৃতির সুযোগ হয়তো ছিল। তবু চিত্তাকর্ষক বলা যায়। শ্রীবরুণের অণুগল্প ‘রাত যখন ঠিক বারোটা’ ব্যতিক্রমী নিঃসন্দেহে।
পত্রিকার শেষ অন্তর্ভুক্তি সঞ্জয় সরকারের একাঙ্ক নাটক ‘অন্য মেয়ে’সমাজের ক্ষয়িষ্ণু যাপনের এক নির্মম চিত্র। নাটক এগিয়েছে সরল গতিতে। সহজ ও একাগ্র পাঠযোগ্য যদিও অভিনয়ের ক্ষেত্রে হয়তো কিছু জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। তবু এক বৈচিত্র্য।
সব মিলিয়ে একটি সংগ্রহযোগ্য দলিল হয়ে থাকবে ‘সংযোগ’ এ কথা বলা যায় হলফ করে। তবে সমন্বয়ের সূত্র ধরে পরবর্তীতে অনুবাদ সাহিত্যের উপর অধিক মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে হয়। অক্ষর ও শব্দ বিন্যাস যথাযথ হলেও ছাপার ক্ষেত্রে আরোও একটু স্পষ্টতা কাঙ্ক্ষিত ছিল। চমৎকার প্রচ্ছদের সৌজন্যে গৌতম দত্ত। প্রায় নির্ভুল বানানে এই বিশাল সম্ভারের প্রকাশ সম্পাদক ড. সঞ্জয় চন্দ্র দাসের নিমগ্ন শ্রমের পরিচায়ক। এই বিশাল কর্মকাণ্ডে অবদান রেখেছেন যাঁরা তাঁরা হলেন সম্পাদকীয় উপদেষ্টা দীপক ভদ্র, সম্পাদনা সহযোগী ড. মম্পি গুপ্ত, অশোককুমার রায় ও প্রাণজিৎ সরকার। বাংলা সাহিত্য সভা অসম-এর পক্ষ থেকে কার্যকরী সভাপতি খগেনচন্দ্র দাস কর্তৃক প্রকাশিত এই পত্রিকার সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী। মুদ্রক আলপনা গ্রাফিক্স, পাণ্ডু। পত্রিকাটি উৎসর্গ করা হয়েছে সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের সদ্যপ্রয়াত ২১ জন ব্যক্তিকে। সাহিত্য পরিমণ্ডলে এমন একটি পত্রিকার প্রকাশ যে এক দলিলসম দর্পণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকতেই হয় পাঠকদের।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

 

‘সংযোগ’
মূল্য - অনুল্লেখিত
যোগেযোগ - ৯৯৫৪৭৫৯৮০৩, ৯৪৩৫৫৫৩৭৩৯

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়