উত্তরপূর্বের
বাংলা সাহিত্যচর্চার পরিসরকে কেউ কেউ অভিহিত করেন তৃতীয় ভুবন বলে, কেউ আবার
বলেন ঈশান বাংলা। অনেকেই
আবার এই জাতীয় ভুবনায়নকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন - সাহিত্যের
কোনও ভুবন হয় না। সাহিত্যকে
ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা যায় না।
কারও ব্যক্তিগত অভিমতের পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কিছুই থাকতে পারে না। যে যেমন ভাবতে বা বলতেই পারেন। কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করতে গেলে দেখা যায় বাংলার এই যে অখণ্ড বিশ্বভুবন সেখানে কিন্তু কয়েকটি স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে। আঞ্চলিক ভাষায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও মান্য বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই দেখব যে বাংলাদেশের বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলার মধ্যে শব্দরূপ তথা গৃহীত বানানের ক্ষেত্রেও বহু তারতম্য রয়েছে। সংলাপ বা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মান্য বাংলারও ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায়। যেমন পানি/জল, গোসল/স্নান, নাস্তা/প্রাত:রাশ ইত্যাদি। সেসবের উৎস সন্ধানে না গিয়ে শুধু এটাই বলার যে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা এক অমোঘ পর্যায়। বিহার/ঝাড়খণ্ডের বাংলা আর নিউইয়র্কের বাংলা এক হলেও সাহিত্যে তার প্রয়োগ ও ধারাবাহিকতা এক নয়। একই কথা ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশ করা হয় বলেই এবং সাহিত্য রচনায় কিছু স্পষ্ট বিশেষত্ব/পার্থক্য থাকার জন্যই এক সময় এই ভুবনায়নের সংজ্ঞাটি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। উত্তরপূর্বের বাইরে থেকে স্পষ্টতই যেখানে আমাদের সাহিত্যচর্চাকে এক আলাদা পরিসরে ব্যাপ্ত বলে বারবার অভিহিত করা হয় সেখানে ভুবনায়নকে অস্বীকার করে গায়ের জোরে অখণ্ডে বসবাস করার মতো বাসনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে বরং নিজস্বতাকে প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যেই নিজেদের শ্লাঘা থাকা শ্রেয়।
তবে তার মানে এই নয় যে আমরা ভাষা সাহিত্যের যথাযথ অধ্যয়ন তথা ব্যাকরণ ও নিয়মকানুন লঙ্ঘন করে, শুদ্ধাশুদ্ধের তোয়াক্কা না করে আমাদের যা ইচ্ছে তাই লিখে যাব এবং বলব যে এটা ‘আমাদের’ বাংলা সাহিত্য। এতে আর যাই হোক না কেন ক্রমশ যে আমরা সাহিত্যধারা থেকে পিছিয়ে পড়ব এটা নিশ্চিত। বিদ্যায়তনিক পরিসরে সর্বত্রই শিক্ষাগ্রহণ ও পাঠদানের সামঞ্জস্য রয়েছে। উৎকর্ষ ও ভাষা/শব্দের ব্যবহারে তারতম্য থাকতেই পারে। আবার তার মানেও এ নয় যে পশ্চিমবঙ্গে বা বাংলাদেশে সাধারণ মানের সাহিত্য রচনা একেবারেই হচ্ছে না, ভুলে ভরা বানান ও শব্দের প্রয়োগ হচ্ছে না আর উত্তরপূর্বের সাহিত্যে উৎকৃষ্ট মানের সাহিত্য রচনা হচ্ছে না। জনসংখ্যা, সুযোগ সুবিধার অভাব বা মূল বাংলা ভূখণ্ডের থেকে ভৌগোলিক দূরত্বের জন্য অ্যাভারেজে হয়তো আমরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি তা বলে আমাদের সাহিত্যসম্ভারও কম ওজনদার নয়। আমাদের এই ভৌগোলিক পরিসরের বাইরে আমাদের সাহিত্যসম্ভারকে সেভাবে চেনার, জানার অবকাশ বা গরজ কম থাকার জন্য হয়তো সেভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে না, তবে এতে নিরুৎসাহিত হওয়ার কোনও প্রয়োজন বা অবকাশ আমাদের নেই।
###
আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনায় শুদ্ধ বানান প্রয়োগের প্রয়োজন কতটা ? তার আগে জানতে হবে এই প্রসঙ্গটি উঠছেই বা কেন ? বানান ভুল হয় বলেই তো শুদ্ধতার প্রসঙ্গ আসছে। ভুল কীভাবে হয় ? ‘বারণ’ শব্দটিকে তো কেউই ‘রাবণ’ কিংবা ‘বানর’ লিখছেন না। সেটা হতে পারে একমাত্র ছাপার ভুলে। সে অন্য প্রসঙ্গ। এই শুদ্ধাশুদ্ধির প্রসঙ্গটি উঠছে এজন্যই কারণ বাংলা বানান শুদ্ধিকরণের একটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় মাঝেমাঝে। পুরোনো বানানের অশুদ্ধ রূপ নির্ধারণ করে তার শুদ্ধ রূপটি গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি বস্তু বা নিয়মকানুনের এই শুদ্ধিকরণ, পরিবর্তন বা পুনর্গঠন এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পরিবর্তনই যুগধর্ম। পরিবর্তন বিহনে সবকিছুতেই মরচে পড়ে। পালি-প্রাকৃত-মাগধি-অপভ্রংশ-অবহট্ঠ থেকে যেহেতু বাংলা এসেছে তাই প্রাথমিক অবস্থায় বহু শব্দ অবিকৃতভাবে থেকে গেলেও সময়ের ধারায় সেসব পরিবর্তন হচ্ছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। বিবর্তনের ফলে শব্দ, ভাষা, বানানের ক্ষেত্রে এক বিসঙ্গতির সৃষ্টি হয়। তাই রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে বানান সংস্কারের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছিল। অর্থাৎ স্বয়ং কবিগুরুও এই অমোঘ সংস্কারের পক্ষে ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে অর্থাৎ রবীন্দ্রোত্তর সময়কাল থেকে মোটামুটি একটি জায়গায় থেমে গিয়েছিল এই প্রক্রিয়া। এর আগে রবীন্দ্রনাথ নিজেই বহু শব্দের আধুনিক রূপ পরিগ্রহণ করেছেন। বাংলা বানানের বিধিবদ্ধ নিয়ম প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে। তার পরের প্রায় ছয় দশকে বিস্তর পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বানানের ক্ষেত্রে। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে এই বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেতে এপার বাংলার বৌদ্ধিক মহল আগ্রহান্বিত হয়ে ১৯৮৬ সালে একটি সর্বজনগ্রাহ্য সমিতি তৈরি করেন যাকে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি বলে নামাঙ্কিত করা হয়। এর আগেই গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ বাংলা আকাদেমি।
এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সময়ে সময়ে উভয় দেশের বিশিষ্ট লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও ভাষাবিদদের অক্লান্ত উদ্যোগ ও সমর্থনে বাংলা বানান আজ একটি সর্বজনগ্রাহ্য রূপে স্থায়িত্ব পেয়েছে। বানানের অস্পষ্টতা, বাহুল্য বর্জিত হয়েছে। যদিও বাংলা বানান অভিধানের প্রকাশে বিলম্ব ঘটায় শিক্ষাদানকারী ও শিক্ষার্থীদের কিছু সমস্যা হয়েছে তবু কিছু সংস্থার দ্বারা আকাদেমি বানান অনুসরণ করেই ছাপা হয় অভিধান।
আগেই বলা হয়েছে পরিবর্তনই হচ্ছে যুগধর্ম। সেই ধর্ম মেনে সর্বত্রই নতুন বানানবিধি বলবৎ ও গৃহীত হয়েছে। উত্তরপূর্ব বরাবরই মূল ধারা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন। বিশেষ করে সেই বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে যাঁরা লেখালেখিতে জড়িত আছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই বা কেউ কেউ এই পরিবর্তন মেনে নিতে স্বভাবতই অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং ফলে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এর বিরোধিতা করেন সবটা না জেনেই। তাদের মতে বাংলা বানানের এই পরিবর্তন কিছু খামখেয়ালি মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত নিত্যদিনের কাজ। যখন তখন যে কেউ কোনও কারণ ছাড়াই ‘পাখী’কে ‘পাখি’, ‘বেশী’কে ‘বেশি’, ‘বৌ/বৌদি/মৌ’কে ‘বউ/বউদি/মউ’, ‘খৈ’কে ‘খই’, ‘আপোষ’কে ‘আপস’, ‘আফসোস’কে ‘আপশোশ’ করে দিচ্ছেন। তাঁরা জানেন না আকাদেমি বানান অভিধানের শেষতম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ সালে, অর্থাৎ আজ থেকে তেরো বছর আগে। এই তেরো বছরে যাঁরা অভিধান না ঘেঁটে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগের বানানে সিদ্ধহস্ত হয়ে গেছেন তাঁদের পক্ষে সত্যিই কষ্টকর এমন পরিবর্তনকে মেনে নেওয়া। তা বলে পুরোনো বানানকে সঠিক প্রতিপন্ন করার প্রবণতা ঠিক নয়। কোনো বানানই অযথা পরিবর্তিত হয়নি। প্রতিটি পরিবর্তনের পক্ষে দস্তুর মতো কারণ দর্শানো আছে অভিধানে। কিছু শব্দ অনবধানতায় বাদ পড়েছে আকাদেমি বানান অভিধান থেকে। উদাহরণ - ‘সঠিক’ ইত্যাদি। অভিধানে কিছু বিকল্প বানান প্রয়োগের স্বাধীনতাও দেওয়া আছে। যেমন ‘দেশি/দেশী’, ‘চৌকি/চউকি’ ইত্যাদি। এত কিছুর পরেও আজও অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবেই ‘ঊনিশ, সামিল, শহীদ, দাবী, রাজী, নামী, আগমনী, দামী, একাকীত্ব’ ইত্যাদি লিখে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার বিভ্রান্তিবশত নিজে থেকেই পরিবর্তন করছেন আগে থেকেই ঠিক থাকা শব্দটির। যেমন ভুল করে লিখছেন ‘ইদানিং, নিরব’ ইত্যাদি। বাক্য গঠনে দাঁড়ি, কমার পরে গ্যাপ না দিয়ে আগে দিচ্ছেন। ‘যাইনি, খাইনি’কে ‘যাই নি, খাই নি’ এভাবে লিখছেন। ‘ড়’ আর ‘র’-এর বিড়ম্বনার কথা তো বলেই লাভ নেই। কিছুদিন আগে কিছু গল্পের প্রুফ দেখতে গিয়ে পুরো গল্পেরই এসব ভুলকে শুদ্ধ করতে হয়েছে। সে এক বিতিকিচ্ছি ঘটনা। এসব কথা একদিকে কেউ কেউ যেমন ধরিয়ে দিলে মনঃক্ষুণ্ণ হন, আবার ঠিক তার বিপরীতে অনেক উচ্চ স্তরে থাকা ব্যক্তিদেরও দেখেছি ফলবতী বৃক্ষের মতো বিনয়ের সঙ্গে ভুল মেনে নিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে।
অশুদ্ধ বানানকে আঁকড়ে ধরে থাকার এই প্রবণতা যে শুধু উত্তরপূর্বেই দেখতে পাওয়া যায় তা নয়। সম্প্রতি বহু বছর ধরে প্রকাশিত পশ্চিমবঙ্গের বহু স্থানীয় পত্রপত্রিকার ধারাবাহিক অধ্যয়নে এমনটাই প্রত্যক্ষ করা গেছে। এখানে বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর অবধি বানানবিষয়ক কোনও সজাগতামূলক পাঠদান করা হয় কিনা জানা নেই তবে নবীন প্রজন্মের লেখালেখিতে বানান ভুলের আধিক্য ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত। সম্প্রতি পঠিত একটি সংকলন গ্রন্থে উঠতি বয়সের বেশ ক’জন অধ্যাপক, গবেষকদের নিবন্ধে বানান ভুলের ছড়াছড়ি দেখে চোখ কপালে উঠেছে। ছোট্ট একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে - ‘কারো কারো’ শব্দটিকে লেখা হয়েছে ‘কাউর কাউর’/’কারুর কারুর’। একে কী বলা যেতে পারে ? এভাবে কি বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে বৌদ্ধিক স্তরে প্রতিষ্ঠা লাভের কোনও সম্ভাবনা আছে ? পরিবর্তন আমাদের মেনে নিতেই হবে। এর বিরুদ্ধে অন্ত:সারশূন্য আওয়াজ উঠিয়ে কোনও লাভ হবে না। আঞ্চলিক ভাষায় সাহিত্য রচনায় এসব চলতে পারে। কিন্তু ‘আমরা বরাক-ব্রহ্মপুত্র-গোমতীর মানুষ। আমাদের ভাষাই এমন’- এ জাতীয় জাত্যাভিমান আদপে কোনও সুফল প্রদান করবে না। জীবন যাপনে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধাকে গ্রহণ করব অথচ অনিচ্ছা, অনাগ্রহ, অক্ষমতাকে ঢাকতে ভাষা যাপনে, সাহিত্য যাপনে শুদ্ধতাকে অস্বীকার, আক্রমণ কিংবা ব্যঙ্গ করব এটা হতে পারে না। এতে বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের বৌদ্ধিক ও মান্যতাপ্রাপ্ত ক্ষেত্র থেকে নিরন্তর পিছিয়ে পড়তে হবে আমাদের। সুতরাং চিন্তা করতে হবে কীভাবে আমরা বানান সচেতন হতে পারি। মনে রাখতে হবে শুদ্ধ বানানের প্রয়োগ উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনার অন্যতম প্রাথমিক শর্ত।
প্রকৃত পক্ষে এ এমন কোনও জুজু নয় যে আমরা ভীত হয় থাকব। অন্তরের তগিদ আর গরজ থাকলে সহজেই এই ভীতি থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি। অধিকাংশ বানানই পরিবর্তন করা হয়েছে শব্দের উদ্ভব এবং উচ্চারণের প্রতি লক্ষ রেখে। তাই সঠিক উচ্চারণ এক্ষেত্রে একটি প্রাথমিক শর্ত। না হলে ‘কি’/’কী’র মতো বিভ্রান্তি জন্মাতেই পারে। বরাক উপত্যকা থেকে প্রকাশিত সম্প্রতি একটি পত্রিকার শারদ সংখ্যায় আমি দেখেছি প্রতিটি ‘কী’ই ‘কি’ হিসেবে লেখা রয়েছে। এই সামান্য অসচেতনতা বৃহত্তর সাহিত্য আঙিনায় লজ্জাকর। ভুবনায়নের সংজ্ঞা না মানা লোকেদের বৃহত্তর সাহিত্য আঙিনার বৌদ্ধিক জগতের সঙ্গে একাত্ম হতে গেলে বানান সচেতনতার বাইরে কোনও বিকল্প নেই। সঠিক অভিধানের সাহায্য নেওয়ার সামান্য কষ্ট বা ত্যাগ স্বীকার না করে গুগল, এআই বা মান্ধাতার আমলের অথবা বাজারি অভিধানের সাহায্য নিলে বা ‘পশ্চিমবঙ্গের অমুকজায়গা থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিনে বানানটা এভাবে লেখা হয়েছে দেখেছি’ জাতীয় অজুহাতে আখেরে সঠিক বানানসমৃদ্ধ সাহিত্য রচনার অভীপ্সা অথই জলে বিসর্জিত হবে। তাই উচ্চারণ, উপযুক্ত অভিধান এবং বানান-সচেতন লেখক/অধ্যাপকদের পরিচালনায় বানান কর্মশালা বা বান্ন-বিষয়ক আলোচনা সভার আয়োজন এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে এটা নিশ্চিত। শুদ্ধ বানান শেখা ও ব্যবহার করা এমন কোনও কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয় যদি এ বিষয়ে উৎসাহ উঠে আসে অন্তর থেকে। অন্যথা যেমন খুশি লিখে পরিচিতজনদের কাছ থেকে সামাজিক মাধ্যমে ‘বাহ্ বাহ্’-এর বাইরে প্রাপ্তির ঘরে আখেরে শূন্য বই আর কিছুই লব্ধ হবে না।
অজান্তেই কিছু টাইপিং-এর ভুল, ছাপার ভুল কিংবা খেয়ালের অভাবে এবং ‘মানুষ মাত্রই ভুল হয়’ সূত্রে অজ্ঞতাজনিত কোনও কারণে কখনও কিছু শব্দের বানানে ভুল হয়ে যেতেই পারে। এটা এমন কোনও বড় কথা নয়। তবু এই নিবন্ধে এ জাতীয় কিছু ঘটে থাকলে আমি নি:সংকোচে ক্ষমাপ্রার্থী।
কারও ব্যক্তিগত অভিমতের পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কিছুই থাকতে পারে না। যে যেমন ভাবতে বা বলতেই পারেন। কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করতে গেলে দেখা যায় বাংলার এই যে অখণ্ড বিশ্বভুবন সেখানে কিন্তু কয়েকটি স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে। আঞ্চলিক ভাষায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও মান্য বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই দেখব যে বাংলাদেশের বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলার মধ্যে শব্দরূপ তথা গৃহীত বানানের ক্ষেত্রেও বহু তারতম্য রয়েছে। সংলাপ বা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মান্য বাংলারও ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায়। যেমন পানি/জল, গোসল/স্নান, নাস্তা/প্রাত:রাশ ইত্যাদি। সেসবের উৎস সন্ধানে না গিয়ে শুধু এটাই বলার যে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা এক অমোঘ পর্যায়। বিহার/ঝাড়খণ্ডের বাংলা আর নিউইয়র্কের বাংলা এক হলেও সাহিত্যে তার প্রয়োগ ও ধারাবাহিকতা এক নয়। একই কথা ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশ করা হয় বলেই এবং সাহিত্য রচনায় কিছু স্পষ্ট বিশেষত্ব/পার্থক্য থাকার জন্যই এক সময় এই ভুবনায়নের সংজ্ঞাটি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। উত্তরপূর্বের বাইরে থেকে স্পষ্টতই যেখানে আমাদের সাহিত্যচর্চাকে এক আলাদা পরিসরে ব্যাপ্ত বলে বারবার অভিহিত করা হয় সেখানে ভুবনায়নকে অস্বীকার করে গায়ের জোরে অখণ্ডে বসবাস করার মতো বাসনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে বরং নিজস্বতাকে প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যেই নিজেদের শ্লাঘা থাকা শ্রেয়।
তবে তার মানে এই নয় যে আমরা ভাষা সাহিত্যের যথাযথ অধ্যয়ন তথা ব্যাকরণ ও নিয়মকানুন লঙ্ঘন করে, শুদ্ধাশুদ্ধের তোয়াক্কা না করে আমাদের যা ইচ্ছে তাই লিখে যাব এবং বলব যে এটা ‘আমাদের’ বাংলা সাহিত্য। এতে আর যাই হোক না কেন ক্রমশ যে আমরা সাহিত্যধারা থেকে পিছিয়ে পড়ব এটা নিশ্চিত। বিদ্যায়তনিক পরিসরে সর্বত্রই শিক্ষাগ্রহণ ও পাঠদানের সামঞ্জস্য রয়েছে। উৎকর্ষ ও ভাষা/শব্দের ব্যবহারে তারতম্য থাকতেই পারে। আবার তার মানেও এ নয় যে পশ্চিমবঙ্গে বা বাংলাদেশে সাধারণ মানের সাহিত্য রচনা একেবারেই হচ্ছে না, ভুলে ভরা বানান ও শব্দের প্রয়োগ হচ্ছে না আর উত্তরপূর্বের সাহিত্যে উৎকৃষ্ট মানের সাহিত্য রচনা হচ্ছে না। জনসংখ্যা, সুযোগ সুবিধার অভাব বা মূল বাংলা ভূখণ্ডের থেকে ভৌগোলিক দূরত্বের জন্য অ্যাভারেজে হয়তো আমরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি তা বলে আমাদের সাহিত্যসম্ভারও কম ওজনদার নয়। আমাদের এই ভৌগোলিক পরিসরের বাইরে আমাদের সাহিত্যসম্ভারকে সেভাবে চেনার, জানার অবকাশ বা গরজ কম থাকার জন্য হয়তো সেভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে না, তবে এতে নিরুৎসাহিত হওয়ার কোনও প্রয়োজন বা অবকাশ আমাদের নেই।
###
আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনায় শুদ্ধ বানান প্রয়োগের প্রয়োজন কতটা ? তার আগে জানতে হবে এই প্রসঙ্গটি উঠছেই বা কেন ? বানান ভুল হয় বলেই তো শুদ্ধতার প্রসঙ্গ আসছে। ভুল কীভাবে হয় ? ‘বারণ’ শব্দটিকে তো কেউই ‘রাবণ’ কিংবা ‘বানর’ লিখছেন না। সেটা হতে পারে একমাত্র ছাপার ভুলে। সে অন্য প্রসঙ্গ। এই শুদ্ধাশুদ্ধির প্রসঙ্গটি উঠছে এজন্যই কারণ বাংলা বানান শুদ্ধিকরণের একটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় মাঝেমাঝে। পুরোনো বানানের অশুদ্ধ রূপ নির্ধারণ করে তার শুদ্ধ রূপটি গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি বস্তু বা নিয়মকানুনের এই শুদ্ধিকরণ, পরিবর্তন বা পুনর্গঠন এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পরিবর্তনই যুগধর্ম। পরিবর্তন বিহনে সবকিছুতেই মরচে পড়ে। পালি-প্রাকৃত-মাগধি-অপভ্রংশ-অবহট্ঠ থেকে যেহেতু বাংলা এসেছে তাই প্রাথমিক অবস্থায় বহু শব্দ অবিকৃতভাবে থেকে গেলেও সময়ের ধারায় সেসব পরিবর্তন হচ্ছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। বিবর্তনের ফলে শব্দ, ভাষা, বানানের ক্ষেত্রে এক বিসঙ্গতির সৃষ্টি হয়। তাই রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে বানান সংস্কারের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছিল। অর্থাৎ স্বয়ং কবিগুরুও এই অমোঘ সংস্কারের পক্ষে ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে অর্থাৎ রবীন্দ্রোত্তর সময়কাল থেকে মোটামুটি একটি জায়গায় থেমে গিয়েছিল এই প্রক্রিয়া। এর আগে রবীন্দ্রনাথ নিজেই বহু শব্দের আধুনিক রূপ পরিগ্রহণ করেছেন। বাংলা বানানের বিধিবদ্ধ নিয়ম প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে। তার পরের প্রায় ছয় দশকে বিস্তর পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বানানের ক্ষেত্রে। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে এই বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেতে এপার বাংলার বৌদ্ধিক মহল আগ্রহান্বিত হয়ে ১৯৮৬ সালে একটি সর্বজনগ্রাহ্য সমিতি তৈরি করেন যাকে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি বলে নামাঙ্কিত করা হয়। এর আগেই গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ বাংলা আকাদেমি।
এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সময়ে সময়ে উভয় দেশের বিশিষ্ট লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও ভাষাবিদদের অক্লান্ত উদ্যোগ ও সমর্থনে বাংলা বানান আজ একটি সর্বজনগ্রাহ্য রূপে স্থায়িত্ব পেয়েছে। বানানের অস্পষ্টতা, বাহুল্য বর্জিত হয়েছে। যদিও বাংলা বানান অভিধানের প্রকাশে বিলম্ব ঘটায় শিক্ষাদানকারী ও শিক্ষার্থীদের কিছু সমস্যা হয়েছে তবু কিছু সংস্থার দ্বারা আকাদেমি বানান অনুসরণ করেই ছাপা হয় অভিধান।
আগেই বলা হয়েছে পরিবর্তনই হচ্ছে যুগধর্ম। সেই ধর্ম মেনে সর্বত্রই নতুন বানানবিধি বলবৎ ও গৃহীত হয়েছে। উত্তরপূর্ব বরাবরই মূল ধারা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন। বিশেষ করে সেই বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে যাঁরা লেখালেখিতে জড়িত আছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই বা কেউ কেউ এই পরিবর্তন মেনে নিতে স্বভাবতই অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং ফলে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এর বিরোধিতা করেন সবটা না জেনেই। তাদের মতে বাংলা বানানের এই পরিবর্তন কিছু খামখেয়ালি মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত নিত্যদিনের কাজ। যখন তখন যে কেউ কোনও কারণ ছাড়াই ‘পাখী’কে ‘পাখি’, ‘বেশী’কে ‘বেশি’, ‘বৌ/বৌদি/মৌ’কে ‘বউ/বউদি/মউ’, ‘খৈ’কে ‘খই’, ‘আপোষ’কে ‘আপস’, ‘আফসোস’কে ‘আপশোশ’ করে দিচ্ছেন। তাঁরা জানেন না আকাদেমি বানান অভিধানের শেষতম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ সালে, অর্থাৎ আজ থেকে তেরো বছর আগে। এই তেরো বছরে যাঁরা অভিধান না ঘেঁটে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগের বানানে সিদ্ধহস্ত হয়ে গেছেন তাঁদের পক্ষে সত্যিই কষ্টকর এমন পরিবর্তনকে মেনে নেওয়া। তা বলে পুরোনো বানানকে সঠিক প্রতিপন্ন করার প্রবণতা ঠিক নয়। কোনো বানানই অযথা পরিবর্তিত হয়নি। প্রতিটি পরিবর্তনের পক্ষে দস্তুর মতো কারণ দর্শানো আছে অভিধানে। কিছু শব্দ অনবধানতায় বাদ পড়েছে আকাদেমি বানান অভিধান থেকে। উদাহরণ - ‘সঠিক’ ইত্যাদি। অভিধানে কিছু বিকল্প বানান প্রয়োগের স্বাধীনতাও দেওয়া আছে। যেমন ‘দেশি/দেশী’, ‘চৌকি/চউকি’ ইত্যাদি। এত কিছুর পরেও আজও অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবেই ‘ঊনিশ, সামিল, শহীদ, দাবী, রাজী, নামী, আগমনী, দামী, একাকীত্ব’ ইত্যাদি লিখে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার বিভ্রান্তিবশত নিজে থেকেই পরিবর্তন করছেন আগে থেকেই ঠিক থাকা শব্দটির। যেমন ভুল করে লিখছেন ‘ইদানিং, নিরব’ ইত্যাদি। বাক্য গঠনে দাঁড়ি, কমার পরে গ্যাপ না দিয়ে আগে দিচ্ছেন। ‘যাইনি, খাইনি’কে ‘যাই নি, খাই নি’ এভাবে লিখছেন। ‘ড়’ আর ‘র’-এর বিড়ম্বনার কথা তো বলেই লাভ নেই। কিছুদিন আগে কিছু গল্পের প্রুফ দেখতে গিয়ে পুরো গল্পেরই এসব ভুলকে শুদ্ধ করতে হয়েছে। সে এক বিতিকিচ্ছি ঘটনা। এসব কথা একদিকে কেউ কেউ যেমন ধরিয়ে দিলে মনঃক্ষুণ্ণ হন, আবার ঠিক তার বিপরীতে অনেক উচ্চ স্তরে থাকা ব্যক্তিদেরও দেখেছি ফলবতী বৃক্ষের মতো বিনয়ের সঙ্গে ভুল মেনে নিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে।
অশুদ্ধ বানানকে আঁকড়ে ধরে থাকার এই প্রবণতা যে শুধু উত্তরপূর্বেই দেখতে পাওয়া যায় তা নয়। সম্প্রতি বহু বছর ধরে প্রকাশিত পশ্চিমবঙ্গের বহু স্থানীয় পত্রপত্রিকার ধারাবাহিক অধ্যয়নে এমনটাই প্রত্যক্ষ করা গেছে। এখানে বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর অবধি বানানবিষয়ক কোনও সজাগতামূলক পাঠদান করা হয় কিনা জানা নেই তবে নবীন প্রজন্মের লেখালেখিতে বানান ভুলের আধিক্য ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত। সম্প্রতি পঠিত একটি সংকলন গ্রন্থে উঠতি বয়সের বেশ ক’জন অধ্যাপক, গবেষকদের নিবন্ধে বানান ভুলের ছড়াছড়ি দেখে চোখ কপালে উঠেছে। ছোট্ট একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে - ‘কারো কারো’ শব্দটিকে লেখা হয়েছে ‘কাউর কাউর’/’কারুর কারুর’। একে কী বলা যেতে পারে ? এভাবে কি বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে বৌদ্ধিক স্তরে প্রতিষ্ঠা লাভের কোনও সম্ভাবনা আছে ? পরিবর্তন আমাদের মেনে নিতেই হবে। এর বিরুদ্ধে অন্ত:সারশূন্য আওয়াজ উঠিয়ে কোনও লাভ হবে না। আঞ্চলিক ভাষায় সাহিত্য রচনায় এসব চলতে পারে। কিন্তু ‘আমরা বরাক-ব্রহ্মপুত্র-গোমতীর মানুষ। আমাদের ভাষাই এমন’- এ জাতীয় জাত্যাভিমান আদপে কোনও সুফল প্রদান করবে না। জীবন যাপনে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধাকে গ্রহণ করব অথচ অনিচ্ছা, অনাগ্রহ, অক্ষমতাকে ঢাকতে ভাষা যাপনে, সাহিত্য যাপনে শুদ্ধতাকে অস্বীকার, আক্রমণ কিংবা ব্যঙ্গ করব এটা হতে পারে না। এতে বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের বৌদ্ধিক ও মান্যতাপ্রাপ্ত ক্ষেত্র থেকে নিরন্তর পিছিয়ে পড়তে হবে আমাদের। সুতরাং চিন্তা করতে হবে কীভাবে আমরা বানান সচেতন হতে পারি। মনে রাখতে হবে শুদ্ধ বানানের প্রয়োগ উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনার অন্যতম প্রাথমিক শর্ত।
প্রকৃত পক্ষে এ এমন কোনও জুজু নয় যে আমরা ভীত হয় থাকব। অন্তরের তগিদ আর গরজ থাকলে সহজেই এই ভীতি থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি। অধিকাংশ বানানই পরিবর্তন করা হয়েছে শব্দের উদ্ভব এবং উচ্চারণের প্রতি লক্ষ রেখে। তাই সঠিক উচ্চারণ এক্ষেত্রে একটি প্রাথমিক শর্ত। না হলে ‘কি’/’কী’র মতো বিভ্রান্তি জন্মাতেই পারে। বরাক উপত্যকা থেকে প্রকাশিত সম্প্রতি একটি পত্রিকার শারদ সংখ্যায় আমি দেখেছি প্রতিটি ‘কী’ই ‘কি’ হিসেবে লেখা রয়েছে। এই সামান্য অসচেতনতা বৃহত্তর সাহিত্য আঙিনায় লজ্জাকর। ভুবনায়নের সংজ্ঞা না মানা লোকেদের বৃহত্তর সাহিত্য আঙিনার বৌদ্ধিক জগতের সঙ্গে একাত্ম হতে গেলে বানান সচেতনতার বাইরে কোনও বিকল্প নেই। সঠিক অভিধানের সাহায্য নেওয়ার সামান্য কষ্ট বা ত্যাগ স্বীকার না করে গুগল, এআই বা মান্ধাতার আমলের অথবা বাজারি অভিধানের সাহায্য নিলে বা ‘পশ্চিমবঙ্গের অমুকজায়গা থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিনে বানানটা এভাবে লেখা হয়েছে দেখেছি’ জাতীয় অজুহাতে আখেরে সঠিক বানানসমৃদ্ধ সাহিত্য রচনার অভীপ্সা অথই জলে বিসর্জিত হবে। তাই উচ্চারণ, উপযুক্ত অভিধান এবং বানান-সচেতন লেখক/অধ্যাপকদের পরিচালনায় বানান কর্মশালা বা বান্ন-বিষয়ক আলোচনা সভার আয়োজন এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে এটা নিশ্চিত। শুদ্ধ বানান শেখা ও ব্যবহার করা এমন কোনও কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয় যদি এ বিষয়ে উৎসাহ উঠে আসে অন্তর থেকে। অন্যথা যেমন খুশি লিখে পরিচিতজনদের কাছ থেকে সামাজিক মাধ্যমে ‘বাহ্ বাহ্’-এর বাইরে প্রাপ্তির ঘরে আখেরে শূন্য বই আর কিছুই লব্ধ হবে না।
অজান্তেই কিছু টাইপিং-এর ভুল, ছাপার ভুল কিংবা খেয়ালের অভাবে এবং ‘মানুষ মাত্রই ভুল হয়’ সূত্রে অজ্ঞতাজনিত কোনও কারণে কখনও কিছু শব্দের বানানে ভুল হয়ে যেতেই পারে। এটা এমন কোনও বড় কথা নয়। তবু এই নিবন্ধে এ জাতীয় কিছু ঘটে থাকলে আমি নি:সংকোচে ক্ষমাপ্রার্থী।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
Comments
Post a Comment