Skip to main content

বিষয় বৈচিত্র্যে মনের কথা 'গুলমোহর'

শরৎসুন্দরী হাসি হাসি মুখে আবার দিলেন দেখা
চারিদিকে তার খুশীর বাহার সোনা রোদ্দুরে মাখা
মাথার উপরে নীল চাঁদোয়া চুমকিখচিত তায়
নীচে বিছানো সবুজ চাদর ফুলে ফুলে ফুলময়
…… (কবিতা - মাকে বরণ করি)
কিংবা -
কাশের বনে লাগল দোলা শরৎ এল বুঝি
শিউলি ফুলে সুবাস ছড়ায় - ফিরি পরশ খুঁজি
সকালবেলায় রবির আলোয় ভুবনভোলা রূপ
শরৎ কালের প্রতিটি দিন মাদকতাভরা রূপ
…… (কবিতা - শরৎ এল বুঝি)
ঋতু পর্যায়ের অগুনতি কবিতায় সেজে উঠেছে ডঃ গীতা সাহার সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘গুলমোহর’মোট ৫৮ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে ৪৬ টি কবিতা। দু’একটির বাইরে সবক’টিই অন্ত্যমিলের ছন্দে লিখা লিখা।
ডঃ গীতা সাহা করিমগঞ্জের রবীন্দ্র সদন মহিলা কলেজের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ। দীর্ঘ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকা। নবতম সংযোজন এই ‘গুলমোহর’। পেপারব্যাকে মানানসই প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদ শিল্পীর নাম ঊহ্য। কবি তাঁর এই গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর - ‘মাকে ও বাবাকে’।
ঋতু - বিশেষ করে শরৎ বিশেষ ভাবে স্থান পেয়েছে এই গ্রন্থে। এছাড়াও ভিন্ন স্বাদের - এমনকি কিছু হাস্যরসাত্মক ছড়াগোত্রের কবিতাও রয়েছে যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই পঠনোপযোগী। এ নিয়ে কবির নিজস্ব ব্যাখ্যা রয়েছে ‘কবির কথা’ শিরোনামে ভূমিকায় জানা যায় এটি কবির একাদশ গ্রন্থতিনি লিখছেন - ‘গুলমোহর’ গ্রন্থটিতে মোট ছয়চল্লিশটি কবিতা স্থান পেয়েছে। রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কবিতা ও ছড়া। সকল বয়সের উপযোগী এই কবিতাগুলি বিভিন্ন সময়ে রচিত। এর মধ্যে একটি কথা আমি অবশ্যই স্বীকার করব। এখানে পরিবেশিত ‘শ্রীমণ্ডিত শরৎ’ কবিতাটির অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম ‘ভট্টিকাব্য’ থেকে। যেখানে দ্বিতীয় সরগের প্রারম্ভেই রয়েছে অপূর্ব সরৎ বর্ণনা যা পাঠককুলকে করে বিমোহিত ও আনন্দিত। আর ‘কুমারসম্ভবে অকালবসন্ত’, ‘সমাধিমগ্ন শিব’, ও ‘পার্বতীর তপস্যা’ - এই তিনটি কবিতা মহাকবি কালিদাসের অমর মহাকাব্য ‘কুমারসম্ভব’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছি।’ গ্রন্থের নামকরণের ব্যাখ্যাও পাওয়া যায় ভূমিকায় - ‘এবারের গ্রন্থের নাম রেখেছি ‘গুলমোহর’। গুলমোহর কৃষ্ণচূড়ারই নামান্তর। বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে বনভূমি আলোকিত করে তার উজ্জ্বল প্রকাশ। সবুজ পাতার মাঝে আগুন-লাল কৃষ্ণচূড়া বড়ই চিত্তাকর্ষক।’
একের পর এক কবিতায় পরিচয় পাওয়া যায় কবিমনের বিচিত্র ভাবনার প্রকাশ। বিষয় বৈচিত্রে বৈচিত্র্যময় কবিতাগুলি। আছে প্রকৃতি, আছে ঋতু, আছে হাস্যরস, জীবনযাত্রার বিচিত্র কাহন। আছে ‘কবি ও বিড়ালের কথোপকথন’ জাতীয় বিচিত্র ভাবনা। কিছু কবিতা তার শব্দ চয়নে ভাস্বর হয়ে আছে যা প্রখর অধ্যয়নসঞ্জাত লেখনীরই বহিঃপ্রকাশ। উল্লেখযোগ্য - ‘পুণ্য শারদ প্রাতে’, ‘শিশির বিন্দু’, ‘ভোলা বিশ্বনাথ’, ‘ভোরের আলো’, ‘বাজে পূরবীর ছন্দ’ ইত্যাদি। কিছু গভীর অনুভব, অনুভূতির কবিতা গ্রন্থটিতে এনে দিয়েছে বিরল পঠনসুখ।
কাজল কালো হরিণ চোখে
জমে আছে জল
বাঁধ ভেঙে ঝরবে কখন
খোঁজে না পাই তল।
সোনার বরণ কন্যা রে তুই
মেঘবরণ চুল,
গুঞ্জা ফুলের মালা গলে
কানে সোনার দুল।
...... (কবিতা - মরমিয়া)
কিংবা -
সুন্দর তার মুখের হাসি, সুন্দর তার কান্না
হাসিতে তার মুক্তো ঝরে কান্নাতে তার পান্না।
হাসি উজ্জ্বল মুখখানি তার রামধনু আঁকা ভোর,
বিষাদ ভরা মুখখানিতে ভরা আছে আঁখিলোর।
...... (কবিতা - হাসিকান্না)
স্কলার পাবলিকেশনস-এর শব্দ, বাক্য ও অক্ষর বিন্যাস যথাযথ যদিও ছাপাই-এর ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার অভাব আছে গ্রন্থটিতে। গ্রন্থটির প্রকাশক গৌতম সাহা। বানান ‘প্রায়’ নির্ভুল বলা চলে। মনের গহিন থেকে উঠে আসা বিস্তৃত ও বিচিত্র ভাবনার এক গুচ্ছ বহিঃপ্রকাশ যেন এই গ্রন্থ। আধুনিক কবিতার ছোঁয়া হয়তো পাওয়া যাবে না এবং ছন্দের স্বার্থে ঢুকে পড়েছে বহু রাবীন্দ্রিক বা পুরোনো শব্দাবলি তবু সব মিলিয়ে এক বিচিত্র স্বাদের পঠনের অবকাশ এনে দেয় ‘গুলমোহর’।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী 
 
‘গুলমোহর’
ডঃ গীতা সাহা
মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫৫৯৬০০১

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়