Skip to main content

প্রতিবেশী সাহিত্য সম্ভারে পরিপূর্ণ - ‘প্রবাহ’

প্রতিবেশী সাহিত্য সম্ভারে পরিপূর্ণ - ‘প্রবাহ


 

কবি, সাহিত্যিক আশিসরঞ্জন নাথ-এর সম্পাদনায় গবেষণাধর্মী ছোট পত্রিকাপ্রবাহদীর্ঘদিন ধরে সাহিত্যের অঙ্গনে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে সাহিত্যপ্রেমী পাঠক পাঠিকাদের কাছেপ্রবাহনিঃসন্দেহে এক বহু প্রতীক্ষিত পত্রিকা

নামেছোটহলেও আয়োজনে, বিষয় বৈচিত্রে, মুদ্রিত বিষয়ের গভীরতায় এক পরিপূর্ণ সম্ভার - ‘প্রবাহ’-এর জুন ২০২০ সংখ্যা বর্ষ ৩৩, সংখ্যা ১ করোনাজনিত লকডাউনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশে বিলম্ব ঘটেছে স্বভাবতই এই সংখ্যার বিষয় - প্রতিবেশী সাহিত্য বিষয় নির্বাচনেওপ্রবাহবরাবরই ব্যতিক্রমী এবং বিষয় সচেতনতায় সদাই একনিষ্ঠ এবারের প্রতিবেশী সাহিত্য সংখ্যায় বিষয়গত নিবন্ধ রয়েছে মোট বারোটি প্রতিটি নিবন্ধই নির্ধারিত বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করে লিখিত এক একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন

অসমিয়া উপন্যাসের উপর পর্যালোচনা করেছেন বাসুদেব দাস সুলেখক তপন মহন্ত বোড়ো এবং কার্বি সাহিত্য নিয়ে আলাদা আলাদা করে লিখেছেন পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ ডিমাসা ভাষা সাহিত্য নিয়ে লিখেছেন তুষার কান্তি নাথ মণিপুরি সাহিত্য নিয়ে এল বীরমঙ্গল সিংহ এবং বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সাহিত্য নিয়ে লিখেছেন সন্তোষ সিংহ চাকমা সাহিত্য নিয়ে পদ্মকুমারী চাকমা, মগ সংস্কৃতি ও সাহিত্য নিয়ে ক্রইরী মগ চৌধুরী, ককবরক সাহিত্য নিয়ে স্নেহময় রায় চৌধুরী, মিজো সাহিত্য নিয়ে শ্যামল ভট্টাচার্য এবং খাসি সাহিত্য নিয়ে লিখেছেন ফাল্গুনী চক্রবর্তীনাগাদের সাহিত্য সৃষ্টি এবং তেমসুলা আওশিরোনামে নাগা সাহিত্যের অনবদ্য আলোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞ লেখক দেবাশিস দত্ত স্বল্প পরিসরে প্রতিটি নিবন্ধের উপর আলাদা করে আলোচনার ফুরসত নেই কিন্তু প্রতিটি নিবন্ধই যে সংশ্লিষ্ট লেখকদের অপরিসীম চর্চা এবং গভীর প্রজ্ঞার ফসল এতে কোনও দ্বিমত নেই এখানেইপ্রবাহপত্রিকারগবেষণাধর্মীতকমার সার্থকতা

পোড় খাওয়া সম্পাদক শুধুমাত্র বিষয় ভিত্তিক নিবন্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননিপ্রবাহকে সব ধরণের পাঠক পাঠিকাদের কথা স্মরণে রেখে এই সংখ্যায় সন্নিবিষ্ট করেছেনগল্প ক্রোড়পত্রবিভাগের মাধ্যমে মোট নয়টি ভিন্ন স্বাদের ছোটগল্পও এর মধ্যে আছে দুটি অনুবাদ গল্প প্রখ্যাত অসমিয়া ভাষার সাহিত্যিক হোমেন বরগোহাঞির গল্পএপিটাফএর অনুবাদ করেছেন সুস্মিতা মজুমদারঅর্ধেক দিবসশিরোনামে মিশরীয় লেখক নাগিব মাহফুজ-এর গল্পের অনুবাদ করেছেন আরেক দিকপাল গল্পকার রণবীর পুরকায়স্থ

এছাড়া রয়েছে কুমার অজিত দত্ত, রুখসানা কাজল, মলয়কান্তি দে, হামির উদ্দিন মিদ্যা, আশিস রঞ্জন নাথ, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ও সোমা মজুমদারের একটি করে গল্প প্রতিটি গল্পই পাঠক মনে ভাববৈচিত্রের উদ্রেক করতে সমর্থ হয়েছে নিঃসন্দেহে

মোট ১৫০ পৃষ্ঠার এই অসাধারণ সংখ্যাটির মূল্য মাত্র ১৫০ টাকা সম্পাদকের সাহিত্যপ্রীতির এও এক অনবদ্য নমুনা ঝকঝকে ছাপা এবং বানানের শুদ্ধতাও উল্লেখযোগ্য প্রচ্ছদ শক্তি সিংহ, প্রকাশক সুপর্ণা নাথ সম্পাদকীয়তে করোনাকালের সংকট এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের দুঃখ দুর্দশার সংক্ষিপ্ত উল্লেখ রয়েছে যদিও এত মূল্যবান একটি পূর্ণাঙ্গ পত্রিকার সম্পাদকীয় আরোও খানিকটা বিস্তৃত পরিসরে লিপিবদ্ধ হলে পত্রিকার মানোন্নয়নে নিশ্চিতই আরোও সামঞ্জস্য আসতে পারত পাঠক মনের চাহিদা অন্তত এমনটাই বলে

বিগত একের পর এক সংখ্যার সুচারু প্রকাশের মাধ্যমে পাঠক মহলেপ্রবাহযে একটি বিশেষ জায়গা ধরে রেখেছে তা অনস্বীকার্য এবারের সংখ্যাটিও অবধারিত ভাবেই পাঠকের সেই প্রত্যাশার প্রতি পুরোপুরি মর্যাদা দিতে পেরেছে এবং গবেষণাধর্মী পত্রিকা হিসেবে নিজস্ব জায়গাটি ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে

 

প্রবাহ

সম্পাদক - আশিসরঞ্জন নাথ

মূল্য - ১৫০ টাকা

যোগাযোগ - ৮৮১১০১০৫৪০

- - - - - বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়