Skip to main content

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে - দ্বিভাষিক কাব্যগ্রন্থ ‘অনুরণন’



কবি রঘুনন্দন ভট্টাচার্যের প্রথম কাব্যগ্রন্থঅনুরণনপ্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি দৃষ্টিনন্দন বাঁধাই, প্রচ্ছদ - গ্রন্থপাঠের স্পৃহা বাড়িয়ে দেয় স্বভাবতই এবং পাঠশেষের প্রতিক্রিয়াটিও অনায়াসে এক কথায় বলে নেওয়া যায় ভূমিকাতেই। চাকচিক্যমণ্ডিত বহিরঙ্গের মতোই অন্তরঙ্গেও রঘুনন্দন পারদর্শিতা দেখিয়েছেন সাবলীল উচ্চারণে। সহজ সুরে গ্রন্থিত করেছেন যাবতীয় কথা ও বার্তা।
বাস্তব জীবনে আজকের কর্মমুখর বাতাবরণে কবিতা লিখা ও তার গ্রন্থনা যে কত বড় বালাই সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই বালাইকে যে উন্মাদনায় সম্পাদন করা যায় তারই নাম গরজ। অন্তরের এই গরজটুকুই সম্পূর্ণ এই গ্রন্থের নির্যাস। সময়ের কালক্রমে যে ভাবনার পাহাড় জমে উঠেছিল মনের গহীনে তাকেই সহজ বোধে গ্রন্থিত করে পাঠকের দরবারে হাজির করেছেন রঘুনন্দন। কবিতার কবিতাময়তাকে তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছাপিয়ে গেছে ভাবনার সপাট উচ্চারণ। মোট ১১২ পৃষ্ঠার এই জমজমাট দু’মলাটের মধ্যে সংকলিত হয়েছে ৬০টি বাংলা কবিতা এবং ১৫টি ইংরেজি কবিতা। জীবনবোধকে সরল কথনে লিপিবদ্ধ করেছেন নিখুঁত ভাবে। অধিকাংশ কবিতায়ই যেন উচ্চারিত হয়েছে এক না পাওয়ার বেদনা, এক অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা। বস্তুতঃ জীবনকে স্বল্প কথায় এঁকেছেন গুছিয়ে। তাই কবি লিখেন -
জীবিকার শৃঙ্খলে বন্দি জীবন, শৈশব বাকরুদ্ধ
মুঠোফোন সব করেছে অধিকার, চিঠি অবলুপ্ত।
বর্গফুট করে ব্যবধান তোমার আমার মাঝে,
খোলা মাঠে আকাশ দেখা ভুলে গেছি বহুদিন
দু’খানা ঘর, ছোট্ট বারান্দা পৃথিবীর পরিসর।
(কবিতা - শৈশব)
কবির প্রায় সব ক’টি কবিতাই পৃষ্ঠাজোড়া কিংবা তারও কিছু বেশি। অর্থাৎ যা বলতে চেয়েছেন তা বলেছেন বিশদেই। পাঠকের কাছে অবোধ্য করে তুলেননি ইশারায়। ব্যতিক্রমী হিসেবে রয়েছে একটি করে বাংলা ও ইংরেজি ‘হাইকু’। সার্বিক ভাবে কী আছে রঘুনন্দনের কবিতায় ? পালটা প্রশ্ন করাই যায় - কী নেই ? আছে করোনা আবহ, আছে সমতার বার্তা, সভ্যতার জয়গান, জীবনের মূল্যবোধ, উৎসবের অন্তরালে নিঃস্বের দুঃখবোধ, নিপীড়িতের কষ্টকর পথ চলার উপাখ্যান। আছে প্রেম, আছে সুখ ও শোকের ককটেল, আছে ঋতু বদলের আবহে ভাবনার প্রকাশ।
হারানো শৈশব - বালক বেলার স্মৃতি বারবার এসেছে ঘুরে ফিরে। ব্যথিত করেছে কবির হৃদয়। প্রতিফলিত হয়েছে একাধিক কবিতায় - ইচ্ছেনদী, ফেরা যখন অসম্ভব, পথ চলা, ফেলে আসা শৈশব ইত্যাদির মধ্য দিয়ে। ইংরেজি কবিতায়ও এই ভাবনারই স্বচ্ছ প্রকাশ
কবিতা ও প্রেম একাকার হয়েছে কিছু কবিতায়। দাগ রেখে যায় পাঠক মননে -
লজ্জাবনতা কবিতা যেন ষোড়শীর প্রথম প্রণয়,
কবিতা যেন মাতৃদুগ্ধ হয়ে লালন করে শৈশব,
কৈশোর ক্রীড়াঙ্গন যেন কবিতার মুক্তাঙ্গন
কবিতা, শুধু কবিতাই যেন প্রেমিকার মুক্তকেশ।
- - - - - -
(কবিতা - কবিতা, শুধু তুমি)
কিংবা -
She comes forth one step after
Another - closer and closer -
Stll her corporeal warmth
Mingles with mine and dips
Me in the feelings un-defined.
- - - - - - -
(কবিতা - Feelings to Rejoice)
কবিতার হাত ধরেই প্রত্যয়ী কবি উদ্বুদ্ধ করেছেন তাঁর ভবিষ্যৎ চলার পথের ভাবনাকে কবিতাই যে তাঁকে একদিন পরাবে বিজয়ীর জয়মাল্য সেই প্রত্যয়ে আশার কথাও লিপিবদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন কবিতায় -
পিঠে নিয়ে মিঠে রোদ চলো ডানা মেলি,
তেপান্তর মাঠ পেরিয়ে চলো না আজ হারাই,
চাওয়া পাওয়ার খতিয়ান থাক না আজ পড়ে,
জীবনকে ভালোবেসে জীবন সৃষ্টি করি
(কবিতা - চলো ডানা মেলি)  
কিংবা -
We shouldn’t count the numbers
But the endeavors we make
We have just to stand up and look
Forward and strive
For a world better to live in.
(কবিতা - My new Year Thought)
এভাবেই এক নূতন পৃথিবীর সন্ধানে সমাপ্তি রেখা টেনেছেন অভিনভ এক কবিতা সংকলনের গ্রন্থের মুখবন্ধে রঘুনন্দনের কবিতার সম্যক ধারণা পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন সাহিত্যিক দীপেন্দু দাস ও হাইলাকান্দির এস এস কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ পরিতোষ চন্দ্র দত্ত। কবি তাঁর গ্রন্থকে উৎসর্গ করেছেন তাঁর পরলোকগত পিতা, সাহিত্য-প্রেমিক ও অপেশাদার সঙ্গীত শিল্পী রথীন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য ও তাঁর পরলোকগতা মা কল্যাণী ভট্টাচার্য-র স্মৃতির উদ্দেশ্যে এবং জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে যে সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষিকা ও গুরুজন তাঁকে জীবন যুদ্ধে মোকাবিলার জন্য সজ্জিত হতে যত্নশীল হয়েছেন ও হচ্ছেন তাঁদের সকলের উদ্দেশ্যে। কিন্তু এত সুন্দর প্রচ্ছদ যাঁর হাত দিয়ে সন্নিবিষ্ট হলো সেই শিল্পীর নামটি এখানে অনুপস্থিত। বানান ভুল এবং ছাপার ভুল সাকুল্যে দু’টি। ছাপাই, বাঁধাই এবং অক্ষর বিন্যাসে সুসজ্জিত এই কাব্যগ্রন্থ নিশ্চিতই পাঠক মনে জাগিয়ে তুলবে ভবিষ্যতের প্রত্যাশা।
- - - - - - - -
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
‘অনুরণন’
মূল্য - ২০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৯৫৭০২৯৩৯৫

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

নিবেদিত সাহিত্যচর্চার গর্বিত পুনরাবলোকন - ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’

সাধারণ অর্থে বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা । যেমনটি করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে । অপরদিকে সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে এনে হুবহু ( শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে ) একত্রীকরণ । সেই হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয় , একটি সংকলন গ্রন্থ । বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক ( সংকলক ) সত্যজিৎ নাথের বিস্তৃত ভূমিকায় । পুরো ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে - ‘ সালটা ১৯৯০ । ‘ দৈনিক সোনার কাছাড় ’- এ একবছর হল আসা - যাওয়া করছি । চাকরির বয়স হয়নি তাই চাকরি নয় , এই ‘ আসা - যাওয়া ’ । …. হঠাৎ করেই একদিন ভূত চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব । ‘… সেই শুরু । অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে।...

মহানিষ্ক্ৰমণ

প্রায় চল্লিশ বছর আগে গ্রামের সেই মায়াময় বাড়িটি ছেড়ে আসতে বেজায় কষ্ট পেয়েছিলেন মা ও বাবা। স্পষ্ট মনে আছে অর্ঘ্যর, এক অব্যক্ত অসহায় বেদনার ছাপ ছিল তাঁদের চোখেমুখে। চোখের কোণে টলটল করছিল অশ্রু হয়ে জমে থাকা যাবতীয় সুখ দুঃখের ইতিকথা। জীবনে চলার পথে গড়ে নিতে হয় অনেক কিছু, আবার ছেড়েও যেতে হয় একদিন। এই কঠোর বাস্তব সেদিন প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছিল অর্ঘ্যও। সিক্ত হয়ে উঠছিল তার চোখও। জন্ম থেকে এখানেই যে তার বেড়ে ওঠা। খেলাধুলা, পড়াশোনা সব তো এখানেই। দাদাদের বাইরে চলে যাওয়ার পর বারান্দাসংলগ্ন বাঁশের বেড়াযুক্ত কোঠাটিও একদিন তার একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষ হয়ে উঠেছিল। শেষ কৈশোরে এই কোঠাতে বসেই তার শরীরচর্চা আর দেহজুড়ে বেড়ে-ওঠা লক্ষণের অবাক পর্যবেক্ষণ। আবার এখানে বসেই নিমগ্ন পড়াশোনার ফসল ম্যাট্রিকে এক চোখধাঁধানো ফলাফল। এরপর একদিন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে উচ্চ পদে চাকরি পেয়ে দাদাদের মতোই বাইরে বেরিয়ে যায় অর্ঘ্য, স্বাভাবিক নিয়মে। ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে যায় দিদিরও। সন্তানরা যখন বড় হয়ে বাইরে চলে যায় ততদিনে বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা মায়ের পক্ষে আর ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বহু জল্পনা কল্পনার শেষে ত...