“কথার আছে শতেক বাণী, যদি কথা
কইতে জানি।"
‘এমনিতে হোজাই অবশ্য ঠিক বেড়াবার জায়গা বলে প্রসিদ্ধ
নয়। কিন্তু ফারুক বলেছিল, সেখানে বাজারের একটা দোকানে অসমের বেস্ট রসগোল্লা খেয়েছে
সে, বিকেলবেলা একটা পার্ক আছে, শান্তিবন বলে, সেখানে বসা যায়। ‘হোজাই কলেজ’ বলে একটা
নামকরা কো-এড কলেজ আছে। তবে তার সামনে ছুটির সময় দাঁড়িয়ে থাকার বয়সটা অনেক আগেই পেরিয়ে
এসেছি। তাছাড়া রেল স্টেশনে, উঁচু সিঁড়ি দিয়ে উঠে ওভারব্রিজ দিয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে শহরে
নামার যে ব্যবস্থা ‘কইরা দিছে’, সেখানে মাঝামাঝি জায়গায় দাঁড়ালে মনটা উদাস হয়ে যায়।’গ্রন্থের শুরুতে আছে একটি দীর্ঘ গোয়েন্দা কাহিনি - ‘ফেক ইনভয়েস’ যা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত একশো ভাগ। অথচ নিটোল গল্পময়তায় টানটান উত্তেজনাময় গোয়ান্দা কাহিনির যাবতীয় উপাদান এতে উপস্থিত। কাহিনির শেষটা আরোও চমৎকার। এর চাইতে ভালো সমাপ্তি আর হতে পারে না। গ্রন্থের শেষে আছে এক অতি মনোরম ভ্রমণ কাহিনি, ‘ভৈরবকুণ্ড ভ্রমণ’। পরতে পরতে ভাষা, বর্ণনা ও বুনোটের কারিকুরি। কাহিনির সাথে সাথে পাঠকের সহভ্রমণ একশো ভাগ নিশ্চিত। এই দু’টো কাহিনিই স্থানীয় পরিমণ্ডলের অন্তর্গত। এখানেই লেখকের স্বকীয়তা। এত সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে পারেন যে লেখক তাঁর অন্তত গোটা কয়েক গল্পের বই ইতিমধ্যেই বেরিয়ে যাওয়ার কথা। অথচ গ্রন্থের শেষ প্রচ্ছদে আছে - ‘লেখক অবশ্য নামজাদা কেউ নন ......।’ খানিক বিসদৃশ মনে হলো।
এই দু’টির বাইরে লেখকের এক বা দুই পৃষ্ঠার ফেসবুক কালেকশান। ফেসবুকে সঞ্জয় গুপ্ত তার চটুল অথচ ভাবগম্ভীর বিষয় সম্বলিত তথ্যভিত্তিক পোস্টের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। সেখান থেকেই তুলে আনা কিছু মণিমুক্তো। উল্লেখযোগ্য - ‘আপনার আর আমার বাংলা ভাষাটা’, ‘কাজিরাঙ্গা’, দুই পর্বে তথ্যসমৃদ্ধ কমিকের সাতকাহন - ‘বেতাল’, ‘হোজাই সফরনামা’, ‘রেল কাহিনি’, ‘ছাব্বিশে জুন, ১৯৮৩’, ‘অথ জিলিপি কাহিনী’, ‘নালিশ’ আদি সাতাশটি গদ্য। তবে ‘হরিদ্বারে’ শীর্ষক গদ্যটির নাম বোধ করি ‘তর্পণ’ হলেই বেশি মানাতো। অনবদ্য এক মানবিক আবেদন ফুটে উঠেছে শেষটায়। লেখকের সাথে সাথে হয়তো দু’চোখ সিক্ত হয়ে ওঠে পাঠকেরও।
‘মুনাফখড়ি’, ‘মদ বিক্রি’ আদি গদ্যকথায় লেখকের সামাজিক সচেতনতার আভাস পাওয়া যায়। আছে একাধিক স্মৃতিচারণমূলক লেখা। লিখনশৈলির চমৎকারিত্বে তরতর করে এগিয়ে যায় পঠন। লেখকের সহজ সরল গদ্যের বুনোট মনমাতানো। মাঝে মাঝেই কিছু প্রশ্ন, কিছু ধাঁধা ছুড়ে দিচ্ছেন পাঠকের উদ্দেশে। ক’মা ( , ) এবং ডট্ ডট্ ( ...... ) এর অসামান্য ব্যবহার। এই শৈলীটি সঞ্জয়ের লেখালেখির এক সম্পদ বলা যায়। কিছু শ্লেষ, নিখাদ হাস্যরস, সামাজিক গরজ এবং উপযুক্ত স্থানে সাধু বাক্যের ব্যবহারও তাঁর রচনাসমূহের এক উল্লেখযোগ্য দিক।
সূচিপত্র নেই। বোধ করি তার প্রয়োজনও নেই। পাঠক একবার পাঠ শুরু করে দিলে এগোতেই থাকবেন আপন ঔৎসুক্যে। পেছন ফেরার জো নেই। বানান/ছাপার ভুল প্রায় নেই বললেই চলে। এখানে লেখকের পাশাপাশি প্রকাশক ভিকি পাবলিশার্সেরও ধন্যবাদ প্রাপ্য। শুধু কয়েকটি জায়গায় ‘আমরা’ ও ‘আমার’ এর মধ্যে গন্ডগোল বেঁধেছে এবং ‘র’ ও ‘ড়’-এর স্থানচ্যুতি ঘটেছে যা ১২৮ পৃষ্ঠার বইটির বিশালসিন্ধুতে নিতান্তই বিন্দুমাত্র।
পারফেক্ট বাইন্ডিং গ্রন্থটির মানানসই প্রচ্ছদের সৌজন্যে নয়নজ্যোতি শর্মা। ভেতরের প্রাসঙ্গিক রেখাচিত্র ফারুক শাহিদ এবং রাজর্ষি সাহার। গ্রন্থের প্রারম্ভে লেখক দু’দফায় কৃতজ্ঞতা ও ঋণ স্বীকার করেছেন প্রিয় পাঠকদের, প্রতিক্রিয়া লিখিয়েদের, ভারতীয় ডাক বিভাগের এবং কয়েকজন সাহিত্য সম্পর্কিত গুণীজনদের। লিপিবদ্ধ হয়েছে লেখকের পূর্ববর্তী গ্রন্থ ‘এলোমেলো ১’-এর উপর দু’টি পাঠ প্রতিক্রিয়াও। পুরো গ্রন্থটি পড়ার পর কারো যদি লেখক সঞ্জয় গুপ্তকে সাহিত্যিক বলতে দ্বিধা হয় তাহলে অনায়াসে বলা যায় তিনি এ অঞ্চলের এই মুহূর্তে সেরা ‘কথাকার’।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
‘এলোমেলো ২’
সঞ্জয় গুপ্ত
মূল্য - অনুল্লেখিত
যোগাযোগ - ৯১০১৩৩২৯৩৬
সঞ্জয় গুপ্ত
মূল্য - অনুল্লেখিত
যোগাযোগ - ৯১০১৩৩২৯৩৬
Comments
Post a Comment