Skip to main content

কোলাজ পথ











এভাবেই কখনো দিন কেটে যায়
অলস, অকাজের কাজে নিষ্ফলা সময়।
দিনশেষে সঞ্চয়ের ঘরে আস্ত একটি গোল্লা
শিরায় উপশিরায় মাথা কুটে মরে নিরেট শূন্য।
এক নিপাট অস্থিরতা খেলে বেড়ায় সর্বাঙ্গে
সৃষ্টিহীনতার বিষাদ কালো গরজ - পোড়ায় শুধু।
কেটেছে এমন কত তালহীন যাপন বেলা
কত সুরহীন শব্দের দলছুট কালবেলা,
এবার পাততাড়ি জুড়ে শ্রাবণধারার মতো
আছড়ে পড়ুক সব যুগান্তরের সঞ্চিত অবহেলা।
এত অবান্তর কথার পরে মনে হয় যেন আজ
কিছুই তো হলো না বলা, জমে আছে সব কাজ
সময় আছে তো - সাজাতে অফুরান কথামালা ?
কেউ জানে না, ছুটছে কোথায় মানব জমিন
মিছিল চলেছে অনিঃশেষ পথ ধরে -
লৌহকপাট ভাঙার ছলে ভাঙছে অবিরাম
পরম্পরা, ঐতিহ্য, উশৃঙ্খলতার লাগাম।
 
কালের আবহে তিল তিল করে বদলে গেছে
জীবন ধারা, অবয়ব, মনের বেড়ে ওঠা
নতুন নয় কিছুই, আবহমানের এই তো ধারা
নির্ধারিত পথ ধরে আমি তুমি সে ও সবাই
চলেছি আপন ধারায়, পেছনে থেকে যায় অতীত।
কেউ তাকায় পেছন ফিরে, কেউ সোজাপথে
অলক্ষ্যে হারিয়ে যায় প্রবাহিত সময়ের গতিপথে।
পিছুটান ঘিরে, পথের দাবি মেনে,
ফিরে আসে অনন্ত কোলাজ - ছন্নছাড়া,
এলোপাথাড়ি, আঁকাবাঁকা পথ ধরে - তবু আসে
জ্বলন্ত আগুনের মতো নিখাদ সত্য ধরে আসে
জীবনমুখী দিনযাপনের অবিন্যস্ত খণ্ডচিত্র।
কোলাজের প্রথম ছবিতেই জ্বলজ্বল, ভাস্বর - সেই
জীবনমুখী গন্ধে লেপটে থাকা আটপৌরে ছবি।
আভরণ নয়, আচ্ছাদনে অবগুণ্ঠনবতী মমতাময়ী
শান্তিপুরী আচ্ছাদনে জীবনদায়িনীর জীবনসংগ্রাম।
কত বনবাদাড়, কত জলাভূমি, ধানক্ষেত পেরিয়ে
পথ চলে যায় জীবনের খোঁজে - এতগুলো জীবন
গাঙ পেরিয়ে উঁচু নিচু বন্ধুর পথ ধরে একাগ্রতায়
শুধু সামনে চেয়ে থাকা, সামনে এগিয়ে চলা।
কোলাজের সব ছবি কথা বলে প্রতিনিয়ত
জীবিকার সন্ধানে শুকতলা ক্ষয়ে যাওয়া পায়ে
হোঁচটের পর হোঁচট খেয়ে রুদ্ধ হতে চায় পথ।
কিছু ছবি তালে তালে শুধু মেলায় পা, পথে পথে
কিছু অস্পষ্ট ছবি মেঠোপথে লুটিয়ে পড়ে বারম্বার
আবার সমবেত সংগ্রামে অপ্রতুল খাদ্যপ্রাণে
অমৃত চয়ন করে নেয় শেষ দিনটির জন্যে।
পথে দেখা হয় এমনি কত ছুটে চলা দেবদূত
কত সাক্ষাৎ ভগবান - জীবন রক্ষকের সাথে।
অলক্ষ্যে লিখিত হয় প্রজন্মের বিধিলিপি
চিরস্থায়ী সেই লিপি শতকের পর শতক জুড়ে
জুগিয়ে যায় নিরাপত্তা, বেঁচে থাকার অধিকার।   
 
কোলাজের এত প্রত্যয়, এত দৃঢ় অঙ্গীকার,
এত সত্য পথের সংগ্রাম - ধীরে ধীরে ধীরে
পাথর বেয়ে প্রবাহিত, চুঁইয়ে পড়া জলধারার মতো
জন্ম দেয় সাফল্যের ফল্গুধারা - দীর্ঘ পথের শেষে।
সব পথ একদিন শেষ হয় নিশ্চিত,
শুধু থেকে যায় পথচলা বৃত্তান্ত -
বিশ্বদর্শনের প্রাক্কালে শেষবারের মতো আসে ফিরে
হড়পা বানের মতো জীবন পেরিয়ে মরণের পথে।
কুঁড়ি থেকে ঝরা কুসুমের অগোছালো সারণি
উদভ্রান্ত ছুটে চলা মেঠোপথ ধরে, আল পারিয়ে
একের পর এক হাতলবিহীন সাঁকো পেরিয়ে
কোন সে ঠিকানায় - কেউ জানে না,
সব জীবনের একটাই ঠিকানা, পথ শুধু ভিন্ন।
সেই দিকশূন্যপুরের যাত্রাশেষের পরিচর্যা বেলা
নতুন পথের সন্ধানে আত্মমগ্ন অনুসন্ধানের বেলা।
অদম্য উৎসাহে কিছু পথ নিজেই তৈরি করে
এগিয়ে যেতে হয় কাঙ্খিত লক্ষ্যে - তত্ত্বাবধানে।
সাফল্যের মানসপথে বিছানো কাঁটার পয়োভার
প্রকৃতি, পরিবেশ, রাষ্ট্র - মায় উদবাস্তুর বিভীষিকা
সব বাঁধা পেরিয়ে চোখে পড়ে সেই মাইলফলক
যেখানে লিখা থাকে - এবার একলা চলো মন।
সেই আরেক শুরু, আরেক যাত্রা পথের সন্ধান
ছুটে চলা, পিছনে পড়ে থাকে যত পুরাতন সান্নিধ্য
নতুন সহচরের সন্ধানে আবারো আসে সেই অতীত
সেই উদভ্রান্ত ছুটে চলার চর্বতচর্বন ক্ষণ।
মাঝে আসে কিছু একলা একার দুঃখযাপন কথা
ভরসার একগুচ্ছ হাতের সহসা উধাও হয়ে যাওয়া
বেদনায় ভরে ওঠে মন - দু’চোখে নামে শ্রাবণধারা।
স্মৃতির জাবদা খাতায় যোগ হতে থাকে স্ন্যাপশট
একের পর এক ঝাপসা পাতার জীবন কথা।
 
নতুন এসে ভরিয়ে দিতে চায় ফেলে আসা শূন্যতা
কিছু ভরাট হয়, কিছু থেকে যায় মস্তিষ্কের অন্দরে
মুছে ফেলা যায় না, পথ জুড়ে রসদ যোগায় অলক্ষ্যে।
এবার শুরু নতুন ট্রাপিজের ছোটাছুটি,
মাটি আর মহাশূন্যের দুঃসাহসিক দোলনাপথে
কেউ জানে না কোথায় পতন -
কিংবা সফল অবতরণ তাল মিলিয়ে সময় মতো।
কিছু সাহচর্য হাতের মেলবন্ধনে এগোয় প্রজন্মপথ
ব্যাটনটাই শুধু থেকে যায় হাত বদল হয়ে
দৌড়বিদ সব হারিয়ে যেতে থাকে একের পর এক
নতুন হাতে ব্যাটন সমঝে অতীতে মিলিয়ে যায়
অতীতেরই যত নতুন, যত বর্তমান যাপন বেলা।
 
কিছু ঠাঁই ভরাট হতে থাকে ভবিষ্যতের কথামালায়
নতুন প্রজন্মের সৃষ্টিকথার চিন্তাধারা আসে পথে
বসুধার অলিখিত নিয়মের সূত্র ধরে আসে
বীজমন্ত্রের উচ্চারণে সৃষ্টিশীলতার উদবিগ্ন ক্ষণ।
 
এই তো জীবন, বয়ে চলা শুধু অবিরাম -
অতীত থেকে বর্তমান হয়ে ভবিষ্যতের পথে
পথ থেকে পথান্তরে জীবন বোধের স্তর পেরিয়ে
আগামীর হাতে নিরাপদে ব্যাটন তুলে দেওয়া
জাবদা খাতায় এঁকে দেওয়া - আরেকটি নিরেট শূন্য।

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

নিবেদিত সাহিত্যচর্চার গর্বিত পুনরাবলোকন - ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’

সাধারণ অর্থে বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা । যেমনটি করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে । অপরদিকে সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে এনে হুবহু ( শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে ) একত্রীকরণ । সেই হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয় , একটি সংকলন গ্রন্থ । বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক ( সংকলক ) সত্যজিৎ নাথের বিস্তৃত ভূমিকায় । পুরো ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে - ‘ সালটা ১৯৯০ । ‘ দৈনিক সোনার কাছাড় ’- এ একবছর হল আসা - যাওয়া করছি । চাকরির বয়স হয়নি তাই চাকরি নয় , এই ‘ আসা - যাওয়া ’ । …. হঠাৎ করেই একদিন ভূত চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব । ‘… সেই শুরু । অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে।...

মহানিষ্ক্ৰমণ

প্রায় চল্লিশ বছর আগে গ্রামের সেই মায়াময় বাড়িটি ছেড়ে আসতে বেজায় কষ্ট পেয়েছিলেন মা ও বাবা। স্পষ্ট মনে আছে অর্ঘ্যর, এক অব্যক্ত অসহায় বেদনার ছাপ ছিল তাঁদের চোখেমুখে। চোখের কোণে টলটল করছিল অশ্রু হয়ে জমে থাকা যাবতীয় সুখ দুঃখের ইতিকথা। জীবনে চলার পথে গড়ে নিতে হয় অনেক কিছু, আবার ছেড়েও যেতে হয় একদিন। এই কঠোর বাস্তব সেদিন প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছিল অর্ঘ্যও। সিক্ত হয়ে উঠছিল তার চোখও। জন্ম থেকে এখানেই যে তার বেড়ে ওঠা। খেলাধুলা, পড়াশোনা সব তো এখানেই। দাদাদের বাইরে চলে যাওয়ার পর বারান্দাসংলগ্ন বাঁশের বেড়াযুক্ত কোঠাটিও একদিন তার একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষ হয়ে উঠেছিল। শেষ কৈশোরে এই কোঠাতে বসেই তার শরীরচর্চা আর দেহজুড়ে বেড়ে-ওঠা লক্ষণের অবাক পর্যবেক্ষণ। আবার এখানে বসেই নিমগ্ন পড়াশোনার ফসল ম্যাট্রিকে এক চোখধাঁধানো ফলাফল। এরপর একদিন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে উচ্চ পদে চাকরি পেয়ে দাদাদের মতোই বাইরে বেরিয়ে যায় অর্ঘ্য, স্বাভাবিক নিয়মে। ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে যায় দিদিরও। সন্তানরা যখন বড় হয়ে বাইরে চলে যায় ততদিনে বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা মায়ের পক্ষে আর ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বহু জল্পনা কল্পনার শেষে ত...