Skip to main content

সুস্থ সংস্কারবোধের উপযোগী সংকলন ‘ছোটদের গল্প’


শিশু সাহিত্য কিংবা ছোটদের নিয়ে আজকাল খুব একটা লেখালেখি চোখে পড়ে না। বিশেষত উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্য পরিমণ্ডলে যা কিছু কাজ হচ্ছে তা নিতান্তই স্বল্প এবং বহুল প্রচারের অভাবে অন্তরালেই থেকে যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের সাহিত্য পেনশন প্রাপ্ত সাহিত্যিক অশোক বার্মা শিশু সাহিত্য নিয়ে কাজ করছেন বহু দিন ধরে। ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে এ বিষয়ক তাঁর দুটি হিন্দি বই। ‘নন্‌হে মুন্নে কী লোরিয়া’ - ভাগ ১ ও ২। বাংলায় লিখেছেন ‘বিন্নি পাপাইয়ের ছড়া’। এছাড়া যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেছেন ‘ছড়ায় মজা’ শীর্ষক তিনটি সংকলন - ভাগ ১, ২ ও ৩। তবে গল্প নিয়ে এই প্রথম সংকলন করলেন তিনি। মৌলিক গল্প নয় যদিও শিশুসাহিত্যের পরিসরে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি কাজ নিঃসন্দেহে।
সামাজিক মাধ্যমে একটি বার্তা প্রায়শই ঘুরে ফিরে আসে আজকাল - ‘যেদিন থেকে মাস্টারমশাইয়ের হাত থেকে বেত কেড়ে নেওয়া হয়েছে সেদিন থেকেই সমাজ অধঃপতনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে’’। বিষয়টি বিতর্কিত যেহেতু এবং সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই এমন হয়েছে তাই বিশদে এ নিয়ে না গিয়েও বলা যায় যে শুধু মাস্টারমশাইয়ের বেত নয় স্কুলের বা গৃহাভ্যন্তরে লালিত শিশুদের নীতিশিক্ষামূলক গল্পের মাধ্যমে আগের সেই জ্ঞানবর্ধনের প্রচেষ্টা এখন আর দেখা যায় না। বিদেশি রাইম বা দেশীয় কঠিন, নীরস গল্প, কবিতার মাধ্যমে সেইসব কোমলমতি শিশুদের শৈশব কেড়ে নিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় কঠোর বাস্তবের কচকচানি।
এই অবস্থানে দাঁড়িয়ে অশোক বার্মার সদ্য প্রকাশিত শিশুদের উপযোগী গল্প সংকলন ‘ছোটদের গল্প’কে এক ভিন্ন আদর্শের, ভিন্নতর প্রয়াস হিসেবে আখ্যায়িত করাই যেতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরেও ঘরের অন্দরমহলে উল্লিখিত সংকলনে সন্নিবিষ্ট গল্পগুলি শিশুদের পাঠ করে শোনালে কিংবা পাঠে আগ্রহী করে তুললে ভবিষ্যতে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার পথে এক সদর্থক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। শিশু মন সততই কোমল। তাই এই বয়সে এমন সব গল্পই তাদের গড়ে তুলতে পারে ভবিষ্যতের এক সুস্থ চিন্তাসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে। এবং এই প্রত্যয় থেকেই গল্পকার/অনুবাদক গ্রন্থের ভূমিকায় লিখছেন - সংকলনের গল্পগুলি শিশু-কিশোরদের উপযোগী। নিজেকে গড়ে তোলায় হয়তো সাহায্য করবে। কৌতূহলী করবে, সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ বাড়াবে...।
৩৪ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে আছে মোট ২১ টি গল্প। এর মধ্যে রয়েছে ৮ টি গল্প শ্রী রামকৃষ্ণ কথিত কাহিনি অবলম্বনে। বাকি ১৩ টি হচ্ছে অনুবাদ গল্প। ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এইসব গল্পের ভাষান্তর করে উপস্থাপনা করা হয়েছে এই সংকলনে। তবে সব গল্পে মূল লেখকের নাম বা অনুবাদকের নাম নেই। কথামৃত থেকে আহৃত গল্পগুলি শিশুমনে সুস্থ সংস্কারবোধ ও স্বীয় ঐতিহ্য তথা পরম্পরা বিষয়ক এক নীতিশিক্ষার শিকড় প্রোথিত করতে সক্ষম হবে নিশ্চিত। যা আজকের দিনে একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। ঠিক তেমনি অনুবাদ গল্পগুলিও সুচয়িত ও প্রাসঙ্গিক। একটি গল্প লেখকের নিজের লেখা বলেই প্রতীয়মান হয়। আলাদা করে কোনও গল্পের কথা না বলে সামগ্রিকভাবেই বলা যায় প্রতিটি গল্প এতটাই সুলিখিত এবং কৌতূহলোদ্দীপক যে বড়দের কাছেও সমান গ্রহণযোগ্য।  
স্পষ্ট ছাপাই, শুদ্ধ বানান, আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ এবং ঋতা চন্দ ও অদিতি বার্মার আঁকা ভেতরের প্রাসঙ্গিক রেখাচিত্র গল্পগুলিকে আরোও বেশি সুখপাঠ্য করে তুলেছে। শিলচরের বালার্ক থেকে প্রকাশিত গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে শ্রীযুক্ত সৌরীন্দ্র কুমার ভট্টাচার্যকে। সব মিলিয়ে এক সাধু প্রচেষ্টা, ব্যতিক্রমী প্রয়াস।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৯৫৪৯৬১৭২৯ 

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...