Skip to main content

গুণমানে সমৃদ্ধ ’বিড়াল’ বিষয়ক সংখ্যা - 'প্রবাহ'


মনে হতে পারে এক রকম ‘চুল নিয়ে চুলোচুলি’। ‘বিড়াল’ নিয়ে পত্রিকার আস্ত একটি সংখ্যা ? বাংলা ভুবনে এমন কাণ্ড আগে কেউ ঘটিয়েছেন কিনা জানা নেই। তবে তথ্য নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে জানা যায় যে উত্তর আমেরিকার একটি জনপ্রিয় মাসিক পত্রিকার নামই ছিল ‘ক্যাট ফ্যান্সি’ যা উৎসর্গীকৃত ছিল বিড়াল, বিড়াল-মালিক ও বিড়াল-প্রেমীদের উদ্দেশ্যে। ১৯৬৫ সালে এই পত্রিকার যাত্রা শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এটি ‘ক্যাটস্টার’ নামে ন্বিমাসিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। এছাড়াও মডার্ন ক্যাট ম্যাগাজিন, ইওর ক্যাট, ওয়াইল্ড ক্যাট, টাক্সিডো ক্যাট আদি ম্যাগাজিনের বাইরেও বহু জার্নাল ও নিউজলেটারের সন্ধান পাওয়া যায়।
সম্প্রতি অসম থেকে প্রকাশিত গবেষণাধর্মী লিটল ম্যাগাজিন ‘প্রবাহ’-এর সম্পাদক আশিসরঞ্জন নাথ এমন একটি দুঃসাহস দেখিয়েছেন এবং স্বভাবতই তা সাড়া ফেলেছে বাংলা ভুবনে। আখেরে এই দুঃসাহসের ফলশ্রুতি কেমন হল তা জানা যায় সম্পাদকীয় থেকে যেখানে সম্পাদক লিখছেন - ‘প্রবাহের বিষয়ভিত্তিক সংখ্যা প্রকাশের বৈশিষ্ট্য অনুসারে বিড়াল সংখ্যার প্রস্তুতি পর্বে যে হতাশার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ক্রমে আশার আলো দেখা গেল। ঝুলিতে যে এত বিড়াল লুকিয়েছিল তা প্রথমে ভাবনার মধ্যে ছিল না। ফলে এক সংখ্যায় সব লেখা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। পরে আবার আরেকটি সংখ্যা করার অভিলাষ জাগিয়ে দিল’।
এবার পাতা ওলটানো যাক সংখ্যাটির। দেখা যাক কত রকমের বেড়াল কিংবা বলা যায় বেড়ালের কত কথা বেরোয় কার ঝুলি থেকে। গোটা সংখ্যা জুড়ে রয়েছে ষোলোটি নিবন্ধ, চারটি গল্প এবং ছয়টি কবিতা। গল্পকার মিথিলেশ ভট্টাচার্যের ‘একটি বাউটা বিড়াল এবং আমার বেদান্ত দর্শন’ ব্যক্তিগত গদ্যের ধাঁচে বিড়ালের সঙ্গে মানুষের একাত্মবোধের আত্ম-অনুভবসঞ্জাত সুলিখিত নিবন্ধ। নিবন্ধটি রবাহূত বেড়ালের সঙ্গে গৃহস্থের এক বিচিত্র সম্পর্কের খতিয়ান। ড. অমরকুমার পালের নিবন্ধ ‘বাংলা সাহিত্যে বিড়াল প্রসঙ্গ’ উপজীব্য বিষয়ের এক গভীর অধ্যয়নসঞ্জাত রচনা যদিও নিবন্ধের প্রথম দুটি পৃষ্ঠা ব্যয় করা হয়েছে বিশ্ব সাহিত্যে বিড়ালের উপস্থিতি নিয়ে। বিস্তৃত এই নিবন্ধে বাংলা সাহিত্যে বিড়ালের বিচিত্র উপস্থাপনার আস্বাদ পাওয়া যায়। এখানে বিড়ালের প্রতিশব্দ হিসেবে কিছু অপ্রচলিত শব্দ তুলে ধরা হল পাঠকের জ্ঞাতার্থে - অকরোটি, অতু, আখুভুক, পয়স্য, ব্যাঘ্রাস্য, মূষিকারাতি, ...... ইত্যাদি। পরবর্তী নিবন্ধে অপূর্বকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন শুধু ‘রবীন্দ্র রচনায় বিড়াল’ প্রসঙ্গে। স্বভাবতই সংক্ষিপ্ত হয়েছে রচনার পরিসর। সংখ্যার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিবন্ধ - ‘অসমীয়া সংস্কৃতি ও সাহিত্যে ‘মেকুরী’ অথবা বিড়াল - একটি প্রতিবেদন’। লেখক জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত। সতেরো পৃষ্ঠা জোড়া এক বিস্তৃত নিবন্ধ যা সাহিত্য ও সংস্কৃতির আবহে ছুঁয়ে গেছে অসমীয়া সমাজের অন্দরমহল অবধি। প্রাসঙ্গিক ভাবেই ছুঁয়ে গেছে ইতিহাস থেকে বিজ্ঞানকেও। লোককথার মোটিফ বিড়ালের জনগোষ্ঠী অনুযায়ী টোটেম ও ট্যাবুর সুনির্দিষ্ট উল্লেখ নিশ্চিতভাবেই নিবন্ধের মান নিয়ে গেছে বহু উচ্চতায়। ব্রজকমার সরকার লিখেছেন ‘সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি জগৎ, বিড়ালের সন্ধানে’। দেশ বিদেশের শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতিতে বিড়ালের উপস্থিতির এক তথ্যভিত্তিক রচনা যদিও প্রেক্ষিত যেখানে বিশাল সেখানে পরিসরের স্বল্পতা অনুভূত হয়েছে। বীরমঙ্গল সিংহ লিখেছেন একটি মণিপুরি লোককথার গল্প - ‘পেবেৎ ও বিড়াল তপস্বী’। এই সুপাঠ্য রচনাটিকে ইচ্ছে করলে গল্প বিভাগেও স্থান দেওয়া যেত। বলা যায় - সমীচীন হতো। বাবুবিলাস ও বাবু কালচার নিয়ে নিবন্ধ ‘জীবনের নকশা ও নকশার জীবন’ লিখেছেন শরদিন্দু সাহা। নিবন্ধের ভূমিকা অনেকটাই দীর্ঘ বলে অনুভূত হয়েছে। তাছাড়া বিষয় ‘বিড়াল’-এর বদলে ‘বাবু কালচার’ এখানে মুখ্য ভূমিকায় এসেছে এবং অনুষঙ্গ হিসেবেই এসেছে ‘বিড়ালের বে’। ‘বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছায়ায়’ নিবন্ধ ‘বিড়াল বেত্তান্ত’ লিখেছেন দিবাকর পুরকায়স্থ। দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে। এখানে বিড়াল নেই যদিও বিড়ালরূপী মানুষের উপস্থিতিতে এবং বর্তমানের আবহে কিন্তু ভাষার বুনোটে যথেষ্ট মানসম্পন্ন হয়েছে নিবন্ধটি। সর্বজিৎ দাসের নিবন্ধ ‘অথঃ বিড়াল বাখান’। সংক্ষিপ্ত হলেও এই নিবন্ধটিকে অনায়াসে বিড়ালের সাতকাহন হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। ‘বিড়ালের ভাষা’ লিখেছেন অশোক দেব। গল্পের ছলে আধুনিক জীবনযাত্রায় বিড়ালেরও আধুনিক রূপায়ন। ‘বিড়ালের বারো কথা’ লিখেছেন মীনাক্ষি চক্রবর্তী সোম। হিন্দু ধর্ম তথা দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিড়ালের উপস্থিতি নিয়ে মূল্যবান এবং সুলিখিত এক তথ্যভিত্তিক নিবন্ধ। জানা যায় ষষ্ঠীদেবীর বাহন বিড়ালকে ‘রত্নবিমান’ বলা হতো। সম্পাদক আশিসরঞ্জন নাথ রম্য রচনার ছলে লিখেছেন ‘অথঃ মার্জার কথা’। আমাদের নিজস্ব পরিমণ্ডলে বিড়ালের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে এই সংক্ষিপ্ত রচনায়। পরবর্তী নিবন্ধ লিখেছেন নুরুল ইসলাম লস্কর। ‘বিড়ালের নাকি নয়টি প্রাণ ! তাতে কি তারা পায় পরিত্রাণ ?’ একটি ভিন্নধর্মী এবং সংক্ষিপ্ত অনুসন্ধানমূলক নিবন্ধ। সংখ্যার আরেকটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিবন্ধ ‘সবচেয়ে বেশি পোষিত প্রাণী - বিড়াল’ লিখেছেন দিগেন বর্মণ। প্রতিটি দিক সামলে নিয়ে বলা যায় এক আস্ত বিড়াল-পুরাণ। নিশ্চিত ভাবেই মান বৃদ্ধি করেছে সংখ্যাটির। শ্যামলকান্তি চক্রবর্তীর নিবন্ধ ‘বিড়াল - প্রত্ন-বিজ্ঞানে’। ব্যতিক্রমী বিষয়ে এক তথ্যবহুল নিবন্ধ। বিভাগের শেষ নিবন্ধ - সুহিনা বিশ্বাস মজুমদারের ‘পড়ো মোর বিড়াল ছানাটি - কমিকসে কার্টুনে ছবিতে ‘মেকুর’’। এও এক ব্যতিক্রমী বিষয় এবং লেখক সুচারুভাবেই উপস্থাপন করেছেন বিষয়টিকে। শিরোনামে ‘মেকুর’ না হয়ে ‘বিড়াল’ই হতে পারত অনায়াসে। সাহিত্যে ‘বিড়াল’ বিষয়ক প্রতিটি প্রবন্ধেই দিকপাল সাহিত্যিকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ অঞ্চলের বাংলা সাহিত্যে বিড়ালের উপস্থিতি বিষয়ক কোনও নিবন্ধ এখানে অনুপস্থিত। এ নিয়ে পরবর্তীতে ভাবা যেতে পারে।
গল্প বিভাগে রয়েছে মোস্তফা অভি-র ‘বিড়ালের কোয়ারেন্টাইন’। এখানে কোভিড আবহে লিখা গল্পে বিড়াল এসেছে রূপক হিসেবে কিংবা বলা যায় সংযোজন হিসেবে। বিশ্ব সাহিত্যের একটা ধাঁচ রয়েছে গল্পে। গল্পশেষে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একই নামে রয়েছে তাঁর একটি গল্প সংকলনও। মৃদুলকান্তি দে’র ‘গোলকপতির বিড়ালনামা’ও একটি রূপকধর্মী সুখপাঠ্য গল্প। অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্যের গল্প ‘সফেদ কুমারী’ বিড়াল নিয়ে একটি নির্মল, নান্দনিক গল্প। জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামির গল্পের বাংলা অনুবাদ করেছেন সাগুফতা শারমীন তানিয়া। ‘মানুষখেকো বিড়াল’ বুনোটে, বর্ণনায়, অনুবাদে এক সাবলীল বড়গল্প। এই বিভাগেও স্থানীয় গল্পকারদের গল্প নিতান্তই কম।
কবিতা বিভাগে রয়েছে নির্মলেন্দু গুণ, তৈমুর খান, চিরশ্রী দেবনাথ, জিতেন্দ্র নাথ, বাপ্পি নীহার এবং আশিসরঞ্জন নাথ-এর কবিতা। প্রতিটি কবিতাই সুখপাঠ্য এবং সুলিখিত। তবু বিশেষোল্লেখের দাবি রাখে চিরশ্রী দেবনাথের কবিতাটি।
প্রতিটি পৃষ্ঠায় বিড়ালের সচিত্র উপস্থিতি আকর্ষণীয় করেছে সংখ্যাটিকে যদিও স্কেচগুলো কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে কিংবা কে এঁকেছেন সে বিষয়ে কোনও উল্লেখ নেই। অজিত দাশ-এর প্রচ্ছদ পত্রিকার মানোন্নয়নে অবদান রেখেছে যথেষ্ট। বানানের শুদ্ধতা, ছাপার স্পষ্টতাও এ সংখ্যার অন্যতম সম্পদ। ৩৬ বর্ষ, ১ম সংখ্যা - ১৮৮ পৃষ্ঠার ‘প্রবাহ’ গুণগত মানে এবং গবেষণাধর্মী গুণে এক অনন্য প্রকাশ নিঃসন্দেহে।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

 

‘প্রবাহ’
৩৬ বর্ষ, ১ম সংখ্যা
সম্পাদক আশিসরঞ্জন নাথ
মোল্য - ২৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৮৮১১০১০৫৪০

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়