Skip to main content

অনন্য প্রেম



কোনও এক শারদ আশ্বিনে
প্রথম দেখেছি তাকে - 
কাঁচা, কচি ঘাসফুলের এক কলি
নজরকাড়া রূপসাগরের অরূপ মুক্তোদানা
নজর ফেরানো দায়। 
এর পর দু'জনেই দেখেছি দুই যুগ, 
ঘাসফুল আজ গুল্ম থেকে তরু খাস
পুড়ে পুড়ে আমি প্রায় এক মহীরুহ। 
পেরিয়ে এসেছি অনন্য পঁচিশটি বসন্ত
ভিন দিশায়, ভিন্ন প্রান্তে - একান্তে।
সেই একান্তবাসেরও একটি কবিতা আছে
আছে কবিতার পরতে পরতে
কত যে গোপন কথা - এদিকে ওদিকে, 
কত কল্প কথার কোলাজ
কত বিচিত্র আলাপন - নীরবে একান্তে।
জাগ্রত নিশার প্রহরে প্রহরে
গভীর রাতশেষের আবেশে, প্রত্যুষে।
কত যে অফুরান কথার পাহাড়ে
কাজ অকাজের মাঝে গহনে সঘনে
সরবে নীরবে ইথারে, দরশনে।
কেটেছে কত যে বেলা স্বপনে মননে
একসাথে পায়ে পায়ে কত যে চড়াই
পাশাপাশি মুখোমুখি ঢল বেয়ে বেয়ে 
অনন্ত উৎরাই, সানন্দে - অভিমানে।
নির্মোহ বাস্তব এসে ঘুরিয়ে দিয়েছে পথ
ঋদ্ধ অনুভবে পাল্টে গেছে সব সংজ্ঞা 
কল্পনায় ছড়িয়ে দিয়েছে রামধনু রঙ
সেই কলি থেকে কুসুমের উত্তরণ গাথা
আজ জন্ম দিয়েছে প্রেমের শ্রেষ্ঠ কবিতা।  
গর্বিত আমি - আমার তুমি আছো
না থাকার আবডালে চিরন্তনী তুমি
আমাকে ভাসিয়ে দিতে পারো পলকে
দীর্ঘ প্রশ্বাসেও কুড়িয়ে নিতে পারি
বেঁচে থাকার অপরূপ রূপ মাধুরী। 
এই মাধুর্য বদলে দিয়েছে ভাষার কথামুখ
বদলে দিয়েছে পৃথিবী দেখার চোখ।
 
দেখি রোজ - দু'জনেই, চুপিসারে
খুঁজি অহরহ আনমনে, অভীপ্সা নয়নে
আচমকা ধরা পড়ে যাই খুনসুটিতে
তৎক্ষণাৎ পালিয়ে বেড়াই দু'টিতে। 
এ দেখা পরম দেখা, ভরসা অটুট
এক পলকের একটু দেখায়
তারসানাই তানে বাজে বেহাগ 
মোহনবীণার তারে ঝংকারে মল্লার
বৃষ্টি নামে ঝমঝমিয়ে মনগগন জুড়ে
বিদ্যুৎ চমকায় সঘন ঘনঘোরে
অঙ্গে অঙ্গে শিহরণ জাগে বারে বারে 
চরাচর জুড়ে হেসে বেড়ায় 
চাঁদপানা মুখ, ডাগর দু'টি চোখ।
 
আবার কিছু নীরব প্রহর
প্রাপ্তি সুখে টইটম্বুর কিছু যাপন বেলা, 
আবার আসে ফিরে ক্ষণ - মন উচাটন
দূর থেকে দূরান্ত জুড়ে গহীন অন্বেষণ। 
কখনো সুখ আসে হড়পা উল্লাসে
পাগলা হাওয়া জানান দিয়ে যায় 
অমোঘ বার্তা - মন নয় শুধু
প্রাণে প্রাণে হবে কথা, 
আসা যাওয়ার পথের ধারে মিলবে প্রাণ
জুড়াবে হৃদয় উষ্ণ সাহচর্যে - 
দেখবে দু'নয়ন অপলক সুখ পরানে।
যায় চলে দিন, কিছু দিন উড়ে উড়ে
ভরপুর মন আলেয়া সাহচর্যে 
এত কাছে থেকেও সে কেন এত দূর, 
আবার বাজে বিষণ্ণ বেহালা
আসে ঝরা ফুলের বসন্ত বিদায় সুর। 
দুই হৃদয়ে সমসুর, সমব্যথী
চির অধরা আমার নীরব প্রেমের সাথী। 
কোন সে বাঁশিওয়ালা, আমি চিনি তারে
অলক্ষ্যে যে আছে আকাশ জুড়ে
যে আকাশে মিলিয়ে যাবে, খুঁজি যারে
অমোঘ সত্য - জানে বিশ্বজন, 
আমি ইচ্ছে করেই অস্বীকারে 
ভুলেই থাকি সেই কথাটি, 
থাকি অহর্নিশি তারেই নিয়ে স্বপন মগন। 
 
কথা আছে আরো, অগুণতি কথা
দিন রাত জুড়ে কথার পৃষ্ঠে কথামালা
গরজটুকু বেরিয়ে আসে অজান্তে 
ভালো থাকা, ভালো লাগার ইচ্ছেটুকু।
কথায় কথায় গত হয় যাপন বেলা
কেউ জানে না কখন যে তার শেষ
অস্ফুটে এত কথা, সব আছে লিপিবদ্ধ। 
বাইরে ঘরে, সাঁঝ সকালে, ব্যস্ত অবসরে
ট্রাফিক জ্যামে, নদীর ধারে, হাটবাজারে, 
এখানে ওখানে, গৃহভূমে - পরবাসে, 
প্রখর তপনতাপে, ঘর্মাক্ত কলেবরে, 
লেপমুড়ি গায়ে, ভিড়ে - বিনোদনে
কোথা নেই সে, আছে সবখানে, চকিতে। 
কোথা থেকে, কেন আসে এত কথা ? 
কোন সে গরজ, বৈধ অবৈধের দোটানা, 
কত কত কবিতা কত ছন্দ কত ছন্দহীনতা
ভরা বর্ষার মতো কূল ছাপানো কত গাথা
সব সব থাকে থরে থরে ইতিহাসে
সব থাকে মনের গহীনে সজ্জিত সহাসে। 
গভীর রাতে বিশ্ব যখন নিদ্রামগন
জেগে থাকে অপলক - দুই জোড়া চোখ
দর্শন অভিলাষে, কথার তোড়া হাতে
আচমকা সাক্ষাতে নির্গত অনর্গল। 
শেষের কথা কেউ বলে না, দাঁড়ি নেই - 
বিষয় বিহীন কথায় আসে বিশ্ববিষয়
রাত্রি কথায় আমি ও তুমি একাকার। 
অবশেষে, রাত্রি শেষে ঘুমঘোরে 
ক্ষণিক ক্ষান্তি - সাত সকালে চোখ মেলেই
খোঁজ খোঁজ তারে সুপ্রভাতের ছলে। 
কত হাসি, কত উদ্বেগ - কত পাতার ভেলা
সমাগমে কত ইশারায় মনের কথা বলা
সব ছেড়েছুড়ে নিমিষে কাছে চলে আসা
নাই বা হলো কাঙ্খিত সেই বাক্য বিনিময়
নাই বা হলো স্বপ্ন বেলার ইচ্ছেপূরণ 
তবু সবটুকু পাওয়া হয়ে যায় যেন
কাছাকাছি পাশাপাশি মুখোমুখি বেলাতে। 
সব কথা যায় না যে বলা জানে দু'হৃদয়
না বলা কথাকে রাখে আড়ালে 
লক্ষ কথার আপন মোড়কে। 
সব কথা যেন একই কথা বলে যায় 
বাইরে সহজ বাস্তবে মোড়া সম্বোধন 
একান্তে সব হৃদয় নিংড়ানো আবাহন। 
সুভাষে সুবাসে, অন্তরঙ্গ একত্রবাসে
কপোল জড়ানো অগোছালো কেশপাশে
লহরের পর লহর এসে ভাসায় নতুন হরষে
ভেসে যায় কথা উদাস আকাশে বাতাসে। 
নতুন দিনে নতুন বেশে দাঁড়ায় এসে
কল্পকথায় গল্পগাথায় আবীর ছড়ায় মনে
মন মানে না, কল্পনাতে শুধুই দ্বিরালাপ
চোখের দেখা, মুখের ভাষায় অনন্ত প্রেম জাগে
জেগেই থাকে যুগ যুগ ধরে 
কুঁড়ি থেকে কুসুম পথে পথে। 
কুসুম ছড়ায় শত শত দল অবিরত
ভ্রামরী মন ইতিউতি বিস্মিত 
ভ্রমরে কুসুমে অবিরাম চলে কথা
শোনে না কেউ, জানে না কেউ
গোপন কথার আড়ালে কথা কত। 
একেকটি দিন আসে এমনই
উৎকণ্ঠার ক্ষণ ভাবায় নিয়ত
অবশেষে ভাবনা নিরসনে 
প্রতীক্ষার হয় অন্ত, দুই তরফের অঙ্গীকার 
প্রতীক্ষা যেন না হয় এমন দীর্ঘ, 
অপেক্ষার বেলা শেষে জাগে পুলক
অন্তরে অন্তরে জাগে অসীম আনন্দ 
অসীমেই বিলীন যত ভাবনা যত মন্দ।
আবার কখনো অভিমান জাগে মনে
উৎকণ্ঠার পারদ চড়ে তরতরিয়ে 
এক একটি পল এক যুগ হয়ে আসে
নিভৃত যাপনে ব্যথাতুর প্রাণ কাঁদে। 
যখন ভেঙে যায় সেই উতল আগল
আবার নিমেষে প্রাণে জাগে হিন্দোল। 
এমনি করেই মনমাঝারের দুই দেহ এক প্রাণ
ছুটে চলে অবিরাম, কোন অজানা পথে
কেউ জানে না কোন সে গভীর প্রেম
অনুচ্চারিত প্রেম, অনুপম শোভাময়
কথাসাগরের অতল তলে ডুবুরি হৃদয় 
একসাথে চলে কথার পাহাড় দিশায়
তবু গোপন কথাটি গোপনেই থেকে যায় 
দু'টি হৃদয় ঠিকই জানে - না বলা কথায়
লুকিয়ে আছে যে কথা
সে কথাটি অহরহ বাজে বুকে নিরাশায়। 
 
অবশেষে এক নতুন দিনে 
অন্ত থেকে আরেক আদির 
পথটি গেল খুলে, সে এক সুখমাখা
বৃষ্টিবেলার অমৃতময় কথা।
এ কথার নীরব সাক্ষী শুধু 
ছিল এক পথ, গেছে যে পথ দূর পাহাড়ে, 
সে পাহাড় চিরে যে পথ গেছে চলে
পাশে তার বিছানো নিখাদ প্রেম - 
সবুজে সবুজে নীলাভ আকাশ তলে 
সঙ্গোপনে একসাথে কাছাকাছি 
তিরবেগে ছুটে চলে রুধির ধমনি জুড়ে
নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে অঙ্গে অঙ্গে মনন জুড়ে 
কথা সাগরের উথালপাথাল ঢেউ
বাড়ে হৃদস্পন্দন, টালমাটাল চলা পথ
হারিয়ে যাওয়ার আগে একরাশ ভীতি
দাঁড়ায় এসে পথ আগলে - দুই প্রাণে
উধাও যত মুক্তো ঝরানো হাসির ঝিলিক 
রুদ্ধ যত কথার দুয়ার - আচমকা। 
অনন্ত প্রকৃতি যেন মিলেমিশে একাকার
থমকে গেছে কুসুম সুবাস, রুদ্ধ সমীরণ
হারিয়ে গেছে যত অফুরান কথামালা। 
 
সেই সে মধুর এক জীবনের একটি বেলা
রইল লিখা আকাশের ইতিহাসে
করলো গোপন চপল হাওয়া
অজানিতে হলো লিখা শেষের কবিতা। 
তবু কিছু কথা থাকে আজীবন মনসাথী
শেষ হয়েও হয় না শেষ। 
শেষেরও এক শেষ থাকে বিশেষ। 
কথা দিয়েছিলাম তাকে - 
তোমাকে নিয়ে রচবো প্রেমের শ্রেষ্ঠ কবিতা 
গড়বো প্রেমের আকাশচুম্বী সৌধ - 
মনমাঝারে, যে সৌধ জুড়ে 
সাজি ভরা স্মৃতির কথায় রাখব সাজিয়ে 
শ্রেষ্ঠ প্রেমের রাশি রাশি পল শেষের বেলা
যত বৃষ্টিবিধৌত নিখাদ ভালোবাসা 
যত কুসুম কলির ইতিহাস গাথা। 
মেলে দেবো মনের আয়না যখন ইচ্ছে 
আমার মন তো শুধুই আমার 
যে মন জুড়ে আছে শুধু সেই সে পথের
অবাক মুখোমুখি ছবি
আছে সাড়ায় সাড়ায় বৃষ্টি ঝরা কাহিনি। 
আছে সেই একটুকু ছোঁয়ার পরশ
সেই দমকা হাওয়ার বুক ধুকপুক বেলা
খোলা বাতায়ন দিয়ে আজও ভেসে আসে
সেই মিষ্টি মধুর উষ্ণ হাওয়া - সৌধ জুড়ে 
আজও সেই স্নিগ্ধ হাওয়ায় ফুরফুরে মন
বেলা অবেলায় দেখে তারে নয়নঠারে
উড়ে চলে ঘুড়ি মন আকাশে প্রান্তরে। 
মনে আছে আজ সেসব কথা ? 
রাজপ্রাসাদের সোপান জুড়ে রাজপুত্তুর 
মগ্ন তখন তোমায় নিয়ে - তুমিও অনর্গল 
টুং টাং শব্দে শব্দে আমার বুকের হাপর
তখন ছড়ায় শুধু গনগনে আঁচ 
যে আঁচে অধরা প্রেম 
উথলে উঠে তপ্ত বহ্নি হয়ে
নীরবে কথার ফুলকি ছড়ায় মন গগনে। 
এপার থেকে ওপার যাত্রা কল্পকথায়
তোমার সে কী আকুল বাধা নিষেধ, 
আমার মন উড়ে যায় তোমার বাহুডোরে
দ্বিধায় দ্বিধায় সামলে রাখি অলীক ইচ্ছে 
বাস্তব এসে হানা দেয় বার বার 
আগল পরাই মনদুয়ারে অনিচ্ছাতে।
মাঝে মাঝেই নিভৃত অবসরে 
একের পর এক স্ন্যাপশট এসে 
এলোমেলো কোলাজ হয়ে ভাসে। 
তীব্র আকাঙ্ক্ষায় তোলপাড় উঠে বুকে
মনের মধ্যে শুধু এক উচাটন
তাকাই এদিক ওদিক - সবখানে দেখি
রেপ্লিকা শুধু, সাগর সঙ্গমে সব নদী, 
সব অবয়ব মিলেমিশে একাকার
সামনে শুধু এক প্রাণ, এক ছায়াময়তা।
এ ছায়া, এ কায়া আমার নিছক আপন
আমার গোধূলি আলোর আবছা আভা
আমার আলোর পথের উদ্ভাসিত ছটা। 
ছলকে ওঠে কোলাজের সব ছবি
প্রথম ঋতুর সলাজ আত্মগোপন
পাশাপাশি জাগরণে আস্ত রাত্রি মাপন। 
বর্ষ শুরুর হর্ষ বেলার চনমনে মন
একলা একা মধ্য রাতের সাতকাহন। 
 
গেছে যে দিন একেবারেই গেছে ? 
প্রেমের মহাবিশ্বে কভু ফুরায় নাকো কিছু
আসে দিন ফিরে ফিরে বার বার 
রেলের কামরায় রাতের যাত্রা কথা
আগাগোড়া শুধু খুনসুটি ভরা কথা
অপ্রত্যক্ষে আসে ভেসে শুধু সহাস মুখ
কথায় ব্যথায় সুখ শুধু সুখ অপার
আজও দুলে উঠি সেই সুখ পরশে
অপরাহ্নের মেঘদূত হয়ে আসে ভেসে
অতীত জুড়ে যত সুখ কথা 
যত রিক্ত হাহাকার, পাওয়া না পাওয়া যত
জমা হয়ে হয়ে পাহাড় জাগে উচাটনে
শেষের বেলা সাহচর্যের গরজ জাগে মনে। 
 
এই কি নিখাদ শেষের কথা শুধু, 
নাকি এক নতুন আদির জন্মকথা ? 
কেউ জানে না, জানে শুধু সেই অলক্ষ্য প্রাণ। 

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়