Skip to main content

সতীদাহ থেকে তিন তালাক - ধরি মাছ না ছুঁই পানি

সতীদাহ থেকে তিন তালাক - ধরি মাছ না ছুঁই পানি



- - - - - - বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

 

সম্প্রতি দেশ জুড়ে পালিত হলো কিংবদন্তি সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়ের জন্মদিন। না, এই দুরন্ত কোভিডকালে কোথাও তেমন জন্মদিন পালনের খবর পাওয়া যায়নি ঠিকই তবে সামাজিক মাধ্যম অর্থাৎ সেফসাইডে থেকে উদযাপনের ঘটা নেহাৎ মন্দ ছিল না। সেই একঘেয়ে উদযাপন। স্বল্প আয় বা স্বল্পশিক্ষিত ভারতবাসীর এসব উদযাপনের সময় নেই। দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের সংস্থান করতে হিমশিম হওয়ার পালা যেখানে সেখানে মণীষীদের জন্মদিন মনে রাখার মতো বিলাসিতা এদের থেকে আশা করাও অন্যায়। তবে পত্রপত্রিকার পাতায় প্রবন্ধে নিবন্ধে রাজা ফিরে ফিরে আসেন ফি বছরে তাঁর নিজগুণে। এর বাইরে কিছু কর্মহীন আর কিছু কুবুদ্ধিজীবী আঁতেল শিক্ষিতরা নিজেদের পাণ্ডিত্য জাহির করতে ফিবছরে একই গল্পের চর্বিত চর্বনে সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে আরোও একটিবার মহান প্রতিপন্ন করার সুযোগটি হাতছাড়া করার পক্ষপাতী নন।

গল্পটি আরোও একবার শুনে নেওয়া যাক তবে - অস্থির ভাবে পায়চারি করছিলেন রাজা। বড় হতাশ লাগছে তাঁর। মানুষই যদি বিরোধিতা করে, তাহলে তিনি লড়বেন কাদের নিয়ে? আর করবেনই বা কাদের জন্য? ধুস, আর লড়াই করে লাভ নেই। এমন সময় দারোয়ান এসে বলল একজন গেঁয়ো ব্রাহ্মণ দেখা করতে চাইছে। একটু বিরক্ত হয়ে তিনি বললেন, এখন আমার সময় নেই বলে দে। দারোয়ান বলল, বলেছি। কিন্তু উনি যেতে চাইছেন না। তখন রাজা বললেন, পাঠিয়ে দে।

এক ব্রাহ্মণ ঘরে ঢুকলো। খাটো ধুতি, গায়ে নামাবলি, মাথায় টিকি। টিকি দেখলেই রাজার মাথাটা যায় গরম হয়ে। রুক্ষ স্বরে বললেন কী চাই? ব্রাহ্মন বলতে শুরু করলেন।

আমি নদীয়ার মহাদেব ভট্টাচার্য। (টিপিক্যাল নামাকরণ। সবদিক সামলে একটি সর্বদোষসম্পন্ন হিঁদু বামুন ঠাকুর। নাম শুনলেই মনে হয় সর্বাঙ্গে দেব দেবতার সুবাস)। থামলেন একটু, বোধহয় গুছিয়ে নিলেন একটু। আবার শুরু করলেন। জানেন, সেদিন ছিল বৈশাখ মাস। টোল থেকে ফিরতেই অপর্ণা এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো কোলে। জল দিলো, গামছা দিলো, বাতাস দিলো পাখা করে। আমার জন্য তার যতো চিন্তা। বাপে মেয়েতে আদর খাচ্ছি। তখন ওর মা ডাকলো ঘর থেকে। ভেতরে যেতে বলল, মেয়ের তো ৭ বছর বয়স হোল। আর কতদিন ঘরে বসিয়ে রাখবে? পাড়ায় যে কান পাতা দায়। আমি বললাম, পাত্র পাচ্ছি কই? যার কাছেই যাই। ১০০০ টাকার কমে পন নেবেনা কেউ। মন্দিরা ফিসফিস করে বলল, সবার তো কপাল সমান হয়না। কিন্তু জাত ধর্ম তো রাখতে হবে। কাল নদীপথে একজন কুলীন ব্রাহ্মন এসেছেন। বয়সটা বেশি। ৭০ এর ঘরে। কিন্তু বংশ উঁচু। ৫০ টাকায় কন্যা উদ্ধার করেন তিনি। আমাদের অপুকে ওর হাতে গৌরি দান করো। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, না না এ হবেনা। কিন্তু সমাজের চাপতো বুঝি। বুঝি সংসারের চাপও। নিজের সঙ্গে অনেক লড়াই করে অপুর সাথে বিবাহ দিলাম। লাল চেলি, গয়না, আলতা, সিঁদুরে মেয়েকে আমার দেবীর মতো লাগছিলো। সে যে কী রূপ কী বলবো!! বোধয় বাপের নজরটাই লেগেছিল সেদিন।

পরদিনই মেয়েকে ছেড়ে জামাই বাবাজীবন আবার পাড়ি দিলেন নদীপথে। আরও কারোর কন্যা উদ্ধার করতে। বলে গেলেন আবার আসবো পরের বৎসর।

আমাদের বাপ মেয়ের আনন্দের জীবন চলছিলো বেশ। সারাক্ষণ আমার পিছনে। সব কাজ শিখে গেলো। পারতো না শুধু রান্না। একদিন হাতে ফোস্কা পড়ে কী অবস্থা। আমি ওর মা কে বলে দিলাম, ওকে রান্নার কাজে লাগাবেনা। আগুনে ওর কষ্ট হয়। কী খুশি সেদিন মেয়ে। আমাকে জড়িয়ে ধরে কতো আদর।

আশ্বিন মাস গড়িয়ে যায়। পুজো আসছে, চারদিকে সাজো সাজো রব। আমি হাট থেকে মেয়ের জন্য লালটুকটুকে শাড়ি, আলতা সব নিয়ে এলাম। মেয়ে খুব খুশি। বলল ওঃ !! কখন যে পরবো এইসব। বাবা, আমাকে রানীর মতো লাগবে, বলো? আনন্দে আমার চোখ ভিজে উঠলো। অভাবী সংসারে খুশি উপচে পড়লো।

ঠিক তার পরের দিন, জানেন ঠিক পরের দিন। সকাল দশটা হবে। মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে লোক এলো পত্র নিয়ে। গতকাল নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় দেহ রেখেছেন। যথাবিহিত বিধি অনুসারে কন্যাকে সতী করার নির্দেশ দিয়েছেন তারা। ভেবেছিলাম, পত্র ছিঁড়ে ফেলবো। কিন্তু পত্রবাহক গ্রামের মাতব্বরদের জানিয়েই এসেছেন আমার বাড়ি। কোন উপায় ছিল না। রাজা বলে উঠলেন তারপর ???

তারপর মেয়েকে সাজালাম। নতুন লাল চেলির শাড়ি, গয়না, আলতা সিঁদুরে মেয়ে সেদিন অপরূপা। গ্রামে উৎসব, ঢাক বাজছে। এয়োরা সবাই ওর মাথার সিঁদুর, ওর আলতা নিচ্ছে। আর ও নিজে কী খুশি সেজেগুজে। ওর পছন্দের দধি মিষ্টান্ন এসেছে ঘর ভরে। জানেন, তার মধ্যেও ও সেসব আমাকে খাওয়াবে বলে ব্যস্ত। কথা বন্ধ হয়ে আসে ব্রাহ্মণের। চোখটা মুছে আবার শুরু করেন। খালি সে বুঝতে পারেনি উৎসবটা কিসের।

এরপর খবর এলো নদীর তীরে চিতা সাজানো সমাপ্ত। সতীমাতাকে নিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন কুলীন সমাজ। মেয়েকে কোলে নিয়ে চললাম। কাঁদিনি একটুও। ওকে বুঝতে দিতে চাইনি কিছুই। চিতার পাশে সমস্ত আনুষ্ঠানিক কাজ মিটলো। মেয়ে অবাক হয়ে দেখছিল সব। আগুন দেওয়া হোল চিতায়। দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো চিতা। মেয়ে বলল বাবা, বাড়ি চলো। আগুনে আমার বড় ভয়। আমি বললাম, আমার গলাটা একবার ছাড় মা। কচি হাত দুটো গলাটা ছাড়তেই ছুঁড়ে দিলাম অগ্নিকুণ্ডে। আগুনের মধ্যে থেকে একটা রিনরিনে গলা পাওয়া গেল, বাবাআআআআআআআআ।

সেই ডাক আমি ভুলতে পারিনি। তারপর থেকে একদিনও রাত্রে ঘুম হয়নি। উঠতে বসতে খেতে শুতে শুধু এক আওয়াজ। বাবাআআআআআআআ। আমি পারিনি তাকে বাঁচাতে। আপনি পারেন। পায়ে ধরি আপনার। মেয়েগুলাকে বাঁচান। কতো মেয়ে গ্রাম ঘরে আপনার মুখ চেয়ে আছে। আছি আমরা, মেয়ের বাপ মারা। বলতে পারিনা সমাজের ভয়ে। কিন্তু আপনি পারবেন।

উঠে দাঁড়ালেন রাজা রামমোহন রায়। বললেন, আমায় আপনি শক্তি দিলেন। পারতে আমাকে হবেই। এখানে না হলে ব্রিটেন যাবো। প্রিভি কাউন্সিলে দরবার করবো। কথা দিলাম আপনাকে।

বাকিটা ইতিহাস। সেই যুগে দাঁড়িয়ে তাঁর সেই লড়াই কতোটা কঠিন ছিল বলে বোঝানো যাবেনা। কলকাতার রাজ পরিবার থেকে ভারতের পণ্ডিত সমাজ সকলে ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কম নিন্দা অপমানের ঝড় বয়নি তাঁর ওপর দিয়ে। কিন্তু বটবৃক্ষের মতো অটুট ছিলেন তিনি। রামমোহন রায়, ভারতের 'প্রথম আধুনিক মানুষ'

 

- ঘটনা একশো ভাগ সত্যি। তৎকালীন সমাজে সতীদাহ প্রথার মতো বর্বর ও অমানুষিক প্রথার উল্লেখ আমরা বিভিন্ন সাহিত্য তথা ইতিহাসের মাধ্যমে পেয়ে এসেছি, জেনে এসেছি। মূলতঃ উত্তরে এবং প্রাক আধুনিক যুগে পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে এই প্রথার চল ছিল। বহুদিন ধরেই চলে আসছিল এই জঘণ্য প্রথা। আনুমানিক চতুর্থ শতাব্দী থেকেই এর প্রচলন সম্পর্কে ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়। এই প্রথার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিল আরোও একাধিক কুপ্রথা। যেমন বৈধব্যপ্রথা, বহুবিবাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ প্রথা ইত্যাদি। এক সাথে এতগুলো কুপ্রথা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠানো মোটেই সহজ ছিল না। সেই কঠিন কাজটিকে অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কর্মতৎপরতার সঙ্গে মোকাবিলা করে আইন পাশ করিয়ে সমাজকে এই কলঙ্কের দায়ভার থেকে মুক্ত করে রাজা রামমোহন রায় ভাবীকালকে দায়বদ্ধ করে রেখেছেন চিরদিনের জন্য।

সহমরণ প্রথা বহুদিন যাবৎ প্রচলিত থাকলেও বিভিন্ন সময়ে অনেকেই এর সমালোচনা করেছেন মনুস্মৃতিতে এই প্রথার সমর্থন না থাকায় এর টীকাকার মেধাতিথি এই প্রথার বিরোধিতা করেছেন বাণভট্ট তার লেখা কাদম্বরীতে এই প্রথার তীব্র নিন্দা করেছেন সুলতানি মোগল আমলেও এই প্রথাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হয়েছে ভারতের ঔপনিবেশিক যুগের প্রাথমিক পর্যায়ে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে চূঁচুড়ায় ডাচরা, চন্দননগরে ফরাসীরা, শ্রীরামপুরে ডেনরা পর্তুগীজরা তাদের উপনিবেশগুলিতে সহমরণ প্রথা নিষিদ্ধ করে ইংরেজরা এই ব্যাপারে প্রথমেই সরাসরি দেশীয়দের সঙ্গে সংঘাতে যেতে রাজি ছিলেন না, তবে এই প্রথার ব্যাপকতায় বেশ কিছু ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারপতি, ধর্মোপাসক, সরকারি কর্মচারী ইত্যাদিরা তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদন, পুস্তক বিবরণীতে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন ইংরেজ প্রকাশিত বেশ কিছু পত্রিকাও এই প্রথার বিরুদ্ধে তাদের কলম ধরেছিল ১৮১৮ সালের শেষার্ধে রাজা রামমোহন রায় সহমরণ বিষয় প্রবর্ত্তক নিবর্ত্তকের সম্বাদ পুস্তিকা প্রকাশ করলেন এবং পরে তার ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করলেন কলকাতার হিন্দুসমাজের একাংশ ১৮১৯ সালে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল হেস্টিংসকে সতীদাহ প্রথা রদ করতে আবেদন পেশ করেছিলেন, এবং অনেকেই এই প্রথার বিপক্ষে সোচ্চার হয়েছিলেন ১৮২৯ সালের ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীতে সতীদাহ প্রথাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয় আইনি কার্যক্রম গৃহীত হয় মূলত রাজা রামমোহন রায়ের সামাজিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই খুব অল্পসময়ের মধ্যে ভারতের অন্যান্য কোম্পানী অঞ্চলেও সতীদাহ প্রথাকে বাতিল ঘোষণা করা হয় রাজা রামমোহন রায় আদালতে প্রমাণ করে দেন যে সনাতন ধর্মে সতীদাহ বলে কিছু নেই

এ অবধি সব ঠিকই ছিল। কিন্তু সব কাজেরই কিছু অতঃপরথাকে। কিছু উত্তরকাণ্ড থাকে। পাঠকরা এদ্দুর অব্দি সবাই জানেন । এই অধ্যায় নতুন কিছু নয় । নতুন যা তা হলো - সতীদাহ বিলোপ করার পরবর্তী সময়ে এই মহান মানুষটি হিন্দু ধর্মের উপর শ্রদ্ধা বিশ্বাস হারিয়ে এক নতুন সমাজ প্রবর্তন করেন, যারা নাস্তিকতায় বিশ্বাসী। তিনি সেই সমাজের নাম দেন ব্রাহ্ম সমাজ। প্রখর যুক্তিবাদী দর্শনে অভিসিক্ত করতে থাকেন সমাজকে। মানুষের মনস্তত্ত্ব থেকে একে একে ভেঙে পড়তে থাকে সমস্ত রকম ধার্মিক বিশ্বাস। ঐ সমাজের আকার ব হতে থাকে। ধীরে ধীরে জন্ম হয় একদল, যারা ধর্ম কে আফিমের সাথে তুলনা করতে থাকেন। দুই প্রজন্ম পর বাংলায় হিন্দু ধর্ম কে আস্তাকুড়ে ফেলে দিয়ে উত্থান হয় কমুনিজম বা বামপন্থী গোষ্ঠীর। ততদিনে দেশ স্বাধীন। কংগ্রেস সরকারের একমাত্র বিরোধী হিসেবে, যুক্তিবাদী মানুষের দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে বহির্ভারতের মার্কসবাদী আদর্শে পুষ্ট এক বিরাট সংখ্যক নাস্তিক মানুষের। তারা জাতিতে বাঙালি, তাই মেধায় মননে এদের মোকাবেলা করা যথেষ্ট কঠিন । কোনো এক অজ্ঞাত কারণে চিন দেশকে এরা নিজেদের মুখিয়া বলে মানতে শুরু করে। যদিও চিন দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা বরাবরই ছিল এবং এখনও আছে। বিশেষত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দেশ চীন, ভারতের হিন্দু বামপন্থীদেরকে পাল্স বুঝে নাস্তিকতার মন্ত্রেই দীক্ষা দেয় । ভারতের বাঙালি হিন্দুর কাছে ধর্ম হয়ে উঠে বর্জনীয় আফিম। ধর্মীয় আচার আচরণ একে একে ভেঙে পড়তে থাকে। পশ্চিম বাংলার বাঙালিরা হয়ে উঠে ধর্ম পরিচয়হীন আচার বিশ্বাসহীন এক দানবীয় জাতিসহিষ্ণুতার বিন্দু মাত্র অবশেষটুকু ও কালের গর্ভে হারিয়ে যায় এদের। এমনকি হাজার শহিদের প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন দেশমাতৃকা ও এদের কাছে হয়ে উঠে একখণ্ড ভূমিমাত্রআর কিচ্ছু নয়। ধর্ম পরায়ণ হিন্দু বাঙালি ব্রাহ্ম সমাজের হাত ধরে পরিবর্তিত হয় এক ধর্ম পরিচয়হীন বামপন্থী জাতিতে। যার ফলশ্রুতি ফি বছরে রামমোহনকে শ্রদ্ধা জানানোর নাম করে সনাতন হিন্দু ধর্মের যুগপ্রাচীন কুপ্রথাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে জনসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করে নিজেকে মহান সেকুলারপন্থী হিসেবে জাহির করা। অথচ দেখা যায় তৎকালীন সমাজেও হিন্দু ধর্মের এক বৃহৎ সংখ্যক মানুষ ও সম্প্রদায় এর বিরুদ্ধে রাজা রামমোহনের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু এ কথা ইতিহাসের বইয়ে সচরাচর পাওয়া যাবে না। কারণ দুর্ভাগ্যবশতঃ শাসক দলের মুর্খতা, অজ্ঞতাসঞ্জাত মেধাহীনতায় দেশের ইতিহাস রচিত হয়েছিল অত্যন্ত কুবুদ্ধিসঞ্জাত বাম মানসিকতার লোকেদের দ্বারা। গালগল্প, সিনেমা সবেতেই তাদের পয়োভার। তাই দেশের ইতিহাসে মিথ্যেরই হয়েছে বেসাতি।

 

###

 

মিথ্যে প্রচার কিংবা সত্য গোপনের এই কারসাজি সমানে চলছে আজো। তাই তো সুযোগ পেলেই দুশো বছর আগের কথার সূত্র ধরে হিন্দু ধর্মকে হেয় প্রতিপন্ন করার সুযোগ না ছাড়লেও বর্তমানের অহিন্দু সমাজের এমনি এক কুপ্রথাকে নির্মূল করার জন্য দেশের এক প্রকৃত সমাজ সংস্কারককে কিন্তু সূচ্যগ্র মেদিনীও ছেড়ে দিতে রাজি নয় তথাকথিত এই বুদ্ধিজীবীবৃন্দ। সাধারণ মানুষকে এই বিষয়ে অন্ধকারে রেখে দেওয়াই এদের একমাত্র কর্তব্য। কিন্তু শাক দিয়ে ক’দিনই আর মাছ ঢেকে রাখা যায় ?

তৎকালীন হিন্দু সমাজেরই এক কুপ্রথা সতীদাহেরই মতো ভারতবর্ষের মুসলিম সমাজে তিন তালাক এক নিদারুণ অমানবিক কুপ্রথা। মুসলমানের গোটা জীবন কোরানের নির্দেশ দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা অথচ কথায় কথায় যাঁরাআল্লার আইনএবং আল্লার অলঙ্ঘনীয় নির্দেশ কোরানের প্রসঙ্গ তোলেন তাঁরা কতটা কোরান মানেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় দেখা যায় ভারতীয় মুসলমান তালাক, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর ভরণপোষণ বা বহু বিবাহের প্রশ্নে কোরানের ধার ধারেন না তাই এই দেশে এই মধ্যযুগীয় পুরুষতান্ত্রিক প্রথাগুলো মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের নামে বিরাজ করছে অদূর অতীতে ফোনে, পোস্টকার্ডে লিখে, -মেল করে এমনকী এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ করেও তালাক হয়ে যাচ্ছিল ভারত স্বাধীন হওয়ার দশ বছরের মধ্যে দেশে অন্য সব ধর্মের ব্যক্তিগত আইন বিধিবদ্ধ হলেও মুসলিম ব্যক্তিগত আইন সংবিধানের আওতায় আনা যায়নি মুসলিম ব্যক্তিগত আইন বিধিবদ্ধ করার দাবি ওঠাতেই মুসলিম নেতারা প্রবল বিক্রমে মাঠে নেমে পড়েছেন মুসলিম সমাজের সাধারণ মানুষ এবং মহিলারা ব্যাপারে কি ভাবছেন তা বিবেচনার মধ্যেই আনা হচ্ছে না মুসলিম নেতাদের দেখে মনে হচ্ছে, যেন মুসলমানের বিয়ে এবং বিবাহবিচ্ছেদ দেশের আইনের আওতায় চলে গেলে ইসলাম রসাতলে যাবে

 

প্রায় চল্লিশ বছর আগের শাহ বানু মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের এ ভাবেই বিরোধিতা করেছিলেন মুসলিম নেতারা। ১৯৮৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট শাহ বানু মামলায় খোরপোষের নির্দেশ দেয়। ওই রায়ে বলা হয়, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৫ নম্বর ধারায় শাহ বানুর খোরপোষ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ওই ধারা জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই রায় কেবল একজন হতভাগ্য নারীর জয় ছিল না, বহু ধর্মের এবং বহু সংস্কৃতির এই দেশে সেকুলার আইনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার এই ছিল বহু প্রতীক্ষিত সুযোগ। এই রায়ে দেশের মুসলিম নারী আশার আলো দেখেছিল।

কিন্তু রায় বেরনোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান নেতা-মোল্লারা বলতে শুরু করেন, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় তাঁদের নিজস্ব পারিবারিক আইনে হস্তক্ষেপ এবং ইসলামের ওপর আক্রমণ। বলেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা হাজারে হাজারে লাখে লাখে রাস্তায় নেমে গণ্ডগোল বাঁধিয়ে দেয়। প্রচারটা শেষ পর্যন্ত দাঁড়ালো এই যে, সরকার মুসলমানদের ওপর অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চাপিয়ে দিচ্ছে। পার্সোনাল ল বোর্ড এবং তাবড় মুসলিম নেতারা ঝাঁপিয়ে পড়ে দাবি তুললেন, নতুন কোনও আইন করে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় উল্টে দিতে হবে।

তুমুল সেই বিক্ষোভ আন্দোলন চলেছিল প্রায় গোটা বছর ধরে, যতদিন না কেন্দ্রীয় সরকার আইন করে সুপ্রিম কোর্টের রায় অকার্যকর করে প্রথমে সরকার আদালতের রায় মেনে নিলেও তাঁদের দাবি না মানলে পরের নির্বাচনে মুসলমানেরা কংগ্রেসকে বয়কট করার হুমকি দেওয়ায় তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী শেষে নতি স্বীকার করেন ভয় পেয়ে সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরেমুসলিম উইমেন (প্রোটেকশন অব রাইট অন ডিভোর্স) আইন ১৯৮৬পাশ করিয়ে নেন যে আইনের বলে অন্য সব ধর্মের মহিলারা খোরপোষ দাবি করতে পারে, নতুন আইন দেশের সেই সেকুলার আইনের পরিসর থেকে মুসলিম মহিলাদের বের করে দিল অথচ চোখের সামনে প্রতিবেশি দেশ পাকিস্তান, বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বহু দেশেই এমন অমানবিক প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে বহু আগেই।

সেই কালো অধ্যায় থেকে যখন দেশের মুসলিম মহিলারা বেরিয়ে আসতে গিয়েও মুখ থুবড়ে পড়লেন নির্লজ্জ ক্ষমতালোভী ভোটপিপাসুদের কাছে তখন সহজে আর এই অন্ধকারময় সমাজ থেকে উত্তরণের কোনও পথই খোলা রইল না তাঁদের সামনে। অথচ তিন তালাক বা তালাক এ বিদ্দত কখনই ইসলাম ধর্মের এমনকি আইনের অঙ্গ ছিল না। তা সত্ত্বেও তিন তালাকের সামাজিক কুসংস্কারকে ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থ পূরণে রাজনৈতিক রঙ দেওয়া হয়েছিল।
অথচ চিন্তা করলে দেখা যায় সামাজিক কুপ্রথা তিন তালাকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইন ১৯৮৬ সালেই সংসদের অনুমোদন পেয়ে যেতো। সেই সময় সুপ্রিম কোর্ট শাহবানো মামলায় ঐতিহাসিক রায় যখন বেরিয়েছিল তখন  লোকসভায় ৫৪৫টি আসনের মধ্যে ৪০০টিরও বেশি আসনে কংগ্রেসের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। এমনকি, রাজ্যসভায় ২৪৫ জন সদস্যের মধ্যে ১৫৯ জনেরও বেশি ছিলেন কংগ্রেসের। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তৎকালীন রাজীব গান্ধী সরকার সংসদে তার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়টিকে কার্যকর করতে দেয়নি। ফলস্বরূপ, মুসলিম মহিলাদের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারগুলিকে একপ্রকার অবজ্ঞা করা হয়েছিল।

তৎকালীন কংগ্রেস সরকার কিছু সংকীর্ণ মানসিকতাপূর্ণ সংস্কার বিমুখ মানুষের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিল। পক্ষান্তরে, সরকারের এই ভূমিকা ছিল মুসলিম মহিলাদের সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি অপরাধ। সেই সময় কংগ্রেসের এই ভুলমুসলিম মহিলাদের কাছে বহু দশকের এক শাস্তির খাড়া নেমে এসেছিল। কংগ্রেস দল ভোট কা উধারনিয়ে যথেষ্ট আতঙ্কিত হয়েছিল।


ভারত সংবিধান অনুসরণ করে পরিচালিত হয়। সাহরিয়ত মেনে নয় বা অন্য কোনও ধর্মীয় গ্রন্থ মেনে নয়। এর আগে দেশ থেকে সামাজিক কুপ্রথাগুলি দূর করার জন্য একাধিক আইন কার্যকর করা হয়েছিল। কিন্তু, তিন তালাক প্রথা রদের সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। এই আইন সামাজিক কুসংস্কার দূর করা, অমানবিক আচরণ প্রতিহত করা, নিষ্ঠুর ও অসাংবিধানিক প্রথা দূরীকরণের লক্ষ্যে লিঙ্গ সমতা বজায় রাখার জন্য কার্যকর করা হয়েছে। মুখে তিনবার তালাক শব্দ উচ্চারণ করে, তৎক্ষণাৎ বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ আইন বিরোধী। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে - এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে চিঠির মাধ্যমে, ফোনে, এমনকি মোবাইল এসএমএস বা হোয়াটস্অ্যাপের মাধ্যমেও তালাক দেওয়া হয়েছিল। পান থেকে চূণ খসলেই গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যেত মহিলাদের জীবন। এই তালাকপ্রাপ্ত অসহায় জীবনের দুঃখ দুর্দশা কিন্তু মৃত্যুরই মতো ছিল দুর্বিসহ। সংবেদনশীল একটি রাষ্ট্রে এ ধরনের দুর্ব্যবহার যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনই নীতি বিরুদ্ধ। সার্বিক উন্নয়নে অঙ্গীকারবদ্ধ একটি সরকারের কাছেও এটি মেনে নেওয়া উচিৎ নয়।


বিশ্বের একাধিক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তিন তালাক প্রথাকে বেআইনি এবং ইসলাম বিরোধী বলে আগেই ঘোষণা করেছে। মিশর হল প্রথম মুসলিম রাষ্ট্র, যেখানে ১৯২৯ সালে সামাজিক এই কুপ্রথা বাতিল করা হয়। একইভাবে, ১৯২৯ সালে সুদানে, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানে, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে, ১৯৫৯ সালে ইরাকে, ১৯৫৩ সালে সিরিয়ায় এবং ১৯৬৯ সালে মালয়েশিয়াতে তিন তালাক প্রথা চিরতরে বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও, সাইপ্রাস, জর্ডন, আলজেরিয়া, ইরান, ব্রুনেই, মরক্কো, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমীরশাহীতে বহু বছর আগেই সামাজিক এই কুপ্রথাটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারত এই অমানবিক ও নিষ্ঠুর প্রথাটিকে নির্মূল করতে ৭০ বছর লেগে গেছে।

অবশেষে ২০১৯ এর পয়লা আগস্ট ভারতীয় সংসদীয় ইতিহাসে এলো এক ঐতিহাসিক দিন। আধুনিক ভারতের আরোও একজন অন্যতম রূপকার শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর দৃঢ় অঙ্গীকার ও গভীর মানবিক দায়বদ্ধতার ফলে এই দিনটিতে তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে কার্যকর হলো একটি আইন। দেশের এই গর্বিত মুহূর্তেও কিন্তু তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার মতবাদীরা এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন লজ্জার মাথা খেয়েসেদিন সংসদে এই বিলের বিরোধিতায় কংগ্রেস, বামপন্থী দলগুলি, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি এবং তৃণমূল কংগ্রেস একজোট হয়েছিল। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিশ্চয়ই ভুলে যাবে না তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি কপচানো এই সব ধুর্ত দলসমূহকে। পয়লা আগস্ট দিনটি মুসলিম মহিলাদের লিঙ্গ সমতা, সাংবিধানিক, মৌলিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকারগুলিকে সুনিশ্চিত করেছে। তাই, পয়লা আগস্ট দিনটি ভারতীয় গণতন্ত্র এবং সংসদীয় ইতিহাসে এক সোনালী মুহূর্ত হিসাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আর অতি অবশ্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এই বিশাল গণতান্ত্রিক দেশের যোগ্যতম প্রধানমন্ত্রী তথা আধুনিক ভারতের জীবন্ত রূপকার শ্রী নরেন্দ্র মোদী
তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক সংস্কারের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। এ অবস্থায়ও কয়েকটি অসহিষ্ণু রাজনৈতিক দল এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের বিরোধিতার কসুর করেনি। এই হলো তাদের স্বরূপ। এদের চিনে রাখা খুব প্রয়োজন।

তুমুল বিরোধিতা সত্ত্বেও যে মহান দেশনায়কের প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কর্মতৎপরতার জন্য এই তিন তালাক প্রথাকে বিদায় জানানো সম্ভব হয়েছে তিনি আর কেউ নন - দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজনৈতিক বৈরীতার স্বার্থে বিরোধীরা যতই মোদী বিরোধিতার শ্লোগান আওড়ে থাকুক না কেন ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যাবে না। ভোট রাজনীতির তোয়াক্কা না করে যেভাবে দেশের এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের এক কুপ্রথাকে বিস্মৃতির অতলে বিসর্জন দিয়ে মহিলাদের কেতায় বেঁচে থাকার পথটিকে করেছেন সুগম তাঁকেও আজ সমমর্যাদায় সম্মানিত করা প্রয়োজন যেমন ফি বছরে রাজা রামমোহনকে করা হয়। সেখানে কেন এত দ্বিধা থাকবে ? কোনও ধরণের পন্থা অবলম্বন না করে দুই কুপ্রথার বিদায়কারীকে সমমর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার মধ্যে কেন এত কুণ্ঠা ? সতীদাহ প্রথার নির্মূলে গালগল্প লিখে রাজা রামমোহন রায়ের স্মৃতি চারণার নামে হিন্দুদের যুগপুরোনো কুপ্রথার চর্বিতচর্বণে যারা মেতে ওঠেন ফিবছর তারা তিন তালাকের নির্মূলে দেশের মহান প্রধানমন্ত্রীর অবদানকে জনসমক্ষে তুলে ধরতে পিছপা কেন ? আজ কোদালকে কোদাল বলার সাহস আমাদের রাখতে হবে। এক তরফা গড্ডলিকায় গা না ভাসিয়ে সহজ সত্যকে মেনে নেওয়াটাই প্রকৃত মনুষ্যত্ব। গা বাঁচিয়ে সামাজিক মাধ্যমে হিন্দু বিরোধী গালগল্পে মশগুল হয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার মহান মূর্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিপন্ন করার ধারাটি আজ সবার সামনে নির্লজ্জ ভাবে উন্মোচিত। সামাজিক মাধ্যমে নদীয়ার মহাদেব ভট্টাচার্যের পাশাপাশি তাই স্থান দেওয়া হোক শাহ বানুকেও, রামমোহন রায়ের পাশাপাশি স্থান দেওয়া হোক নরেন্দ্র মোদীকেও। সেটাই হবে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতা।

সতীদাহ থেকে তিন তালাক। ভারতীয় মহিলার আত্মরক্ষা ও আত্মমর্যাদার স্বার্থে এই দুই কুপ্রথার নির্মূলীকরণের দুই সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীকে হাজার নমস্কার।

 

সূত্রঃ আন্তর্জাল

- - - - - - - - - - - - - -


Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়