অনেকেই বাংলা সাহিত্যে ভুবনায়নের সংজ্ঞাটি
মানতে চান না। কিন্তু
এই সীমায়নের ধারা যে সেকাল থেকে একাল অবধি বেশ পরিকল্পিতভাবেই চলে আসছে তা অমোঘ
সত্য। এক সীমিত
পরিসরের বাইরে উত্তরপূর্বে বাংলা সাহিত্যের চর্চা হয় এটাও অনেকের অজানা। উনিশে মে আজও ভিন্ন ভুবনে অনেকের কাছেই
অশ্রুত। গৌরচন্দ্রিকায়
এতসব কথা উঠে এল এজন্য যে আলোচ্য কাব্যগ্রন্থটি যদি এই তৃতীয় ভুবনের বাইরে প্রকাশিত
হতো তাহলে এতদিনে এক বিপ্লব হয়ে যেত - এটা নিশ্চিত। এই সূত্রে প্রথমেই গ্রন্থের
অন্তর্গত একটি কবিতা থেকে কিছু সোচ্চার পঙ্ক্তি সটান তুলে দেওয়া
সমীচীন হবে -
...টেনে হিচড়ে করবে উলঙ্গ,
আঁচড়ে কামড়ে পথের পাশে ফেলবে যেন উচ্ছিষ্ট খাদ্য...
উন্মুক্ত স্তন, যোনি তখন আলোকিত হবে মোমবাতি মিছিলে...
হবে রগরগে উত্তেজক গদ্য।
মায়ের মূর্তি গড়বে বুকে আঁচল, ঢেকে রাখবে নারীকে বোরখা হিজাবে,
এ যে সমাজ নীতি...
আর আঁধারে টেনে নিতে মনে থাকবে না কিছুই... এ যে
মা, মেরি, মর্জিনা অথবা সতী।
এসো, হোক না এবার দ্বৈরথ...
পুরুষ ধর্ষনে লিপ্ত হও পথে ঘাটে, খোলা জনসভায়,
নারী লুকিয়ে থেকো না ঘরের কোণে... টেনে আনো পুরুষ
দেখাও কামভাব তোমাকেও পোড়ায় !! (কবিতা - বিবর্তন আনো তুমি নারী)।
এই কবিতার পর অন্তত একটা তর্ক-বিপ্লব তো উঠতই - সরেজমিনে না হলেও কাগজে অন্তত। কিন্তু হবে না কারণ এ হচ্ছে তৃতীয় ভুবনের রচনা, তৃতীয় ভুবনের প্রতিবাদ, উচ্চারণ। এ উচ্চারণ সহজ পথে পৌঁছায় না অসীমে। ব্যতিক্রম হয়তো শুরু হয়েছে কিন্তু ব্যতিক্রম ব্যতিক্রমই হয় এমনই ব্যতিক্রমী প্রতিবাদী কবিতার সম্ভার নিয়ে বিন্যস্ত হয়েছে কবি ছন্দা দামের সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘আমি অগ্নিস্নাতা’। ভূমিকায় কবি লিখছেন - ‘কবিতা লেখা আমার ভালোবাসা। কখনো কবিতা আমার যাপন যন্ত্রণার উপশম, আবার কখনো সমাজ সংসারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্র।
আমি অগ্নিস্নাতা ...
আমি সাবিত্রী, আমি দ্রৌপদী, আমি সীতা,
ঝলসানো দেহে, নীল হয়ে যাওয়া অন্তঃকরণে ফের বলে যাই
হর এক নারীর কথা... আমি অগ্নিস্নাতা !!!
ভূমিকার এই কবিতাটি নিয়ে ৪৮ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থে রয়েছে এমনই মোট ৩২ টি কবিতা। সোচ্চার শ্লেষ ও প্রতিবাদে কবি বিদ্ধ করেছেন সব অন্যায় - নারীর বিরুদ্ধে সব সংঘবদ্ধ অনাচার, অবহেলাকে। ‘একটু মানিয়ে নে মা’, ‘পাবলিক প্রপার্টি’ আদি কবিতার শিরোনামেই যেন বাজিমাত করেছেন কবি। আর বাকি সব কবিতার অন্দরে যেন লুকিয়ে রয়েছে এক একটি দৃপ্ত, সোচ্চার পঙ্ক্তি যা ভাবাতে বাধ্য করে পাঠককে। একেবারেই ব্যতিক্রমী কিছু পঙ্ক্তি যেন প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাকে, ধ্যানধারণাকে সমূলে নস্যাৎ করে দিয়েছে। সেরকমই কিছু পঙ্ক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে ‘তোর নাম দিয়েছে নারী’, ‘কন্যা তুই’, ‘আসলে আমাদের কেউ বলেনি’, ‘আমি যে মেয়ে’ ইত্যাদি বহু কবিতায়। পদ্যের অবয়বে বেশ কিছু কবিতা হয়ে উঠেছে সার্থক গদ্যকবিতা। কিছু কথ্য হিন্দি শব্দের প্রয়োগ হয়েছে যথাযথ। ‘আমি কৈকেয়ী’ কবিতায় প্রচলিত ধারণাকে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন কবি। তবে কৈকেয়ীর নারীসত্তাকে ভিন্ন ভিন্ন আবহে যেখানে করেছেন বিশ্লেষণ সেখানে আবার কৈকেয়ীর মুখেই জুড়ে দিয়েছেন সংলাপ - ‘আমি ছিলাম উচ্চাকাঙ্ক্ষী একমাত্র সন্তানের স্বার্থে’। কৈকেয়ীর এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফলে অপর পুত্রদের উপর নেমে আসা অবিচার কতটা ন্যায্য তার বিচার করেছে অতীত, ভাবীকালও করবে। কবি লিখেছেন তাঁর মতো করে।
এই ব্যতিক্রমী গ্রন্থটি প্রকাশ
করেছেন কলকাতার শব্দবিতান প্রকাশনী। আলোচনার ভূমিকার সূত্র ধরে কিছু
কথা এসে যায় স্বাভাবিক ভাবেই। কলকাতা থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থে কী করে এত বানান
ভুল থাকতে পারে তা বোধগম্য হবার নয়। প্রায় প্রতিটি পাতায় রয়েছে বানান ভুল, এমনকি
দেখা যাচ্ছে সাত লাইনের একটি স্তবকে রয়েছে পাঁচটি বানান ভুল। এটা মেনে নেওয়া শক্ত।
কবি চন্দ্রিমা দত্ত লিখেছেন একটি সুচিন্তিত শুভেচ্ছা বার্তা। এরপর রয়েছে প্রকাশকদের তরফে ‘সম্পাদকীয় কলম’। সোনার পাথরবাটির মতো। এই কাব্যগ্রন্থ তো কোনো সম্পাদনাগ্রন্থ নয়। নিছক একটি একক কাব্যগ্রন্থ। তাহলে ? টাইটেল ভার্সোতে ‘প্রকাশক’ অথচ সম্পাদকীয় কলমের নীচে লেখা সম্পাদকদ্বয়। কবির প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছেন তাঁরা। লিখছেন - ‘সুদূর আসামে বসবাসকারী কবি ছন্দা দাম...’। সেই ভুবনায়নের সুর। আবার এই সম্পাদকীয়তেও অন্যূন চারটি বানান ভুল। এহ বাহ্য।
ছাপা স্পষ্ট হলেও শব্দ, বাক্য, পঙ্ক্তিবিন্যাসে ত্রুটি রয়েছে। ‘ডট্’-এর অত্যধিক প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়েছে কবিতায়। অন্য এক ব্যতিক্রম হিসেবে নিজে আঁকা প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদসম্বলিত গ্রন্থটি কবি ‘সচিত্র’ উৎসর্গ করেছেন তাঁর প্রয়াত বাবা ও মাকে।
সব মিলিয়ে সুচিন্তিত বিষয়ভিত্তিক এক সার্বিক ব্যতিক্রমী চিন্তাধারার ফসল এই কাব্যগ্রন্থ ‘আমি অগ্নিস্নাতা’ - বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যার শিরোনাম ‘আমি অগ্নিস্নাত’ হলেই হয়তো অধিক মানানসই হতো।
...টেনে হিচড়ে করবে উলঙ্গ,
আঁচড়ে কামড়ে পথের পাশে ফেলবে যেন উচ্ছিষ্ট খাদ্য...
উন্মুক্ত স্তন, যোনি তখন আলোকিত হবে মোমবাতি মিছিলে...
হবে রগরগে উত্তেজক গদ্য।
মায়ের মূর্তি গড়বে বুকে আঁচল, ঢেকে রাখবে নারীকে বোরখা হিজাবে,
এ যে সমাজ নীতি...
আর আঁধারে টেনে নিতে মনে থাকবে না কিছুই... এ যে
মা, মেরি, মর্জিনা অথবা সতী।
এসো, হোক না এবার দ্বৈরথ...
পুরুষ ধর্ষনে লিপ্ত হও পথে ঘাটে, খোলা জনসভায়,
নারী লুকিয়ে থেকো না ঘরের কোণে... টেনে আনো পুরুষ
দেখাও কামভাব তোমাকেও পোড়ায় !! (কবিতা - বিবর্তন আনো তুমি নারী)।
এই কবিতার পর অন্তত একটা তর্ক-বিপ্লব তো উঠতই - সরেজমিনে না হলেও কাগজে অন্তত। কিন্তু হবে না কারণ এ হচ্ছে তৃতীয় ভুবনের রচনা, তৃতীয় ভুবনের প্রতিবাদ, উচ্চারণ। এ উচ্চারণ সহজ পথে পৌঁছায় না অসীমে। ব্যতিক্রম হয়তো শুরু হয়েছে কিন্তু ব্যতিক্রম ব্যতিক্রমই হয় এমনই ব্যতিক্রমী প্রতিবাদী কবিতার সম্ভার নিয়ে বিন্যস্ত হয়েছে কবি ছন্দা দামের সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘আমি অগ্নিস্নাতা’। ভূমিকায় কবি লিখছেন - ‘কবিতা লেখা আমার ভালোবাসা। কখনো কবিতা আমার যাপন যন্ত্রণার উপশম, আবার কখনো সমাজ সংসারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্র।
আমি সাবিত্রী, আমি দ্রৌপদী, আমি সীতা,
ঝলসানো দেহে, নীল হয়ে যাওয়া অন্তঃকরণে ফের বলে যাই
হর এক নারীর কথা... আমি অগ্নিস্নাতা !!!
ভূমিকার এই কবিতাটি নিয়ে ৪৮ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থে রয়েছে এমনই মোট ৩২ টি কবিতা। সোচ্চার শ্লেষ ও প্রতিবাদে কবি বিদ্ধ করেছেন সব অন্যায় - নারীর বিরুদ্ধে সব সংঘবদ্ধ অনাচার, অবহেলাকে। ‘একটু মানিয়ে নে মা’, ‘পাবলিক প্রপার্টি’ আদি কবিতার শিরোনামেই যেন বাজিমাত করেছেন কবি। আর বাকি সব কবিতার অন্দরে যেন লুকিয়ে রয়েছে এক একটি দৃপ্ত, সোচ্চার পঙ্ক্তি যা ভাবাতে বাধ্য করে পাঠককে। একেবারেই ব্যতিক্রমী কিছু পঙ্ক্তি যেন প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাকে, ধ্যানধারণাকে সমূলে নস্যাৎ করে দিয়েছে। সেরকমই কিছু পঙ্ক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে ‘তোর নাম দিয়েছে নারী’, ‘কন্যা তুই’, ‘আসলে আমাদের কেউ বলেনি’, ‘আমি যে মেয়ে’ ইত্যাদি বহু কবিতায়। পদ্যের অবয়বে বেশ কিছু কবিতা হয়ে উঠেছে সার্থক গদ্যকবিতা। কিছু কথ্য হিন্দি শব্দের প্রয়োগ হয়েছে যথাযথ। ‘আমি কৈকেয়ী’ কবিতায় প্রচলিত ধারণাকে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন কবি। তবে কৈকেয়ীর নারীসত্তাকে ভিন্ন ভিন্ন আবহে যেখানে করেছেন বিশ্লেষণ সেখানে আবার কৈকেয়ীর মুখেই জুড়ে দিয়েছেন সংলাপ - ‘আমি ছিলাম উচ্চাকাঙ্ক্ষী একমাত্র সন্তানের স্বার্থে’। কৈকেয়ীর এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার ফলে অপর পুত্রদের উপর নেমে আসা অবিচার কতটা ন্যায্য তার বিচার করেছে অতীত, ভাবীকালও করবে। কবি লিখেছেন তাঁর মতো করে।
কবি চন্দ্রিমা দত্ত লিখেছেন একটি সুচিন্তিত শুভেচ্ছা বার্তা। এরপর রয়েছে প্রকাশকদের তরফে ‘সম্পাদকীয় কলম’। সোনার পাথরবাটির মতো। এই কাব্যগ্রন্থ তো কোনো সম্পাদনাগ্রন্থ নয়। নিছক একটি একক কাব্যগ্রন্থ। তাহলে ? টাইটেল ভার্সোতে ‘প্রকাশক’ অথচ সম্পাদকীয় কলমের নীচে লেখা সম্পাদকদ্বয়। কবির প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছেন তাঁরা। লিখছেন - ‘সুদূর আসামে বসবাসকারী কবি ছন্দা দাম...’। সেই ভুবনায়নের সুর। আবার এই সম্পাদকীয়তেও অন্যূন চারটি বানান ভুল। এহ বাহ্য।
ছাপা স্পষ্ট হলেও শব্দ, বাক্য, পঙ্ক্তিবিন্যাসে ত্রুটি রয়েছে। ‘ডট্’-এর অত্যধিক প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়েছে কবিতায়। অন্য এক ব্যতিক্রম হিসেবে নিজে আঁকা প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদসম্বলিত গ্রন্থটি কবি ‘সচিত্র’ উৎসর্গ করেছেন তাঁর প্রয়াত বাবা ও মাকে।
সব মিলিয়ে সুচিন্তিত বিষয়ভিত্তিক এক সার্বিক ব্যতিক্রমী চিন্তাধারার ফসল এই কাব্যগ্রন্থ ‘আমি অগ্নিস্নাতা’ - বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যার শিরোনাম ‘আমি অগ্নিস্নাত’ হলেই হয়তো অধিক মানানসই হতো।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৭৬৩৬৯৬৬৪১৭
যোগাযোগ - ৭৬৩৬৯৬৬৪১৭
দুর্দান্ত Book review
ReplyDeleteএখানেই আপনার আলোচনার সার্থকতা।
বইটি পড়িনি, আমি অবশ্য নারীবাদ বুঝি কম🙏
ধন্যবাদ
Delete