ইংরেজি Exodus অর্থে দলবদ্ধ
ভাবে নিষ্ক্রমণ। করোনাকালীন
সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের এই মহানিষ্ক্রমণ প্রত্যক্ষ করেছে আজকের প্রজন্ম ভারতের বিভিন্ন
অঞ্চলে। অথচ এই তথ্যটি হয়তো আমাদের
অনেকেরই জানা নেই যে আজ থেকে একশো বছর আগে আমাদের এ অঞ্চলেই সংঘটিত হয়েছিল ভারতের শ্রমিক
আন্দোলনের ইতিহাসের সর্বপ্রথম সংগঠিত সম্মিলিত শ্রমিক আন্দোলনের ফলে উদ্ভুত এক মহানিষ্ক্রমণ। যা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে
আছে ‘চরগোলা এক্সোডাস’ বা ‘মুলুক চলো’ (মতান্তরে মুলকি চাল) অভিযান হিসেবে।
হাতে এল গবেষক সাহিত্যিক বিবেকানন্দ মোহন্তের গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘চরগোলা এক্সোডাস ১৯২১’। গ্রন্থটি কয়েক বছর আগ প্রকাশিত হলেও আজও এমনকি ভবিষ্যতেও এক অসামান্য দলিল তথা গবেষণাদির কাজে এক প্রামাণ্য গ্রন্থ হয়ে থাকবে নিশ্চিতভাবেই। গ্রন্থটি গ্রন্থকারের নিরলস গবেষণা ও নিষ্ঠার ফসল। মোট আটটি অধ্যায় এবং তথ্যসূত্র ও পরিশিষ্টের সমন্বয়ে পাকা বাঁধাইয়ে ২১০ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে প্রামাণ্য বহু দলিলের প্রতিলিপি, তথ্যসূত্র, মূল্যবান বেশ কিছু ছবি এবং প্রাপ্ত ও স্বহস্তে অঙ্কিত একাধিক মানচিত্র।
গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে বিশিষ্ট গবেষক-সাহিত্যিক সুজিৎ চৌধুরীকে যিনি আবার ভূমিকাও লিখেছেন গ্রন্থটির। গ্রন্থ সম্বন্ধে স্বর্গীয় সুজিৎ চৌধুরীর কিছু বক্তব্য এখানে প্রাসঙ্গিক - ‘বিবেকানন্দ মোহন্তের চরগোলার চা শ্রমিকদের মরণপণ সংগ্রাম সম্পর্কিত এই পুস্তকটি সপ্রশংস প্রয়াসের একটি দৃষ্টান্তমূলক নিদর্শন বললেও সবটুকু বলা হয়ে ওঠে না। ...তাঁর রচনায় স্থান পেয়েছে চা-বাগান পত্তনের কাহিনি, চা-শ্রমিক সংগ্রহের আইন ও চুক্তিপত্র, প্রশাসনের সঙ্গে ইংরেজ বাগান মালিকদের সম্পর্ক, শ্রমিকদের সামাজিক পটভূমি, স্থানীয় পরিস্থিতি ইত্যাদি... সেই সঙ্গে যে-সব মনীষী আসামের বাগান শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে জনমনে চেতনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের প্রয়াসের বিবরণও তিনি সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করেছেন। ... সব মিলিয়ে আলোচ্য পুস্তকটি আমাদের আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে একটি অনন্যসাধারণ সংযোজন তো বটেই, জাতীয় স্তরের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস যাঁদের গবেষণার ক্ষেত্র, তাঁরাও এই রচনা থেকে পর্যাপ্ত মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।’ অর্থাৎ স্বর্গীয় চৌধুরীর এই ভূমিকাটি গ্রন্থের সার নির্যাস হিসেবেই মেনে নেওয়া যায়। এছাড়াও বইটি সম্বন্ধে কিছু প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রেখেছেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ বাণীপ্রসন্ন মিশ্র। ‘নিবেদন’-এ লেখক গ্রন্থ রচনার পটভূমি ও ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন।
প্রথম অধ্যায় ‘চরগোলা এক্সোডাস ১৯২১ - প্রস্তাবনা’। এ অধ্যায়ে ১৭৬৫ ইংরেজি থেকে আঞ্চলিক পটভূমির বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। চরগোলার আঞ্চলিক অবস্থান এবং ভৌগোলিক পরিপ্রেক্ষিত হয়েছে সবিস্তারে সন্নিবিষ্ট।
দ্বিতীয় অধ্যায় - ‘ঔপনিবেশিক পর্বে কৃষিভিত্তিক চা শিল্প গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপট’। এই অধ্যায়ে সুরমা ভ্যালি সহ সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ পতিত ক্ষেত্রে শ্রমনির্ভর ও কৃষিভিত্তিক শত শত চা-শিল্পদ্যোগ গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপটটি বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
তৃতীয় অধ্যায় - ‘চা-শিল্পের প্রয়োজনে ভূমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া’। এ পর্বে আসাম ও সুরমা ভ্যালির চা-শিল্পের গোড়াপত্তনের কথা। কুকি বৈরীদের আক্রমণে আলেকজাণ্ডারপুর বাগানের ম্যানেজার উইনচেস্টারের হত্যা এবং পরবর্তীতে বৈরিতার অবসানে কুকিদের আত্মপর্যালোচনার ঘটনাটি সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে।
চতুর্থ অধ্যায় - ‘শ্রমিক নিয়োগ ব্যবস্থা’। বহু চিঠিপত্রের উল্লেখক্রমে শ্রমিক সংগ্রহের সাতকাহন অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে
পঞ্চম অধ্যায় - ‘চা-শিল্প ক্ষেত্রে শ্রমিক শোষণ’। বস্তুত এক্সোডাসের মূল কারণ এই শ্রমিক শোষণের জঘণ্য ও মর্মান্তিক বিবরণ এই অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রন্থকার লিখছেন - “ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ১৯২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া নৃশংসতর ব্যাপারগুলি চা-শ্রমিকদের এক্সোডাসের মতো দৃঢ়তর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছিল।”
ষষ্ঠ অধ্যায় - ‘শ্রমজীবনে চেতনার উন্মেষ’। এই পর্বে বিভিন্ন চিঠিপত্র, গ্রন্থাদি ও তথ্যের উপর ভিত্তি করে লেখক লিপিবদ্ধ করেছেন শ্রমিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও পত্রপত্রিকার ভূমিকার কথা। - “২ মে থেকেই শুরু হয় চরগোলা ভ্যালির শ্রমিক আন্দোলন, যার অঙ্গ হিসাবে সর্বপ্রথম আনিপুর চা বাগান থেকে ৭৫০ জন শ্রমিক স্ত্রী পুত্রের হাত ধরে ৩ মে বাগান ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে কর্তৃপক্ষের রক্তচক্ষুর শাসানি, অবরোধ, ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করেই। সর্বভারতীয় রাজনৈতিক ইতিহাসখ্যাত ‘চরগোলা এক্সোডাস’ এর সূচনা এখান থেকেই। সমগ্র সুরমা বরাকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে খবরটি। ‘মুলুক চলো’ অভিযানের উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় বাগান ছেড়ে দলে দলে বেরিয়ে পড়ে হাজার হাজার শ্রমিক ...।’
সপ্তম অধ্যায় - ‘চাঁদপুরের ঘটনা - ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া’। পলায়নরত শ্রমিকদের উপর চাঁদপুরে গোর্খা বাহিনীর চরম অত্যাচারের কলঙ্কিত অধ্যায় এখানে তুলে ধরেছেন লেখক। সাথে এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেশীয় ব্যক্তি ও সংস্থার প্রতিবাদ ও সদর্থক ভূমিকা।
অষ্টম অধ্যায় - ‘শেষ কথা’। গোটা গ্রন্থের সারমর্ম আবারও সংক্ষিপ্ত আকারে যেন এখানে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার সময় অবধি চা শ্রমিকদের জীবনযাত্রার আংশিক পরিবর্তনের ধারাটিও সন্নিবিষ্ট হয়েছে এই পর্বে। এর পর প্রায় পঞ্চাশ পৃষ্ঠা জুড়ে বিভিন্ন তথ্যাদি, তালিকা, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন নথিপত্রের প্রতিলিপি, মানচিত্র ইত্যাদির সমন্বয়ে গ্রন্থিত হয়েছে এক্সোডাসের করুণ কাহিনি। আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন চা বাগানের অবস্থান বোঝানোর জন্য আনুপাতিক স্কেলে লেখকের স্বহস্তে অঙ্কিত মানচিত্রসমূহ এই গ্রন্থের এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। সাথে তৎকালীন এবং অধুনা চিত্রাবলি।
গ্রন্থটির প্রকাশক সৃজন গ্রাফিক্স অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস, শিলচর। মুদ্রণ শিলচর সানগ্রাফিক্স। ছাপাই, বাঁধাই, শব্দ ও অক্ষর বিন্যাস ত্রুটিহীন। বানান ভুল প্রায় নেই বলা চলে। প্রচ্ছদ, নামলিপি যথাযথ যদিও পুরোনো ছবি বলেই হয়তো প্রচ্ছদের ছবিগুলোতে স্পষ্টতার অভাব রয়েছে।
সযতনে যে করুণ ইতিহাস লিপিবদ্ধ হলো এই গ্রন্থে তার মূল্য অপরিসীম। বর্তমান তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এক অধ্যয়নযোগ্য গ্রন্থ হিসেবেই বিবেচিত হবে তৎকালীন চরগোলা ভ্যালির আওতায় থাকা বরাকের অন্যতম সুশিক্ষার পীঠস্থান বলে স্বীকৃত রামকৃষ্ণনগরের কৃতি সন্তান বিবেকানন্দ মোহন্তের এই গ্রন্থটি। এমন একটি গ্রন্থ সরকারি বা বেসরকারি স্তরে পুরস্কৃত না হওয়াটা এক অবিচার ও অবোধ্য ঘটনা।
হাতে এল গবেষক সাহিত্যিক বিবেকানন্দ মোহন্তের গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘চরগোলা এক্সোডাস ১৯২১’। গ্রন্থটি কয়েক বছর আগ প্রকাশিত হলেও আজও এমনকি ভবিষ্যতেও এক অসামান্য দলিল তথা গবেষণাদির কাজে এক প্রামাণ্য গ্রন্থ হয়ে থাকবে নিশ্চিতভাবেই। গ্রন্থটি গ্রন্থকারের নিরলস গবেষণা ও নিষ্ঠার ফসল। মোট আটটি অধ্যায় এবং তথ্যসূত্র ও পরিশিষ্টের সমন্বয়ে পাকা বাঁধাইয়ে ২১০ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে প্রামাণ্য বহু দলিলের প্রতিলিপি, তথ্যসূত্র, মূল্যবান বেশ কিছু ছবি এবং প্রাপ্ত ও স্বহস্তে অঙ্কিত একাধিক মানচিত্র।
গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে বিশিষ্ট গবেষক-সাহিত্যিক সুজিৎ চৌধুরীকে যিনি আবার ভূমিকাও লিখেছেন গ্রন্থটির। গ্রন্থ সম্বন্ধে স্বর্গীয় সুজিৎ চৌধুরীর কিছু বক্তব্য এখানে প্রাসঙ্গিক - ‘বিবেকানন্দ মোহন্তের চরগোলার চা শ্রমিকদের মরণপণ সংগ্রাম সম্পর্কিত এই পুস্তকটি সপ্রশংস প্রয়াসের একটি দৃষ্টান্তমূলক নিদর্শন বললেও সবটুকু বলা হয়ে ওঠে না। ...তাঁর রচনায় স্থান পেয়েছে চা-বাগান পত্তনের কাহিনি, চা-শ্রমিক সংগ্রহের আইন ও চুক্তিপত্র, প্রশাসনের সঙ্গে ইংরেজ বাগান মালিকদের সম্পর্ক, শ্রমিকদের সামাজিক পটভূমি, স্থানীয় পরিস্থিতি ইত্যাদি... সেই সঙ্গে যে-সব মনীষী আসামের বাগান শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে জনমনে চেতনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন, তাঁদের প্রয়াসের বিবরণও তিনি সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করেছেন। ... সব মিলিয়ে আলোচ্য পুস্তকটি আমাদের আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে একটি অনন্যসাধারণ সংযোজন তো বটেই, জাতীয় স্তরের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস যাঁদের গবেষণার ক্ষেত্র, তাঁরাও এই রচনা থেকে পর্যাপ্ত মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।’ অর্থাৎ স্বর্গীয় চৌধুরীর এই ভূমিকাটি গ্রন্থের সার নির্যাস হিসেবেই মেনে নেওয়া যায়। এছাড়াও বইটি সম্বন্ধে কিছু প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রেখেছেন বিশিষ্ট চিন্তাবিদ বাণীপ্রসন্ন মিশ্র। ‘নিবেদন’-এ লেখক গ্রন্থ রচনার পটভূমি ও ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন।
প্রথম অধ্যায় ‘চরগোলা এক্সোডাস ১৯২১ - প্রস্তাবনা’। এ অধ্যায়ে ১৭৬৫ ইংরেজি থেকে আঞ্চলিক পটভূমির বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। চরগোলার আঞ্চলিক অবস্থান এবং ভৌগোলিক পরিপ্রেক্ষিত হয়েছে সবিস্তারে সন্নিবিষ্ট।
দ্বিতীয় অধ্যায় - ‘ঔপনিবেশিক পর্বে কৃষিভিত্তিক চা শিল্প গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপট’। এই অধ্যায়ে সুরমা ভ্যালি সহ সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ পতিত ক্ষেত্রে শ্রমনির্ভর ও কৃষিভিত্তিক শত শত চা-শিল্পদ্যোগ গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপটটি বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
তৃতীয় অধ্যায় - ‘চা-শিল্পের প্রয়োজনে ভূমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া’। এ পর্বে আসাম ও সুরমা ভ্যালির চা-শিল্পের গোড়াপত্তনের কথা। কুকি বৈরীদের আক্রমণে আলেকজাণ্ডারপুর বাগানের ম্যানেজার উইনচেস্টারের হত্যা এবং পরবর্তীতে বৈরিতার অবসানে কুকিদের আত্মপর্যালোচনার ঘটনাটি সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে।
চতুর্থ অধ্যায় - ‘শ্রমিক নিয়োগ ব্যবস্থা’। বহু চিঠিপত্রের উল্লেখক্রমে শ্রমিক সংগ্রহের সাতকাহন অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে
পঞ্চম অধ্যায় - ‘চা-শিল্প ক্ষেত্রে শ্রমিক শোষণ’। বস্তুত এক্সোডাসের মূল কারণ এই শ্রমিক শোষণের জঘণ্য ও মর্মান্তিক বিবরণ এই অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রন্থকার লিখছেন - “ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ১৯২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া নৃশংসতর ব্যাপারগুলি চা-শ্রমিকদের এক্সোডাসের মতো দৃঢ়তর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছিল।”
ষষ্ঠ অধ্যায় - ‘শ্রমজীবনে চেতনার উন্মেষ’। এই পর্বে বিভিন্ন চিঠিপত্র, গ্রন্থাদি ও তথ্যের উপর ভিত্তি করে লেখক লিপিবদ্ধ করেছেন শ্রমিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন ও পত্রপত্রিকার ভূমিকার কথা। - “২ মে থেকেই শুরু হয় চরগোলা ভ্যালির শ্রমিক আন্দোলন, যার অঙ্গ হিসাবে সর্বপ্রথম আনিপুর চা বাগান থেকে ৭৫০ জন শ্রমিক স্ত্রী পুত্রের হাত ধরে ৩ মে বাগান ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে কর্তৃপক্ষের রক্তচক্ষুর শাসানি, অবরোধ, ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করেই। সর্বভারতীয় রাজনৈতিক ইতিহাসখ্যাত ‘চরগোলা এক্সোডাস’ এর সূচনা এখান থেকেই। সমগ্র সুরমা বরাকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে খবরটি। ‘মুলুক চলো’ অভিযানের উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় বাগান ছেড়ে দলে দলে বেরিয়ে পড়ে হাজার হাজার শ্রমিক ...।’
সপ্তম অধ্যায় - ‘চাঁদপুরের ঘটনা - ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া’। পলায়নরত শ্রমিকদের উপর চাঁদপুরে গোর্খা বাহিনীর চরম অত্যাচারের কলঙ্কিত অধ্যায় এখানে তুলে ধরেছেন লেখক। সাথে এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেশীয় ব্যক্তি ও সংস্থার প্রতিবাদ ও সদর্থক ভূমিকা।
অষ্টম অধ্যায় - ‘শেষ কথা’। গোটা গ্রন্থের সারমর্ম আবারও সংক্ষিপ্ত আকারে যেন এখানে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার সময় অবধি চা শ্রমিকদের জীবনযাত্রার আংশিক পরিবর্তনের ধারাটিও সন্নিবিষ্ট হয়েছে এই পর্বে। এর পর প্রায় পঞ্চাশ পৃষ্ঠা জুড়ে বিভিন্ন তথ্যাদি, তালিকা, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন নথিপত্রের প্রতিলিপি, মানচিত্র ইত্যাদির সমন্বয়ে গ্রন্থিত হয়েছে এক্সোডাসের করুণ কাহিনি। আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন চা বাগানের অবস্থান বোঝানোর জন্য আনুপাতিক স্কেলে লেখকের স্বহস্তে অঙ্কিত মানচিত্রসমূহ এই গ্রন্থের এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। সাথে তৎকালীন এবং অধুনা চিত্রাবলি।
গ্রন্থটির প্রকাশক সৃজন গ্রাফিক্স অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস, শিলচর। মুদ্রণ শিলচর সানগ্রাফিক্স। ছাপাই, বাঁধাই, শব্দ ও অক্ষর বিন্যাস ত্রুটিহীন। বানান ভুল প্রায় নেই বলা চলে। প্রচ্ছদ, নামলিপি যথাযথ যদিও পুরোনো ছবি বলেই হয়তো প্রচ্ছদের ছবিগুলোতে স্পষ্টতার অভাব রয়েছে।
সযতনে যে করুণ ইতিহাস লিপিবদ্ধ হলো এই গ্রন্থে তার মূল্য অপরিসীম। বর্তমান তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এক অধ্যয়নযোগ্য গ্রন্থ হিসেবেই বিবেচিত হবে তৎকালীন চরগোলা ভ্যালির আওতায় থাকা বরাকের অন্যতম সুশিক্ষার পীঠস্থান বলে স্বীকৃত রামকৃষ্ণনগরের কৃতি সন্তান বিবেকানন্দ মোহন্তের এই গ্রন্থটি। এমন একটি গ্রন্থ সরকারি বা বেসরকারি স্তরে পুরস্কৃত না হওয়াটা এক অবিচার ও অবোধ্য ঘটনা।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
‘চরগোলা
এক্সোডাস ১৯২১’
বিবেকানন্দ মোহন্ত
মূল্য - ৩৯০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪০১৪২০৪৬৭, ৬০০০১৬৮৬৩৬
বিবেকানন্দ মোহন্ত
মূল্য - ৩৯০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪০১৪২০৪৬৭, ৬০০০১৬৮৬৩৬
Comments
Post a Comment