‘ভালো ছিলাম। খুব ভালো ছিলাম। আনন্দে ছিলাম, যখন ছোট ছিলাম। অথচ যখন সত্যি ছোট ছিলাম, তখন খুব খারাপ লাগত। মনে হতো কবে মেজদার মতো বড় হব, বাজারে যাব,
যখন তখন বেরিয়ে যাব, কেউ কিছু বলবে না।
যখন মেজদার মতো হলাম, তখন মনে হতো কবে বড়দার মতো বড় হব, চাকরি করব, হাতে পয়সা থাকবে। যখন যা ইচ্ছে হবে তাই খাব এবং পড়াশোনাটাও থাকবে না।
যখন বড়দার মতো হলাম, মনে হতো কবে বাবার মতো হব। সবাই আমার কথা শুনবে। আমাকে মান্য করবে।
যখন বাবার মতো হলাম, মনে হল কখন দাদুর মতো হব। সবাই অনেক অনেক সম্মান করবে, সময়ে খাবার এগিয়ে দেবে, শুয়ে বসে রেডিও শুনব, সংবাদপত্র পড়ব।
আর যখন সত্যি সত্যি দাদুর মতো হলাম তখন বুঝলাম আমি ভুল ছিলাম। ছোটোবেলাটাই ভালো ছিল। কারণ তখনই যেন খুব ভালো ছিলাম, আনন্দে ছিলাম।’
এমনই সব ছোট ছোট কথা, ছোট ছোট
দুঃখ ব্যথা নিয়ে একেকটি গল্প যা কিনা প্রতিটি মানুষের জীবনের সারকথা, এসব নিয়েই
আস্ত একটি সংকলন। উপরে উদ্ধৃতিতে দেওয়া অংশটুকু আলোচ্য গল্পটির অর্ধেক থেকেও বেশি।
গল্পের নাম - ‘ভালো ছিলাম - যখন ছোট ছিলাম’। ৮৮ পৃষ্ঠার এই গল্প সংকলনের ৭৮ পৃষ্ঠা
জোড়া মোট ৪৪টি গল্পের সংকলন ‘আলোকন’। স্বভাবতই সব গল্প এক কিংবা দুই পৃষ্ঠার।
মাত্র দুটি গল্প গড়িয়েছে তৃতীয় পৃষ্ঠায়। অর্থাৎ কিনা গল্পগুলিকে অনায়াসে অণুগল্পও
বলা যায়।
গল্পকার শিশির সেনগুপ্ত। এটি লেখকের অষ্টম গ্রন্থ। পূর্ববর্তী গল্প সংকলন ‘প্রতিভাস’-এর মতোই এখানেও স্বল্প কথায় জীবনের চলার পথের অসংখ্য মণি মুক্তাসম অনুভবগুলোকে সহজ, সরল, স্পষ্ট, সটান কথায় - কথকের শিল্পে পরিবেশন করে আদ্যন্ত ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছেন পাঠককে। অধিকাংশ পাঠকই যে নিজেদের খুঁজে পাবেন এই গল্পগুলোর মধ্যে এতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রতিটি গল্পই গড়ে উঠেছে লেখকের ভাই, বোন, মা, দাদা, দিদি, মেজদি, পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়ে। এরাই লেখকের গল্পবিশ্বের চরিত্র। ব্যতিক্রমী চরিত্র হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছেন বাবা। যেখানেই মুশকিল সেখানেই আসান বাবা। বাবার কাছ থেকেই লেখক পেয়েছেন জীবনের অনন্য সব অভিজ্ঞতার রসদ।
প্রতিটি গল্পে লেখক তুলে ধরেছেন কিছু আদর্শের কথা যা কথককে নির্দেশ করেছে চলার পথ। কথক ঋদ্ধ হয়েছেন জীবনের প্রতিটি মোড়ে যদিও এখানে কথকের ছোটবেলার কথাই উঠে এসেছে বেশি করে। পাঠক একটি একান্নবর্তী পরিবারের অন্দরমহলে ঢুকে যান গল্পপাঠ শুরুর মুহূর্ত থেকেই। সেখানে ভাই বোনদের মধ্যে ভালোবাসা, স্নেহ, প্রতিযোগিতা, খুনশুটি, আদর, আহ্লাদ, ভীতি প্রদর্শন, নালিশ, বিরোধিতা, সমর্থন আর মমতার এক অদ্ভুত মিশেল প্রত্যক্ষ করা যায়। একত্রে বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে জীবনবোধের পাঠ পড়ে নেওয়া যায় হাতে কলমে।
কিছু গল্প এতটাই মানবিক বোধের উপর দাঁড়িয়ে যে পাঠশেষে চোখের জল বেরিয়ে আসে। যেমন - বাবার ইচ্ছে, সিগারেট, প্রতিবাদের ভাষা, দিদির বিয়ে, বাজার করা ইত্যাদি।
ব্যতিক্রমী আঙ্গিকে প্রথমেই রয়েছে লেখকের তরফ থেকে সাকুল্যে ছ’লাইনের একটি ভূমিকা। যার চার লাইন তুলে দেওয়া যায় নির্দ্বিধায় - ‘এই বইটি ছাপাবার জন্য আমি খুব ব্যাকুল ছিলাম। কে জানে হয়তো বা এটাই আমার জীবনের শেষ বই কি না। কেন না এই বইটির ঘটনাগুলো আমার সঙ্গেই ঘটেছে। আমাকে শিখিয়েছে, আমার চলার পথটাকে সুন্দর-মসৃণ করেছে এবং সেই সঙ্গে মায়ার জীবনে জড়িয়ে রেখেছে...।’ অর্থাৎ সংকলনের গল্পগুলো গল্পকারের জীবনেরই এক একটি স্ন্যাপশট। সেক্ষেত্রে বলাই যায় এক বৈচিত্র্যময় জীবনের গল্প এবং সেই গল্পের ধারা পরবর্তীতেও পাঠকের প্রত্যাশায় আসতেই পারে। ‘জীবনের শেষ বই’ বলে মেনে নেওয়াটা তাই পাঠকের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।
প্রথম গল্প ‘বাবার ইচ্ছে’তেই গল্পকার বইয়ে দিয়েছেন অনুভূতির প্লাবন। ছোট্ট এই গল্পটির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অনেক কথা। এমনই কিছু উল্লেখযোগ্য গল্প - কলম, বাল্যশিক্ষা, উপহার, পেন্সিল, মমতা, শেষ বার দক্ষিণ ভারত ইত্যাদি। প্রকৃতার্থে প্রতিটি গল্পই জীবনে লব্ধ এক একটি অভিজ্ঞতার বিবরণ। শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেকের পড়ার উপযোগী এক অনবদ্য সংকলন।
স্পষ্ট ছাপা, কমল ঘোষের আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ, নামলিপি, বর্ণ সংস্থাপন - সবকিছুই নান্দনিক এবং যথাযথ। পূর্ববর্তী সংকলন থেকে কয়েকটি গল্প পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে যদিও সবই প্রাসঙ্গিক। এছাড়া অল্প কিছু ভুল বানানের বাইরে এক নিরবচ্ছিন্ন পঠনের সংকলন - ‘আলোকন’।
যখন মেজদার মতো হলাম, তখন মনে হতো কবে বড়দার মতো বড় হব, চাকরি করব, হাতে পয়সা থাকবে। যখন যা ইচ্ছে হবে তাই খাব এবং পড়াশোনাটাও থাকবে না।
যখন বড়দার মতো হলাম, মনে হতো কবে বাবার মতো হব। সবাই আমার কথা শুনবে। আমাকে মান্য করবে।
যখন বাবার মতো হলাম, মনে হল কখন দাদুর মতো হব। সবাই অনেক অনেক সম্মান করবে, সময়ে খাবার এগিয়ে দেবে, শুয়ে বসে রেডিও শুনব, সংবাদপত্র পড়ব।
আর যখন সত্যি সত্যি দাদুর মতো হলাম তখন বুঝলাম আমি ভুল ছিলাম। ছোটোবেলাটাই ভালো ছিল। কারণ তখনই যেন খুব ভালো ছিলাম, আনন্দে ছিলাম।’
গল্পকার শিশির সেনগুপ্ত। এটি লেখকের অষ্টম গ্রন্থ। পূর্ববর্তী গল্প সংকলন ‘প্রতিভাস’-এর মতোই এখানেও স্বল্প কথায় জীবনের চলার পথের অসংখ্য মণি মুক্তাসম অনুভবগুলোকে সহজ, সরল, স্পষ্ট, সটান কথায় - কথকের শিল্পে পরিবেশন করে আদ্যন্ত ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছেন পাঠককে। অধিকাংশ পাঠকই যে নিজেদের খুঁজে পাবেন এই গল্পগুলোর মধ্যে এতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রতিটি গল্পই গড়ে উঠেছে লেখকের ভাই, বোন, মা, দাদা, দিদি, মেজদি, পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়ে। এরাই লেখকের গল্পবিশ্বের চরিত্র। ব্যতিক্রমী চরিত্র হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছেন বাবা। যেখানেই মুশকিল সেখানেই আসান বাবা। বাবার কাছ থেকেই লেখক পেয়েছেন জীবনের অনন্য সব অভিজ্ঞতার রসদ।
প্রতিটি গল্পে লেখক তুলে ধরেছেন কিছু আদর্শের কথা যা কথককে নির্দেশ করেছে চলার পথ। কথক ঋদ্ধ হয়েছেন জীবনের প্রতিটি মোড়ে যদিও এখানে কথকের ছোটবেলার কথাই উঠে এসেছে বেশি করে। পাঠক একটি একান্নবর্তী পরিবারের অন্দরমহলে ঢুকে যান গল্পপাঠ শুরুর মুহূর্ত থেকেই। সেখানে ভাই বোনদের মধ্যে ভালোবাসা, স্নেহ, প্রতিযোগিতা, খুনশুটি, আদর, আহ্লাদ, ভীতি প্রদর্শন, নালিশ, বিরোধিতা, সমর্থন আর মমতার এক অদ্ভুত মিশেল প্রত্যক্ষ করা যায়। একত্রে বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে জীবনবোধের পাঠ পড়ে নেওয়া যায় হাতে কলমে।
কিছু গল্প এতটাই মানবিক বোধের উপর দাঁড়িয়ে যে পাঠশেষে চোখের জল বেরিয়ে আসে। যেমন - বাবার ইচ্ছে, সিগারেট, প্রতিবাদের ভাষা, দিদির বিয়ে, বাজার করা ইত্যাদি।
ব্যতিক্রমী আঙ্গিকে প্রথমেই রয়েছে লেখকের তরফ থেকে সাকুল্যে ছ’লাইনের একটি ভূমিকা। যার চার লাইন তুলে দেওয়া যায় নির্দ্বিধায় - ‘এই বইটি ছাপাবার জন্য আমি খুব ব্যাকুল ছিলাম। কে জানে হয়তো বা এটাই আমার জীবনের শেষ বই কি না। কেন না এই বইটির ঘটনাগুলো আমার সঙ্গেই ঘটেছে। আমাকে শিখিয়েছে, আমার চলার পথটাকে সুন্দর-মসৃণ করেছে এবং সেই সঙ্গে মায়ার জীবনে জড়িয়ে রেখেছে...।’ অর্থাৎ সংকলনের গল্পগুলো গল্পকারের জীবনেরই এক একটি স্ন্যাপশট। সেক্ষেত্রে বলাই যায় এক বৈচিত্র্যময় জীবনের গল্প এবং সেই গল্পের ধারা পরবর্তীতেও পাঠকের প্রত্যাশায় আসতেই পারে। ‘জীবনের শেষ বই’ বলে মেনে নেওয়াটা তাই পাঠকের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।
প্রথম গল্প ‘বাবার ইচ্ছে’তেই গল্পকার বইয়ে দিয়েছেন অনুভূতির প্লাবন। ছোট্ট এই গল্পটির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অনেক কথা। এমনই কিছু উল্লেখযোগ্য গল্প - কলম, বাল্যশিক্ষা, উপহার, পেন্সিল, মমতা, শেষ বার দক্ষিণ ভারত ইত্যাদি। প্রকৃতার্থে প্রতিটি গল্পই জীবনে লব্ধ এক একটি অভিজ্ঞতার বিবরণ। শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেকের পড়ার উপযোগী এক অনবদ্য সংকলন।
স্পষ্ট ছাপা, কমল ঘোষের আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ, নামলিপি, বর্ণ সংস্থাপন - সবকিছুই নান্দনিক এবং যথাযথ। পূর্ববর্তী সংকলন থেকে কয়েকটি গল্প পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে যদিও সবই প্রাসঙ্গিক। এছাড়া অল্প কিছু ভুল বানানের বাইরে এক নিরবচ্ছিন্ন পঠনের সংকলন - ‘আলোকন’।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
প্রকাশক - বাংলা সাহিত্য সভা, অসম
মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৬০০২৯১২৯৯
মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৬০০২৯১২৯৯
Comments
Post a Comment