মানুষ জন্মের পর থেকেই দেখে ও শুনে
শেখে এবং জগৎটাকে চেনে। পড়ে শেখার ব্যাপারটা আসে বহু পরে। সেই হিসেবে চেনা-জানার কিংবা বলা যায়
শেখানো-জানানোর মুখ্য তথা প্রাথমিক মাধ্যম হচ্ছে চাক্ষুষ অর্থাৎ
দৃষ্টি-শ্রবণসম্বন্ধীয় প্রদর্শন। তাই তো যুগ যুগ ধরে বয়োজ্যেষ্ঠদের
থেকে কথা ও কাহিনি শুনে শুনে এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে চাক্ষুষ দেখে দেখেই ব্যক্তির
জীবনবোধের শিক্ষালাভ সম্ভব হয়ে আসছে। প্রথাগত প্রাথমিক শিক্ষালাভ অবিহনেও
তাই একজন মানুষ জীবনের বাস্তব শিক্ষা থেকে জ্ঞানলাভ করে আয়েসে না হলেও অনায়াসে কাটিয়ে
দিতে পারেন জীবৎকাল। সুতরাং শ্রবণ-দর্শনের একীভূত মাধ্যম একজন মানুষের জীবনে যে
প্রদান করে এক অমূল্য অবদান তাতে কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়।
প্রাচীন কাল থেকেই তাই সমবেত দর্শক শ্রোতার সামনে পরিবেশিত হয়ে চলেছে এমন প্রদর্শন যার মাধ্যমে অশিক্ষিত লোকেদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত বার্তা। যাত্রা, নাটক, থিয়েটার, চলচ্চিত্র, দূরেক্ষণ, দূরসঞ্চার আদি এমনই এক একটি শিল্পমাধ্যম। ভারতে ভরতের নাট্যশাস্ত্র কয়েক হাজার বছর আগেই নাট্যশাস্ত্র অর্থাৎ নাটকের দিশা নির্দেশ করে নাট্যমাধ্যমকে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। যুগ যুগ ধরে নাটক তাই পরিবেশ ও পারিপার্শিকতার উপর নির্ভর করে জনমানসে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারতেও রয়েছে নাটকের এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। যুগোপযোগী নাটক তাই শ্রোতা-দর্শকদের কাছে এক নিরন্তর আকর্ষণ হয়ে আছে। বহু কালজয়ী নাটক ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ঋদ্ধ করেছে। কালজয়ী নাট্যকার, অভিনেতা, পরিচালকরাও স্বমহিমায় হয়ে আছেন চির ভাস্বর।
এ অঞ্চলের প্রসিদ্ধ নাট্যকার শেখর দেবরায় সম্প্রতি লিখেছেন লোকঐতিহ্য আশ্রিত দু’টি নাটক ‘মনসাকথা’ ও ‘রইদ রাজার কিচ্ছা’। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব মলয় দেব সম্পাদনা করেছেন এই দুটি নাটকের সংকলন গ্রন্থ। ভূমিকাতে নাটকের সেকাল ও একাল নিয়ে বিস্তৃত লিখেছেন গ্রন্থকার। সংকলনের রয়েছে স্পষ্ট চারটি ভাগ। দুটি নাটক এবং তার উৎস।
প্রথমোক্ত ‘মনসাকথা’ নাটকটির উৎস হচ্ছে বিশিষ্ট লোকগবেষক অমলেন্দু ভট্টাচার্যের ‘মনসামঙ্গল কাব্য - নাগ ঐতিহ্যের প্রেক্ষাপটে’ এবং দ্বিতীয়োক্ত ‘রইদ রাজার কিচ্ছা’ নাটকটির উৎস হচ্ছে শ্যামানন্দ চৌধুরী সংগৃহীত এবং ‘সংবর্ত’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘রইদ রাজার কিচ্ছা’র উপর আধারিত বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতিবিদ দিব্যজ্যোতি মজুমদারের প্রবন্ধ ‘সমাজবিজ্ঞানের নিরিখে একটি লোককথা’। পরিশিষ্ট হিসেবে উভয় রচনাই সন্নিবিষ্ট হয়েছে গ্রন্থে - তবে নাটকের সঙ্গে ক্রম মেনে নয়, বিপরীত ক্রমে। সরাসরি নাটকে প্রবেশ না করে পরিশিষ্টের অগ্রিম পঠন, শেখরের নাটক দুটির রস অধিক আস্বাদনের সহায়ক হবে নিশ্চিত।
শেখর দেবরায়ের নাটক সততই এক ভিন্ন মাত্রাধর্মী। এখানেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এ বিষয়ে ভূমিকায় বিস্তৃত লিখেছেন গ্রন্থকার মলয় দেব - ‘মনসামঙ্গল সর্পদেবীর মাহাত্ম্যজ্ঞাপক কাব্য, এই প্রচলিত ব্যাখ্যা থেকে সরে এসে নাট্যকার তাঁর নাটকে চাঁদ ও মনসার দ্বন্দ্বকে নিম্নবর্গীয় মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ...... দ্বিতীয় নাটক ‘রইদ রাজার কিচ্ছা’য় প্রচলিত ব্রতকথার উদভাসন ঘটিয়েছেন নাট্যকার - সমাজজিজ্ঞাসায় এবং উপস্থাপন রীতিতে।’
উভয় নাটকের মঞ্চায়নের স্বার্থে নাট্যকার শেখর দেবরায় একদিকে যেমন মঞ্চসজ্জা, দৃশ্যান্তর-বিরতি, আলো এবং যন্ত্রানুষঙ্গের সম্যক ধারণা দিয়ে রেখেছেন, অপরদিকে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পরিচালক/অভিনেতাদের উপরও দিয়েছেন স্বাধীনতা। ‘মনসাকথা’ নাটকে নাট্যকার সূত্রধার হিসেবে ওঝার গানের গায়েনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ করিয়ে বিশেষ পোশাক ও বাদ্যযন্ত্র পাখোয়াজের ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। গোটা নাটকে ব্যবহৃত হয়েছে একাধিক গান। বন্দনা সংগীত, ভাটিয়ালি, সারি গানের অন্তর্ভুক্তি নাটকটিকে সাংস্কৃতিক মর্যাদায় অভিষিক্ত করবে নিশ্চিত। সংলাপে, উপস্থাপনায় নাট্যকারের উদ্দেশ্য যথাযথভাবে পরিস্ফুট হয়েছে নাটকে। উপযুক্ত অভিনয় ও পরিচালনার গুণে নাটকটি এক মঞ্চসফল উপস্থাপনা হিসেবে চিহ্নায়িত হবে বলে আশা করা যেতেই পারে।
‘রইদ রাজার কিচ্ছা’ নাটকটির মূল প্লট অত্যন্ত সুন্দর। তবে নাটকে উপযুক্ত পরিবেশ রচনার কাজটি খুব সহজ হয়তো হবে না। তবে এখানেও উপযুক্ত ব্যঞ্জনা ও প্রতীকের ব্যবহার সম্পর্কিত নির্দেশনাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই নাটকটিও মঞ্চায়নের পর এক শৈল্পিক কৃতকার্যতার প্রতীক হয়ে থাকবে অবধারিতভাবেই।
ভিন্ন ভাবনা, ভিন্ন চিন্তার মাধ্যমে কাহিনি, কিচ্ছার পুনর্নির্মাণ ও বিনির্মাণই আজকের নাটকের মূল কথা। এখানেই নাট্যকারের সাফল্য নির্ভর করে। একটি নাটক পড়া ও নাটক দেখা বা অভিনয় করার মধ্যে বহু পার্থক্য। নাটক পড়ে তাই তার আলোচনায় শুধু বাহ্যিক সম্ভাবনার কথাই অনুমান করা যেতে পারে। এর বেশি নয়।
গ্রন্থের প্রাসঙ্গিক ও প্রতীকী প্রচ্ছদ সৌজন্যে সুকান্ত ঘোষ। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে ক্ষীরোদ চন্দ্র দেব ও উপেন্দ্র কুমার করকে। বর্ণনাত্মক নামের বিপরীতে দুটি নাটকের একীকৃত ভাবধারা সম্বলিত একটি সংযুক্ত গ্রন্থনাম অথবা অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত গ্রন্থনাম সংকলনটির এক সহজ পরিচায়ক হয়ে উঠতে পারত। ১২৪ পৃষ্ঠার পেপারব্যাক সংকলনের ছাপাই স্পষ্ট, বর্ণ সংস্থাপনও যথাযথ। দু’একটি ছাপার ভুলের বাইরে এক পরিপাটি নাট্য-সংকলন।
প্রাচীন কাল থেকেই তাই সমবেত দর্শক শ্রোতার সামনে পরিবেশিত হয়ে চলেছে এমন প্রদর্শন যার মাধ্যমে অশিক্ষিত লোকেদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত বার্তা। যাত্রা, নাটক, থিয়েটার, চলচ্চিত্র, দূরেক্ষণ, দূরসঞ্চার আদি এমনই এক একটি শিল্পমাধ্যম। ভারতে ভরতের নাট্যশাস্ত্র কয়েক হাজার বছর আগেই নাট্যশাস্ত্র অর্থাৎ নাটকের দিশা নির্দেশ করে নাট্যমাধ্যমকে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। যুগ যুগ ধরে নাটক তাই পরিবেশ ও পারিপার্শিকতার উপর নির্ভর করে জনমানসে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারতেও রয়েছে নাটকের এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। যুগোপযোগী নাটক তাই শ্রোতা-দর্শকদের কাছে এক নিরন্তর আকর্ষণ হয়ে আছে। বহু কালজয়ী নাটক ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ঋদ্ধ করেছে। কালজয়ী নাট্যকার, অভিনেতা, পরিচালকরাও স্বমহিমায় হয়ে আছেন চির ভাস্বর।
এ অঞ্চলের প্রসিদ্ধ নাট্যকার শেখর দেবরায় সম্প্রতি লিখেছেন লোকঐতিহ্য আশ্রিত দু’টি নাটক ‘মনসাকথা’ ও ‘রইদ রাজার কিচ্ছা’। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব মলয় দেব সম্পাদনা করেছেন এই দুটি নাটকের সংকলন গ্রন্থ। ভূমিকাতে নাটকের সেকাল ও একাল নিয়ে বিস্তৃত লিখেছেন গ্রন্থকার। সংকলনের রয়েছে স্পষ্ট চারটি ভাগ। দুটি নাটক এবং তার উৎস।
প্রথমোক্ত ‘মনসাকথা’ নাটকটির উৎস হচ্ছে বিশিষ্ট লোকগবেষক অমলেন্দু ভট্টাচার্যের ‘মনসামঙ্গল কাব্য - নাগ ঐতিহ্যের প্রেক্ষাপটে’ এবং দ্বিতীয়োক্ত ‘রইদ রাজার কিচ্ছা’ নাটকটির উৎস হচ্ছে শ্যামানন্দ চৌধুরী সংগৃহীত এবং ‘সংবর্ত’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘রইদ রাজার কিচ্ছা’র উপর আধারিত বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতিবিদ দিব্যজ্যোতি মজুমদারের প্রবন্ধ ‘সমাজবিজ্ঞানের নিরিখে একটি লোককথা’। পরিশিষ্ট হিসেবে উভয় রচনাই সন্নিবিষ্ট হয়েছে গ্রন্থে - তবে নাটকের সঙ্গে ক্রম মেনে নয়, বিপরীত ক্রমে। সরাসরি নাটকে প্রবেশ না করে পরিশিষ্টের অগ্রিম পঠন, শেখরের নাটক দুটির রস অধিক আস্বাদনের সহায়ক হবে নিশ্চিত।
শেখর দেবরায়ের নাটক সততই এক ভিন্ন মাত্রাধর্মী। এখানেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এ বিষয়ে ভূমিকায় বিস্তৃত লিখেছেন গ্রন্থকার মলয় দেব - ‘মনসামঙ্গল সর্পদেবীর মাহাত্ম্যজ্ঞাপক কাব্য, এই প্রচলিত ব্যাখ্যা থেকে সরে এসে নাট্যকার তাঁর নাটকে চাঁদ ও মনসার দ্বন্দ্বকে নিম্নবর্গীয় মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ...... দ্বিতীয় নাটক ‘রইদ রাজার কিচ্ছা’য় প্রচলিত ব্রতকথার উদভাসন ঘটিয়েছেন নাট্যকার - সমাজজিজ্ঞাসায় এবং উপস্থাপন রীতিতে।’
উভয় নাটকের মঞ্চায়নের স্বার্থে নাট্যকার শেখর দেবরায় একদিকে যেমন মঞ্চসজ্জা, দৃশ্যান্তর-বিরতি, আলো এবং যন্ত্রানুষঙ্গের সম্যক ধারণা দিয়ে রেখেছেন, অপরদিকে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পরিচালক/অভিনেতাদের উপরও দিয়েছেন স্বাধীনতা। ‘মনসাকথা’ নাটকে নাট্যকার সূত্রধার হিসেবে ওঝার গানের গায়েনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ করিয়ে বিশেষ পোশাক ও বাদ্যযন্ত্র পাখোয়াজের ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। গোটা নাটকে ব্যবহৃত হয়েছে একাধিক গান। বন্দনা সংগীত, ভাটিয়ালি, সারি গানের অন্তর্ভুক্তি নাটকটিকে সাংস্কৃতিক মর্যাদায় অভিষিক্ত করবে নিশ্চিত। সংলাপে, উপস্থাপনায় নাট্যকারের উদ্দেশ্য যথাযথভাবে পরিস্ফুট হয়েছে নাটকে। উপযুক্ত অভিনয় ও পরিচালনার গুণে নাটকটি এক মঞ্চসফল উপস্থাপনা হিসেবে চিহ্নায়িত হবে বলে আশা করা যেতেই পারে।
‘রইদ রাজার কিচ্ছা’ নাটকটির মূল প্লট অত্যন্ত সুন্দর। তবে নাটকে উপযুক্ত পরিবেশ রচনার কাজটি খুব সহজ হয়তো হবে না। তবে এখানেও উপযুক্ত ব্যঞ্জনা ও প্রতীকের ব্যবহার সম্পর্কিত নির্দেশনাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই নাটকটিও মঞ্চায়নের পর এক শৈল্পিক কৃতকার্যতার প্রতীক হয়ে থাকবে অবধারিতভাবেই।
ভিন্ন ভাবনা, ভিন্ন চিন্তার মাধ্যমে কাহিনি, কিচ্ছার পুনর্নির্মাণ ও বিনির্মাণই আজকের নাটকের মূল কথা। এখানেই নাট্যকারের সাফল্য নির্ভর করে। একটি নাটক পড়া ও নাটক দেখা বা অভিনয় করার মধ্যে বহু পার্থক্য। নাটক পড়ে তাই তার আলোচনায় শুধু বাহ্যিক সম্ভাবনার কথাই অনুমান করা যেতে পারে। এর বেশি নয়।
গ্রন্থের প্রাসঙ্গিক ও প্রতীকী প্রচ্ছদ সৌজন্যে সুকান্ত ঘোষ। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে ক্ষীরোদ চন্দ্র দেব ও উপেন্দ্র কুমার করকে। বর্ণনাত্মক নামের বিপরীতে দুটি নাটকের একীকৃত ভাবধারা সম্বলিত একটি সংযুক্ত গ্রন্থনাম অথবা অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত গ্রন্থনাম সংকলনটির এক সহজ পরিচায়ক হয়ে উঠতে পারত। ১২৪ পৃষ্ঠার পেপারব্যাক সংকলনের ছাপাই স্পষ্ট, বর্ণ সংস্থাপনও যথাযথ। দু’একটি ছাপার ভুলের বাইরে এক পরিপাটি নাট্য-সংকলন।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
মূল্য - ২০০ টাকা
প্রকাশক - গুটেনবার্গ, কলকাতা
যোগাযোগ - ৯৪০১৭৪৭৫৭০
প্রকাশক - গুটেনবার্গ, কলকাতা
যোগাযোগ - ৯৪০১৭৪৭৫৭০
Comments
Post a Comment