সপ্তমী
অনাদি অতীত ও অনন্ত ভবিষ্যৎ যত বড়োই হোক, তবু মানুষের কাছে এক মুহূর্তের বর্তমান তাহার চেয়ে ছোটো নয় - - - - - (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।
আসলে এই এক মুহূর্তের বর্তমান নিয়েই তো আমাদের বেঁচে থাকা। নাহলে আমাদের মতো আটপৌরে মানুষদের মরা বাঁচায় এই বিশাল ধরিত্রীর কী আসে যায় ?
পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার গড়ে 0.1% মানুষই শুধু জীবনে কিছু একটা ছাপ রেখে যেতে সমর্থ হোন। 99.9% এর মধ্যে থেকে আমরা কোনও ছাপটাপ রাখি না, বরঞ্চ ছাপোষা হয়েই কাটিয়ে দেই আমাদের জীবন জোড়া বিন্দাস বর্তমান।
জীবনের এক একটা সময়কালের অনুভবের গ্রাফটি বড়ই বিচিত্র। যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে বয়সোজনিত অভিজ্ঞতার ঝুলিটিও ভরে উঠতে থাকে খুব দ্রুত।
এক কুড়ি বয়স হওয়ার পর নিজেই খুঁজে পেতে বের করেছিলাম 0 বয়সের মাহেন্দ্র ক্ষণটি। দুই কুড়ি তে নিজের চাইতে নির্ভরশীল মানুষগুলোর চিন্তা এসে জড়িয়ে ধরেছিল আষ্টেপৃষ্ঠে। তিন কুড়ির বেলাটি যতই এগোচ্ছে ততই যেন আরেকটি 0-এর দিশায় পুষ্ট হচ্ছে জীবনবোধ।
এবারের ব্যতিক্রমী পুজোয় যেখানে সামাজিক বিধি নিষেধের কড়াকড়ি সেখানে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবেই এক ব্যতিক্রমী জন্মদিন এসে সবকিছু যেন কেমন ওলোটপালট করে দিল। শুনেছি লিপ ইয়ারে জন্ম হলে নাকি তারিখ ও বারের একত্র হয়ে ফিরে আসার ব্যাপারটা ঘটে প্রতি ২৮ বছরে। একদম সত্যি। এবার দ্বিতীয় বারের মতো সেই ফিরে আসা। তার উপর বাংলা তারিখটাও তালে তাল মিলিয়ে এলো ফিরে।
এর পরের এমন মিলনের আশা আজকের দিনে অন্তত করাটা মোটেও যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে না। তাই স্বজনদের সঙ্গে একটা উদযাপনের সুযোগ হারানো ঠিক হবে না ভেবে বর্ষার মতো এই শরতের দুপুরে সবাই মিলে দে ছুট মাটির টানে।
সপ্তমীর সকালেই ঝিরঝির বৃষ্টি - রাস্তার পাশের পুজো মণ্ডপে ছাতা হাতে মাস্ক্ মুখে ঝটিকা প্রণাম আর হৈ হুল্লোড়ে কেটে গেল সারাটি দিন। নতুন সরকারের কল্যাণে এখন গ্রাম গ্রামান্তরেও মসৃণ পথঘাট। সাঁই সাঁই গাড়ি চালিয়ে সোজা পবিতরা অভয়ারণ্যের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত একটি রিসর্ট। পথের পাশে একের পর এক সনাতন ভারতের রেপ্লিকা। মহাবাহু সমীপের হাতীশিলা মন্দির, একের পর এক পুজো মণ্ডপ, ব্রহ্মঋষি আশ্রম, পঞ্চকন্যা ভগবতী মন্দির, গোভালি দুর্গা মন্দির পেরোতে পেরোতেই বৃহৎ চন্দ্রপুর অঞ্চল ছাড়িয়ে এলাম। চন্দ্রপুরের চায়ের দোকান খানিকক্ষণের জন্য চলে এলো আমাদের আওতায়। খানিক বাদেই কপিলি নদীর উপর বিশাল গোবর্ধন সেতু। প্রায় টইটম্বুর প্রবহমান নদীর সাথে অনতিউচ্চ পাহাড়ের ঢলাঢলি দেখে চোখ ফেরানো দায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি চোখে পড়ার মতো। পথের পাশের দু'শো মিটার ধানখেত পেরোলেই সুউচ্চ টিলার গায়ে নেমে এসেছে উড়ন্ত মেঘের দল। এভাবেই এক সময় পৌঁছে গেলাম পবিতরা। এত প্রত্যন্ত অঞ্চলে এত ভালো রিসর্ট সত্যি দারুণ। ২৮ বছরের এক বিশেষ জন্মদিনের খাওয়া দাওয়া সেরে ফেরার পথ ধরতেই চোখে পড়লো পবিতরার সব চাইতে মূল্যবান বাসিন্দা গণ্ডারের। হৈ হৈ করে গাড়ি থামাতেই দু'চোখ ছানাবড়া। একদিকে সুদৃশ্য গণ্ডার আর অন্য দিকে প্রকৃতির অপরূপ সান্ধ্যসাজ। মেঘে, পাহাড়ে, জলে, মানুষে, আকাশে, মাঠে একাকার। পটপট ছবির উপর ছবি।
শেষ পর্বে মেঘালয়ের পথপার্শ্ব রেস্টুরেন্টে সান্ধ্য চায়ের আসর।
জীবনের শ্রেষ্ঠ জন্মদিন উদযাপন। গোটা সফর জুড়ে সহধর্মিণীর সজাগ সহযোগিতায় আর সব নিকটাত্মীয়ের নৈকট্যসুখের আমেজে ভরপুর মজে আস্তানায় ফিরে আসতে আসতে মুঠোফোন ভারী হয়ে গেছে সুজন বন্ধুদের চমৎকার সব শুভেচ্ছা বার্তায়। - আমি আমৃত্যু মনের কোণে সঞ্চিত করে রাখবো এ মণিহার।
0 থেকে 0 বয়সের এই যাপন বেলায় যাঁদের হারিয়েছি আজ সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি তাঁদের। আর আছি যাঁদের স্মরণে তাঁদের সান্নিধ্য রোমন্থনে যেভাবে কাটলো আজকের এই বিশেষ দিনটি তাদের সবাইকেও জানাই অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
আসলে এই এক মুহূর্তের বর্তমান নিয়েই তো আমাদের বেঁচে থাকা। নাহলে আমাদের মতো আটপৌরে মানুষদের মরা বাঁচায় এই বিশাল ধরিত্রীর কী আসে যায় ?
পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার গড়ে 0.1% মানুষই শুধু জীবনে কিছু একটা ছাপ রেখে যেতে সমর্থ হোন। 99.9% এর মধ্যে থেকে আমরা কোনও ছাপটাপ রাখি না, বরঞ্চ ছাপোষা হয়েই কাটিয়ে দেই আমাদের জীবন জোড়া বিন্দাস বর্তমান।
জীবনের এক একটা সময়কালের অনুভবের গ্রাফটি বড়ই বিচিত্র। যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে বয়সোজনিত অভিজ্ঞতার ঝুলিটিও ভরে উঠতে থাকে খুব দ্রুত।
এক কুড়ি বয়স হওয়ার পর নিজেই খুঁজে পেতে বের করেছিলাম 0 বয়সের মাহেন্দ্র ক্ষণটি। দুই কুড়ি তে নিজের চাইতে নির্ভরশীল মানুষগুলোর চিন্তা এসে জড়িয়ে ধরেছিল আষ্টেপৃষ্ঠে। তিন কুড়ির বেলাটি যতই এগোচ্ছে ততই যেন আরেকটি 0-এর দিশায় পুষ্ট হচ্ছে জীবনবোধ।
এবারের ব্যতিক্রমী পুজোয় যেখানে সামাজিক বিধি নিষেধের কড়াকড়ি সেখানে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবেই এক ব্যতিক্রমী জন্মদিন এসে সবকিছু যেন কেমন ওলোটপালট করে দিল। শুনেছি লিপ ইয়ারে জন্ম হলে নাকি তারিখ ও বারের একত্র হয়ে ফিরে আসার ব্যাপারটা ঘটে প্রতি ২৮ বছরে। একদম সত্যি। এবার দ্বিতীয় বারের মতো সেই ফিরে আসা। তার উপর বাংলা তারিখটাও তালে তাল মিলিয়ে এলো ফিরে।
এর পরের এমন মিলনের আশা আজকের দিনে অন্তত করাটা মোটেও যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে না। তাই স্বজনদের সঙ্গে একটা উদযাপনের সুযোগ হারানো ঠিক হবে না ভেবে বর্ষার মতো এই শরতের দুপুরে সবাই মিলে দে ছুট মাটির টানে।
সপ্তমীর সকালেই ঝিরঝির বৃষ্টি - রাস্তার পাশের পুজো মণ্ডপে ছাতা হাতে মাস্ক্ মুখে ঝটিকা প্রণাম আর হৈ হুল্লোড়ে কেটে গেল সারাটি দিন। নতুন সরকারের কল্যাণে এখন গ্রাম গ্রামান্তরেও মসৃণ পথঘাট। সাঁই সাঁই গাড়ি চালিয়ে সোজা পবিতরা অভয়ারণ্যের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত একটি রিসর্ট। পথের পাশে একের পর এক সনাতন ভারতের রেপ্লিকা। মহাবাহু সমীপের হাতীশিলা মন্দির, একের পর এক পুজো মণ্ডপ, ব্রহ্মঋষি আশ্রম, পঞ্চকন্যা ভগবতী মন্দির, গোভালি দুর্গা মন্দির পেরোতে পেরোতেই বৃহৎ চন্দ্রপুর অঞ্চল ছাড়িয়ে এলাম। চন্দ্রপুরের চায়ের দোকান খানিকক্ষণের জন্য চলে এলো আমাদের আওতায়। খানিক বাদেই কপিলি নদীর উপর বিশাল গোবর্ধন সেতু। প্রায় টইটম্বুর প্রবহমান নদীর সাথে অনতিউচ্চ পাহাড়ের ঢলাঢলি দেখে চোখ ফেরানো দায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি চোখে পড়ার মতো। পথের পাশের দু'শো মিটার ধানখেত পেরোলেই সুউচ্চ টিলার গায়ে নেমে এসেছে উড়ন্ত মেঘের দল। এভাবেই এক সময় পৌঁছে গেলাম পবিতরা। এত প্রত্যন্ত অঞ্চলে এত ভালো রিসর্ট সত্যি দারুণ। ২৮ বছরের এক বিশেষ জন্মদিনের খাওয়া দাওয়া সেরে ফেরার পথ ধরতেই চোখে পড়লো পবিতরার সব চাইতে মূল্যবান বাসিন্দা গণ্ডারের। হৈ হৈ করে গাড়ি থামাতেই দু'চোখ ছানাবড়া। একদিকে সুদৃশ্য গণ্ডার আর অন্য দিকে প্রকৃতির অপরূপ সান্ধ্যসাজ। মেঘে, পাহাড়ে, জলে, মানুষে, আকাশে, মাঠে একাকার। পটপট ছবির উপর ছবি।
শেষ পর্বে মেঘালয়ের পথপার্শ্ব রেস্টুরেন্টে সান্ধ্য চায়ের আসর।
জীবনের শ্রেষ্ঠ জন্মদিন উদযাপন। গোটা সফর জুড়ে সহধর্মিণীর সজাগ সহযোগিতায় আর সব নিকটাত্মীয়ের নৈকট্যসুখের আমেজে ভরপুর মজে আস্তানায় ফিরে আসতে আসতে মুঠোফোন ভারী হয়ে গেছে সুজন বন্ধুদের চমৎকার সব শুভেচ্ছা বার্তায়। - আমি আমৃত্যু মনের কোণে সঞ্চিত করে রাখবো এ মণিহার।
0 থেকে 0 বয়সের এই যাপন বেলায় যাঁদের হারিয়েছি আজ সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি তাঁদের। আর আছি যাঁদের স্মরণে তাঁদের সান্নিধ্য রোমন্থনে যেভাবে কাটলো আজকের এই বিশেষ দিনটি তাদের সবাইকেও জানাই অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
অষ্টমী
নাহ্। এভাবে রসকষহীন হয়ে পুজোর দিনগুলো অন্তত কাটানো যায় না কিছুতেই। একলা দুটিতে হাতে হাত রেখে একটু পথ চলা, অবাক পৃথিবীর নজর এড়িয়ে দু'টো মনের কথা বলা - এ না হলে কীসের পূজা ? আর ওই যে ইংরেজিতে বলে না - stolen sweets are good to eat অর্থাৎ চুরি করা মিষ্টি খেতে ভালো - তাই এবার করোনা এসে বাইরে বেরোতে মানা করায় যেন সেই তাগিদটি আরোও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
এর উপর সকাল থেকে ভর কার্তিকেও শ্রাবণের ধারার মতো বৃষ্টি এসে 'মন মানেনা' মননে এক পলকের একটু ঘোরাঘুরির জন্য আনচান করতেই কখা বলে সময় মিলিয়ে বেরিয়ে পড়া। সাথে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিল মুখবন্ধনী বা মাস্ক্।
এবারের মহাষ্টমী ব্যস এতটুকুই। এই বা কম কীসে ? আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ - - - - -
এর উপর সকাল থেকে ভর কার্তিকেও শ্রাবণের ধারার মতো বৃষ্টি এসে 'মন মানেনা' মননে এক পলকের একটু ঘোরাঘুরির জন্য আনচান করতেই কখা বলে সময় মিলিয়ে বেরিয়ে পড়া। সাথে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিল মুখবন্ধনী বা মাস্ক্।
এবারের মহাষ্টমী ব্যস এতটুকুই। এই বা কম কীসে ? আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ - - - - -
প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের এই বিশ্বে নিত্যদিন দেড় লক্ষের বেশি লোক হারিয়ে যাচ্ছেন চিরতরে। আবার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষের বেশি জন্ম। অর্থাৎ প্রতি দিন দু'লক্ষ লোকসংখ্যা বাড়ছে এই পৃথিবীর বুকে। ভবিষ্যৎ কোন দিশায় এগোচ্ছে তা কল্পনা করা সহজ ব্যাপার নয়।
আমার উদ্দেশ্যও তা নয়। এই যে প্রতিদিন হারিয়ে যায় এত এত লোক তার ক'জনের হিসেব থাকে আমাদের কাছে ? হাতে গোণা কয়েক জন শুধু - যাঁদের আমরা চিনি, কোনও ভাবে যাদের সঙ্গে আমরা সম্পর্কিত। সময়ের সাথে সাথে তাঁদেরও বেশির ভাগই আমাদের স্মৃতি থেকে স্বাভাবিক দেহজ প্রক্রিয়ায় হারিয়ে যেতে থাকেন ক্রমান্বয়ে।
স্মৃতিতে বেঁচে থাকেন একেবারেই কাছের কিছু মানুষ যাঁরা আমাদের স্মৃতিতে চিরন্তন - অন্তত বছরে একটি দিন। আর সেই দিনটি যদি হয় একটি বিশেষ দিন তাহলে তো কথাই নেই।
প্রতি বছর আজকের এই মহাষ্টমী তিথিটি আমার হৃদয়ে বয়ে আনে এক অকাল মৃত্যুর দুঃখগাথা। 2011 ইংরেজির আজকের এই তিথিতে আমার নিকট অগ্রজের সময়ের আগেই এমন করে চলে যাওয়ার দুঃখ বয়ে বেড়াব আজীবন।
যাঁর হাত ধরে আমার বহির্বিশ্বকে চেনা সেই আমার জীবনগুরু দাদাকে আমার এই শ্রদ্ধাঞ্জলিতেই সশ্রদ্ধ স্মরণ।
আমার উদ্দেশ্যও তা নয়। এই যে প্রতিদিন হারিয়ে যায় এত এত লোক তার ক'জনের হিসেব থাকে আমাদের কাছে ? হাতে গোণা কয়েক জন শুধু - যাঁদের আমরা চিনি, কোনও ভাবে যাদের সঙ্গে আমরা সম্পর্কিত। সময়ের সাথে সাথে তাঁদেরও বেশির ভাগই আমাদের স্মৃতি থেকে স্বাভাবিক দেহজ প্রক্রিয়ায় হারিয়ে যেতে থাকেন ক্রমান্বয়ে।
স্মৃতিতে বেঁচে থাকেন একেবারেই কাছের কিছু মানুষ যাঁরা আমাদের স্মৃতিতে চিরন্তন - অন্তত বছরে একটি দিন। আর সেই দিনটি যদি হয় একটি বিশেষ দিন তাহলে তো কথাই নেই।
প্রতি বছর আজকের এই মহাষ্টমী তিথিটি আমার হৃদয়ে বয়ে আনে এক অকাল মৃত্যুর দুঃখগাথা। 2011 ইংরেজির আজকের এই তিথিতে আমার নিকট অগ্রজের সময়ের আগেই এমন করে চলে যাওয়ার দুঃখ বয়ে বেড়াব আজীবন।
যাঁর হাত ধরে আমার বহির্বিশ্বকে চেনা সেই আমার জীবনগুরু দাদাকে আমার এই শ্রদ্ধাঞ্জলিতেই সশ্রদ্ধ স্মরণ।
নবমী
বয়স তাঁর ৮০ও হতে পারে। কিংবা ১০০ বা তারও বেশি। সম্মানসূচক চন্দ্রবিন্দুটা ইচ্ছে করেই ব্যবহার করলাম কারণ এরকম হলে তো এমনিতেই বয়োজ্যেষ্ঠ। তার উপর যেখান থেকে দীঘির বাঁধানো ঘাটে যাওয়ার ধাপগুলো শুরু হয়েছে ঠিক সেখানেই সাইনবোর্ডে স্পষ্ট লিখা আছে - পুকুরের মাছ এবং কাছ (অসমিয়াতে কচ্ছপকে কাছ' বলে) কে ভগবৎ জ্ঞানে সম্মান করবেন। সংরক্ষণের মহান প্রচেষ্টায় ওঁনারা যে বহাল তবিয়তেই আছেন তা বুঝা যায় বিলক্ষণ। গায়ে গতরে দশাসই একেক জন। কাছে গিয়ে ক্যামেরাবন্দি করার সে কী রোমাঞ্চ।
গুয়াহাটি থেকে ঘন্টাখানেকের ড্রাইভে হাজো হয়গ্রীব মাধব মন্দির। মন্দির সংলগ্ন বিশাল পুকুরের এই গাথা।
করোনাসুরের ভয়ে মহানগরীর ভিড়ে বেরোতে মন চায়নি বলে আত্মীয় স্বজন পরিবৃত হয়ে শেষ সকালে বেরিয়ে পড়ি আজকের মহানবমীর পুণ্য লগ্নে। প্রথম গন্তব্য মহাবাহুর উত্তর পারের দৌলগোবিন্দ মন্দির। 2005-এ গিয়েছিলাম প্রথম বার। আজ দ্বিতীয়।প্রথম বার অগ্রজ দাদার তত্ত্বাবধানে আর আজ দ্বিতীয় বার দাদার জাগতিক অনুপস্থিতিতে আমারই তত্ত্বাবধানে।
বলাই বাহুল্য গত পনেরো বছরে বদলে গেছে অনেক কিছুই। মূলতঃ রাস্তা ঘাটের অকল্পনীয় উন্নতি চোখে পড়ার মতো।
আজ গুয়াহাটির আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সকাল থেকেই একটা পূজাসুলভ ভাব। 'ভিতর ও বাহিরে'। তাই দৌলগোবিন্দেও যথারীতি ভিড়। যতটুকু সম্ভব নিজেকে কোভিড প্রটোকলের আওতায় রেখে খানিকটা সময় কাটানো হলো। নয়নশোভন মূর্তি, একচিলতে ঘাসের উঠোন আর গরমাগরম পায়েস প্রসাদের মোহমায়া থেকে বেরিয়ে খানিকটা এগিয়ে উদরপূর্তি। এরপর সোজা একই রাস্তা ধরে হাজোর উদ্দেশে যাত্রা।
হাজো দর্শনের প্রথমেই গন্তব্য - পোয়ামক্কা দরগা। হিন্দু ও মুসলমান উভয় ধর্মাবলম্বীদের সমবেত তীর্থক্ষেত্র। পুজোর আবহে আর আবহাওয়ার কল্যাণে দুর্গা ও দরগা আজ একাকার। এখানে মানত করলে নাকি ফল পাওয়া যায়। জনমত। পূজা উপলক্ষে আজ পোয়ামক্কারও পোয়া বারো। গোটা পাহাড় ঘিরে সর্পিল উৎরাই জুড়ে প্রকৃতির অপরূপ শোভা। এক আরণ্যক অনুভূতি। দরগায় অচেনা ভিনধর্মীদের সাথে একত্রে বসে প্রার্থনার শুরুতেই মৌলবী মশাই আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন 'আপনারা হাত জোড় করে প্রণাম করুন' বলেই সরব প্রার্থনা শুরু করলেন। ঠিক যেন কোনও মন্দিরের পূজারীর মন্ত্রোচ্চারণ। এক মুহূর্তের জন্য কেমন উদাস হয়ে গেলাম যেন। লৌকিক বিভাজনকে কেমন অসার মনে হতে লাগলো। সারা পৃথিবী জুড়ে যদি একটাই ধর্ম, একটাই ভাষা, এক নিয়ম - এক আচার হতো 'তবে কেমন হতো - - - - -'।
পোয়ামক্কার পরের গন্তব্য হয়গ্রীব মাধব মন্দির। কয়েকশো সিঁড়ি উঠে মন্দির দর্শনের মতো ধৈর্য আর অবশিষ্ট ছিল না কারোও। তাই নীচে থেকেই প্রণিপাতে পুণ্যার্জন।
সান্ধ্যকালীন ব্রহ্মপুত্রের উপর দিয়ে শরাইঘাট সেতু পেরিয়ে শেষ সন্ধ্যায় মহানবমীর ঘোরাঘুরির আপাতত এখানেই যবনিকা।
গুয়াহাটি থেকে ঘন্টাখানেকের ড্রাইভে হাজো হয়গ্রীব মাধব মন্দির। মন্দির সংলগ্ন বিশাল পুকুরের এই গাথা।
করোনাসুরের ভয়ে মহানগরীর ভিড়ে বেরোতে মন চায়নি বলে আত্মীয় স্বজন পরিবৃত হয়ে শেষ সকালে বেরিয়ে পড়ি আজকের মহানবমীর পুণ্য লগ্নে। প্রথম গন্তব্য মহাবাহুর উত্তর পারের দৌলগোবিন্দ মন্দির। 2005-এ গিয়েছিলাম প্রথম বার। আজ দ্বিতীয়।প্রথম বার অগ্রজ দাদার তত্ত্বাবধানে আর আজ দ্বিতীয় বার দাদার জাগতিক অনুপস্থিতিতে আমারই তত্ত্বাবধানে।
বলাই বাহুল্য গত পনেরো বছরে বদলে গেছে অনেক কিছুই। মূলতঃ রাস্তা ঘাটের অকল্পনীয় উন্নতি চোখে পড়ার মতো।
আজ গুয়াহাটির আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সকাল থেকেই একটা পূজাসুলভ ভাব। 'ভিতর ও বাহিরে'। তাই দৌলগোবিন্দেও যথারীতি ভিড়। যতটুকু সম্ভব নিজেকে কোভিড প্রটোকলের আওতায় রেখে খানিকটা সময় কাটানো হলো। নয়নশোভন মূর্তি, একচিলতে ঘাসের উঠোন আর গরমাগরম পায়েস প্রসাদের মোহমায়া থেকে বেরিয়ে খানিকটা এগিয়ে উদরপূর্তি। এরপর সোজা একই রাস্তা ধরে হাজোর উদ্দেশে যাত্রা।
হাজো দর্শনের প্রথমেই গন্তব্য - পোয়ামক্কা দরগা। হিন্দু ও মুসলমান উভয় ধর্মাবলম্বীদের সমবেত তীর্থক্ষেত্র। পুজোর আবহে আর আবহাওয়ার কল্যাণে দুর্গা ও দরগা আজ একাকার। এখানে মানত করলে নাকি ফল পাওয়া যায়। জনমত। পূজা উপলক্ষে আজ পোয়ামক্কারও পোয়া বারো। গোটা পাহাড় ঘিরে সর্পিল উৎরাই জুড়ে প্রকৃতির অপরূপ শোভা। এক আরণ্যক অনুভূতি। দরগায় অচেনা ভিনধর্মীদের সাথে একত্রে বসে প্রার্থনার শুরুতেই মৌলবী মশাই আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন 'আপনারা হাত জোড় করে প্রণাম করুন' বলেই সরব প্রার্থনা শুরু করলেন। ঠিক যেন কোনও মন্দিরের পূজারীর মন্ত্রোচ্চারণ। এক মুহূর্তের জন্য কেমন উদাস হয়ে গেলাম যেন। লৌকিক বিভাজনকে কেমন অসার মনে হতে লাগলো। সারা পৃথিবী জুড়ে যদি একটাই ধর্ম, একটাই ভাষা, এক নিয়ম - এক আচার হতো 'তবে কেমন হতো - - - - -'।
পোয়ামক্কার পরের গন্তব্য হয়গ্রীব মাধব মন্দির। কয়েকশো সিঁড়ি উঠে মন্দির দর্শনের মতো ধৈর্য আর অবশিষ্ট ছিল না কারোও। তাই নীচে থেকেই প্রণিপাতে পুণ্যার্জন।
সান্ধ্যকালীন ব্রহ্মপুত্রের উপর দিয়ে শরাইঘাট সেতু পেরিয়ে শেষ সন্ধ্যায় মহানবমীর ঘোরাঘুরির আপাতত এখানেই যবনিকা।
2020 এর ব্যতিক্রমী পূজার ব্যতিক্রমী উদযাপনেরও পরবর্তী এক বছরের মতো এখানেই সমাপ্তি।
না, নতুন কিছু নয়। সেই একই গান - পুরোনো কাসুন্দি। বস্তুতঃ 'খেলা ভাঙার খেলা'য় আমি বিশ্বাসী নই আদপেই। নির্বিবাদে সব অতীতকে বিসর্জন দেওয়ার পক্ষপাতী আমি নই। তাই নতুনত্বের ইঁদুর দৌড়েও আমি নেই। এমনটা শুধু আজকেরই ভাবনা তা কিন্তু নয়। আমি চিরকালই ঐতিহ্য ও পরম্পরার সংরক্ষণেরই পক্ষে। ভর যৌবনের দুরন্ত বেলায়ও একই। অনেকেই দেখি সব ব্যাপারেই সন্দেহপ্রবণ। জানি এসবই হচ্ছে সেই নতুনত্বের গরজ ও নাম ছড়ানোর লোভ। আমি আবার যা মেনে চলতে কোনও কষ্ট নেই এবং যাতে কোনও ভেদাভেদ নেই সেসব মেনে চলতে খুব ভালবাসি। তাই সারা বছর ভগবানের পিণ্ডি চটকে পুজো এলেই জয় মা, জয় মা বলাদের দলে আমি নেই।
পুজো এলেই তাই প্রতি বছর আক্রান্ত হই নস্টালজিয়ায়। বয়স অনুযায়ী পুজোর উদযাপন - এ তো স্বাভাবিক কথা। প্রথমার্ধে হৈ হুল্লোড়, খুশির উদযাপন, দ্বিতীয়ার্ধে দায়িত্ব আর গরজের উদযাপন। আর শেষ পর্বে স্মৃতিচারণ। সোজাসাপটা হিসেব। সব্বার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এখনও তাই পুজোর চারদিনের পাঁচমিশেলির মধ্যেও সময় পেলেই একটু নিরালা যাপনে ভেসে বেড়াই মন ভালো করা কিছু কথা, কিছু স্মৃতির অনাবিল রোমন্থনে।
এখনও খুঁজে বেড়াই সেইসব মানুষ, সেইসব মুহূর্ত। কাল মহানবমীর ভিড় সামলে নিজেকে একটু সরিয়ে নিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম দু'টি বন্ধ দোকানের মাঝের একচিলতে ঠাঁইটুকুতে। আড়ালে থেকে সেখানে আগে থেকেই পেতে রাখা একটি ছোট্ট বেঞ্চে বসে দেখছিলাম পুজোর সন্ধ্যায় মানুষের পথ চলা। নিজের অতীতটা যেন খেলে বেড়াচ্ছিল অপরূপ এক স্রোতসদৃশ চলমানতায়। নির্ভেজাল মননে একাকীত্বের গভীরে ডুবে যেতে যেতে চোখের সামনে যেন ভেসে উঠছিল প্রজন্মের কল্পকথা। বহু দূরের আবছা অতীত থেকে শুরু করে হালের কত অবান্তর, কত রম্য কথার বুদবুদ।
আলো আঁধারির আড়াল থেকেই খুব মিস্ করছিলাম তোমায় জানো ? খুব খুব করে কাছে চেয়েছিলাম তোমাকে। ভীষণ ইচ্ছে করছিল হাতে হাত ধরে হেঁটে যাই অনন্ত কাল। ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যাই চিরতরে। কিন্তু জানি সে তো হবার নয়। জানি, বাস্তব বড়ই কঠোর। কিন্তু কল্পনা ? সে তো একান্তই আমার নিজের। আমিই আমার কল্পনার একচ্ছত্র মালিক। কারোও সাধ্য নেই সেখানে হাত বাড়ায়।
তাই হাতে তুলে নিলাম মুঠোফোন। নিষ্ফল মানসে খুঁজি তোমায় আবার - - - - -
Comments
Post a Comment