Skip to main content

নাগাল্যাণ্ডের বাংলা সাহিত্য চর্চায় ‘একা কুম্ভ’ দেবাশিস দত্ত

নাগাল্যাণ্ডের বাংলা সাহিত্য চর্চায়একা কুম্ভদেবাশিস দত্ত




সেই রবীন্দ্রনাথ, সেই নকল বুঁদিগড় আর সেই একা কুম্ভ
আজ যেন আমাদের খুব কাছে এমনি এক হুবহু পটভূমি। এক সেই বিশ্বকবিরই একনিষ্ঠ এক নীরব পূজারী, নকল বুঁদিগড়েরই মতো আমাদের প্রতিবেশী এক রাজ্য নাগাভূমি বা নাগাল্যাণ্ড আর সেই একা কুম্ভেরই মতো এই নাগাভূমির বাংলা চর্চার একমেবাদ্বিতীয়ম কবি, সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার  শ্রী দেবাশিস দত্ত।
ধর্মমূলক ছবির বদলে যাঁর বৈঠকখানার মূল বহির্গমন দরজার উপরে স্রোতের বিপরীতে সসম্মানে স্থান করে নিয়েছেন কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র - সাহিত্যে তাঁর আত্মোৎসর্গ সহজেই অনুমেয়। সাহিত্য চর্চার স্থান এই বৈঠকখানার বাকি দেয়াল অবধারিতভাবেই রবীন্দ্রময়। মুখোমুখি দুই দেয়ালে সরলরৈখিক অবস্থানে বিরাজিত আছেন সুকান্ত ও সত্যজিৎও। বলতে গেলে রবীন্দ্র ছায়ায় আচ্ছাদিত এই নিবেদিত প্রাণ সাহিত্যিক কী অসীম একাগ্রতায় যে সাহিত্যের এই অখ্যাত, নির্জন ভুবনে বসে রচনা করে চলেছেন অফুরন্ত সব প্রাণবন্ত সাহিত্য, গভীরে প্রবেশ না করলে তা বুঝার উপায় নেই। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত নাগাল্যাণ্ড নামের এই রাজ্যে – বাংলা ও বাঙালি যেখানে সংখ্যালঘুত্বের খাতিরে চির ব্রাত্য, সেখানে গত পঞ্চাশটি বছর ধরে চলে আসছে তাঁর এই নিরবচ্ছিন্ন, আত্মনিমগ্ন সাহিত্য আরাধনামূলত গবেষণাধর্মী প্রবন্ধই তাঁর সাহিত্য সম্ভারের প্রধান উপাদান যদিও একজন প্রকৃত সাহিত্যিক কখনো সাহিত্যের শুধুমাত্র একটি ধারায় মিজেকে আবদ্ধ করে রাখতে পারেন না স্বভাবতই শ্রী দত্তের লেখনী থেকে সৃষ্টি হয়েছে অনবদ্য কিছু ছোটগল্প এবং কবিতাও
লেখালেখির শুরু সেই কৈশোরেই সত্তরের দশকের শুরুতে বিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় রবীন্দ্র শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়েই শুরু হয় দীর্ঘ সাহিত্য জীবনের পথ চলা আজও সমানে চলছে এই নিরবচ্ছিন্ন পথ চলা চলতে চলতেই নিজেকে করে তুলেছেন সাহিত্য পথের এক অপরিহার্য পথিক যাঁর গৌরবান্বিত পথ চলায় নিশ্চিতভাবেই সমৃদ্ধ হয়েছে দেশ, জাতি সমাজ প্রতিদানে প্রাপ্তির ঘর রয়ে গেছে নিতান্তই শূণ্য এই বিড়ম্বনা বাঙালির সহজাত সময় থাকতে বাঙালি কখনও জহুরি হতে পারে না যার ফলে জহর থেকে যায় অনাবিষ্কৃত, অস্বীকৃত
সাহিত্যিক দেবাশিস দত্তের জন্ম তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশের) শ্রীহট্ট জেলার মোলভীবাজারের অন্তর্গত ভানুগাছ (কমলগঞ্জ) রেলওয়ে স্টেশনের অদূরবর্তী পাত্রখোলা চা বাগানে -  ১৯৪৩ সনের ১লা এপ্রিল বাবা প্রয়াত রামকুমার দত্ত, মা প্রয়াতা সুপ্রভা দত্ত তাঁর ভাষায় – “শৈশব কেটেছে সবুজ ঘেরা চা গাছ আর শিরীষ, ধলাই নদীর নির্জনতাকে বুকে ধরে ব্যতিক্রমী একটা উন্নতমানের সাংস্কৃতিক সাহিত্যের পরিবেশ পাত্রখোলা চা বাগানের মহিমা বৃদ্ধি করেছিল সেই পরিবেশ রচনার নেপথ্যে ছিলেন প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বআমাদের প্রতিবেশী - গণনাট্য আন্দোলনের বিশিষ্ট কর্মী এবং নাট্য একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত পিপলস পাপেট থিয়েটারের (পি পি টি) প্রতিষ্ঠাতা রূপকার প্রয়াত হীরেন ভট্টাচার্য
বিদ্যালয় শিক্ষা বাংলাদেশের আদমপুর এম স্কুল, করিমগঞ্জের নিলামবাজার স্বামী বিরজানন্দ হাইস্কুল উধারবন্দের দুর্গানগর হায়ার সেকেণ্ডারি স্কুলে এরপর শিলচর গুরুচরণ কলেজ থেকে বাংলায় সাম্মানিক সহ স্নাতক এবং গৌহাটি বিস্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীলাভ পড়াশোনার পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবেই চলেছিল তার সাহিত্য চর্চা সাহিত্য আরাধনা তবে গুরুচরণ কলেজে শিক্ষাধীন অবস্থায় সংস্কৃতি চর্চায় তাঁর যোগদান ছিল উল্লেখযোগ্য কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এমন দিনও গেছে যেদিন সাহিত্য সংস্কৃতির বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে লাভ করেছেন পাঁচ পাঁচটি পুরস্কারবলা বাহুল্য যে তার অধিকাংশই ছিল প্রথম পুরস্কার
শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৯ সালে ডিমাপুর কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তখন থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩১ বছরের কর্মময় জীবনে শ্রী দেবাশিস দত্ত রচনা করে গেছেন অসংখ্য মূল্যবান সাহিত্য ২০০০ সালে কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়ে বর্তমানে নিমগ্ন রয়েছেন সাহিত্যেরই অঙ্গনে, লিখে চলেছেন একের পর এক অনবদ্য রচনা
আগেই বলা হয়েছে শ্রী দত্তের সাহিত্য চর্চায় মূলত স্থান পেয়েছে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধসমূহ তারই অঙ্গ হিসেবে দেশের তুলনামূলক ভাবে অপরিচিত অনাবিষ্কৃত এই নাগাভূমির সাহিত্য, সংস্কৃতি, জীবনধারা, রূপকথা ইত্যাদির উপর তাঁর বিস্তৃত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ তথা গবেষণা বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য বস্তুত তাঁর এই বিশাল সাহিত্যকর্মের মাধ্যমেই নাগাভূমির বৈচিত্রময় রঙ, রূপ, মাধুর্য আজ বিশ্বের বাঙালি পাঠক পাঠিকার দরবারে জায়গা করে নিতে পেরেছে
এই সুসাহিত্যিক তাঁর লেখনীর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন চেয়েছেন তাঁর কর্মভূমি, তাঁর বাসভূমিকে সর্বজনপরিচিত করে তুলতে ঠিক তেমনি অন্য দিকে বাংলা সাহিত্যকেও চেয়েছেন ব্রাত্য এই অঞ্চলে যতটুকু সম্ভব ছড়িয়ে দিতে। চেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের এই ছন্নছাড়া ভুবনে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যে ছিটিয়ে দিতে বাংলার সুরভিত বৈভবের অনাস্বাদিত রসমাধুরী। আর সেই চাওয়ার সুবাদে ২০০৩ সালে জন্ম নিল সাহিত্যিক দেবাশিস দত্তের মানস পত্রিকা – ‘পূর্বাদ্রি’। সাথে কিছু সহযোগী যোদ্ধা – ইতোমধ্যেই যাঁরা আংশিক হলেও সিঞ্চিত হয়েছেন বাংলা সাহিত্য রসে। টুকটাক থেকে শুরু করে গুরুগম্ভীর কিছু সাহিত্য রচনায় সাহিত্যকর্মে মনযোগী হয়েছেন রামমোহন বাগচি, সমীর সাহা, বিষ্ণু ভট্টাচার্য, বিপ্লব চক্রবর্তী, সুব্রত দত্ত, মধুস্মিতা দত্ত, নন্দন চৌধুরীদের মতো সাহিত্য প্রেমী। সেই ২০০৩ থেকে শ্রী দেবাশিস দত্তের সম্পাদনায় আজও ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়ে চলেছে ডিমাপুর তথা নাগাল্যাণ্ডের গর্বের ছোট পত্রিকা পূর্বাদ্রি। ছোটপত্রিকার ভুবনে সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চল জুড়ে ‘পূর্মাদ্রি’ আজ বহুল সমাদৃত। এই পূর্বাদ্রিরই পাতায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে শ্রী দত্তের দীর্ঘ প্রবন্ধ – ‘রবীন্দ্রনাথের নাটকে মৃত্যু’ যা এখন পুস্তক আকারে মুদ্রিত হওয়ার অপেক্ষায়। অপূর্ব রচনা শৈলিতে আবদ্ধ এই প্রবন্ধাবলি রবীন্দ্র চর্চার এক মূল্যবান সম্পদ হিসেবে একদিন যে পরিগণিত হবে এতে কোনও দ্বিমত থাকার কথা নয়প্রকাশিত হওয়ার পথে একটি সংগ্রহযোগ্য প্রবন্ধ সংকলনও আছে – ‘নাগাল্যাণ্ড ও সেকালের বাংলা চর্চা’
২০০১ সালে এই সাহিত্যিকের জীবনে ঘটে যায় এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অক্ষয় স্বর্গগামী হন সাহিত্যিক-পত্নী কল্যাণী। এই একটি ঘটনা তাঁর মননে চিন্তনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এর অব্যবহিত পরেই কবিতার রহস্যময় জগতে তাঁর নিঃশব্দ পদার্পণ। আর তারই ফলশ্রুতি কবিতা সংকলন – ‘মেঘকন্যা’। কবিতায়ও যে তিনি কতটা সাবলীল তা হয়তো এর আগে তিনি নিজেও উপলব্ধি করতে পারেননি। প্রিয়তমার স্মরণে কিছু চমকে দেওয়া পংক্তি হয়তো তাঁরই পক্ষে লিখা সম্ভব –
মেঘের তরঙ্গমালা থেকে
সাথে নিয়ে বৃষ্টি আর পাতার মিছিল
মাঝে মাঝে এসো এই ঘরে
তোমার চুলের গন্ধ
ঘামে ভেজা তনু
নিয়ে এসো বারবার।
কিংবা –
পায়ের নূপুর বাজে এ ঘরের প্রতিটি পাঁজরে
অঙ্কিত ছবিরা নাচে চৈতন্য গভীরে
তুমি কাছে, তুমি নেই, এ বিষম দায়
আছ তবু চিরতরে অধরা আমার।
 
বস্তুত তাঁর নিজের ভাষায় – “স্ত্রীর মৃত্যুই আমার সাহিত্য জীবনের ‘টার্ণিং পয়েন্ট’। মৃত্যুর দিন কয়েক পূর্বে কোলকাতার ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে ২০০১ সালে কল্যাণী স্বতোৎসারিত মনে বলেছিল – এখন পাবে অঢেল সময়, মন দিয়ে লেখো। লেখালেখির গভীরতা এর পর থেকেই শুরু”
শ্রী দত্ত যদিও মননশীল প্রবন্ধেই বেশি স্বচ্ছন্দ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যেখানেই হাত লাগিয়েছেন সেখানেই ফলেছে নিরেট সোনা। ছোটগল্প লিখেছেন কয়েকটি। তার মধ্যে দু’টি ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে তন্ময় বীর সম্পাদিত ‘ভারতের বাংলা গল্প’ নামের সংকলনে। স্বভাবতই গল্পের মানও সমালোচনার ঊর্ধ্বে।
ঘরে বাইরে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অজস্র রচনা। কিছু উল্লেখযোগ্য রচনা ও এসব প্রকাশিত হওয়া পত্র পত্রিকার নাম এখানে উল্লেখ করা হলো –
নাগাল্যাণ্ড ও বাংলা চর্চা – দিল্লি থেকে প্রকাশিত ‘বহির্বঙ্গ’, কানপুর থেকে ‘দূরের খেয়া’
রহস্যাবৃতা নাগাল্যাণ্ড – ‘মানবী’ (শিলচর)।
নাগাল্যাণ্ড ও নাগা শব্দ সম্পর্কিত – ‘চিত্রকল্প’ (কোচবিহার), প্রত্নতত্ত্ব পুরাতত্ত্ব নৃতত্ত্ব (বহরমপুর)।
নাগাল্যাণ্ডে বাংলা নাট্যচর্চা – ‘অভিনয়’ (ত্রিপুরা)।
ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্র – ‘দৈনিক যুগশঙ্খ’ (গুয়াহাটি)।
এছাড়া আরোও অসংখ্য প্রবন্ধ ও কবিতাবলি প্রকাশিত হয়েছে অজস্র পত্র পত্রিকায়। এগুলোর মধ্যে আছে পূর্বাদ্রি, উজান, সাহিত্য, প্লাবন (কোলকাতা), উজ্জ্বল পাণ্ডুলিপি, নাইনথ কলাম, সুতপা (ঝাড়খণ্ড), প্রান্তিক, মনন, পূর্ববাণী, অনুরণন, কবিতা দেশ (ঝাড়খণ্ড), উনিশ আমার উনিশ তোমার (শ্রী অতীন দাস সম্পাদিত), অভিমুখ (সিউড়ি), মধ্যবলয় (জব্বলপুর), প্রতীতী, তরস্বী, অনুভব আদি।
লেখালেখির বাইরেও জড়িয়েছিলেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে। ডিমাপুরে বাংলা সাহিত্যের প্রচার ও প্রসারের অংশ হিসেবে একাধিক নাটকের রূপায়ণে ছিল তাঁর ওতপ্রোত সংযোগ। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন সময়ে। এগুলোর মধ্যে আছে আই পি টি এ, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, ডিমাপুর সংস্কৃতি পরিষদ, নান্দনিক সংস্কৃতি সংস্থা, ডিমাপুর বাঙালি সমাজ ইত্যাদি।
জীবন জোড়া সাহিত্য বিষয়ক কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ বিভিন্ন স্থানে সংবর্ধিত হয়েছেন তিনি, পেয়েছেন পুরস্কারও কিন্তু এই বিষয়ে বেশি কিছু বলতে নারাজ। হয়তো হৃদয়ের কোণে চাপা পড়ে আছে কোনও অভিমান, কোনও ক্ষোভ। তাই তাঁর নিজের কথায় – “ সংবর্ধনা, পুরস্কার ইত্যাদি প্রাপ্তি ঘটেছে তবে এ বিষয়ে বিশদ উল্লেখ অরুচিকর। সৃষ্টির জগতে যতক্ষণ বিচরণ করা যায় তাই তো জীবনের সঞ্চয়। সৃষ্টির অভিমুখ তার প্রকাশের সাবলীলতায় – পুরস্কারে, প্রচারে নয়এ বিষয়ে বেশি বলা অপ্রয়োজনীয়”
সব শেষে একটি ঘটনার উল্লেখ এখানে নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক হবে না বলে মনে করি। তখন ২০০৬ সাল। ‘পূর্বাদ্রি’ তখনও বিদ্ব মহলে বহুল পরিচিত হয়ে উঠেনি। স্বভাবতই সাহিত্যিক দেবাশিস দত্তও রয়ে গেছিলেন বলতে গেলে পরিচিতির আড়ালেই। সে বছর গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় লিটল ম্যাগাজিন সম্মেলন। আমিও সেখানে উপস্থিত হয়েছিলাম নগাঁও থেকে প্রকাশিত সঞ্চয়ন পত্রিকার তরফ থেকে। এর আগে থেকেই লেখালেখির সূত্র ধরে তাঁর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে আমরা বসেছিলাম পাশাপাশি দুই স্টল-এ। পূর্বাদ্রি ও সঞ্চয়ন। মঞ্চে বিশিষ্টজনেরা তখন তাঁদের বক্তব্য রাখছিলেন। সেখানে আমার ডাক পাওয়ার কোন কথা ছিল না। কিন্তু কোনও এক তাগিদের বশে আমি গিয়ে উদ্যোক্তাদের বলি যে নাগাল্যাণ্ড থেকে বর্ষীয়ান সুসাহিত্যিক দেবাশিস দত্ত এসেছেন ‘পূর্বাদ্রি’ নিয়ে। তাঁকে মঞ্চে ডেকে নেওয়াটা উচিৎ হবে। আমার কথায় সাড়া দিয়ে সেদিন তাঁকে আমন্ত্রণ জনানো হয় মঞ্চে। আর সেই মঞ্চাভিষেকের পর থেকেই তিনি হয়ে উঠেছেন উত্তর পূবের বাংলা সাহিত্য মঞ্চের অপরিহার্য উপস্থিতি
আজ নিজেকে গর্বিত বলে বোধ হয় যখন ভাবি সেদিন এই মহান সাহিত্যিকের প্রতি আমি আমার কর্তব্যটুকু পালন করতে পেরেছিলাম যথাযথ ভাবে।
সেদিনের পর থেকে শ্রী দেবাশিস দত্ত আপন পরিচয়ে নিজের স্থান করে নিয়েছেন উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাহিত্য জগতের অন্যতম নক্ষত্র হিসেবে। দীর্ঘায়ু হয়ে বর্ণময় সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনের বাকি সময়টুকু অতিবাহিত করুন ‘একা কুম্ভ’ এই সাহিত্যিক – এটাই কাম্য।

- - - - - - - - - - - - - - - - - -

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়