কোনও এক শারদ
আশ্বিনে
প্রথম দেখেছি তাকে -
কাঁচা, কচি ঘাসফুলের এক কলি
নজরকাড়া
রূপসাগরের অরূপ মুক্তোদানা
নজর ফেরানো দায়।
এর পর দু'জনেই দেখেছি দুই যুগ,
ঘাসফুল আজ গুল্ম থেকে তরু খাস
পুড়ে পুড়ে আমি প্রায় এক মহীরুহ।
পেরিয়ে এসেছি অনন্য পঁচিশটি বসন্ত
ভিন দিশায়, ভিন্ন প্রান্তে - একান্তে।
সেই
একান্তবাসেরও একটি কবিতা আছে
আছে কবিতার পরতে পরতে
কত যে গোপন কথা - এদিকে ওদিকে,
কত কল্প কথার কোলাজ
কত বিচিত্র আলাপন - নীরবে একান্তে।
জাগ্রত নিশার প্রহরে প্রহরে
গভীর রাতশেষের আবেশে, প্রত্যুষে।
কত যে অফুরান
কথার পাহাড়ে
কাজ অকাজের মাঝে গহনে সঘনে
সরবে নীরবে ইথারে, দরশনে।
কেটেছে কত যে
বেলা স্বপনে মননে
একসাথে পায়ে পায়ে কত যে চড়াই
পাশাপাশি মুখোমুখি ঢল বেয়ে বেয়ে
অনন্ত উৎরাই, সানন্দে - অভিমানে।
নির্মোহ
বাস্তব এসে ঘুরিয়ে দিয়েছে পথ
ঋদ্ধ অনুভবে পাল্টে গেছে সব সংজ্ঞা
কল্পনায় ছড়িয়ে দিয়েছে রামধনু রঙ
সেই কলি থেকে কুসুমের উত্তরণ গাথা
আজ জন্ম দিয়েছে প্রেমের শ্রেষ্ঠ কবিতা।
গর্বিত আমি - আমার তুমি আছো
না থাকার আবডালে চিরন্তনী তুমি
আমাকে ভাসিয়ে দিতে পারো পলকে
দীর্ঘ প্রশ্বাসেও কুড়িয়ে নিতে পারি
বেঁচে থাকার অপরূপ রূপ মাধুরী।
এই মাধুর্য বদলে দিয়েছে ভাষার কথামুখ
বদলে দিয়েছে পৃথিবী দেখার চোখ।
দেখি রোজ - দু'জনেই, চুপিসারে
খুঁজি অহরহ
আনমনে, অভীপ্সা নয়নে
আচমকা ধরা
পড়ে যাই খুনসুটিতে
তৎক্ষণাৎ পালিয়ে বেড়াই দু'টিতে।
এ দেখা পরম দেখা, ভরসা অটুট
এক পলকের
একটু দেখায়
তারসানাই তানে বাজে বেহাগ
মোহনবীণার তারে ঝংকারে মল্লার
বৃষ্টি নামে ঝমঝমিয়ে মনগগন জুড়ে
বিদ্যুৎ চমকায় সঘন ঘনঘোরে
অঙ্গে অঙ্গে শিহরণ জাগে বারে বারে
চরাচর জুড়ে হেসে বেড়ায়
চাঁদপানা মুখ, ডাগর দু'টি চোখ।
আবার কিছু নীরব প্রহর
প্রাপ্তি সুখে টইটম্বুর কিছু যাপন বেলা,
আবার আসে ফিরে ক্ষণ - মন উচাটন
দূর থেকে দূরান্ত জুড়ে গহীন অন্বেষণ।
কখনো সুখ আসে হড়পা উল্লাসে
পাগলা হাওয়া জানান দিয়ে যায়
অমোঘ বার্তা - মন নয় শুধু
প্রাণে প্রাণে হবে কথা,
আসা যাওয়ার পথের ধারে মিলবে প্রাণ
জুড়াবে হৃদয় উষ্ণ সাহচর্যে -
দেখবে দু'নয়ন অপলক সুখ পরানে।
যায় চলে দিন, কিছু দিন উড়ে উড়ে
ভরপুর মন
আলেয়া সাহচর্যে
এত কাছে থেকেও সে কেন এত দূর,
আবার বাজে বিষণ্ণ বেহালা
আসে ঝরা ফুলের বসন্ত বিদায় সুর।
দুই হৃদয়ে সমসুর, সমব্যথী
চির অধরা
আমার নীরব প্রেমের সাথী।
কোন সে বাঁশিওয়ালা, আমি চিনি তারে
অলক্ষ্যে যে
আছে আকাশ জুড়ে
যে আকাশে মিলিয়ে যাবে, খুঁজি যারে
অমোঘ সত্য -
জানে বিশ্বজন,
আমি ইচ্ছে করেই অস্বীকারে
ভুলেই থাকি সেই কথাটি,
থাকি অহর্নিশি তারেই নিয়ে স্বপন মগন।
কথা আছে আরো, অগুণতি কথা
দিন রাত
জুড়ে কথার পৃষ্ঠে কথামালা
গরজটুকু বেরিয়ে আসে অজান্তে
ভালো থাকা, ভালো লাগার ইচ্ছেটুকু।
কথায় কথায়
গত হয় যাপন বেলা
কেউ জানে না কখন যে তার শেষ
অস্ফুটে এত কথা, সব আছে লিপিবদ্ধ।
বাইরে ঘরে, সাঁঝ সকালে, ব্যস্ত অবসরে
ট্রাফিক
জ্যামে, নদীর ধারে, হাটবাজারে,
এখানে ওখানে, গৃহভূমে - পরবাসে,
প্রখর তপনতাপে, ঘর্মাক্ত কলেবরে,
লেপমুড়ি গায়ে, ভিড়ে - বিনোদনে
কোথা নেই সে, আছে সবখানে, চকিতে।
কোথা থেকে, কেন আসে এত কথা ?
কোন সে গরজ, বৈধ অবৈধের দোটানা,
কত কত কবিতা কত ছন্দ কত ছন্দহীনতা
ভরা বর্ষার মতো কূল ছাপানো কত গাথা
সব সব থাকে থরে থরে ইতিহাসে
সব থাকে মনের গহীনে সজ্জিত সহাসে।
গভীর রাতে বিশ্ব যখন নিদ্রামগন
জেগে থাকে অপলক - দুই জোড়া চোখ
দর্শন অভিলাষে, কথার তোড়া হাতে
আচমকা
সাক্ষাতে নির্গত অনর্গল।
শেষের কথা কেউ বলে না, দাঁড়ি নেই -
বিষয় বিহীন কথায় আসে বিশ্ববিষয়
রাত্রি কথায় আমি ও তুমি একাকার।
অবশেষে, রাত্রি শেষে ঘুমঘোরে
ক্ষণিক ক্ষান্তি - সাত সকালে চোখ মেলেই
খোঁজ খোঁজ তারে সুপ্রভাতের ছলে।
কত হাসি, কত উদ্বেগ - কত পাতার ভেলা
সমাগমে কত
ইশারায় মনের কথা বলা
সব ছেড়েছুড়ে নিমিষে কাছে চলে আসা
নাই বা হলো কাঙ্খিত সেই বাক্য বিনিময়
নাই বা হলো স্বপ্ন বেলার ইচ্ছেপূরণ
তবু সবটুকু পাওয়া হয়ে যায় যেন
কাছাকাছি পাশাপাশি মুখোমুখি বেলাতে।
সব কথা যায় না যে বলা জানে দু'হৃদয়
না বলা কথাকে
রাখে আড়ালে
লক্ষ কথার আপন মোড়কে।
সব কথা যেন একই কথা বলে যায়
বাইরে সহজ বাস্তবে মোড়া সম্বোধন
একান্তে সব হৃদয় নিংড়ানো আবাহন।
সুভাষে সুবাসে, অন্তরঙ্গ একত্রবাসে
কপোল জড়ানো
অগোছালো কেশপাশে
লহরের পর লহর এসে ভাসায় নতুন হরষে
ভেসে যায় কথা উদাস আকাশে বাতাসে।
নতুন দিনে নতুন বেশে দাঁড়ায় এসে
কল্পকথায় গল্পগাথায় আবীর ছড়ায় মনে
মন মানে না, কল্পনাতে শুধুই দ্বিরালাপ
চোখের দেখা, মুখের ভাষায় অনন্ত প্রেম জাগে
জেগেই থাকে
যুগ যুগ ধরে
কুঁড়ি থেকে কুসুম পথে পথে।
কুসুম ছড়ায় শত শত দল অবিরত
ভ্রামরী মন ইতিউতি বিস্মিত
ভ্রমরে কুসুমে অবিরাম চলে কথা
শোনে না কেউ, জানে না কেউ
গোপন কথার
আড়ালে কথা কত।
একেকটি দিন আসে এমনই
উৎকণ্ঠার ক্ষণ ভাবায় নিয়ত
অবশেষে ভাবনা নিরসনে
প্রতীক্ষার হয় অন্ত, দুই তরফের অঙ্গীকার
প্রতীক্ষা যেন না হয় এমন দীর্ঘ,
অপেক্ষার বেলা শেষে জাগে পুলক
অন্তরে অন্তরে জাগে অসীম আনন্দ
অসীমেই বিলীন যত ভাবনা যত মন্দ।
আবার কখনো অভিমান জাগে মনে
উৎকণ্ঠার পারদ চড়ে তরতরিয়ে
এক একটি পল এক যুগ হয়ে আসে
নিভৃত যাপনে ব্যথাতুর প্রাণ কাঁদে।
যখন ভেঙে যায় সেই উতল আগল
আবার নিমেষে প্রাণে জাগে হিন্দোল।
এমনি করেই মনমাঝারের দুই দেহ এক প্রাণ
ছুটে চলে অবিরাম, কোন অজানা পথে
কেউ জানে না
কোন সে গভীর প্রেম
অনুচ্চারিত প্রেম, অনুপম শোভাময়
কথাসাগরের
অতল তলে ডুবুরি হৃদয়
একসাথে চলে কথার পাহাড় দিশায়
তবু গোপন কথাটি গোপনেই থেকে যায়
দু'টি হৃদয় ঠিকই জানে - না বলা কথায়
লুকিয়ে আছে
যে কথা
সে কথাটি অহরহ বাজে বুকে নিরাশায়।
অবশেষে এক নতুন দিনে
অন্ত থেকে আরেক আদির
পথটি গেল খুলে, সে এক সুখমাখা
বৃষ্টিবেলার
অমৃতময় কথা।
এ কথার নীরব সাক্ষী শুধু
ছিল এক পথ, গেছে যে পথ দূর পাহাড়ে,
সে পাহাড় চিরে যে পথ গেছে চলে
পাশে তার বিছানো নিখাদ প্রেম -
সবুজে সবুজে নীলাভ আকাশ তলে
সঙ্গোপনে একসাথে কাছাকাছি
তিরবেগে ছুটে চলে রুধির ধমনি জুড়ে
নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে অঙ্গে অঙ্গে মনন জুড়ে
কথা সাগরের উথালপাথাল ঢেউ
বাড়ে হৃদস্পন্দন, টালমাটাল চলা পথ
হারিয়ে
যাওয়ার আগে একরাশ ভীতি
দাঁড়ায় এসে পথ আগলে - দুই প্রাণে
উধাও যত মুক্তো ঝরানো হাসির ঝিলিক
রুদ্ধ যত কথার দুয়ার - আচমকা।
অনন্ত প্রকৃতি যেন মিলেমিশে একাকার
থমকে গেছে কুসুম সুবাস, রুদ্ধ সমীরণ
হারিয়ে গেছে
যত অফুরান কথামালা।
সেই সে মধুর এক জীবনের একটি বেলা
রইল লিখা আকাশের ইতিহাসে
করলো গোপন চপল হাওয়া
অজানিতে হলো লিখা শেষের কবিতা।
তবু কিছু কথা থাকে আজীবন মনসাথী
শেষ হয়েও হয় না শেষ।
শেষেরও এক শেষ থাকে বিশেষ।
কথা দিয়েছিলাম তাকে -
তোমাকে নিয়ে রচবো প্রেমের শ্রেষ্ঠ কবিতা
গড়বো প্রেমের আকাশচুম্বী সৌধ -
মনমাঝারে, যে সৌধ জুড়ে
সাজি ভরা স্মৃতির কথায় রাখব সাজিয়ে
শ্রেষ্ঠ প্রেমের রাশি রাশি পল শেষের বেলা
যত বৃষ্টিবিধৌত নিখাদ ভালোবাসা
যত কুসুম কলির ইতিহাস গাথা।
মেলে দেবো মনের আয়না যখন ইচ্ছে
আমার মন তো শুধুই আমার
যে মন জুড়ে আছে শুধু সেই সে পথের
অবাক মুখোমুখি ছবি
আছে সাড়ায় সাড়ায় বৃষ্টি ঝরা কাহিনি।
আছে সেই একটুকু ছোঁয়ার পরশ
সেই দমকা হাওয়ার বুক ধুকপুক বেলা
খোলা বাতায়ন দিয়ে আজও ভেসে আসে
সেই মিষ্টি মধুর উষ্ণ হাওয়া - সৌধ জুড়ে
আজও সেই স্নিগ্ধ হাওয়ায় ফুরফুরে মন
বেলা অবেলায় দেখে তারে নয়নঠারে
উড়ে চলে ঘুড়ি মন আকাশে প্রান্তরে।
মনে আছে আজ সেসব কথা ?
রাজপ্রাসাদের সোপান জুড়ে রাজপুত্তুর
মগ্ন তখন তোমায় নিয়ে - তুমিও অনর্গল
টুং টাং শব্দে শব্দে আমার বুকের হাপর
তখন ছড়ায় শুধু গনগনে আঁচ
যে আঁচে অধরা প্রেম
উথলে উঠে তপ্ত বহ্নি হয়ে
নীরবে কথার ফুলকি ছড়ায় মন গগনে।
এপার থেকে ওপার যাত্রা কল্পকথায়
তোমার সে কী আকুল বাধা নিষেধ,
আমার মন উড়ে যায় তোমার বাহুডোরে
দ্বিধায় দ্বিধায় সামলে রাখি অলীক ইচ্ছে
বাস্তব এসে হানা দেয় বার বার
আগল পরাই মনদুয়ারে অনিচ্ছাতে।
মাঝে মাঝেই নিভৃত অবসরে
একের পর এক স্ন্যাপশট এসে
এলোমেলো কোলাজ হয়ে ভাসে।
তীব্র আকাঙ্ক্ষায় তোলপাড় উঠে বুকে
মনের মধ্যে শুধু এক উচাটন
তাকাই এদিক ওদিক - সবখানে দেখি
রেপ্লিকা শুধু, সাগর সঙ্গমে সব নদী,
সব অবয়ব মিলেমিশে একাকার
সামনে শুধু এক প্রাণ, এক ছায়াময়তা।
এ ছায়া, এ কায়া আমার নিছক আপন
আমার গোধূলি
আলোর আবছা আভা
আমার আলোর পথের উদ্ভাসিত ছটা।
ছলকে ওঠে কোলাজের সব ছবি
প্রথম ঋতুর সলাজ আত্মগোপন
পাশাপাশি জাগরণে আস্ত রাত্রি মাপন।
বর্ষ শুরুর হর্ষ বেলার চনমনে মন
একলা একা মধ্য রাতের সাতকাহন।
গেছে যে দিন একেবারেই গেছে ?
প্রেমের মহাবিশ্বে কভু ফুরায় নাকো কিছু
আসে দিন ফিরে ফিরে বার বার
রেলের কামরায় রাতের যাত্রা কথা
আগাগোড়া শুধু খুনসুটি ভরা কথা
অপ্রত্যক্ষে আসে ভেসে শুধু সহাস মুখ
কথায় ব্যথায় সুখ শুধু সুখ অপার
আজও দুলে উঠি সেই সুখ পরশে
অপরাহ্নের মেঘদূত হয়ে আসে ভেসে
অতীত জুড়ে যত সুখ কথা
যত রিক্ত হাহাকার, পাওয়া না পাওয়া যত
জমা হয়ে হয়ে
পাহাড় জাগে উচাটনে
শেষের বেলা সাহচর্যের গরজ জাগে মনে।
এই কি নিখাদ শেষের কথা শুধু,
নাকি এক নতুন আদির জন্মকথা ?
কেউ জানে না, জানে শুধু সেই অলক্ষ্য প্রাণ।
প্রথম দেখেছি তাকে -
কাঁচা, কচি ঘাসফুলের এক কলি
নজর ফেরানো দায়।
এর পর দু'জনেই দেখেছি দুই যুগ,
ঘাসফুল আজ গুল্ম থেকে তরু খাস
পুড়ে পুড়ে আমি প্রায় এক মহীরুহ।
পেরিয়ে এসেছি অনন্য পঁচিশটি বসন্ত
ভিন দিশায়, ভিন্ন প্রান্তে - একান্তে।
আছে কবিতার পরতে পরতে
কত যে গোপন কথা - এদিকে ওদিকে,
কত কল্প কথার কোলাজ
কত বিচিত্র আলাপন - নীরবে একান্তে।
জাগ্রত নিশার প্রহরে প্রহরে
গভীর রাতশেষের আবেশে, প্রত্যুষে।
কাজ অকাজের মাঝে গহনে সঘনে
সরবে নীরবে ইথারে, দরশনে।
একসাথে পায়ে পায়ে কত যে চড়াই
পাশাপাশি মুখোমুখি ঢল বেয়ে বেয়ে
অনন্ত উৎরাই, সানন্দে - অভিমানে।
ঋদ্ধ অনুভবে পাল্টে গেছে সব সংজ্ঞা
কল্পনায় ছড়িয়ে দিয়েছে রামধনু রঙ
সেই কলি থেকে কুসুমের উত্তরণ গাথা
আজ জন্ম দিয়েছে প্রেমের শ্রেষ্ঠ কবিতা।
গর্বিত আমি - আমার তুমি আছো
না থাকার আবডালে চিরন্তনী তুমি
আমাকে ভাসিয়ে দিতে পারো পলকে
দীর্ঘ প্রশ্বাসেও কুড়িয়ে নিতে পারি
বেঁচে থাকার অপরূপ রূপ মাধুরী।
এই মাধুর্য বদলে দিয়েছে ভাষার কথামুখ
বদলে দিয়েছে পৃথিবী দেখার চোখ।
দেখি রোজ - দু'জনেই, চুপিসারে
তৎক্ষণাৎ পালিয়ে বেড়াই দু'টিতে।
এ দেখা পরম দেখা, ভরসা অটুট
তারসানাই তানে বাজে বেহাগ
মোহনবীণার তারে ঝংকারে মল্লার
বৃষ্টি নামে ঝমঝমিয়ে মনগগন জুড়ে
বিদ্যুৎ চমকায় সঘন ঘনঘোরে
অঙ্গে অঙ্গে শিহরণ জাগে বারে বারে
চরাচর জুড়ে হেসে বেড়ায়
চাঁদপানা মুখ, ডাগর দু'টি চোখ।
আবার কিছু নীরব প্রহর
প্রাপ্তি সুখে টইটম্বুর কিছু যাপন বেলা,
আবার আসে ফিরে ক্ষণ - মন উচাটন
দূর থেকে দূরান্ত জুড়ে গহীন অন্বেষণ।
কখনো সুখ আসে হড়পা উল্লাসে
পাগলা হাওয়া জানান দিয়ে যায়
অমোঘ বার্তা - মন নয় শুধু
প্রাণে প্রাণে হবে কথা,
আসা যাওয়ার পথের ধারে মিলবে প্রাণ
জুড়াবে হৃদয় উষ্ণ সাহচর্যে -
দেখবে দু'নয়ন অপলক সুখ পরানে।
এত কাছে থেকেও সে কেন এত দূর,
আবার বাজে বিষণ্ণ বেহালা
আসে ঝরা ফুলের বসন্ত বিদায় সুর।
দুই হৃদয়ে সমসুর, সমব্যথী
কোন সে বাঁশিওয়ালা, আমি চিনি তারে
যে আকাশে মিলিয়ে যাবে, খুঁজি যারে
আমি ইচ্ছে করেই অস্বীকারে
ভুলেই থাকি সেই কথাটি,
থাকি অহর্নিশি তারেই নিয়ে স্বপন মগন।
কথা আছে আরো, অগুণতি কথা
গরজটুকু বেরিয়ে আসে অজান্তে
ভালো থাকা, ভালো লাগার ইচ্ছেটুকু।
কেউ জানে না কখন যে তার শেষ
অস্ফুটে এত কথা, সব আছে লিপিবদ্ধ।
বাইরে ঘরে, সাঁঝ সকালে, ব্যস্ত অবসরে
এখানে ওখানে, গৃহভূমে - পরবাসে,
প্রখর তপনতাপে, ঘর্মাক্ত কলেবরে,
লেপমুড়ি গায়ে, ভিড়ে - বিনোদনে
কোথা থেকে, কেন আসে এত কথা ?
কোন সে গরজ, বৈধ অবৈধের দোটানা,
কত কত কবিতা কত ছন্দ কত ছন্দহীনতা
ভরা বর্ষার মতো কূল ছাপানো কত গাথা
সব সব থাকে থরে থরে ইতিহাসে
সব থাকে মনের গহীনে সজ্জিত সহাসে।
গভীর রাতে বিশ্ব যখন নিদ্রামগন
জেগে থাকে অপলক - দুই জোড়া চোখ
দর্শন অভিলাষে, কথার তোড়া হাতে
শেষের কথা কেউ বলে না, দাঁড়ি নেই -
বিষয় বিহীন কথায় আসে বিশ্ববিষয়
রাত্রি কথায় আমি ও তুমি একাকার।
অবশেষে, রাত্রি শেষে ঘুমঘোরে
ক্ষণিক ক্ষান্তি - সাত সকালে চোখ মেলেই
খোঁজ খোঁজ তারে সুপ্রভাতের ছলে।
কত হাসি, কত উদ্বেগ - কত পাতার ভেলা
সব ছেড়েছুড়ে নিমিষে কাছে চলে আসা
নাই বা হলো কাঙ্খিত সেই বাক্য বিনিময়
নাই বা হলো স্বপ্ন বেলার ইচ্ছেপূরণ
তবু সবটুকু পাওয়া হয়ে যায় যেন
কাছাকাছি পাশাপাশি মুখোমুখি বেলাতে।
সব কথা যায় না যে বলা জানে দু'হৃদয়
লক্ষ কথার আপন মোড়কে।
সব কথা যেন একই কথা বলে যায়
বাইরে সহজ বাস্তবে মোড়া সম্বোধন
একান্তে সব হৃদয় নিংড়ানো আবাহন।
সুভাষে সুবাসে, অন্তরঙ্গ একত্রবাসে
লহরের পর লহর এসে ভাসায় নতুন হরষে
ভেসে যায় কথা উদাস আকাশে বাতাসে।
নতুন দিনে নতুন বেশে দাঁড়ায় এসে
কল্পকথায় গল্পগাথায় আবীর ছড়ায় মনে
মন মানে না, কল্পনাতে শুধুই দ্বিরালাপ
কুঁড়ি থেকে কুসুম পথে পথে।
কুসুম ছড়ায় শত শত দল অবিরত
ভ্রামরী মন ইতিউতি বিস্মিত
ভ্রমরে কুসুমে অবিরাম চলে কথা
শোনে না কেউ, জানে না কেউ
একেকটি দিন আসে এমনই
উৎকণ্ঠার ক্ষণ ভাবায় নিয়ত
অবশেষে ভাবনা নিরসনে
প্রতীক্ষার হয় অন্ত, দুই তরফের অঙ্গীকার
প্রতীক্ষা যেন না হয় এমন দীর্ঘ,
অপেক্ষার বেলা শেষে জাগে পুলক
অন্তরে অন্তরে জাগে অসীম আনন্দ
অসীমেই বিলীন যত ভাবনা যত মন্দ।
আবার কখনো অভিমান জাগে মনে
উৎকণ্ঠার পারদ চড়ে তরতরিয়ে
এক একটি পল এক যুগ হয়ে আসে
নিভৃত যাপনে ব্যথাতুর প্রাণ কাঁদে।
যখন ভেঙে যায় সেই উতল আগল
আবার নিমেষে প্রাণে জাগে হিন্দোল।
এমনি করেই মনমাঝারের দুই দেহ এক প্রাণ
ছুটে চলে অবিরাম, কোন অজানা পথে
অনুচ্চারিত প্রেম, অনুপম শোভাময়
একসাথে চলে কথার পাহাড় দিশায়
তবু গোপন কথাটি গোপনেই থেকে যায়
দু'টি হৃদয় ঠিকই জানে - না বলা কথায়
সে কথাটি অহরহ বাজে বুকে নিরাশায়।
অবশেষে এক নতুন দিনে
অন্ত থেকে আরেক আদির
পথটি গেল খুলে, সে এক সুখমাখা
এ কথার নীরব সাক্ষী শুধু
ছিল এক পথ, গেছে যে পথ দূর পাহাড়ে,
সে পাহাড় চিরে যে পথ গেছে চলে
পাশে তার বিছানো নিখাদ প্রেম -
সবুজে সবুজে নীলাভ আকাশ তলে
সঙ্গোপনে একসাথে কাছাকাছি
তিরবেগে ছুটে চলে রুধির ধমনি জুড়ে
নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে অঙ্গে অঙ্গে মনন জুড়ে
কথা সাগরের উথালপাথাল ঢেউ
বাড়ে হৃদস্পন্দন, টালমাটাল চলা পথ
দাঁড়ায় এসে পথ আগলে - দুই প্রাণে
উধাও যত মুক্তো ঝরানো হাসির ঝিলিক
রুদ্ধ যত কথার দুয়ার - আচমকা।
অনন্ত প্রকৃতি যেন মিলেমিশে একাকার
থমকে গেছে কুসুম সুবাস, রুদ্ধ সমীরণ
সেই সে মধুর এক জীবনের একটি বেলা
রইল লিখা আকাশের ইতিহাসে
করলো গোপন চপল হাওয়া
অজানিতে হলো লিখা শেষের কবিতা।
তবু কিছু কথা থাকে আজীবন মনসাথী
শেষ হয়েও হয় না শেষ।
শেষেরও এক শেষ থাকে বিশেষ।
কথা দিয়েছিলাম তাকে -
তোমাকে নিয়ে রচবো প্রেমের শ্রেষ্ঠ কবিতা
গড়বো প্রেমের আকাশচুম্বী সৌধ -
মনমাঝারে, যে সৌধ জুড়ে
সাজি ভরা স্মৃতির কথায় রাখব সাজিয়ে
শ্রেষ্ঠ প্রেমের রাশি রাশি পল শেষের বেলা
যত বৃষ্টিবিধৌত নিখাদ ভালোবাসা
যত কুসুম কলির ইতিহাস গাথা।
মেলে দেবো মনের আয়না যখন ইচ্ছে
আমার মন তো শুধুই আমার
যে মন জুড়ে আছে শুধু সেই সে পথের
অবাক মুখোমুখি ছবি
আছে সাড়ায় সাড়ায় বৃষ্টি ঝরা কাহিনি।
আছে সেই একটুকু ছোঁয়ার পরশ
সেই দমকা হাওয়ার বুক ধুকপুক বেলা
খোলা বাতায়ন দিয়ে আজও ভেসে আসে
সেই মিষ্টি মধুর উষ্ণ হাওয়া - সৌধ জুড়ে
আজও সেই স্নিগ্ধ হাওয়ায় ফুরফুরে মন
বেলা অবেলায় দেখে তারে নয়নঠারে
উড়ে চলে ঘুড়ি মন আকাশে প্রান্তরে।
মনে আছে আজ সেসব কথা ?
রাজপ্রাসাদের সোপান জুড়ে রাজপুত্তুর
মগ্ন তখন তোমায় নিয়ে - তুমিও অনর্গল
টুং টাং শব্দে শব্দে আমার বুকের হাপর
তখন ছড়ায় শুধু গনগনে আঁচ
যে আঁচে অধরা প্রেম
উথলে উঠে তপ্ত বহ্নি হয়ে
নীরবে কথার ফুলকি ছড়ায় মন গগনে।
এপার থেকে ওপার যাত্রা কল্পকথায়
তোমার সে কী আকুল বাধা নিষেধ,
আমার মন উড়ে যায় তোমার বাহুডোরে
দ্বিধায় দ্বিধায় সামলে রাখি অলীক ইচ্ছে
বাস্তব এসে হানা দেয় বার বার
আগল পরাই মনদুয়ারে অনিচ্ছাতে।
মাঝে মাঝেই নিভৃত অবসরে
একের পর এক স্ন্যাপশট এসে
এলোমেলো কোলাজ হয়ে ভাসে।
তীব্র আকাঙ্ক্ষায় তোলপাড় উঠে বুকে
মনের মধ্যে শুধু এক উচাটন
তাকাই এদিক ওদিক - সবখানে দেখি
রেপ্লিকা শুধু, সাগর সঙ্গমে সব নদী,
সব অবয়ব মিলেমিশে একাকার
সামনে শুধু এক প্রাণ, এক ছায়াময়তা।
আমার আলোর পথের উদ্ভাসিত ছটা।
ছলকে ওঠে কোলাজের সব ছবি
প্রথম ঋতুর সলাজ আত্মগোপন
পাশাপাশি জাগরণে আস্ত রাত্রি মাপন।
বর্ষ শুরুর হর্ষ বেলার চনমনে মন
একলা একা মধ্য রাতের সাতকাহন।
গেছে যে দিন একেবারেই গেছে ?
প্রেমের মহাবিশ্বে কভু ফুরায় নাকো কিছু
আসে দিন ফিরে ফিরে বার বার
রেলের কামরায় রাতের যাত্রা কথা
আগাগোড়া শুধু খুনসুটি ভরা কথা
অপ্রত্যক্ষে আসে ভেসে শুধু সহাস মুখ
কথায় ব্যথায় সুখ শুধু সুখ অপার
আজও দুলে উঠি সেই সুখ পরশে
অপরাহ্নের মেঘদূত হয়ে আসে ভেসে
অতীত জুড়ে যত সুখ কথা
যত রিক্ত হাহাকার, পাওয়া না পাওয়া যত
শেষের বেলা সাহচর্যের গরজ জাগে মনে।
এই কি নিখাদ শেষের কথা শুধু,
নাকি এক নতুন আদির জন্মকথা ?
কেউ জানে না, জানে শুধু সেই অলক্ষ্য প্রাণ।
Comments
Post a Comment