Skip to main content

মায়াবী কাব্যশৈলীর প্রত্যয়িত কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা আমার শেষ ঠিকানা’


বইয়ের সমার্থক শব্দ গ্রন্থ, পুস্তক, কিতাব ইত্যাদি আমাদের অতি পরিচিত এক বিশেষ্য পদ আরোও একটি শব্দ আছে - পুস্তিকা পুস্তক ও পুস্তিকার মধ্যে তাহলে ফারাক কোথায় ? অবশ্যই তার আকারে আয়তনে এবং পৃষ্ঠা সংখ্যায় এক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট কোনও মাপ যেহেতু নেই তাই আলোচ্য বই অর্থাৎ কবি রঞ্জিতা চক্রবর্তীর ২৮ পৃষ্ঠার সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা আমার শেষ ঠিকানা’কে আমরা পুস্তিকা নয় বরং বই বা গ্রন্থ হিসেবেই গ্রহণ করতে পারি
প্রতি পৃষ্ঠার আবছায়া অলংকরণ এবং প্রোজ্জ্বল প্রচ্ছদ বইটিকে এক আলাদা মর্যাদা প্রদান করেছে যদিও অলংকরণ বা প্রচ্ছদশিল্পীর নাম অনুল্লেখিত বিষয় বৃত্তান্ত এগিয়েছে পরিকল্পনা মাফিক টাইটেল ভার্সোর পরেই সচিত্র উৎসর্গ পাতা কবি তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর স্বর্গীয় ঠাকুরদা ও দিদাকে টাইটেল ভার্সোতে অগতানুগতিকভাবে দেখা যাচ্ছে প্রকাশক যদিও কবি নিজেই কিন্তু সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন রঞ্জিত চক্রবর্তী ও নিরুপমা চক্রবর্তী শুভেচ্ছা বার্তা লিখেছেন অধ্যাপক গদাপাণি শর্মা, সহকারী অধ্যাপক সুশোভন দাস, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শিল্পী দেব এবং সহকারী শিক্ষিকা তমশ্রী চক্রবর্তীসম্পাদকীয়তে দুই সম্পাদকের পরিচয় উন্মোচিত হয়েছে কবির কাব্যযাত্রাকে অভয়বাণীর সবুজ পতাকায় মাভৈ করেছেন কবির মা ও বাবা
পরবর্তী পৃষ্ঠায় কবির তরফে চার লাইনের ভূমিকার পরই শুরু হয়েছে পৃষ্ঠাজোড়া সব কবিতার যাত্রা মোট কুড়িটি কবিতা ধরা হয়েছে এই গ্রন্থটিতে কবি রঞ্জিতা চক্রবর্তী সমকালীন লিখিয়েদের মধ্যে অন্যতম যুব প্রতিভা ইতিমধ্যেই তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর তিনি রেখেছেন নির্বাচিত এক কুড়ি কবিতায় তিনি সাজিয়ে তুলেছেন এই প্রয়াস ভূমিকাতে কবি নিজেই লিখেছেন - ‘...আমার এই কাব্যগ্রন্থটি মূলত আমি প্রেম, বিচ্ছেদ ও নারী হৃদয়ের টুকরো কিছু কথা দিয়ে সাজিয়ে তুলেছি...।’ এবং সেই সূত্র ধরেই বলা যায় গ্রন্থিত সব কবিতাই এই বিষয়গুলির উপরেই আবর্তিত হয়েছে। প্রত্যেক কবির কাব্যধারাই স্বতন্ত্র। রঞ্জিতা ও ব্যতিক্রম নন। কিছু অনবদ্য কবিতা, মায়াবিজড়িত পঙ্‌ক্তি পাঠক মন ছুঁয়ে যেতে বাধ্য -
চাঁদ হারানো দীর্ঘ রাতে/ আমিও ছিলাম তোমার সাথে/ সাক্ষী আছে ছাতিম পলাশ।/ মরচে ধরা জীর্ণ স্মৃতি বলছে কথা/ ঘুমের ঘোরে।/ সাক্ষী আছে শান্ত আকাশ,/ আমিও ছিলাম তোমার সাথে...। (কবিতা - তোমায় আমি ভুলে যাব)।
ছন্দের এক চোরা স্রোত বয়ে গেছে অধিকাংশ কবিতায়। এও এক উপরি পাওনা যা কবিতাকে করে তুলেছে গ্রহণযোগ্য। ‘বসন্ত’, ‘সন্ধ্যাতারা’, ‘এবার আর রূপকথা নয়’ ইত্যাদি বহু কবিতা বিশেষোল্লেখের দাবি রাখে। গ্রন্থনামের কবিতায় কবি যেন উন্মোচিত করেছেন নিজেকে।
শেষ প্রচ্ছদের পরিচিতি সহ বেশ কিছু বানানের ব্যাপারে অধিক সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। ছাপার অস্পষ্টতা উল্লেখনীয়। পরিশীলন ও নিয়মিত চর্চায় যে অনেকটা পথ এগিয়ে যাবেন কবি রঞ্জিতা এমন প্রত্যয়ের হদিশ মেলে গ্রন্থপাঠে।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ৫০ টাকা, যোগাযোগ - ৮৬৩৮৪২০১৮৭ 

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...