Skip to main content

মননশীল উপস্থাপনায় ব্যতিক্রমী - ‘মানবী’


মসৃণ, চাকচিক্যময় প্রচ্ছদের নীচের দিকটায় শীত-সবুজ বনানী আর একেবারে উপরে ক্ষুদ্র রেখাচিত্রে চারটি উড়ন্ত বিকেল-পাখি মাঝে শৈল্পিক আখরে নামলিপি হাতে নিয়েই এক অপার মন ভালো করা অনুভব এবার পৃষ্ঠা না উল্টে গোটা পত্রিকাটিই যদি উল্টে দেওয়া হয় -
শেষ প্রচ্ছদে সেই বনানীর উপরিভাগে দেখতে পাওয়া যাবে বিস্ময়ভরা, নিটোল একটি তন্বী কবিতা - ‘পটুয়া-কন্যা সবার আগেই সেইশেষের কবিতাটি এখানে তুলে ধরার লোভ সামলানো - এক কথায় অসম্ভব
নিজের মুদ্রাদোষে গিয়েছি ভেসে
অনন্য আলো যা ছিল হারিয়েছে
আমি তো পাখি ছিলাম, সাঁতারু বাতাসে
ময়ূরী ছিলাম বর্ষা-জলে
আগুনের বন্ধুও তো ছিলাম তখন
অসীম সাহসী, দুরন্তের ঢেউ
চিনলো না কেউ
 
এসব দুঃখের কথকতা নয় বন্ধু,
সহজ উচ্চারণে জীবন
 
আজও পটুয়া আমি, এঁকে চলেছি মরণ
- একটি কবিতা এক ও অদ্বিতীয় চন্দ্রিমা দত্তের, যিনি আবার বরাক উপত্যকার আলোচ্য ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকামানবীর অন্যতম এবং এই সংখ্যার সম্পাদকও
স্বভাবতই এই সহজ উচ্চারণে পটুয়ার মতোই দক্ষ শিল্পবোধের পরিচায়ক হয়ে রইল ‘মানবী’র এবারের এই যৌথ সংখ্যাটি। পঞ্চদশ বর্ষের চতুর্থ এবং ষোড়শ বর্ষের প্রথম সংখ্যা। অক্টোবর ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২। এর আগেও এরকম যৌথ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। এবং এই প্রসঙ্গ এলেই যে ভাবটি মনের জানালায় এসে উঁকি দেয় তা হলো চারজন সম্পাদক (অর্থাৎ বছরে একজনই সম্পাদক) থাকার পরও কেন যৌথ সংখ্যা ? এবং এতে কি ‘মানবী’র মতো একটি মানসম্পন্ন পত্রিকার পূর্ণ এক একটি সংখ্যা পাঠের সুযোগ থেকে পাঠকরা বঞ্চিত হচ্ছেন না ? যদিও চমৎকারিত্বে ভরপুর সম্পাদকীয়র শেষাংশে সেই ‘সহজ উচ্চারণ’-এ এর কারণ হিসেবে অবশ্য বলা হয়েছে - ‘অনতিক্রম্য অসুবিধের জন্য’।
পৃষ্ঠা দুয়েকের পত্রিকা-পরিসরে এই পত্রিকার আলোচনা নিতান্তই অসম্ভব। বিশাল তূণীর থেকে একের পর এক মণি মুক্তাময় তির বাছতে বাছতেই ‘গা-উজাড়’। কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখি ?
প্রথমেই বলে নেয়া ভালো - মান্না দেব-এর অলঙ্করণ এবারের সংখ্যাটিকে এক অনতিক্রম্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে নিশ্চিত - সাথে সম্পাদকের প্রচ্ছদ পরিকল্পনা -  যেন সোনায় সোহাগা। শব্দের নৈপুণ্যে বিন্যস্ত সম্পাদকীয় যেন ভোজনপূর্ব আচমন। খাওয়ার (পড়ুন পঠনের) স্পৃহা চাগিয়ে তোলে অন্তরে। অভাবনীয় সূচিপত্র সম্পাদকের রুচিশীল চিন্তাধারার ফসল। দুই মলাটের মধ্যে সন্নিবিষ্ট আছে মোট ৪১ জন কবির ৬৯ টি কবিতা। এর মধ্যে ‘প্রাচীনকে ছুঁয়ে’ বিভাগে সন্নিবিষ্ট  প্রখ্যাত কবি করুণারঞ্জন ভট্টাচার্য, ছবি গুপ্তা এবং শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর এক গুচ্ছ কবিতা নিঃসন্দেহে এ সংখ্যার এক অতুলনীয় সম্পদ হয়ে রইল। একই ধারায় - ‘সদ্য পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন যে কবিরা -’ বিভাগে সদ্যপ্রয়াত বিশ্বজিৎ চৌধুরী এবং কবি দিলীপ দাশ-এর কবিতাও এক অনন্য সংযোজন। না, আলাদা করে কারো নাম উল্লেখ করা যথার্থ হবে না। তবে সুজাতা চৌধুরীর কবিতাকে আলাদা করে গদ্য কবিতা হিসেবে চিহ্নিত না করলেও হয়তো চলত, কারণ কবিতাটি পাঠে পদ্যের নির্যাস একশো ভাগই অনুভূত হয়। অন্য সব কবিতার মতো এটিও সুচয়িত, সুলিখিত। উপরোক্তদের বাইরেও কিছু চমকে দেওয়া নাম সহ যাঁদের কবিতায় সেজে উঠল এবারের সংখ্যা, সেইসব কবিরা হলেন - কালীকৃষ্ণ গুহ, জয় গোস্বামী, পীযূষ রাউত, বীথি চট্টোপাধ্যায়, প্রমিতা ভৌমিক, সন্দীপ দত্ত, মুজিব ইরম, সুলতানা রিজিয়া, অভীক সরকার, কাবেরী গোস্বামী, সেলিম মুস্তাফা, সঞ্জিতা দাস (লস্কর), জ্যোতির্ময় রায়, দেবযানী ভট্টাচার্য, স্মৃতি দাস, শতদল আচার্য, কুন্তলা দে, জয়া ভাওয়াল, রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ, রত্নদীপ দেব, সঞ্চয়িতা চৌধুরী, উজ্জয়িতা চৌধুরী, দিলীপ দাস, নীলাদ্রি ভট্টাচার্য, রূপরাজ ভট্টাচার্য, কপোতাক্ষী ব্রহ্মচারী চক্রবর্তী, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, গৌতম গুহ রায়, প্রদীপ মজুমদার, কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য, ব্রজকুমার সরকার, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, অশোক ভার্মা, পম্পা ভট্টাচার্য, দীপাঞ্জলি চৌধুরী, লীনা নাথ, সুশান্ত ভট্টাচার্য, শেলী দাস চৌধুরী, দেবরাজ দাশগুপ্ত এবং এ সংখ্যার সম্পাদক চন্দ্রিমা দত্ত।
সব মিলিয়ে এক সমৃদ্ধ কবিতা বিভাগ। গদ্য বিভাগে প্রথমেই ‘স্মৃতিঘর খুলে’ বিভাগে ‘দেবদর্শন’ শিরোনামে মৃণাল বসু চৌধুরী লিখেছেন এক অনবদ্য ভ্রমণ বৃত্তান্ত যেখানে ভ্রমণের পাশাপাশি চমকিত হয়েছে ছোটগল্পের রাজপুত্র হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে ‘দেবদর্শন’-এর অভিব্যক্তি। দু’টি অণুগল্প বিভাগে আছে মঞ্জরী হীরামণি রায়ের গল্প ‘ছুটি’ এবং ‘বড়াইল, তিথি আর রংধনুমন মানুষটা’। দুই প্রকৃতি কন্যা - মৃত্তিকা ও তিথির গল্প। ভাবনা ও বুনোটে দু’টি সার্থক অণুগল্প। ‘ভিনভাষী গল্প’ বিভাগে শিপ্রা চৌধুরীর গল্প ‘দোহোরি’। ঠিক বোঝা গেল না। অনুবাদ গল্প নাকি ভিন দেশের প্রেক্ষাপটে স্বরচিত গল্প ? প্রথমোক্তটি হলে মূল গল্পের রচয়িতার নাম থাকা বাঞ্ছনীয় এবং দ্বিতীয়োক্তটি হলে ‘ভিনভাষী গল্প’ না হয়ে স্বরচিত ‘ভিনদেশের গল্প’ হলে হয়তো যথার্থ হতো।
‘মুক্ত গদ্য’ বিভাগে শর্মিলী দেব কানুনগো, শ্যামলী কর ভাওয়াল এবং রূপরাজ ভট্টাচার্যের তিনটি অনবদ্য গদ্য। আত্মকথা, আত্মপ্রত্যয়ের সুচারু বিন্যাস। দোলনচাঁপা দাসপালের ভ্রমণ কাহিনি ‘বরফের দেশে’। টক ঝাল মিষ্টির রসায়নে চিঠির মোড়কে জমজমাট ভ্রমণ বৃত্তান্ত নতুনত্বের দাবি রাখে নিশ্চিত। যথাযোগ্য বুনোটে পাঠক চলেন সাথে সাথেবারো পৃষ্ঠার পরেও মনে হয় বড্ড ছোট হয়ে গেল। কিছু পারিপার্শ্বিক সমাজচিত্র এবং তয়হভিত্তিক ইতিহাসকে ছুঁয়ে যেতে পারলে অধিকতর সমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় হতে পারত - যদিও ছোট পত্রিকার পরিসরের কথাটিও একটি ফ্যাক্টর। শেষ পরিচ্ছেদটি দ্ব্যর্থক ব্যঞ্জনাময়।
‘যে দর্পণে আমি আলো, আমিই অন্ধকার, আমিই আমার সীমানা আমিই আমার মুক্তি’ বিভাগে চারজন সম্পাদকের চারটি ভিন্ন ভিন্ন জীবন দর্শনের গদ্য এ সংখ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ হয়ে থাকবে। শর্মিলা দত্তের নিবন্ধ বিলোল কথায় এক জীবন দর্শন। কিছু বাক্য ঝংকার তুলে যায় পাঠক মনে। ‘আমার নিকানো ঘর, দ্ব্যর্থবোধক ভাষার দেয়ালে পেরেক ঠোকার কাজটি করেই সারা। যে যেমন চিন্তায় সাজায় তার নিজস্ব অন্দরমহল। আমার সিঁড়ি আমি নিজেই’, ‘কোনো কোনো মানুষ পাখির মতো পালকে পালকে তার গান রেখে যায়’। শেলী দাস চৌধুরী উপহার দিয়েছেন এক কাব্যিক গদ্য। ‘জলসমীপে যাই সন্তর্পণে, একান্ত আপন জল, ভাসিয়া উঠে প্রতিবিম্ব বিম্বাধরে অস্পষ্ট শিশির, অধিপ্রান্তে মেঘ, আলুথালু বেশ - সে কে ?
জীবন জুড়িয়া আছে মাটি মেদিনী, অগ্নি ও জল,
মনপবন তার ভিন্ন দৃশ্যপট ও ক্রম তার বিন্যাস’।
আকাশ বাতাস মাটি জল, পরিবার সমাজ যে হিরণ্ময় আলোর বিচ্ছুরণ ছড়ায় তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান গদ্যকার দোলনচাঁপা দাসপাল। চন্দ্রিমা দত্তের গদ্যে কাব্যিক প্রেমময়তা ফুটে ওঠে -
‘বড় দীর্ঘ এ সময়, ক্লান্ত ঘুঘু ডেকে যায় অবিরাম
দর্পণ হাসে কেন ? আমাকে কি সাজায় অন্ধকার ?
ফিরোজা রং ডানায় রোদ্দুর চিঠি লিখলে উড়ে গেছি দূরে দূরে ভবঘুরে নদীর সাথে কখনো স্মার্ট তুমুল বাতাসে ... নীলার্ণব প্রেমে ...’।
শেষে ‘নিবিড় পাঠ’ বিভাগে রয়েছে চার চারটি আলোচনা। গল্পকার শর্মিলা দত্তের দেশভাগ, নদীকথাময় ৪৩ টি গল্পের গল্পগ্রন্থ ‘উইন্ডোসিট’-এর বিস্তৃত আলোচনা করেছেন শ্রীবরুণ। মঞ্জরী হীরামণি রায়ের গল্পগ্রন্থ ‘ঝিঁকা’র আলোচনা করেছেন শাশ্বতী ভট্টাচার্য। ‘রূঢ় বাস্তবের রোমান্টিক কবি পীযূষ রাউত’-এর কবিতা নিয়ে যথার্থ আলোচনা করেছেন সুজিৎ দাস এবং ‘মানবী পত্রিকার বিগত সংখ্যার আলোচনা করেছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে টানা হয়েছে সমাপ্তিরেখা।
গদ্যে পদ্যে ভরপুর এমন আয়োজনে ‘মানবী’র অবদান এ অঞ্চলের ছোট পত্রিকার জগতকে ঋদ্ধ করল নিশ্চিত - এবং স্বভাবতই এক অধিকতর মননশীল ভবিষ্যতের দ্বার উন্মুক্ত করে রাখল।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

‘মানবী’ - ২০২১-২২
সম্পাদক - চন্দ্রিমা দত্ত
মূল্য - ৮০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭২৩৫৮ 

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

নিবেদিত সাহিত্যচর্চার গর্বিত পুনরাবলোকন - ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’

সাধারণ অর্থে বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা । যেমনটি করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে । অপরদিকে সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে এনে হুবহু ( শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে ) একত্রীকরণ । সেই হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয় , একটি সংকলন গ্রন্থ । বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক ( সংকলক ) সত্যজিৎ নাথের বিস্তৃত ভূমিকায় । পুরো ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে - ‘ সালটা ১৯৯০ । ‘ দৈনিক সোনার কাছাড় ’- এ একবছর হল আসা - যাওয়া করছি । চাকরির বয়স হয়নি তাই চাকরি নয় , এই ‘ আসা - যাওয়া ’ । …. হঠাৎ করেই একদিন ভূত চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব । ‘… সেই শুরু । অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে।...

মহানিষ্ক্ৰমণ

প্রায় চল্লিশ বছর আগে গ্রামের সেই মায়াময় বাড়িটি ছেড়ে আসতে বেজায় কষ্ট পেয়েছিলেন মা ও বাবা। স্পষ্ট মনে আছে অর্ঘ্যর, এক অব্যক্ত অসহায় বেদনার ছাপ ছিল তাঁদের চোখেমুখে। চোখের কোণে টলটল করছিল অশ্রু হয়ে জমে থাকা যাবতীয় সুখ দুঃখের ইতিকথা। জীবনে চলার পথে গড়ে নিতে হয় অনেক কিছু, আবার ছেড়েও যেতে হয় একদিন। এই কঠোর বাস্তব সেদিন প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছিল অর্ঘ্যও। সিক্ত হয়ে উঠছিল তার চোখও। জন্ম থেকে এখানেই যে তার বেড়ে ওঠা। খেলাধুলা, পড়াশোনা সব তো এখানেই। দাদাদের বাইরে চলে যাওয়ার পর বারান্দাসংলগ্ন বাঁশের বেড়াযুক্ত কোঠাটিও একদিন তার একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষ হয়ে উঠেছিল। শেষ কৈশোরে এই কোঠাতে বসেই তার শরীরচর্চা আর দেহজুড়ে বেড়ে-ওঠা লক্ষণের অবাক পর্যবেক্ষণ। আবার এখানে বসেই নিমগ্ন পড়াশোনার ফসল ম্যাট্রিকে এক চোখধাঁধানো ফলাফল। এরপর একদিন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে উচ্চ পদে চাকরি পেয়ে দাদাদের মতোই বাইরে বেরিয়ে যায় অর্ঘ্য, স্বাভাবিক নিয়মে। ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে যায় দিদিরও। সন্তানরা যখন বড় হয়ে বাইরে চলে যায় ততদিনে বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা মায়ের পক্ষে আর ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বহু জল্পনা কল্পনার শেষে ত...