Skip to main content

খুশিতে বুকের ভেতর দ্রিমি দ্রিমি মাদলের তান...... 'কবিতার শব্দ ছুঁয়ে'


ব্লার্বগুলো খালি যদিও স্বল্প কথায় প্রাসঙ্গিক এক ভূমিকা লিখেছেন কবি জয়ন্তী দত্ত সেখান থেকেই জানা যায় - ‘এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ টি বই প্রকাশ করেছেন কোলকাতা সাহিত্য একাডেমি থেকে গল্পকার হিসেবেও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত……কবি শিবানী গুপ্তের আলোচ্য কাব্যগ্রন্থকবিতার শব্দ ছুঁয়েপ্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি গ্রন্থের শেষ প্রচ্ছদে তিনি লিখছেন - ‘কবিতার শব্দ ছুঁয়েকাব্যগ্রন্থটি আমার সপ্তদশ রচনা ইতিমধ্যেই আমার গল্প গ্রন্থ - কর্ডলেস, পঞ্চতপা, একটু তৃষ্ণার জল, ছড়া গ্রন্থ - ফুল কুঁড়ি, প্রবন্ধ গ্রন্থ - আলোর রোশনাই, সিলেটি কাব্যগ্রন্থ - সিলেটি বারোমজা, একটি লিমেরিক ও দুটি পঞ্চবাণ কাব্যগ্রন্থ এবং অণু কবিতা গ্রন্থ - অণু কবিতার অঞ্জলি প্রকাশিত হয়েছে
সার্বিক সাহিত্য নিয়ে এই বিশাল কর্মকাণ্ডের শেষতম প্রকাশ আলোচ্য কাব্যগ্রন্থটি সম্ভবত এটিই তাঁর পৃষ্ঠাজোড়া বা পৃষ্ঠা পেরোনো কবিতার প্রথম সংকলন দীর্ঘ দিন ধরে কবিতা লিখে চলেছেন শিবানী এতদিন ধরে লিখে গেলে যে কারোরই লেখার ধাঁচ, মান, শৈলী পালটায় সেই পরিবর্তনের ধারা মেনেই আলোচ্য কাব্যগ্রন্থে সন্নিবিষ্ট কবিতাগুলি কবির পূর্ববর্তী কবিতাসমূহ থেকে এক আলাদা রূপ পরিগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছে সার্থক আধুনিক কবিতা বা বর্তমানের কাব্যধারার সমসাময়িক হয়ে না উঠলেও সেই পথে যে অগ্রসর হচ্ছে তার আভাস পাওয়া যায় গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট কবিতাগুলি পাঠ করলে সব থেকে উল্লেখযোগ্য যে কথাটি তা হল গ্রন্থ নাম, কবিতার ধারা ও প্রচ্ছদ এখানে মিলেমিশে যেন একাকার হয়ে গেছে এত আক্ষরিক, এত মানানসই প্রচ্ছদ খুব কমই চোখে পড়ে শিবানীর অধিকাংশ কবিতাতেই তিনি ছুঁয়ে গেছেন কবিতার শব্দকে যা হয়তো আকাশের কোনও এক অজানা কোণ থেকে বারিধারার মতোই এসে ধরা দিয়েছে তাঁর মননে এবং সেই শব্দসমূহকে আলতো হাতের ছোঁয়ায় তিনি কবিতাবদ্ধ করেছেন পরম যতনে
৭২ পৃষ্ঠার আলোচ্য গ্রন্থের ৬৪ পৃষ্ঠা জুড়ে আছে মোট ৫৮ টি কবিতা প্রথমেই আছে গ্রন্থনামের কবিতা - ‘কবিতার শব্দ ছুঁয়ে কাব্য-কল্পনায় বিভোর কবি এই কবিতার শেষ দুলাইনে লিখছেন -
আমি ব্যাকুল উৎসাহে হাত বাড়াই -
কিছু অমূল্য কবিতার শব্দকে ছুঁয়ে দেখার দুর্নিবার পিপাসায় -
কবি, চিত্রশিল্পী ছন্দা দামের প্রচ্ছদে যেন উঠে এসেছে এই দুটি পঙ্ক্তিই এবং এই পিপাসার বার্তা তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন পরবর্তী একাধিক কবিতায় সার্বিক ভাবে তাই বলতে হয় এই গ্রন্থটি প্রকৃত অর্থেই এক কাব্যপিপাসুর কবিতা-সাধনার ফল বহু কবিতা আছে এখানে যা শুধু কবিতাকে নিয়েই লেখা সাথে এসেছে দীর্ঘ পথ চলার অনুভব, অনুভূতি এসেছে নারী, বসন্ত, অভিমান আর বৃষ্টিধারার মতো ভালোবাসার কবিতারা ফাগুন, বসন্ত, কৃষ্ণচূড়া, কবির শহর ছুঁয়ে প্রবাহিত কুশিয়ারার আবহ তাই নির্মোহ সংলাপে ভেসে আসে কবিতার অবয়ব ধরে -
তোমার মনে আছে উদয়শংকর
সাঁঝের আবির-মাখা কৃষ্ণচূড়া স্মৃতিকথা ?     
কুশিয়ারা এখনো তেমনি
স্রোতস্বিনী,
এপারে - নদীতীরে কৃষ্ণচূড়া গাছের
নীচে কতো কতো স্মৃতিমুখর সন্ধ্যা
মনে পড়ে ?
 
তুমি থাকতে ওপারে -
আর, আমি এপারে
ফাল্গুনি বসন্তে কৃষ্ণচূড়ার নীচে
অধীর প্রতীক্ষায় চোখ ওপারে
 
আজো, কৃষ্ণচূড়ার আগুন-রাঙা ফুল বাতাসে ওড়ে গিয়ে
ঝরে পড়ে কুশিয়ারার বুকে
ঠিক তেমনিযেমন আমি… (কবিতা - ফাল্গুনি বসন্তে)
কবি কেমন ? আসলে আদ্যোপান্ত এক কবিতার উপাসক কবি নিজেকে নানা চরিত্র হয়ে বিলিয়ে দিতে ভালোবাসেন কবিতার শরীরে, কবিতাকে আবাহন করে কবিতার পঙ্ক্তিকেই তাই কবির আবাহন -
মনের অর্গল দিয়েছি খুলে
অবারিত প্রবেশ করুক অযুত পঙ্ক্তিমালা,
আমার পরবাসী মনমনে ফিরুক
জীবন ফিরুক জীবনে… (কবিতা - আবিষ্কার)
বিশেষ কিছু কবিতা, কিছু পঙ্ক্তি তাই এই আবিষ্কারের ধারা মেনেই সোচ্চার হয়ে ওঠে কবিতায় যেমনএক চিলতে আকাশ’, ‘হারিয়ে যেতে নেই মানা’, ‘অপু, দুর্গা ও আমি’, ‘আমি সেই নীলাকাশ হতে চাই’, ‘ও মেয়ে তুই বহ্নিশিখা হয়ে ওঠ’, ‘রাইকিশোরীর তিন খণ্ডের উপন্যাস’, ‘পৃথিবীর মর্মব্যথা’, ‘বসন্ত এল ফাগুনের খামেএবং আরোও বেশ কিছু কবিতায় শব্দেরা ঢেউ তোলে ভাবনাবিলাসে -
সেই তো - মোরগ ডাকা ভোরে
হা-পিত্যেশ তড়াস করে
চোখ কচলে রাতসোহাগী ঝপাৎ করে পুকুরজলে -
তারপর তোরোজনামচা একঘেয়েমির লেবেল সাঁটা !
গাঁয়ের বউ-ঝিদের তো ওইএকচিলতেপুকুরঘাটে
মুক্তক্ষণেরমুক্ত আকাশ কলসি কাঁখে…. ছলাৎছল…. (কবিতা - এক চিলতে আকাশ)
 
স্কলার পাবলিকেশনস, করিমগঞ্জ থেকে প্রকাশিত গ্রন্থের ছাপা, বাঁধাই যথাযথ মানের অক্ষর, শব্দ বিন্যাসও স্পষ্ট গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে কবিরআত্মজা দেবযানী দাস ও আত্মজ দীপব্রত দাসকে কিছু বানান ভুল ও কিছু পুরোনো ধাঁচের শব্দক্ষেপণের বাইরে সার্বিক এক ভালোলাগা বোধের কাব্য সংকলন - ‘কবিতার শব্দ ছুঁয়ে

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ২০০ টাকা
যোগাযোগ - ৭০০২৮০১৪৮৮ 

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়

নান্দনিক ও গোছালো আয়োজন দ্বিতীয় সংখ্যা ‘সম্পর্ক’

‘…বলা যায়, একটি বই-ই পারে গোটা বিশ্বের কিছু জীর্ণ প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিতে। বইয়ের এই অমোঘ শক্তি সর্বজনবিদিত। বেদের ঋষি থেকে শুরু করে সমকালীন সময়ের অনেক লেখক তাঁদের সৃষ্টিসম্ভার দিয়ে কিছু প্রচলিত ধারণাকে সময়ে সময়ে বদলে দিয়ে এক নতুন পথের সন্ধান দিতে সক্ষম হয়েছেন। বই পড়ার মধ্যে রয়েছে এক অপার্থিব আনন্দ। বই আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত করে। এই যান্ত্রিকতার যুগে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে বিচলিত মানুষের বইয়ের প্রতি রয়েছে অকৃত্রিম টান। আজকের সামাজিক মাধ্যমের বাড়বাড়ন্ত অবস্থায় বই পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেলেও, বই প্রকাশের কাজটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। বরং পূর্বের তুলনায় তা অনেকটাই বেড়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে পাঠকের সংখ্যা বই প্রকাশের তুলনায় তেমন হারে বৃদ্ধি পায়নি। এই পাঠক সংকট বিশ্বব্যাপী…।’ - এমনই কিছু মূল্যবান তত্ত্ব ও তথ্যের সমাহারে এক প্রাসঙ্গিক সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের মধ্য দিয়েই শ্রীগণেশ হল বাংলা সাহিত্য সভা, অসমের লংকা শাখার দ্বিতীয় বার্ষিক মুখপত্র, বিশ্ব বই দিবস সংখ্যা ‘সম্পর্ক’ -এর । সৌরভ চৌধুরীর নান্দনিক প্রচ্ছদটি প্রথমেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে পাঠকের। এবং এই নান্দনিকতা ছড়িয়ে আছে শেষ পৃষ্ঠা অবধি