Skip to main content

শরতে আজ কোন অতিথি


আবার এসেছে স্নিগ্ধ শরৎ শিউলি শিশিরে আলিঙ্গন,
শারদ সুবাসে দোদুল হৃদয় ভোরের আমেজে উতলা মন
শরৎ মানেই কাশফুলে আর ঘাসফুলে যত আলাপ তান
শরৎ মানেই শিমূল পলাশে কিচিরমিচির মধুর গান
 
নীলাকাশ জুড়ে বলাকার ঝাঁক পারাপার শুধু সাঁঝসকাল
পেঁজাতুলো মেঘে পথে যেতে যেতে মুচকি হাসিতে টালমাটাল
শরৎ মানেই সুপ্রভাতের আধফোটা ফুল চয়নসুখ
ভরে নিয়ে সাজি মণ্ডপ পানে বালিক বেলার সহাস মুখ
 
সকাল হতেই হিসেবনিকেশ শারদোৎসব নির্ঘন্ট
মনাকাশ জুড়ে একখানি মুখ সবার উপরে নীলকণ্ঠ
শরৎ মানেই প্রান্তর জুড়ে কিশোরী ধানের উত্তরন
শরৎ মানেই জল সহচরে হংসমিথুন সন্তরণ
 
পাহাড়ি ধারার মন্দ্রবিভোর কুলুকুলু পথে অবরোহন
পথে যেতে যেতে বনানীর সাথে স্নিগ্ধ হাসিতে সম্বোধন
শরৎ মানেই নতুন সকাল নতুন বন্ধু বাহির ঘর
শরৎ মানেই নব পত্রিকা নতুন গুচ্ছে কাশের চর
 
প্রিয় শ্রোতা দর্শকবৃন্দ, শরতের স্নিগ্ধ আগমনে আকাশে বাতাসে যেখানে দাবদাহের জ্বলন্ত সময় পেরিয়ে, অতিমারীর বিভীষিকাময় বছর পেরিয়ে আগমন ঘটেছে মৃদুমন্দ সুখযাপনের উন্মাদনা ঠিক তখনই আমরা এসেছি এই বৈঠকী আসরে অতিথি হয়ে। আমাদের একান্ত আপন স্বরলিপি পরিবারে এমন আমাদের নিত্য আসা যাওয়া। তবু আজ শরতের এই আনন্দঘন ক্ষণে বীণার তারে, প্রাণের পরে অতিথি হয়ে আমরা চেষ্টা করবো সোনার গানে ভরিয়ে দিতে এই আসরের দ্বার।   
 
(১) দ্বৈত - প্রকৃতি - শরৎ - তেওড়া।
শরতে আজ কোন্‌ অতিথি এল প্রাণের দ্বারে।
আনন্দগান গা রে হৃদয়, আনন্দগান গা রে॥
নীল আকাশের নীরব কথা শিশির-ভেজা ব্যাকুলতা
বেজে উঠুক আজি তোমার বীণার তারে তারে॥
শষ্যক্ষেতের সোনার গানে যোগ দে রে আজ সমান তানে,
ভাসিয়ে দে সুর ভরা নদীর অমল জলধারে।
যে এসেছে তাহার মুখে দেখ্‌ রে চেয়ে গভীর সুখে,
দুয়ার খুলে তাহার সাথে বাহির হয়ে যা রে॥
 
যে এসেছে নতুন করে, তার সাথে গভীর সুখে বাহির হতে চায় মন। সুন্দরের সাথে সঙ্গসুখে ফুটে ওঠে চোখ, বাতাসবাহিত সৌরভে অন্তর হয়ে ওঠে তৃপ্ত। শরতে আর সুন্দরে হৃদগগনে সৃষ্টি হয় আনন্দলহর। আগমন বার্তায় অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জুড়ে ঝলকে ওঠে আলোকোজ্জ্বল আভা। সুন্দরের সঙ্গলাভে ধন্য হয় অন্তর।  
 
(২) সৈকত - পূজা - ঝম্পক।
এই লভিনু সঙ্গ তব, সুন্দর হে সুন্দর!
পুণ্য হল অঙ্গ মম, ধন্য হল অন্তর   সুন্দর হে সুন্দর ॥
আলোকে মোর চক্ষুদুটি  মুগ্ধ হয়ে উঠল ফুটি,
হৃদগগনে পবন হল সৌরভেতে মন্থর   সুন্দর হে সুন্দর ॥
এই তোমারি পরশরাগে চিত্ত হল রঞ্জিত,
এই তোমারি মিলনসুধা রইল প্রাণে সঞ্চিত।
তোমার মাঝে এমনি ক'রে নবীন করি লও যে মোরে
এই জনমে ঘটালে মোর জন্ম-জন্মান্তর সুন্দর হে সুন্দর ॥
 
এক জনমে বহু জনমের সুখলহর এসে আপ্লুত করে দেয় অন্তর-বাহির। শরৎ এসেছে দ্বারে - এই মধুর বার্তায় দু’চোখে খেলে যায় প্রকৃতির অপরূপ রূপ মাধুর্য। শরতের আকাশে বাতাসে প্রত্যহ যেন এক লুকোচুরির খেলা। ঘরে ভার মন রয় না আজ। বাহিরের মাঝেই ইচ্ছে করে বিলিয়ে দিতে নিজেকে। নদীর তীরে, দ্বীপে-চরে ফুলে ফুলে যেখানে সাদা হয়ে থাকে পৃথিবী ঠিক তেমনি নীলাকাশ জুড়ে সাদা মেঘের ভেলায় যেন ভেসে বেড়ায় শ্বেত শুভ্র পরীর দল। ঘর নয় তাই আজ, বাহিরই হক ঠিকানা - রোদে - ছায়ায় ধানের খেতে সোনালী কিংবা সবুজিমায় অনন্ত সময় ধরে চলুক লুকোচুরি খেলা।  
 
(৩) দ্বৈত - প্রকৃতি - শরৎ - কাহারবা।
আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়
লুকোচুরি খেলা রে ভাই - লুকোচুরি খেলা ।
নীল আকাশে কে ভাসালে
সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই - লুকোচুরি খেলা ।।
আজ ভ্রমর ভোলে মধু খেতে উড়ে বেড়ায় আলোয়-মেতে,
আজ কিসের তরে নদীর চরে চখা-চখীর মেলা ।
নীল আকাশে কে ভাসালে
সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই - লুকোচুরি খেলা ।।
ও রে যাব না আজ ঘরে রে ভাই, যাব না আজ ঘরে ।
ওরে, আকাশ ভেঙে বাহিরকে আজ
নেবরে লুট ক'রে - যাব না আর ঘরে ।
যেন জোয়ার-জলে ফেনার রাশি বাতাসে আজ ছুটছে হাসি,
আজ বিনা কাজে বাজিয়ে বাঁশি কাটবে সকল বেলা ।
নীল আকাশে কে ভাসালে
সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই - লুকোচুরি খেলা ।।
 
শরত এসেছে, রোদঝলসানো বসুন্ধরায় শ্যামল শীতল ছায়ায় পরান হয়েছে শান্ত, প্রকৃতি সেজেছে শারদ শোভায়। কবিমন তাই শরতের আবাহনে উদ্বেল, উতলা। শারদলক্ষ্মীর আরাধনায় পরাবাস্তব মননে কল্পনায় গ্রথিত হয়েছে ঝরা মালতী আর শিশিরবিধৌত শিউলিমালা। নদীর দুকূল জুড়ে, গভীর বনানীর অন্তরে, নীল গিরিপথে শারদলক্ষ্মীর আগমন ধ্বনিতে বেজে ওঠে ভুবনজোড়া গুঞ্জরতান। কাশগুচ্ছ আর নবীন ধানের স্বর্ণমঞ্জরী দিয়ে বরণডালা হয়েছে সজ্জিত।  
 
(৪) সুচয়িতা - প্রকৃতি - শরৎ - একতাল।
আমরা  বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা--
          নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা ॥
          এসো গো শারদলক্ষ্ণী, তোমার শুভ্র মেঘের রথে,
এসো    নির্মল নীলপথে,
এসো    ধৌত শ্যামল আলো-ঝলমল-বনগিরিপর্বতে--
এসো    মুকুটে পরিয়া শ্বেতশতদল শীতল-শিশির-ঢালা ॥
          ঝরা মালতীর ফুলে
          আসন বিছানো নিভৃত কুঞ্জে ভরা গঙ্গার কূলে
          ফিরিছে মরাল ডানা পাতিবারে তোমার চরণমূলে।
          গুঞ্জরতান তুলিয়ো তোমার সোনার বীণার তারে
          মৃদুমধু ঝঙ্কারে,
          হাসি-ঢালা সুর গলিয়া পড়িবে ক্ষণিক অশ্রুধারে।
          রহিয়া রহিয়া যে পরশমণি ঝলকে অলককোণে
          পলকের তরে সকরুণ করে বুলায়ো বুলায়ো মনে--
          সোনা হয়ে যাবে সকল ভাবনা, আঁধার হইবে আলা
 
শরতের আগমনে শুধু প্রকৃতিসাথীদের মনেই যে লেগেছে আনন্দের ছোঁয়া তা তো নয়। শরত তো নেমে আসে আপামর বসুন্ধরায় স্নিগ্ধতার পরশ নিয়ে। গ্রাম, গঞ্জ, নগরবাসী - সবার হৃদয়ে তাই জেগে ওঠে আনন্দ বার্তা। কবি তাই ভার নিয়েছেন সুন্দরের আবাহনের। শরতের আকুল আহ্বানে মন যেমন ছুটে চলে যেতে চায় ঘরের বাইরে তেমনি ঘরের দুয়ার খুলেও দিতে হয় বিশ্বজনের কল্যাণে। শরত আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে আকাশ রাঙিয়ে, চিত্ত পুলকে সম্পৃক্ত করে দিয়ে। ধনে ধান্যে মানব জীবন আনন্দে আনন্দিত হয়ে গেয়ে ওঠে -  
 
(৫) দ্বৈত - পূজা - দাদরা।
তোমার আনন্দ ওই এল দ্বারে, এল এল এল গো। ওগো পুরবাসী
বুকের আঁচলখানি ধুলায় পেতে আঙিনাতে মেলো গো ॥
পথে সেচন কোরো গন্ধবারি মলিন না হয় চরণ তারি,
তোমার সুন্দর ওই এল দ্বারে, এল এল এল গো।
আকুল হৃদয়খানি সম্মুখে তার ছড়িয়ে ফেলো ফেলো গো ॥
তোমার সকল ধন যে ধন্য হল হল গো।
বিশ্বজনের কল্যাণে আজ ঘরের দুয়ার খোলো গো।
হেরো রাঙা হল সকল গগন, চিত্ত হল পুলকমগন,
তোমার নিত্য আলো এল দ্বারে, এল এল এল গো।
তোমার পরানপ্রদীপ তুলে ধোরো, ওই আলোতে জ্বেলো গো ॥
 
পরাণপ্রদীপ জ্বেলে শারদ স্নিগ্ধ প্রভাতে কবিমন ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের সাথে। দেশ থেকে দেশান্তরে, যুগ থেকে যুগান্তরের এই যাত্রাবেলায় অচেনাকে চেনার যে আকুল বাসনা, অজানাকে জানার যে আনন্দ সে তো সে-ই জানে, যে হৃদমাঝারে আপন করে নিতে পারে অচিনপুরের নবাগত, অনাহূতকে। তাই তো অবারিত কবিমন অচেনা বিদেশিনীকেও সঁপে দিতে পারেন প্রাণ। ভুবনব্যাপী পরিব্রজনের ফাঁকে অনায়াসে অতিথি হয়ে আবির্ভুত হোন নূতনের দ্বারে। নুতনের সাথে যে তাঁর যুগান্তরের সখ্য। মাধবী রাতে কিংবা শারদ প্রাতে বিশ্বজনীনতার বিমূর্ত প্রতীক হয়ে কবির অন্তরে বেজে ওঠে নব নব সুর।     
 
(৬) সৈকত - প্রেম - একতাল।
আমি চিনি গো চিনি  তোমারে ওগো বিদেশিনী।
তুমি থাক সিন্ধুপারে  ওগো বিদেশিনী॥
তোমায়  দেখেছি শারদপ্রাতে, তোমায় দেখেছি মাধবী রাতে,
তোমায়  দেখেছি হৃদি-মাঝারে ওগো বিদেশিনী।
আমি আকাশে পাতিয়া কান  শুনেছি  শুনেছি তোমারি গান,
আমি  তোমারে সঁপেছি প্রাণ ওগো বিদেশিনী।
ভুবন ভ্রমিয়া শেষে আমি  এসেছি নূতন দেশে,
আমি  অতিথি তোমারি দ্বারে  ওগো বিদেশিনী॥
 
ভুবন ভ্রমিয়াক্লান্ত কবিমন এক সময় কোনও এক শারদ প্রভাতে নিশি শেষের তারার মতো বিদায় গাথায় সিক্ত হয়ে ওঠে। জীবন ধারার এও তো এক অনিবার্য পথ। কত কথা থেকে যায় অস্ফুট, কত সুর রয়ে যায় প্রাণের ভিতর - অপ্রকাশিত। আনন্দেরই মাঝে চোরকাঁটার মতো লুকিয়ে থাকে বিষাদ গাথা। আনন্দ আর বিষাদ তো জীবনেরই এক সম্পূরক অঙ্গ। তাই তো স্নিগ্ধ, সরল শারদ প্রাতেও কবি খুঁজে ফেরেন প্রকৃত বাঁশিওয়ালাকে যে হতে পারে তাঁর উপযুক্ত উত্তরসূরী।   
 
(৭) দ্বৈত - প্রকৃতি - শরৎ - দাদরা।
আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে
বাঁশি, বাঁশি তোমায় দিয়ে যাবো কাহার হাতে
তোমার বুকে বাজলো ধ্বনি
বিদায়গাঁথা, আগমনী কত যে
ফাল্গুনে শ্রাবণে কত প্রভাতে রাতে।
যে কথা রয় প্রাণের ভিতর অগোচরে
গানে গানে নিয়েছিলে চুরি করে, অগোচরে
সময় যে তার হল গত
নিশি শেষের তারার মতো, হল গত
শেষ করে দাও শিউলিফুলের মরণ সাথে।
 
বিদায়ের সুর বেজে উঠতেই এক চিরন্তন সমর্পনের ভাবনা জাগে অন্তরে। বিশ্ববিধাতার চরণধূলায় ধূসর হওয়ার সাধ জাগে মনে। কবি মনে কোনও প্রার্থনা নেই। সবার নিচে, সবার অগোচরে, অভিমানে অভিমানে তাঁরই আসনতলে লুটিয়ে থাকার মানসে বেজে ওঠে সমর্পণ-সঙ্গীত -
 
(৮) সুচয়িতা - পূজা - ত্রিতাল।
ওই  আসনতলের মাটির 'পরে লুটিয়ে রব।
তোমার চরণ-ধুলায় ধুলায় ধূসর হব।
কেন আমায় মান দিয়ে আর দূরে রাখ,
চিরজনম এমন করে ভুলিয়ো নাকো,
অসম্মানে আনো টেনে পায়ে তব।
তোমার চরণ-ধুলায় ধুলায় ধূসর হব॥
আমি তোমার যাত্রীদলের রব পিছে,
স্থান দিয়ো হে আমায় তুমি সবার নীচে
প্রসাদ লাগি কত লোকে আসে ধেয়ে,
আমি কিছুই চাইব না তো রইব চেয়ে;
সবার শেষে বাকি যা রয় তাহাই লব।
তোমার চরণ-ধুলায় ধুলায় ধূসর হব॥
 
একের পর এক শরৎ নেমে আসে আসে জগৎ সংসারে। শরতের পর ঋতুবদলে বসন্ত বর্ষা এসে সামলে রাখে বসুন্ধরা। মানব জীবনেও একের পর এক ঋতু বদলের শেষে ভেসে আসে মন্দ মধুর বিদায় সুর। সব কিছুরই এক সুন্দর সমাপনে সার্থক হয়ে ওঠে জীবনসঙ্গীত। একটা সময় আসে যখন চরাচরে শুধু বিদায়বাণীর ঘোষণা। সব ফেলে যেতে চায় মন।
আমাদেরও আজ সময় হয়েছে সন্ধ্যাশেষে শেষের গানটি গাওয়ার। বেলাশেষে শারদ প্রাতের অতিথি আমরা আজ, হয়ে উঠেছি একান্তই কাছের জন। আজ এই অনাবিল শারদ সন্ধ্যায় আতিথ্যের গরজটুকু উজাড় করে দিয়ে এবার তবে বিদায় মন্ত্রে বাঁধা হোক সুর। পালে হাওয়া লাগুক - মন্দ মধুর। সব চাওয়া পাওয়ার শেষে ভেসে যাক মন শারদ মেঘের ভেলায়। 
 
(৯) দ্বৈত - প্রকৃতি - শরৎ - একতাল।
অমল ধবল পালে লেগেছে  মন্দ মধুর হাওয়া--
দেখি নাই কভু দেখি নাই  এমন তরণী বাওয়া॥
কোন্‌ সাগরের পার হতে আনে কোন্‌ সুদূরের ধন--
ভেসে যেতে চায় মন,
ফেলে যেতে চায় এই কিনারায় সব চাওয়া সব পাওয়া॥
পিছনে ঝরিছে ঝরো ঝরো জল, গুরু গুরু দেয়া ডাকে--
মুখে এসে পড়ে অরুণকিরণ ছিন্ন মেঘের ফাঁকে।
ওগো কাণ্ডারী, কে গো তুমি, কার হাসিকান্নার ধন।
ভেবে মরে মোর মন--
কোন্‌ সুরে আজ বাঁধিবে যন্ত্র, কী মন্ত্র হবে গাওয়া॥

 

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়