Skip to main content

ষোড়শবর্ষীয় পারিপাট্যে ‘স্বরিত’ - ষোড়শ সংখ্যা


নিয়ম মেনে বিশ্ব কবিতা দিবসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই করিমগঞ্জ থেকে কবি, লেখক নারায়ণ মোদক ও গৌতম চৌধুরীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হল সাহিত্য পত্রিকা ‘স্বরিত’-এর ষোড়শ সংখ্যা। ১০৮ পৃষ্ঠার পত্রিকাটির প্রচ্ছদ দেখলেই মনে হবে সংখ্যাটি নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতি বিষয়ক। ‘আমাদের কথা’ শীর্ষক সম্পাদকীয় পাঠের শুরুতেই এর যাথার্থ্য প্রতিপন্ন হয়। সংক্ষিপ্ত সম্পাদকীয়তে বলা হচ্ছে - ‘আমার ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি আমাকেই বহন করতে হবে। তাকে পুষ্ট করতে যতটুকু প্রয়োজন তার থেকেও বেশি জোগান দিতে হবে। তবেই আমার ভাষা সংস্কৃতি কৃষ্টি বেঁচে থাকবে। পৃথিবীর যত ভাষা আছে তার প্রথম শর্তটি এটি। তার চলনে বলনে সাহিত্যে নিজের প্রাধান্য দিতে পারলেই জগতে নিজের এবং প্রতিটি ভাষা সংস্কৃতি বেঁচে থাকবে…।’ এমন বয়ানে এ অঞ্চলের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার প্রয়াস নিয়েই ‘স্বরিত’-এর প্রকাশ ও পথ চলা। এমন প্রত্যয় ও গরজই প্রকাশ পেয়েছে সম্পাদকীয়তে।
প্রতিবারের মতোই এ অঞ্চলের এবং এর বাইরেরও একগুচ্ছ কবিতা, অণুগল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধে সজ্জিত হয়েছে সংখ্যাটি। কবি-লেখকের নির্বাচনে কিছু ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়েছে এবার। নিয়মিত লেখকদের অনেকেই অনুপস্থিত এবার। কিছু নতুন সংযোজনও স্বভাবতই লক্ষ করা গেছে। একবার দেখে নেয়া যাক পাতা উলটে। সব মিলিয়ে রয়েছে চারটি প্রবন্ধ-নিবন্ধ, তিনটি অণুগল্প, একটি গদ্য কবিতা, একটি গদ্যাংশ এবং ৬১ টি কবিতা।
অমিত চট্টোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ ‘রামকৃষ্ণ সারদা বিবেকানন্দ - ত্রয়ীর আন্তঃসম্পর্ক’ এক সুখপাঠ্য রচনা। সাধারণ কথার মধ্যে নিবন্ধকার ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন এক অসাধারণ ভাবনা যা নাড়িয়ে দেয় পাঠকের অনুভূতিকে। মন্টু দাসের লোকসংস্কৃতি বিষয়ক প্রবন্ধ ‘ডরাই বিষহরি পূজা ও গুরমার নাচ’ এক সার্বিক অনুসন্ধানমূলক রচনা। এ সংখ্যার অন্যতম সম্পদ। নির্মাল্য দাসের স্মৃতিচারণমূলক নিবন্ধ ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে জননেতা নলিনীকান্ত দাস’ এক তথ্যবহুল প্রাসঙ্গিক রচনা। বহু অজানা তথ্য হয়তো উন্মোচিত হবে নস্টালজিক পাঠকের চোখের সামনে। ড. গীতা সাহার নিবন্ধ ‘বাংলার লোকসাহিত্যে কাকের উপস্থিতি’ আরেকটি তথ্যে ভরপুর সরস রচনা। অসংখ্য উদাহরণ, প্রবাদ বাক্য, শ্লোকের ব্যবহারে সমৃদ্ধ হয়েছে এই কাক-পুরাণ। তবে বিপদগ্রস্ততায় কাক সমাজের একজোট হওয়ার বিষয়টি এখানে অনুল্লেখিত রয়ে গেছে।
চান্দ্রেয়ী দেব-এর অণুগল্প ‘জন্মদিন’। ভালো প্লট। বুনোটও ভালো। একটি বার্তা আছে গল্পটিতে। বানান ভুলের আধিক্য রয়েছে যার দায় বহু জনের। দেবলীনা সেনগুপ্তের অণুগল্প ‘আঁশটে’। সুচিন্তিত শিরোনাম এবং বিষয়। নারী জীবনের ভিন্নতর অসহায়তার চিত্র। ‘অপূর্ণ স্বপ্ন’ - শঙ্করী চক্রবর্তীর অণুগল্প। আবেগপূর্ণ গল্প। বেশ কিছু শব্দে ‘র’ ও ‘ড়’-এর বিড়ম্বনা প্রত্যক্ষ করা গেছে। আশুতোষ দাসের গদ্য কবিতা ‘কিছু কথা বলা যাবে না’ ভিন্নধর্মী আত্মকথন। মুক্তগদ্য ‘স্বদেশ’। লেখক গোপাল চক্রবর্তী। ব্যতিক্রমী ভাষা ও সাহিত্যমানসম্পন্ন রচনা। গীতা মুখার্জির আধ-পৃষ্ঠার রচনা ‘স্বপ্ন হলেও সত্যি’কে বিভাগভুক্ত করা গেল না। স্বপ্নেরই মতো ধোঁয়াশায় আবৃত একটি গদ্যাংশ।
কিছু কবিতা বিশেষোল্লেখে রাখতে হয়। এ পর্বে রয়েছে সুদীপ ভট্টাচার্য, মীনাক্ষি চক্রবর্তী সোম, জ্যোতির্ময় রায়, ছন্দা দাম, আদিমা মজুমদার, সুবল চক্রবর্তী, বিমলেন্দু চক্রবর্তী, জাহিদ রুদ্র, অনুপ কুমার বনিক, অভিষেক সেন, মাধব ঘোষ, শতদল আচার্য, দীপক হোমচৌধুরী, বিধানেন্দু পুরকাইত ও পার্থ বসুর কবিতা। এছাড়াও ভালো কবিতা লিখেছেন - পরিমল কর্মকার, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, বাহারুল ইসলাম, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, নিবারণ নাথ, শিবানী গুপ্ত, শিখা দাশগুপ্ত, আশিসরঞ্জন নাথ, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, শিপ্রা শর্মা (মহন্ত), ঋতা চন্দ, মাধবী শর্মা, রাজকুমার ধর, রতন চন্দ, প্রিন্স দে, পূর্ণিমা রানী দে, শুক্লা মিশ্র, জয়িতা চক্রবর্তী, নির্মল দেবনাথ, প্রতিমা শুক্লবৈদ্য, শান্তনু মজুমদার, রাহুল নাগ শাস্ত্রী, অরূপ কুমার ভূঞা, সোনালী গোস্বামী, সুমি দাস, সুচরিতা সিংহ, ডালিয়া সিংহ, বন্দনা সেনগুপ্ত, ড. শমিতা ভট্টাচার্য, নারায়ণ মোদক, মণিকা বড়ূয়া, সীমা ঘোষ, মাশুক আহমেদ, ড. কস্তুরী হোমচৌধুরী, শ্রাবণী সরকার, শঙ্করীপ্রভা আচার্য, ডা. প্রদীপ দে, সমীরণ চক্রবর্তী, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, সুকন্যা চৌধুরী, সৌমিত্র পাল, সন্তোষ কুমার দত্ত, শুক্লা চন্দ, শিপ্রা পুরকায়স্থ, গৌতম চৌধুরী ও ধ্রুবজ্যোতি দাস।
কাগজের মান, ছাপা, বাঁধাই চলনসই। অক্ষর ও শব্দ বিন্যাস যথাযথ। ‘রবিবারের সাহিত্য আড্ডার শরিকবৃন্দ’ কর্তৃক প্রকাশিত এবং স্কলার পাবলিকেশনস, করিমগঞ্জ থেকে মুদ্রিত আলোচ্য সংখ্যাটি পূর্ববর্তী সংখ্যাসমূহের তুলনায় অনেকটাই উন্নত মানের হলেও উত্তরণের অধিক সুযোগ রয়েছে বলে মনে হয়। তবু বলা যায় এবারের সংখ্যাটি ষোড়শবর্ষীয় পারিপাট্যে অনেকটাই পরিণতবয়স্ক হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদকদ্বয়ের নিরলস আয়োজন বৃথা হবার নয়।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭৬০৬৯

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়

নান্দনিক ও গোছালো আয়োজন দ্বিতীয় সংখ্যা ‘সম্পর্ক’

‘…বলা যায়, একটি বই-ই পারে গোটা বিশ্বের কিছু জীর্ণ প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিতে। বইয়ের এই অমোঘ শক্তি সর্বজনবিদিত। বেদের ঋষি থেকে শুরু করে সমকালীন সময়ের অনেক লেখক তাঁদের সৃষ্টিসম্ভার দিয়ে কিছু প্রচলিত ধারণাকে সময়ে সময়ে বদলে দিয়ে এক নতুন পথের সন্ধান দিতে সক্ষম হয়েছেন। বই পড়ার মধ্যে রয়েছে এক অপার্থিব আনন্দ। বই আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত করে। এই যান্ত্রিকতার যুগে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে বিচলিত মানুষের বইয়ের প্রতি রয়েছে অকৃত্রিম টান। আজকের সামাজিক মাধ্যমের বাড়বাড়ন্ত অবস্থায় বই পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেলেও, বই প্রকাশের কাজটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। বরং পূর্বের তুলনায় তা অনেকটাই বেড়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে পাঠকের সংখ্যা বই প্রকাশের তুলনায় তেমন হারে বৃদ্ধি পায়নি। এই পাঠক সংকট বিশ্বব্যাপী…।’ - এমনই কিছু মূল্যবান তত্ত্ব ও তথ্যের সমাহারে এক প্রাসঙ্গিক সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের মধ্য দিয়েই শ্রীগণেশ হল বাংলা সাহিত্য সভা, অসমের লংকা শাখার দ্বিতীয় বার্ষিক মুখপত্র, বিশ্ব বই দিবস সংখ্যা ‘সম্পর্ক’ -এর । সৌরভ চৌধুরীর নান্দনিক প্রচ্ছদটি প্রথমেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে পাঠকের। এবং এই নান্দনিকতা ছড়িয়ে আছে শেষ পৃষ্ঠা অবধি