Skip to main content

প্রত্যয় ও উৎসর্জনের পত্রিকা ‘উত্তীয়’


শবনম ও শিউলির আভাসযুক্ত প্রছদচিত্রে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে শতপৃষ্ঠার সাহিত্য পত্রিকাউত্তীয় ব্যতিক্রমী পত্রিকা নাম ২০২৩-২৪ শারদ সম্ভার এই পত্রিকার দ্বিতীয় পর্যায় - দশম সংখ্যা তৃতীয় পৃষ্ঠা কিংবা সম্পাদকীয়তে কোনও উল্লেখ নেই যদিও অনুমান করা যায় এটি একটি বার্ষিক পত্রিকা লেখালেখির বিশাল সম্ভারও সেরকম ইঙ্গিতই দেয় এমন সম্ভারযুক্ত পত্রিকা বছরে একাধিক প্রকাশিত হওয়ার সম্ভাবনা নিতান্তই কম সম্পাদক স্নিগ্ধা চট্টোপাধ্যায় বিশ্বাস-এর নিবেদন ও গরজের ছাপ স্পষ্ট
এক পৃষ্ঠার সম্পাদকীয় যথেষ্ট বিস্তৃত তা হতেই হবে কারণ পত্রিকার আয়তনও যে বিশাল পড়ার সময় যথেষ্ট শক্ত হাতে ধরতে হবে পত্রিকাটি শরৎ, দেশের বর্তমান সময়ের হাল হকিকত, চন্দ্রযান, প্রকৃতি, যুদ্ধ - সব কিছুই এসেছে পর্যায়ক্রমে সব শেষে শারদ শুভেচ্ছা - ‘সর্বে সুখিনো ভবন্তুঃ, সর্বে সন্তুঃ নিরাময়াঃ প্রায় পৃষ্ঠাজোড়া সূচিপত্রের প্রথম কলাম গদ্য বিভাগ ও দ্বিতীয় কলাম পদ্য বিভাগ। যদিও সেভাবে উল্লিখিত হয়নি বিভাগবিন্যাস। গদ্য বিভাগে আছে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, বড় থেকে অণু গল্প অবধি এবং স্বগতোক্তি, মুক্ত গদ্য সহ একটি একাঙ্ক নাটক।
আগেই বলা হয়েছে - আয়োজন বিশাল। তাই প্রতিটি লেখার আলোচনা পরিসরের স্বল্পতায় সম্ভব নয়। এগোনো যাক তাই বিষয় অনুযায়ী। প্রবন্ধ বিভাগে প্রথমেই রয়েছে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কেন নয়ন আপনি ভেসে যায়’। তথ্যাদির উল্লেখে কবিগুরুর জীবনে শোকগাথার এক যথাসম্ভব গোছানো উপস্থাপন। হারাণ দে’র ‘বরাকের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন। পুরোনো লেখা। ফলে তথ্যাদিও পুরোনো। নিশুতি মজুমদারের ‘ডিমাছা কাছাড়ী ও বরাক উপত্যকা’, সুস্মিতা মজুমদারের ‘সপরিবারে জগৎ জননী দুর্গা’, স্বপন কুমার পণ্ডার ‘ভারতের সর্বোচ্চ মন্দির ও এশিয়ার দীর্ঘতম রোপওয়ের সন্ধানে’, ডা. জয়ন্তী বিশ্বাসের ‘আমাদের মা, সকলের মা’ ও ড. কস্তুরী হোম চৌধুরীর ‘বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. হর্ষ ভট্টাচার্য’ - তথ্যাদি সহ সুলিখিত নিবন্ধ। অমলেন্দু চক্রবর্তীর ‘আমি গেলে ঘুচিবে জঞ্জাল’ অহংমুক্ত, আমিত্বমুক্ত মোক্ষলাভের দর্শন নিয়ে অসাধারণ একটি নিবন্ধ। রূপরাজ ভট্টাচার্যের ‘সাহিত্যে বাস্তবের গ্রন্থনা - বয়নের ভাষা-বয়ানের কৌশল’ বাস্তব ঘটনা কী সাহিত্য হতে পারে - এই প্রশ্নের এক নির্মোহ বিশ্লেষণসমৃদ্ধ উত্তরের অনুসন্ধানমূলক নিবন্ধ। শেষোক্ত দুটি নিবন্ধ আলোচ্য সংখ্যার সম্পদ হিসেবে সমৃদ্ধ করেছে পত্রিকাটিকে। গল্প বিভাগে যাঁরা লিখেছেন তাঁরা হলেন - সদ্য প্রয়াত সাহিত্যিক মনোমোহন মিশ্র, রণবীর পুরকায়স্থ, স্বাগতা চক্রবর্তী, উমা পুরকায়স্থ, মঞ্জরী হীরামণি (অণুগল্প/মুক্ত গদ্য), সংযুক্তা দাস পুরকায়স্থ, রাজকুমার সরকার (তিনটি অণুগল্প), অমিতাভ সেনগুপ্ত, মিথিলেশ ভট্টাচার্য, সেবিকা বিশারদ (চক্রবর্তী) (স্বগতোক্তিমূলক), হিমাশিস ভট্টাচার্য, ঝুমুর পাণ্ডে (মুক্ত গদ্য), ও স্মৃতি দাস। বিশেষোল্লেখে রাখতেই হয় উমা, সংযুক্তা, স্মৃতির ছোটগল্পের পাশাপাশি মিথিলেশ ও অমিতাভের বড় গল্পকে। হিমাশিসের বড়গল্পও বিশেষোল্লেখের দাবি রাখে যদিও বিস্তৃতির খানিকটা আধিক্য রয়েছে বলে মনে হতে পারে। স্বাগতার গল্পে ‘বর’ ও ‘বন্ধু’র ভূমিকা কিছুটা ঘোলাটে মনে হওয়ার অবকাশ রয়েছে। সম্পাদক স্নিগ্ধা চট্টোপাধ্যায়ের একাঙ্ক নাটক ‘আঁধারে আলো’ অসাধারণ হয়ে উঠলেও অনভিপ্রেত সমাপন কি একান্তই প্রয়োজন ছিল ? অত্যাচার, অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াইটা জারি রাখা যেত না ? এমন প্রশ্ন পাঠক মনে জাগতেই পারে।
কবিতা বিভাগ নামি ও নবীন কবিদের কবিতায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। যাঁরা লিখলেন - পারমিতা, ধনঞ্জয় চক্রবর্তী, বিজয়কুমার ভট্টাচার্য, শমিতা ভট্টাচার্য, ধ্রুবকুমার সাহা, শুভ্রা সেনগুপ্ত, কপোতাক্ষী ব্রহ্মচারী চক্রবর্তী, মৃন্ময় রায়, আশিসরঞ্জন নাথ, সুদীপ দে, চন্দ্রিমা দত্ত, শৈলেন দাস, কমলিকা মজুমদার, জ্যোতির্ময় রায়, মমতা চক্রবর্তী, সৌরভ ভট্টাচার্য, সুবর্ণ মুখোপাধ্যায়, ঋতা ঘোষ, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, জয়ন্তী দত্ত, শতদল আচার্য, দেবযানী ভট্টাচার্য, অভিজিৎ চক্রবর্তী, দেবী ধর, প্রদীপ সেনগুপ্ত, শ্রাবণী সরকার, দীপক চক্রবর্তী, নারায়ণ মোদক, মঞ্জুশ্রী ঘোষ, সমুজ্জ্বল দে, ফাল্গুনী চক্রবর্তী, রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ, রাজকুমার সরকার, বাপ্পি নীহার ও শবরী চৌধুরী।
কবি লেখকদের নামের পাশে সূচিপত্রে তাঁদের বাসস্থানের উল্লেখ উল্লেখযোগ্য। এই তালিকায় শিলঙের আধিক্য মেঘালয়ে বাংলা চর্চার ধারা যে আজও প্রবহমান এই সুখকর বার্তাটি পাঠক মনে প্রত্যয়ের সৃষ্টি করে।
সদ্য প্রয়াত কবি বিজিৎকুমার ভট্টাচার্যকে উৎসর্গ করা হয়েছে আলোচ্য সংখ্যাটি। তাঁর একটি কবিতার পুনর্মুদ্রণ অধিকতর প্রাসঙ্গিক হতো। কাগজ, ছাপার মান তথা অক্ষর ও শব্দ বিন্যাস যথাযথ হলেও বেশ কিছু মুদ্রণ প্রমাদ রয়ে গেছে। সার্বিক অলংকরণ নান্দনিক। সব মিলিয়ে প্রত্যয়, উৎকর্ষ ও উৎসর্জনের পত্রিকা ‘উত্তীয়’।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৬০০২০১৫১৮৬ 

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...