ছোট ছোট দুঃখ ব্যথা - যার সুদূরপ্রসারী
প্রভাব থেকে যায় জীবন জুড়ে, সেসব নিয়েই নির্মোহ কাঁটাছেড়া। বয়ানে, সংলাপে, জমাট বাঁধনে বিন্যস্ত ১৫ টি সার্থক ছোটগল্পের সমাহার - অমিতাভ সেনগুপ্তের সম্প্রতি প্রকাশিত ছোটগল্প সংকলন ‘নিত্যানন্দের ছাতা’।
তবে প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে ‘নিত্যানন্দের ছাতা’ নামের গল্পটিই কিন্তু এই সংকলনের শ্রেষ্ঠ গল্প নয়। তবু এই নামেই গ্রন্থ নাম হয়েছে সম্ভবত এই গল্পের প্রেক্ষাপট গল্পকারের ব্যক্তিগত উপলব্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলেই। লেখকের মননে যে একটি লক্ষ্য থাকে সাধারণত তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে গ্রন্থনাম নির্বাচনে। এক্ষেত্রেও সম্ভবত তাই হয়েছে।
প্রতিটি গল্পেরই লিখনশৈলী সমান ভাবে সাবলীল ও গোছানো যা আলোচনার শুরুতেই বলা হয়েছে। বেশ কিছু গল্পের প্রেক্ষাপটেও সাযুজ্য লক্ষ করা যায় যদিও বিষয় বৈচিত্র্যে ভিন্নতার উপস্থিতি। প্রায় প্রতিটি গল্পেরই প্রধান চরিত্র একজন পুরুষ এবং চরিত্রনামে লেখকের এক রুচিশীল মনের পরিচয় পাওয়া যায়। কিছু নাম উল্লেখ করা যায় - দেবায়ন, অমলকান্তি, রজতাভ, বিরাজমোহন আদি।
১৪২ পৃষ্ঠার পাকা বাঁধাই গ্রন্থের প্রথম ব্লার্বে স্বনামধন্য গল্পকার মিথিলেশ ভট্টাচার্য লিখছেন - ... গল্প রচনায় অমিতাভের দক্ষতা এতখানি যে কোনোরূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ভাষার মারপ্যাঁচ বা ভণিতা ও ভঙ্গি-সর্বস্বতা ছাড়াই শুধুমাত্র শক্তিশালী বিষয়কে অবলম্বন করে চমৎকার গল্প লেখা যে সম্ভব তার স্বাক্ষর তিনি রেখেছেন গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত গল্পসমূহে।
স্বল্প কথায় এই গ্রন্থের নির্যাসটুকু তুলে ধরেছেন শ্রী ভট্টাচার্য। এই সূত্র ধরেই এগোনো যেতে পারে গল্পসমূহের ভিতরে - সংক্ষিপ্ত পরিসরকে মাথায় রেখে। প্রথম গল্প - অসুখ। সমাজের বিভিন্ন স্তরে ঘটে যাওয়া অব্যক্ত কিছু সমস্যার জটে ভুক্তভোগী দুই মেয়ের গল্প। রাজশ্রী এবং রমা। ভিন্ন পটভূমি। দু’টি আলাদা গল্প যেন স্থান করে নিয়েছে এখানে। শেষটায় প্রথম পর্ব আবার ফিরে এলে হয়তো একটি গল্প হয়ে যেত, একটি যোগসূত্র স্থাপিত হতো। তবু বলা যায় বুনোটের খামতি নেই কোথাও। দ্বিতীয় গল্প - তাপসমানব। গ্রন্থনামও হতে পারত। বয়ানের কারিকুরিতে এগিয়েছে নিটোল ছন্দে আগাগোড়া। পথ চলার এক বৃত্তান্ত - আত্মকথন। তৃতীয় গল্প - সম্ভব নেহি। সবিস্তারে বর্ণিত একটি প্রতারণার কাহিনি। রিক্সাচালক কানাইয়ের প্রতারণার খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার বৃত্তান্ত। একটি বার্তা পৌঁছে যায় পাঠকের কাছে। এর পরের গল্প - একটি চুরির ঘটনা। গতানুগতিকতার বাইরে বেরিয়ে অসাধারণ একটি ‘মন চুরি’র গল্প। পড়ে যেতে হয়। পঞ্চম গল্প - অথ সঞ্জয় কথা। এটিও এক অসাধারণ গল্প। মহাভারতের সঞ্জয়ের সঙ্গে ব্যঞ্জনায় বিন্যস্ত এক বার্তাময় ছোটগল্প। পরের গল্প - প্রফুল্ল ‘স্বরনি’। সংলাপনির্ভর একটি চমৎকার গল্প। গল্পের শিরোনামের সঙ্গে গল্পের সামঞ্জস্য এক রূপকের সৃষ্টি করেছে। বাইরে থেকে দেখলে এই শিরোনাম যথার্থ নাও মনে হতে পারে। পরবর্তী গল্প - চাঁদ। দিনবদলের নস্টালজিয়া। বাস্তব প্রেক্ষিতে মূলস্রোত থেকে প্রজন্মের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বেদনা। অসাধারণ বুনোট। অষ্টম গল্প - রেজিগনেশান। রূঢ় বাস্তবের প্রেক্ষাপটে লিখা নিত্যদিনের মানসিক চাপের এক নিদর্শন। ছিমছাম বুনোট। পরের গল্প - নীল তিমির। শিশু মনস্তত্ত্বের উপর লিখা তথা সর্বনাশা দিনযাপনের এক ভয়ংকর বাস্তবের গল্প। বার্তা দিয়ে যায় পাঠকমনে। দশম গল্প - লোকটা। বিধ্বস্ত মনস্তত্ত্বের আরোও একটি সাজানো গোছানো গল্প। একাদশ গল্প - ঈশ্বরের থাকা, না থাকা। চমৎকার একটি ব্যঞ্জনাধর্মী গল্প। অস্তিত্বের চলমানতা নিয়ে বলা যায় এক ব্যতিক্রমী চিন্তাচর্চার ফসল এই গল্প। পরের গল্প - অনিকেত। একাকিত্বের বাস্তব পোস্টমর্টেম। এর পরের গল্প - তিমিরবরণ। স্থানিক গল্প। জঙ্গলবাসীর দুর্দশার নির্মম বাস্তব ফুটে উঠেছে দুরন্ত বুনোটে। এক পঠনে শেষ করতে হয় গল্প। চতুর্দশ গল্প - নিত্যানন্দের ছাতা। একটি বর্ণনাত্মক গল্প। অনেক কথাই লুকিয়ে আছে তবু যেন ‘ভরিল না চিত্ত’। কোথাও এক অতৃপ্তির সমাপন। শেষ গল্প - দশ নম্বর গল্প। করোনার আবহে এক হৃদয়বিদারক গল্প। নায়ক নিখিলেশ যেন আমাদেরই খুব কাছের এক চেনা চরিত্র। একাকিত্বের বেদনা ছড়িয়ে আছে গল্প জুড়ে।
গ্রন্থের প্রকাশক - চিন্তা, কোলকাতা। রঙিন প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদের সৌজন্যে রাজীব চক্রবর্তী। আগাগোড়া স্বচ্ছ ছাপাই ও শব্দ, অক্ষর বিন্যাস। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে লেখকের জীবনের ধ্রুবতারা তাঁর প্রিয়পরম-কে।
প্রতিটি গল্পের বিস্তার যেন এক ঘোরলাগা অনুভব। বয়ান ও বুনোট যেন গল্প পড়ার নেশা চাগিয়ে দেয় পাঠক মনে। ব্লার্বে বর্ণিত বয়ান অনুযায়ী গল্পসমূহের ভিতরে বাহুল্য নেই কোথাও, নেই ভাষা সাহিত্যের কারিকুরিও। তবু গল্প এগোয় আপন বৈশিষ্ট্যে। গভীর জীবনবোধের কথা পরতে পরতে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে এই গ্রন্থের সব ক’টি গল্পে।
এত বিশিষ্টতার মধ্যেও ছন্দপতন ঘটে বানান ভুলের আধিক্যে। ভেবে অবাক হতে হয় যে বাংলার তথাকথিত ঋদ্ধ ভুবন কোলকাতার একটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত একটি গ্রন্থে কী করে এত এত বানান ভুল থাকতে পারে। পরবর্তীতে এদিকটায় অধিকতর যত্নবান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বইকী।
তবে প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে ‘নিত্যানন্দের ছাতা’ নামের গল্পটিই কিন্তু এই সংকলনের শ্রেষ্ঠ গল্প নয়। তবু এই নামেই গ্রন্থ নাম হয়েছে সম্ভবত এই গল্পের প্রেক্ষাপট গল্পকারের ব্যক্তিগত উপলব্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলেই। লেখকের মননে যে একটি লক্ষ্য থাকে সাধারণত তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে গ্রন্থনাম নির্বাচনে। এক্ষেত্রেও সম্ভবত তাই হয়েছে।
প্রতিটি গল্পেরই লিখনশৈলী সমান ভাবে সাবলীল ও গোছানো যা আলোচনার শুরুতেই বলা হয়েছে। বেশ কিছু গল্পের প্রেক্ষাপটেও সাযুজ্য লক্ষ করা যায় যদিও বিষয় বৈচিত্র্যে ভিন্নতার উপস্থিতি। প্রায় প্রতিটি গল্পেরই প্রধান চরিত্র একজন পুরুষ এবং চরিত্রনামে লেখকের এক রুচিশীল মনের পরিচয় পাওয়া যায়। কিছু নাম উল্লেখ করা যায় - দেবায়ন, অমলকান্তি, রজতাভ, বিরাজমোহন আদি।
১৪২ পৃষ্ঠার পাকা বাঁধাই গ্রন্থের প্রথম ব্লার্বে স্বনামধন্য গল্পকার মিথিলেশ ভট্টাচার্য লিখছেন - ... গল্প রচনায় অমিতাভের দক্ষতা এতখানি যে কোনোরূপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ভাষার মারপ্যাঁচ বা ভণিতা ও ভঙ্গি-সর্বস্বতা ছাড়াই শুধুমাত্র শক্তিশালী বিষয়কে অবলম্বন করে চমৎকার গল্প লেখা যে সম্ভব তার স্বাক্ষর তিনি রেখেছেন গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত গল্পসমূহে।
স্বল্প কথায় এই গ্রন্থের নির্যাসটুকু তুলে ধরেছেন শ্রী ভট্টাচার্য। এই সূত্র ধরেই এগোনো যেতে পারে গল্পসমূহের ভিতরে - সংক্ষিপ্ত পরিসরকে মাথায় রেখে। প্রথম গল্প - অসুখ। সমাজের বিভিন্ন স্তরে ঘটে যাওয়া অব্যক্ত কিছু সমস্যার জটে ভুক্তভোগী দুই মেয়ের গল্প। রাজশ্রী এবং রমা। ভিন্ন পটভূমি। দু’টি আলাদা গল্প যেন স্থান করে নিয়েছে এখানে। শেষটায় প্রথম পর্ব আবার ফিরে এলে হয়তো একটি গল্প হয়ে যেত, একটি যোগসূত্র স্থাপিত হতো। তবু বলা যায় বুনোটের খামতি নেই কোথাও। দ্বিতীয় গল্প - তাপসমানব। গ্রন্থনামও হতে পারত। বয়ানের কারিকুরিতে এগিয়েছে নিটোল ছন্দে আগাগোড়া। পথ চলার এক বৃত্তান্ত - আত্মকথন। তৃতীয় গল্প - সম্ভব নেহি। সবিস্তারে বর্ণিত একটি প্রতারণার কাহিনি। রিক্সাচালক কানাইয়ের প্রতারণার খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার বৃত্তান্ত। একটি বার্তা পৌঁছে যায় পাঠকের কাছে। এর পরের গল্প - একটি চুরির ঘটনা। গতানুগতিকতার বাইরে বেরিয়ে অসাধারণ একটি ‘মন চুরি’র গল্প। পড়ে যেতে হয়। পঞ্চম গল্প - অথ সঞ্জয় কথা। এটিও এক অসাধারণ গল্প। মহাভারতের সঞ্জয়ের সঙ্গে ব্যঞ্জনায় বিন্যস্ত এক বার্তাময় ছোটগল্প। পরের গল্প - প্রফুল্ল ‘স্বরনি’। সংলাপনির্ভর একটি চমৎকার গল্প। গল্পের শিরোনামের সঙ্গে গল্পের সামঞ্জস্য এক রূপকের সৃষ্টি করেছে। বাইরে থেকে দেখলে এই শিরোনাম যথার্থ নাও মনে হতে পারে। পরবর্তী গল্প - চাঁদ। দিনবদলের নস্টালজিয়া। বাস্তব প্রেক্ষিতে মূলস্রোত থেকে প্রজন্মের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বেদনা। অসাধারণ বুনোট। অষ্টম গল্প - রেজিগনেশান। রূঢ় বাস্তবের প্রেক্ষাপটে লিখা নিত্যদিনের মানসিক চাপের এক নিদর্শন। ছিমছাম বুনোট। পরের গল্প - নীল তিমির। শিশু মনস্তত্ত্বের উপর লিখা তথা সর্বনাশা দিনযাপনের এক ভয়ংকর বাস্তবের গল্প। বার্তা দিয়ে যায় পাঠকমনে। দশম গল্প - লোকটা। বিধ্বস্ত মনস্তত্ত্বের আরোও একটি সাজানো গোছানো গল্প। একাদশ গল্প - ঈশ্বরের থাকা, না থাকা। চমৎকার একটি ব্যঞ্জনাধর্মী গল্প। অস্তিত্বের চলমানতা নিয়ে বলা যায় এক ব্যতিক্রমী চিন্তাচর্চার ফসল এই গল্প। পরের গল্প - অনিকেত। একাকিত্বের বাস্তব পোস্টমর্টেম। এর পরের গল্প - তিমিরবরণ। স্থানিক গল্প। জঙ্গলবাসীর দুর্দশার নির্মম বাস্তব ফুটে উঠেছে দুরন্ত বুনোটে। এক পঠনে শেষ করতে হয় গল্প। চতুর্দশ গল্প - নিত্যানন্দের ছাতা। একটি বর্ণনাত্মক গল্প। অনেক কথাই লুকিয়ে আছে তবু যেন ‘ভরিল না চিত্ত’। কোথাও এক অতৃপ্তির সমাপন। শেষ গল্প - দশ নম্বর গল্প। করোনার আবহে এক হৃদয়বিদারক গল্প। নায়ক নিখিলেশ যেন আমাদেরই খুব কাছের এক চেনা চরিত্র। একাকিত্বের বেদনা ছড়িয়ে আছে গল্প জুড়ে।
গ্রন্থের প্রকাশক - চিন্তা, কোলকাতা। রঙিন প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদের সৌজন্যে রাজীব চক্রবর্তী। আগাগোড়া স্বচ্ছ ছাপাই ও শব্দ, অক্ষর বিন্যাস। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে লেখকের জীবনের ধ্রুবতারা তাঁর প্রিয়পরম-কে।
প্রতিটি গল্পের বিস্তার যেন এক ঘোরলাগা অনুভব। বয়ান ও বুনোট যেন গল্প পড়ার নেশা চাগিয়ে দেয় পাঠক মনে। ব্লার্বে বর্ণিত বয়ান অনুযায়ী গল্পসমূহের ভিতরে বাহুল্য নেই কোথাও, নেই ভাষা সাহিত্যের কারিকুরিও। তবু গল্প এগোয় আপন বৈশিষ্ট্যে। গভীর জীবনবোধের কথা পরতে পরতে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে এই গ্রন্থের সব ক’টি গল্পে।
এত বিশিষ্টতার মধ্যেও ছন্দপতন ঘটে বানান ভুলের আধিক্যে। ভেবে অবাক হতে হয় যে বাংলার তথাকথিত ঋদ্ধ ভুবন কোলকাতার একটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত একটি গ্রন্থে কী করে এত এত বানান ভুল থাকতে পারে। পরবর্তীতে এদিকটায় অধিকতর যত্নবান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বইকী।
- বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
‘নিত্যানন্দের ছাতা’
অমিতাভ সেনগুপ্ত
মূল্য - ৩৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৭০০২২৩০৪৩০
অমিতাভ সেনগুপ্ত
মূল্য - ৩৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৭০০২২৩০৪৩০
'নিত্যানন্দের ছাতা ' গল্প গ্রন্থটির একটি সুন্দর যত্নশীল নিটোল আলোচনার জন্য আমার আন্তরিক ধন্যবাদ । সাহিত্যিক বিদ্যুৎ চক্রবর্তির কাছে আমি কৃতজ্ঞ সেই সঙ্গে।
ReplyDelete🙏🙏
Deleteএই আলোচনায় আমি ঋদ্ধ হলাম আর আমাকে আপনার ব্লগে স্থান দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ
ReplyDeleteসুন্দর আলোচনা
Delete