Skip to main content

সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক এক সংগ্রহযোগ্য পত্রিকা বাক্প্রবাহ


শুধুমাত্র সাহিত্য ও সংস্কৃতির উপর লিখা প্রবন্ধ নিবন্ধ নিয়ে বরপেটা রোড থেকে প্রকাশিত হয়েছে ত্রিভাষিক (বাংলা, অসমিয়া ও ইংরেজি) সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা ‘বাক্‌প্রবাহ’। এটি প্রথম সংখ্যা, প্রকাশকাল - জুন ২০২২। সম্পাদক শংকর কর।
করোনাকালীন ত্রস্ত সময় এবং ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার গরজ নিয়ে দুই পৃষ্ঠা জোড়া প্রাসঙ্গিক সম্পাদকীয় রয়েছে তিনটি শুভেচ্ছাবার্তার পরই। শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তথা মুখ্য উপদেষ্টা তপোধীর ভট্টাচার্য, হাউলি বি এইচ কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ ভূষণ চন্দ্র পাঠক এবং বরপেটা রোডের জি এল চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ (নাম উল্লেখ নেই)।
সূচিপত্রের সূচনায় বিভাগ বিন্যাসের উল্লেখ নেই যদিও প্রথমেই রয়েছে বাংলা বিভাগের প্রবন্ধ নিবন্ধ। পুরো পত্রিকার প্রতিটি রচনা অত্যন্ত উচ্চ মানের এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এ বিভাগে প্রথমেই রয়েছে ইলিয়াসের ‘যুগলবন্দি’ নিয়ে তপোধীর ভট্টাচার্যের বিস্তৃত ও সারগর্ভ আলোচনা। এর পর আছে বেলা দাস-এর তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধ ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা - সূচকীয় আলোচনার সীমাবদ্ধতা’ এবং আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনায় যুক্ত অধ্যাপক, সুবক্তা, মননশীল লেখক ও গ্রন্থ রচয়িতা সদ্য প্রয়াত বিকাশ রায়ের নিবন্ধ ‘অশ্রুকুমার সিকদার - শ্রেণিকক্ষে আর্টিস্ট, চিন্তায় আধুনিক’। প্রয়াত বিকাশ রায়ের স্মরণেই উৎসর্গ করা হয়েছে ‘বাক্‌প্রবাহ’-এর আলোচ্য সংখ্যাটি। ‘সংস্কৃতি কী ও কেন’ শিরোনামে সুখপাঠ্য নিবন্ধ লিখেছেন খগেন চন্দ্র দাস। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে কিরণশঙ্কর রায়-এর ‘উন্নয়ন - সাহিত্য-সংস্কৃতিতে তার প্রভাব’, পূরবী ভট্টাচার্য-এর ‘আটপৌরে প্রকৃতির মহাকাব্যিক রূপ - লেখক বিভূতিভূষণের অনুভবে (আরণ্যক ও ইছামতী), মিলনকান্তি বিশ্বাসের ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি-চর্চায় সেকাল ও একাল’, অরুণ কুমার সেন-এর ‘মানুষ ও সংস্কৃতি’, প্রেমানন্দ রায়-এর ‘গানের প্রকৃতি ও প্রকৃতির গান - উত্তরবঙ্গের লোকসংগীতের প্রেক্ষাপটে একটি সমীক্ষা’, শান্তনু সরকার-এর ‘পারস্পরিক বোঝাপড়ায় সাহিত্য-সংস্কৃতির ভূমিকা’, অজিত কুমার সিংহ-এর ‘বিজন ভট্টাচার্যের জীবনকন্যা নাটকে লোকসংস্কৃতির পরিসর’ এবং তনুশ্রী ঘোষ এর ‘বদলে গেছে লেখার ধরন’।
সূচিপত্রে এর পর এসেছে বিভাগ বিন্যাস যদিও ভাষা বিভাগের বিন্যাসের মাঝে এসে গেছে ‘গল্প বিভাগ’। রয়েছে গল্পকার হারুকি মুরাকামির জাপানি গল্পের ইংরেজি সংস্করণ থেকে স্বপ্না ভট্টাচার্যের বাংলা অনুবাদ ‘অতিকায় ব্যাঙ টোকিওকে বাঁচাল’। চমৎকার একটি বড় গল্প এবং যথার্থ অনুবাদ যদিও গল্পের শেষে প্রদেয় টীকা থেকে অনুমান - গ্রন্থ নামেই গল্পের নামকরণ হয়েছে। মূল গল্পের শিরোনামের উল্লেখ নেই।
অসমিয়া বিভাগে রয়েছে পাঁচটি রচনা। রবীন্দ্র ভট্টাচার্য-এর ‘ডঃ ভূপেন হাজরিকা আরু তেওঁর বিশ্বায়তন’, রেণু হাজরিকার ‘ভোগালি বিহু, লোকাচার আরু আধুনিকতা’, ঊষা দাস-এর ‘ঔপনিবেশিকতাবাদর পোহরত বেজবরুয়ার সাহিত্য’ এবং কল্পনা বৈশ্য-এর ‘অসমিয়া সংস্কৃতিত সমন্বয়র চিত্র - এটি আলোকপাত’। এছাড়া রয়েছে একটি গ্রন্থ সমালোচনা - বনজিৎ বর্মন-এর ‘হনুমানর রেলযাত্রা - অসমিয়া ব্যঙ্গ সাহিত্যলৈ উজ্জ্বল প্রতীতি’।
ইংরেজি বিভাগে রয়েছে নির্মালি মালাকারের ‘Inclusion of Music in Education and Learning’, দীপমণি দাস-এর ‘Depiction of Tribal Social Life and Culture in Prithibir Hnabi’ এবং সুলতান আলি আহমেদ-এর ‘Nilamani Phookan and Hiren Gohain - The Story of a Poet and a Critic’.
প্রতিটি রচনা তত্ত্ব এবং তথ্যের নিরিখে এক একটি সংগ্রহযোগ্য উপস্থাপন। ৭২ পৃষ্ঠার এই সংখাটির প্রচ্ছদ প্রাসঙ্গিক এবং আকর্ষণীয় যদিও কোনও প্রচ্ছদ চিত্র নেই। কারিগরি সহযোগিতায় রয়েছেন সুব্রত সাহা যদিও প্রচ্ছদ অলংকরণ কার তার উল্লেখ নেই। সম্পাদনা সমিতির নামোল্লেখ রয়েছে যদিও প্রকাশকের নাম নেই। সার্বিক ছাপাই ও বাঁধাই মানসম্পন্ন হয়ে ওঠেনি। অক্ষর আকার ক্ষুদ্র হয়েছে। তবে প্রথম সংখ্যা হিসেবে এত কিছুর পরও শুধুমাত্র রচনাসমূহের গুণগত মানে সংখ্যাটি অতুলনীয় হয়ে উঠেছে। সম্পাদকের গভীর নিবেদন ও প্রতীতি পরিষ্কার ফুটে উঠেছে নিঃসন্দেহে। সাহিত্য সংস্কৃতির মহলে একটি সংগ্রহযোগ্য দলিল হয়ে থাকবে ‘বাক্‌প্রবাহ’-এর আলোচ্য সংখ্যাটি।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

‘বাক্‌প্রবাহ’

সম্পাদক - শংকর কর
মূল্য - ১৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪০১৪৭৩১১৭

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

নিবেদিত সাহিত্যচর্চার গর্বিত পুনরাবলোকন - ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’

সাধারণ অর্থে বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা । যেমনটি করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে । অপরদিকে সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে এনে হুবহু ( শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে ) একত্রীকরণ । সেই হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয় , একটি সংকলন গ্রন্থ । বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক ( সংকলক ) সত্যজিৎ নাথের বিস্তৃত ভূমিকায় । পুরো ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে - ‘ সালটা ১৯৯০ । ‘ দৈনিক সোনার কাছাড় ’- এ একবছর হল আসা - যাওয়া করছি । চাকরির বয়স হয়নি তাই চাকরি নয় , এই ‘ আসা - যাওয়া ’ । …. হঠাৎ করেই একদিন ভূত চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব । ‘… সেই শুরু । অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে।...

মহানিষ্ক্ৰমণ

প্রায় চল্লিশ বছর আগে গ্রামের সেই মায়াময় বাড়িটি ছেড়ে আসতে বেজায় কষ্ট পেয়েছিলেন মা ও বাবা। স্পষ্ট মনে আছে অর্ঘ্যর, এক অব্যক্ত অসহায় বেদনার ছাপ ছিল তাঁদের চোখেমুখে। চোখের কোণে টলটল করছিল অশ্রু হয়ে জমে থাকা যাবতীয় সুখ দুঃখের ইতিকথা। জীবনে চলার পথে গড়ে নিতে হয় অনেক কিছু, আবার ছেড়েও যেতে হয় একদিন। এই কঠোর বাস্তব সেদিন প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছিল অর্ঘ্যও। সিক্ত হয়ে উঠছিল তার চোখও। জন্ম থেকে এখানেই যে তার বেড়ে ওঠা। খেলাধুলা, পড়াশোনা সব তো এখানেই। দাদাদের বাইরে চলে যাওয়ার পর বারান্দাসংলগ্ন বাঁশের বেড়াযুক্ত কোঠাটিও একদিন তার একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষ হয়ে উঠেছিল। শেষ কৈশোরে এই কোঠাতে বসেই তার শরীরচর্চা আর দেহজুড়ে বেড়ে-ওঠা লক্ষণের অবাক পর্যবেক্ষণ। আবার এখানে বসেই নিমগ্ন পড়াশোনার ফসল ম্যাট্রিকে এক চোখধাঁধানো ফলাফল। এরপর একদিন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে উচ্চ পদে চাকরি পেয়ে দাদাদের মতোই বাইরে বেরিয়ে যায় অর্ঘ্য, স্বাভাবিক নিয়মে। ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে যায় দিদিরও। সন্তানরা যখন বড় হয়ে বাইরে চলে যায় ততদিনে বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা মায়ের পক্ষে আর ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বহু জল্পনা কল্পনার শেষে ত...