Skip to main content

বরাক ২০২০ - ১ম



গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ
আমার মন ভুলায় রে।
ওরে কার পানে মন হাত বাড়িয়ে
লুটিয়ে যায় ধুলায় রে॥
ও যে আমায় ঘরের বাহির করে,
পায়ে-পায়ে পায়ে ধরে--
ও যে কেড়ে আমায় নিয়ে যায় রে
যায় রে কোন্‌ চুলায় রে।
ও যে কোন্‌ বাঁকে কী ধন দেখাবে, কোন্‌খানে কী দায় ঠেকাবে--
কোথায় গিয়ে শেষ মেলে যে
ভেবেই না কুলায় রে॥
গরমের রেশ - যেন 'শেষ হইয়াও হইল না শেষ'। ওদিকে সন্ধে হতেই হালকা হিমের আমেজ। এই আমেজে তখনই তো হয় সোনায় সোহাগা যখন ছেলেবেলার একদল বন্ধু মিলে চলে হৈ হৈ আড্ডা। চায়ের কাপে জীবন চর্চা। আহা কোথা দিয়ে যে চার চারটি ঘন্টা বেমালুম খতম - টেরই পেলাম না।
মধুর, তোমার শেষ যে না পাই
প্রহর হল শেষ--
ভুবন জুড়ে রইল লেগে
আনন্দ-আবেশ ॥
দিনান্তের এই এক কোনাতে
সন্ধ্যামেঘের শেষ সোনাতে
মন যে আমার গুঞ্জরিছে
কোথায় নিরুদ্দেশ ॥
সায়ন্তনের ক্লান্ত ফুলের
গন্ধ হাওয়ার 'পরে
অঙ্গবিহীন আলিঙ্গনে
সকল অঙ্গ ভরে।
এই গোধুলির ধূসরিমায়
শ্যামল ধরার সীমায় সীমায়
শুনি বনে বনান্তরে
অসীম গানের রেশ ॥
অসীম গানের রেশ নিয়েই নিগমানন্দ সুইটস্ এর আড্ডাঘর থেকে বেরিয়ে আট বন্ধু যে যার আস্তানায়। আমার গন্তব্য আমার জন্মভিটের সংলগ্ন ঘরটি। 30 বছর বাদ স্বপ্ন সুখের নিদ্রা যাপন।
ভোর হতেই ঘন কুয়াশার চাদরে ডুবে গিয়ে শুরু হলো গ্রামময় ঘুরে বেড়ানোর পালা। সেদিনের সরু সরু রাস্তাগুলো এখন চওড়া হয়েছে, উঁচু হয়েছে। (কেন হলো ? স্মৃতিটাকে এভাবে উত্তরণের মোড়কে ধ্বংস না করলে চলতো না ?) হেঁটে হেঁটে সোজা গিয়ে হাজির সেই জলধারা পাড়ে। আমাদের ছোটনদী ওটি। বাঁক কম, জল বেশি। হাতলবিহীন এক বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হয়ে যেতাম যার উপর দিয়ে। পথে যেতে যেতে সেই লুটকি আর পিষন্টির গাছগাছালি, ফুল। মনে হচ্ছিল যেন আজকের প্রষ্ফুটিত হওয়া শুধুই আমার জন্য। নিয়ে এলাম তাই ক্যামেরা ভরে।
ফিরে এসে সন্ন্যাসী বাড়ি। সেই আমার 'রথযাত্রা' গল্পের প্লট। মহাপ্রভু তখনও নিদ্রামগ্ন। সেখান থেকে সোজা পুকুরপাড়ে বরশি হাতে। ঠাণ্ডা হয়ে আছে জল। মাছেরা গভীর জলে। আমি হতাশ।
ঘরে এসেই আবার দে ছুট সকাল বেলার মাছ বাজারে। শনবিলের সুস্বাদু মাছের পসরা ঘিরে আরেক প্রস্থ বন্ধু সংসর্গ। আবার ঘরে ফিরে চানটান সেরে এবার পরবর্তী গন্তব্য দ্বিপ্রাহরিক ভোজন পর্বের জন্য বন্ধুগৃহ। পথে আসতে আসতে সেই আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়। সোজা গিয়ে হাজির হলাম বর্তমান মুখ্য দিদিমণির কোঠায়। আমি জানতাম। আমাকে 30 বছর পর দেখে চিনতে পারলেন না। আরেক শিক্ষক সে আমার খুবই কাছের। দিদিমণিকে নামটা বলতেই একেবারে হৈচৈ লেগে গেল গোটা স্কুল জুড়ে।
বন্ধু এবার স্কুটির পেছনে আমাকে বসিয়ে নিয়ে হাজির রোদ ঝলমল পার্কে। সুউচ্চ টিলার উপর যতটুকু মনোরম পার্ক ততটুকুই মনোরম দূর উপত্যকার দৃশ্য। রামকৃষ্ণ নগর অঞ্চলটি শিক্ষা দীক্ষায় যেমন উন্নত তেমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও ভরপুর। পার্ক থেকে বেরোতেই আরেক চমক। একা পথে হেঁটে আসছে এক পরিচিত মুখ। 38 বছর পর দেখা অথচ - - - একসাথে দুজনেই বিকাশ না / বিদ্যুৎ না ?
এ না হলে বন্ধু ?
জয়ন্ত, মনোজ, বাবলু, সঞ্জু, অসীম, কাজল, প্রণব, গৌতম - সাথে অম্পি আর জয়া অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা সবার প্রতি। একদিনের জন্মভিটের ফ্ল্যাশব্যাক সফরকে তোমরা ভরিয়ে দিয়েছ ভালোবাসায় ভালোবাসায়।
আজ এতটুকুই। এই মুহূর্তে বরাক উপত্যকার সব চাইতে বড় শহর, কবির শহর শিলচর অভিমুখে।

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...