Skip to main content

সীমানা ছাড়িয়ে


“শরতে আজ কোন অতিথি, এলো প্রাণের পরে
আনন্দ গান গা রে হৃদয়, আনন্দ গান গা রে।”
বর্ষাশেষে এই শরতের স্নিগ্ধ, কোমল পরশে সত্যি আনন্দিত হয়ে ওঠে আমাদের মন, প্রাণ। আমাদের প্রাণের পরে উৎসবের আমেজ এসে অনাবিল মুগ্ধতায় ভরিয়ে দেয় যাপিত এই জীবন পথ। অথচ কেমন করে যে ধাপে ধাপে সীমানা ছাড়িয়ে মানুষ পেরিয়ে যায় এই জীবন পথ তা সে নিজেই জানে না। একটা সময় হৃদয়ে অনুভূত হয় শেষের সঙ্গীত। বেজে ওঠে জীবন পথের সালতামামি গান। প্রভাত থেকে অপরাহ্নের এই যাত্রাপথে কবিগুরুর বৈরাগ্যসাধনে মুক্তির অনীহার মধ্য দিয়ে ধ্বনিত হয় মরণের জয়গান - মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। ‘অপরাহ্ন’ কবিতায় কবিগুরু লিখছেন -
প্রভাতে যখন শঙ্খ উঠেছিল বাজি
তোমার প্রাঙ্গণতলে, ভরি লয়ে সাজি
চলেছিল নরনারী তোয়াগিয়া ঘর
নবীন শিশিরসিক্ত গুঞ্জনমুখর
স্নিগ্ধ বনপথ দিয়ে । আমি অন্যমনে
সঘনপল্লবপুঞ্জ ছায়াকুঞ্জবনে
ছিনু শুয়ে তৃণাস্তীর্ণ তরঙ্গীনিতীরে
বিহঙ্গের কলগীতে, সুমন্দ সমীরে ।।
- - - - - - -
আজকের এই শিশিরসিক্ত ক্ষণে অপরাহ্নের ভাবনায় - সাজি ভরানোর শুভ সূচনায় গীত হোক -
 
আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে।
বাঁশি, তোমায় দিয়ে যাব কাহার হাতে।
তোমার বুকে বাজল ধ্বনি
বিদায়গাথা, আগমনী, কত যে--
ফাল্গুনে শ্রাবণে, কত প্রভাতে রাতে॥
- - - - - - - - -
নিশিশেষের তারার রাতে জীবন বীক্ষায় আন্দোলিত হয় মন জাগরণে, স্বপ্নে শেষের ছবি ফুটে ওঠে কল্পনায় রাতের কোলাজে আঁকা থাকে জীবন-চরিত কবির কলমে সৃষ্টি হয় -
রাতের কোলাজ
ঘুম আসে না রাতে
সময় থেমে থাকে না,
মেঘেরা উড়ে উড়ে হয় দেশান্তরী
স্বপ্নেরা মনের বেগে পাড়ি দেয়
অগোছালো বুনোট বেঁধে, 
দলছুট ছন্নছাড়া সব জেগে থাকা স্বপ্ন
ঘর বাঁধি রোজ - শব্দের খেলাঘর
শব্দই ভাঙে স্বপ্নসৌধ
তপ্ত আভরণে ছটফট জীবনচরিত 
শেষের কবিতা রোজ গড়ে যাই
শেষ কোলাজে হারিয়ে যাই - রোজ
ঘুমিয়ে থাকি উঠোন জুড়ে, 
রাস্তা ঘাটে, মাঠের ধারে, 
বনবাদাড়ে, পুকুর পারে আর
হারিয়ে যাওয়া অবয়বের মধ্যিখানে
শেষের কবিতায় দেশান্তরী হয় মেঘ। যেতে যেতে মেঘে-সাগরে-ভুবনে-গগনে আলাপচারিতায়, দুঃখে, প্রেমে জীবনতরীর টুকরো গাথা হয় রচিত।
 
মেঘ বলেছে যাবো যাবো রাত বলেছে যাই,
সাগর বলে কূল মিলেছে আমি তো আর নাই,
দুঃখ বলে রইনু চুপে তাঁহার পায়ের চিহ্নরূপে,
আমি বলে মিলাই আমি আর কিছু না চাই,
- - - - - - - - - -
এই যুগে যুগে কেউ জেগে থাকে বলেই তো এই জীবনতরী বাওয়া। মোহনা পথে অগুনতি পথসাথীর জন্যই তো সফল হয় পথ চলা। সেই সহচরের সাহচর্যেই তো শেষের পথেও আলোর অবস্থিতি। সে-ই তো আমার -
হৃদমাঝারে মনের মানুষ
কেউ আছে বলে -
সঘন গ্রহণ শেষে সূর্য ছড়ায় আলো।
কেউ আছে বলে -
দুঃখ বেলার শেষে ফিরে আসে ভালো।
কেউ আছ বলে -
সারাটি ব্যথার ঘায়ে সুখের প্রলেপ নিশি দিন।
কেউ আছে বলে -
অজ্ঞানে তিমিরে দেখি জীবন মরণে করে লীন।
কেউ আছে বলে -
কঠিন যাপন ক্ষণে বাজে বাঁশি সহজ সুরে।
আমি কি রেখেছি তারে
আমার হৃদমাঝারে মনের মানুষ করে ?
জাগ্রত মননে সেই পথের সাথীকে ধরে রাখতে হয় আপন করে। নাহয় একলা পথে দুঃখ হবে সাথী। মনের সিংহাসনে আধিষ্ঠিত করতে হয় চলার পথের সাথীকে। অন্যথা আজীবন অন্বেষণেই কেটে যায়  বেলা। মনের মানুষকে জাগ্রত করে বেঁধে রাখরে হয় হৃদমাঝারে।
 
আমার মন, যখন জাগলি না রে
ও তোর মনের মানুষ এল দ্বারে।
তার চলে যাওয়ার শব্দ শুনে ভাঙল রে ঘুম--
ও তোর ভাঙল রে ঘুম অন্ধকারে ॥
- - - - - - - - -
পথের পথিক হারিয়ে গেলে ফিরে পাওয়া যায়না কভু। চলার পথের সহচরের অন্তর্ধানে নিস্তব্ধ হয় চরাচর। তখনই তো শুরু হয় বিশ্ব প্রভুর অন্বেষন। যেন কোন গরজে হৃদয় জুড়ে নিজেরই অজান্তে ভেসে আসে আহ্বান রব।
আছো প্রভু অন্তরে
মনে দ্বিধা অহরহ -
অস্তিত্বের প্রশ্নে সঘন পালাবদল।
কে শেখালো জীবন চর্চা,
কে শেখালো ভাবতে এমন প্রশ্ন ?
সেই যে প্রথম আলোয় আসা
কে শেখালো মাতৃদুগ্ধ পান -
ধাপে ধাপে কার ইশারায় জীবনমুখী গান ?
জন্মদাতা জন্মদাত্রীর প্রথম শিক্ষা শেষে
হালটি ধরেন শিক্ষাগুরুকূল
পথের শেষে আবার তো সেই একলা একা।
এই একলা পথে হালটি ধরেন যিনি
মন গগনে ভরসা জোগান তিনি। 
বাড়িয়ে দিয়ে আশীর্বাদের হাত
কঠিন ক্ষণে দেখান সঠিক দিশা
একলা আমি এমন বড় নই
করবো যাপন আপন মতে ঠিক। 
অলক্ষ্যে তাই উপস্থিতির
পাই যে সাড়া চলার পথে রোজ
জীবন গুরু আছো নিরন্তর
তবে কেন দ্বিধা অবান্তর ?
পার্থিব অনুভবে সেও তোমার দান
তাই তো আমি গাই জীবনের গান।
গুরোর্ব্রহ্মা গুরোর্বিষ্ণো গুরোর্দেবো মহেশ্বর
গুরোরেবঃ পরম ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রী গুরোবে নমঃ।
আহ্বানে আহ্বানে ভেসে আসে জীবন ছবির সকল প্রাপ্তি। আকাঙ্ক্ষিতের আগমন কল্পনায় ধরা দেয় আকুতি। দৃষ্টি সম্মুখে চরাচরলোকে চোখে চোখে তাঁর দরশ মাগে।
 
দাঁড়াও আমার আঁখির আগে।
তোমার দৃষ্টি হৃদয়ে লাগে।।
সমুখ-আকাশে চরাচরলোকে
এই অপরূপ আকুল আলোকে দাঁড়াও হে,
আমার পরান পলকে পলকে চোখে চোখে তব দরশ মাগে।।
- - - - - - - - -
শেষের পথে যা আছে সম্বল তাকেই আঁকড়ে ধরি প্রাণপণ। সুরে সুরে, হাতে হাত ধরে, পায়ে মিলিয়ে পা - হেঁটে যাই -
মহাপ্রস্থান পথে
চলো পথ হাঁটি - 
পথেই তো আছি। শুধু রূপ পাল্টায় পথ।
দীর্ঘ জীবন পথের কত অলিগলি পদপথ
সব পথে জমা হয় অনুভব
অনুভবে ঋদ্ধ হয় জীবন ধারা।
একদিন দুই পথ এসে মিলেছিল একখানে
এরপর আবার - ভিন্ন হয়েছে পথ।
চাওয়া পাওয়ার মূল্য ছিল না কোনও
মন জানালা রুদ্ধ হয়েছে বার বার।
অবশেষে আঘাতের পর আঘাতে আঘাতে
দীর্ণ হতে হতে অন্ত হয়েছে পথ চাওয়া
হাতে হাত ধরে একসাথে পথ চলা।
জানি, সেই পথও ফুরাবে এক দিন
আবার রুদ্ধ হবে পথ - আগুপিছু।
সেই একলা একা পথ চলার পুনরাবৃত্তি
শেষের সেদিন কাঁদায় বড়
থাকবে কি কেউ লাগিয়ে দিতে
ব্যাথায় প্রলেপ, 
পথের শেষে বলবে এসে
এসো - পথ চলি পায়ে পায়ে 
এগোই খানিক মহাশূন্যের পথে,
মহাপ্রস্থান পথে ?
 
কণ্ঠে নিলেম গান, আমার শেষ পারানির কড়ি--
একলা ঘাটে রইব না গো পড়ি ॥
আমার সুরের রসিক নেয়ে
তারে ভোলাব গান গেয়ে,
পারের খেয়ায় সেই ভরসায় চড়ি ॥
- - - - - - - -
গানে গানে অর্গল ভেঙে সুমধুর এই এগিয়ে যাওয়ার নামই তো জীবন। অবশ্যম্ভাবী যাত্রাপথের অনন্ত যাত্রা। পালাবদলের অছিলায় আদ্যন্ত পথ চলা। কী বিস্তৃত মহিমায় ভাস্বর এক একটি জীবন -
একটি জীবন
এ জীবন একরাশ পালাবদলের ইতিকথা
ছুটে চলা শুধু বেঁচে থাকা প্রয়োজনে
সে তো শুধু যুদ্ধ কথা, তাগিদ - গরজ যত।
এর বাইরে, পাশাপাশি চলে মনের খোরাক
বিচিত্র সব খেয়াল খুশি আপন বিশ্ব রচে।
আধেক জীবন শুধুই অপচয়,
নিষ্ফল যাপন বেলার মানগত অবক্ষয়।
বেঁচে থাকা স্বল্প দিনের কল্পকথায়
আপ্রাণ শুধু মুক্তো কুড়ানোর বেলা, 
শেষের বেলার বেগময় ছুটে আসা
তনু মন জুড়ে সঞ্চিত সুখস্পৃহা। 
এক জীবনে হয় না যে সব সারা -
সবটুকু বেলা নিঃশেষ মিছে অভিনয়ে
বাকি থাকা কাল - শেষ যুদ্ধে ছুটে চলা
একটি জীবন আদ্যন্ত পথ চলা।
বেলা শেষে সবাই মিলে পথ চলার প্রত্যয়ে ঋদ্ধ হয় জীবন পথ। যত দুঃখ। যত কান্না সব বাটোয়ারায় হবে বিলীন। শুধু ভরসাই হবে পাথেয়। ভরসাতেই সয়ে যাবে যত ক্লেশ, যত গ্লানি। চলার পথে নিশিদিন এই সমর্পণ, এই ভরসাই তাই  শেষ কথা।
 
নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন, হবেই হবে।
যদি পণ করে থাকিস সে পণ তোমার রবেই রবে।
পাষাণসমান আছে পড়ে, প্রাণ পেয়ে সে উঠবে ওরে,
আছে যারা বোবার মতন তারাও কথা কবেই কবে ॥
- - - - - - - - -
প্রকৃতি আর জীবন দেবতার রোষানলে এমনও হয় যে সবাই একসাথে শেষের পথে ধাবমান হতে হয়। আজ পৃথিবীর গভীর অসুখ। এই ত্রস্ত বেলায় চরাচর জুড়ে শুধ্য অন্ধকার, হাহাকার। তবু এরই মাঝে ভরসা থাকুক মানবিকতায়, ভরসা থাকুক প্রেম, ভালোবাসায়। মারীশেষে আবারো জেগে ওঠার ভাবনায় -
মারীশেষের ভালোবাসা
রোজ বিকেলে সন্ধ্যাগুলো ছড়ায় সোনা দিগ্বিদিক
হৃদয় আমার বলছে যেন একদিন তুই আসবি ঠিক
আর কত দিন অদেখার এই চলবে পালা জানি না
এমনি করেই অনন্ত কাল পথ চাওয়া তা মানি না
সকাল বেলার রোদ ঝলমল শূণ্য হৃদয় পুড়েই খাক
তুই দুপুরের বিষণ্ণতায় আমায় নিয়েই মগ্ন থাক 
আমার রাতের রিক্ত আকাশ তোকেই দেবো বিলিয়ে
যেমন খুশি আসবি যাবি মন গগনে হাঁক দিয়ে
### 
জানি জানি আসবে আবার হারানো দিন ছিল যা
স্পর্শ সুখে ভাসবো আবার ভরা নদী কী মজা 
অমন করে মন খারাপের যাপন বেলায় ডুবিস না
বেলা শেষে ডুবসাঁতারে আসব আমি ভাবিস না 
যতই আসুক ঝঞ্ঝা তুফান তৃষ্ণা আমার অনিঃশেষ
মিলন আশায় কাটাই বেলা তাড়াই যত হা-পিত্যেশ 
মারি শেষে আবার ভালে চুম্বন টিপ পরাবো
বিশ্বপ্রেমের সুখ প্লাবনের বন্ধনে ফের জড়াবো
তাই সংসারে যতই ছড়িয়ে পড়ুক অন্ধকার হৃদয় যেন আকুল হয় আনন্দমুখের সন্ধানে। জ্যোতিস্মানের অমৃত মূরতি ভেসে উঠুক নয়ন সম্মুখে।
 
সংসারেতে চারি ধার করিয়াছে অন্ধকার,
নয়নে তোমার জ্যোতি অধিক ফুটেছে তাই।।
চৌদিকে বিষাদঘোরে ঘেরিয়া ফেলেছে মোরে,
তোমার আনন্দমুখ হৃদয়ে দেখিতে পাই।।
- - - - - - - -
ভয় যদি মিছে হয়, শোক যদি মিছে হয় তবে কীসের দুঃখ, কীসের হাহাকার ? জীবন মৃত্যু তো নিছকই পায়ের ভৃত্য। জীবনের সাথে সাথে তাই মৃত্যুরও হোক জয়জয়কার। বেজে উঠুক আজ জীবনের পাশাপাশি -
মৃত্যুর জয়গান
ওই যে ভোরের পাখিটা- গান গেয়ে যায়
ওই যে বাউলের একতারাটা- সুর তোলে যায়
ওরা কার গান গায় ?
আমার গান, তোমার গান- জীবনের জয়গান। 
জয়গান কি শুধু জীবনেরই- মৃত্যুর নয় ?
নদীটার উজানেই যদি জীবন
ভাটিতেই তো তার মৃত্যু
একই জল- একই গান- এটাই তো অপার সত্যি। 
শরীরী আর অশরীরীর অবাক করা এক ফারাক
চিন্তার স্রোতটাকে থামিয়ে রাখে একই বিন্দুতে
ওখান থেকেই ভাবনার উৎসবিন্দু
পথ খুঁজে বেড়ায় বিশ্লেষণের বেড়াজাল ডিঙিয়ে। 
জীবন নাট্যের মৃত্যু যবনিকা
হোক না আরেক চিত্রনাট্যের সূত্রপাত।
যেখানে স্মৃতির সম্ভারে পরিপূর্ণ হবে
ফেলে আসা জীবনেরই আরেক অলিখিত অধ্যায়। 
বড় করে নাহয় না-ই দেখলাম
জীবনটা তো আমার হাতের মুঠোয়
ফুৎকারে আজ হাওয়ায় ভাসাই মৃত্যুকে
নতুন করে আজ গেয়ে বেড়াই- মৃত্যুর জয়গান।
অগুনতি চিত্রনাট্য সম্বলিত মহাজীবনের পথে - এই অবশ্যম্ভাবী মহামুক্তির পথে আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।
 
আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে ॥
তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা,
বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে ॥
- - - - - - - -
জীবনপথের বৃত্তান্তের যবনিকাপাতের ক্ষণে আবারো সমর্পণ সেই সর্বশক্তিমানকে। মৃত্যুঞ্জয় অভীপ্সায় আবারো স্মরণ আমাদের অনন্ত চলার পথের এক এবং অদ্বিতীয় সাথী কবিগুরুকে তাঁরই কবিতায় -
মৃত্যুঞ্জয়
দূর হতে ভেবেছিনু মনে
দুর্জয় নির্দয় তুমি, কাঁপে পৃথ্বী তোমার শাসনে।
তুমি বিভীষিকা,
- - - - - - - -
তোমার ভ্রূকুটিভঙ্গে তরঙ্গিল আসন্ন উৎপাত, —
নামিল আঘাত।
পাঁজর উঠিল কেঁপে, বক্ষে হাত চেপে
শুধালেম, “আরো কিছু আছে নাকি,
আছে বাকি শেষ বজ্রপাত ?’
নামিল আঘাত।
এইমাত্র? আর কিছু নয় ?
ভেঙে গেল ভয়।
- - - - - - - - -
আমার টুটিল সব লাজ।
যত বড়ো হও, তুমি তো মৃত্যুর চেয়ে বড়ো নও।
আমি মৃত্যু-চেয়ে বড়ো এই শেষ কথা বলে
যাব আমি চলে।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়