Skip to main content

শুদ্ধ বানানচর্চার প্রয়োজনীয়তা ও সচেতনতা

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যচর্চার পরিসরকে কেউ কেউ অভিহিত করেন তৃতীয় ভুবন বলে, কেউ আবার বলেন ঈশান বাংলা অনেকেই আবার এই জাতীয় ভুবনায়নকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন - সাহিত্যের কোনও ভুবন হয় না সাহিত্যকে ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা যায় না
কারও ব্যক্তিগত অভিমতের পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কিছুই থাকতে পারে না যে যেমন ভাবতে বা বলতেই পারেন কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করতে গেলে দেখা যায় বাংলার এই যে অখণ্ড বিশ্বভুবন সেখানে কিন্তু কয়েকটি স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে আঞ্চলিক ভাষায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও মান্য বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই দেখব যে বাংলাদেশের বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলার মধ্যে শব্দরূপ তথা গৃহীত বানানের ক্ষেত্রেও বহু তারতম্য রয়েছে সংলাপ বা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মান্য বাংলারও ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায় যেমন পানি/জল, গোসল/স্নান, নাস্তা/প্রাত:রাশ ইত্যাদি সেসবের উৎস সন্ধানে না গিয়ে শুধু এটাই বলার যে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা এক অমোঘ পর্যায় বিহার/ঝাড়খণ্ডের বাংলা আর নিউইয়র্কের বাংলা এক হলেও সাহিত্যে তার প্রয়োগ ও ধারাবাহিকতা এক নয় একই কথা ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশ করা হয় বলেই এবং সাহিত্য রচনায় কিছু স্পষ্ট বিশেষত্ব/পার্থক্য থাকার জন্যই এক সময় এই ভুবনায়নের সংজ্ঞাটি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে উত্তরপূর্বের বাইরে থেকে স্পষ্টতই যেখানে আমাদের সাহিত্যচর্চাকে এক আলাদা পরিসরে ব্যাপ্ত বলে বারবার অভিহিত করা হয় সেখানে ভুবনায়নকে অস্বীকার করে গায়ের জোরে অখণ্ডে বসবাস করার মতো বাসনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে বরং নিজস্বতাকে প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যেই নিজেদের শ্লাঘা থাকা শ্রেয়
তবে তার মানে এই নয় যে আমরা ভাষা সাহিত্যের যথাযথ অধ্যয়ন তথা ব্যাকরণ ও নিয়মকানুন লঙ্ঘন করে, শুদ্ধাশুদ্ধের তোয়াক্কা না করে আমাদের যা ইচ্ছে তাই লিখে যাব এবং বলব যে এটা আমাদেরবাংলা সাহিত্য এতে আর যাই হোক না কেন ক্রমশ যে আমরা সাহিত্যধারা থেকে পিছিয়ে পড়ব এটা নিশ্চিত বিদ্যায়তনিক পরিসরে সর্বত্রই শিক্ষাগ্রহণ ও পাঠদানের সামঞ্জস্য রয়েছে উৎকর্ষ ও ভাষা/শব্দের ব্যবহারে তারতম্য থাকতেই পারে আবার তার মানেও এ নয় যে পশ্চিমবঙ্গে বা বাংলাদেশে সাধারণ মানের সাহিত্য রচনা একেবারেই হচ্ছে না, ভুলে ভরা বানান ও শব্দের প্রয়োগ হচ্ছে না আর উত্তরপূর্বের সাহিত্যে উৎকৃষ্ট মানের সাহিত্য রচনা হচ্ছে না জনসংখ্যা, সুযোগ সুবিধার অভাব বা মূল বাংলা ভূখণ্ডের থেকে ভৌগোলিক দূরত্বের জন্য অ্যাভারেজে হয়তো আমরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি তা বলে আমাদের সাহিত্যসম্ভারও কম ওজনদার নয় আমাদের এই ভৌগোলিক পরিসরের বাইরে আমাদের সাহিত্যসম্ভারকে সেভাবে চেনার, জানার অবকাশ বা গরজ কম থাকার জন্য হয়তো সেভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে না, তবে এতে নিরুৎসাহিত হওয়ার কোনও প্রয়োজন বা অবকাশ আমাদের নেই
###
আসা যাক মূল প্রসঙ্গে উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনায় শুদ্ধ বানান প্রয়োগের প্রয়োজন কতটা ? তার আগে জানতে হবে এই প্রসঙ্গটি উঠছেই বা কেন ? বানান ভুল হয় বলেই তো শুদ্ধতার প্রসঙ্গ আসছে ভুল কীভাবে হয় ? ‘বারণশব্দটিকে তো কেউই রাবণকিংবা বানরলিখছেন না সেটা হতে পারে একমাত্র ছাপার ভুলে সে অন্য প্রসঙ্গ এই শুদ্ধাশুদ্ধির প্রসঙ্গটি উঠছে এজন্যই কারণ বাংলা বানান শুদ্ধিকরণের একটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় মাঝেমাঝে পুরোনো বানানের অশুদ্ধ রূপ নির্ধারণ করে তার শুদ্ধ রূপটি গ্রহণ করা হয় প্রতিটি বস্তু বা নিয়মকানুনের এই শুদ্ধিকরণ, পরিবর্তন বা পুনর্গঠন এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া পরিবর্তনই যুগধর্ম পরিবর্তন বিহনে সবকিছুতেই মরচে পড়ে পালি-প্রাকৃত-মাগধি-অপভ্রংশ-অবহট্ঠ থেকে যেহেতু বাংলা এসেছে তাই প্রাথমিক অবস্থায় বহু শব্দ অবিকৃতভাবে থেকে গেলেও সময়ের ধারায় সেসব পরিবর্তন হচ্ছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের ফলে শব্দ, ভাষা, বানানের ক্ষেত্রে এক বিসঙ্গতির সৃষ্টি হয় তাই রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে বানান সংস্কারের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছিল অর্থাৎ স্বয়ং কবিগুরুও এই অমোঘ সংস্কারের পক্ষে ছিলেন বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে অর্থাৎ রবীন্দ্রোত্তর সময়কাল থেকে মোটামুটি একটি জায়গায় থেমে গিয়েছিল এই প্রক্রিয়া এর আগে রবীন্দ্রনাথ নিজেই বহু শব্দের আধুনিক রূপ পরিগ্রহণ করেছেন বাংলা বানানের বিধিবদ্ধ নিয়ম প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে তার পরের প্রায় ছয় দশকে বিস্তর পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বানানের ক্ষেত্রে বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে এই বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেতে এপার বাংলার বৌদ্ধিক মহল আগ্রহান্বিত হয়ে ১৯৮৬ সালে একটি সর্বজনগ্রাহ্য সমিতি তৈরি করেন যাকে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি বলে নামাঙ্কিত করা হয় এর আগেই গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ বাংলা আকাদেমি
এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সময়ে সময়ে উভয় দেশের বিশিষ্ট লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও ভাষাবিদদের অক্লান্ত উদ্যোগ ও সমর্থনে বাংলা বানান আজ একটি সর্বজনগ্রাহ্য রূপে স্থায়িত্ব পেয়েছে বানানের অস্পষ্টতা, বাহুল্য বর্জিত হয়েছে যদিও বাংলা বানান অভিধানের প্রকাশে বিলম্ব ঘটায় শিক্ষাদানকারী ও শিক্ষার্থীদের কিছু সমস্যা হয়েছে তবু কিছু সংস্থার দ্বারা আকাদেমি বানান অনুসরণ করেই ছাপা হয় অভিধান
আগেই বলা হয়েছে পরিবর্তনই হচ্ছে যুগধর্ম সেই ধর্ম মেনে সর্বত্রই নতুন বানানবিধি বলবৎ ও গৃহীত হয়েছে উত্তরপূর্ব বরাবরই মূল ধারা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন বিশেষ করে সেই বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে যাঁরা লেখালেখিতে জড়িত আছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই বা কেউ কেউ এই পরিবর্তন মেনে নিতে স্বভাবতই অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং ফলে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এর বিরোধিতা করেন সবটা না জেনেই তাদের মতে বাংলা বানানের এই পরিবর্তন কিছু খামখেয়ালি মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত নিত্যদিনের কাজ যখন তখন যে কেউ কোনও কারণ ছাড়াইপাখীকেপাখি’, ‘বেশীকেবেশি’, ‘বৌ/বৌদি/মৌকেবউ/বউদি/মউ’, ‘খৈকেখই’, ‘আপোষকেআপস’, ‘আফসোসকেআপশোশকরে দিচ্ছেন তাঁরা জানেন না আকাদেমি বানান অভিধানের শেষতম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ সালে, অর্থাৎ আজ থেকে তেরো বছর আগে এই তেরো বছরে যাঁরা অভিধান না ঘেঁটে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগের বানানে সিদ্ধহস্ত হয়ে গেছেন তাঁদের পক্ষে সত্যিই কষ্টকর এমন পরিবর্তনকে মেনে নেওয়া তা বলে পুরোনো বানানকে সঠিক প্রতিপন্ন করার প্রবণতা ঠিক নয় কোনো বানানই অযথা পরিবর্তিত হয়নি প্রতিটি পরিবর্তনের পক্ষে দস্তুর মতো কারণ দর্শানো আছে অভিধানে কিছু শব্দ অনবধানতায় বাদ পড়েছে আকাদেমি বানান অভিধান থেকে উদাহরণ - ‘সঠিকইত্যাদি অভিধানে কিছু বিকল্প বানান প্রয়োগের স্বাধীনতাও দেওয়া আছে যেমনদেশি/দেশী’, ‘চৌকি/চউকিইত্যাদি এত কিছুর পরেও আজও অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবেইঊনিশ, সামিল, শহীদ, দাবী, রাজী, নামী, আগমনী, দামী, একাকীত্বইত্যাদি লিখে যাচ্ছেন কেউ কেউ আবার বিভ্রান্তিবশত নিজে থেকেই পরিবর্তন করছেন আগে থেকেই ঠিক থাকা শব্দটির যেমন ভুল করে লিখছেনইদানিং, নিরবইত্যাদি বাক্য গঠনে দাঁড়ি, কমার পরে গ্যাপ না দিয়ে আগে দিচ্ছেন যাইনি, খাইনিকেযাই নি, খাই নিএভাবে লিখছেনআর’-এর বিড়ম্বনার কথা তো বলেই লাভ নেই কিছুদিন আগে কিছু গল্পের প্রুফ দেখতে গিয়ে পুরো গল্পেরই এসব ভুলকে শুদ্ধ করতে হয়েছে সে এক বিতিকিচ্ছি ঘটনা এসব কথা একদিকে কেউ কেউ যেমন ধরিয়ে দিলে মনঃক্ষুণ্ণ হন, আবার ঠিক তার বিপরীতে অনেক উচ্চ স্তরে থাকা ব্যক্তিদেরও দেখেছি ফলবতী বৃক্ষের মতো বিনয়ের সঙ্গে ভুল মেনে নিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে
অশুদ্ধ বানানকে আঁকড়ে ধরে থাকার এই প্রবণতা যে শুধু উত্তরপূর্বেই দেখতে পাওয়া যায় তা নয় সম্প্রতি বহু বছর ধরে প্রকাশিত পশ্চিমবঙ্গের বহু স্থানীয় পত্রপত্রিকার ধারাবাহিক অধ্যয়নে এমনটাই প্রত্যক্ষ করা গেছে এখানে বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর অবধি বানানবিষয়ক কোনও সজাগতামূলক পাঠদান করা হয় কিনা জানা নেই তবে নবীন প্রজন্মের লেখালেখিতে বানান ভুলের আধিক্য ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত সম্প্রতি পঠিত একটি সংকলন গ্রন্থে উঠতি বয়সের বেশ কজন অধ্যাপক, গবেষকদের নিবন্ধে বানান ভুলের ছড়াছড়ি দেখে চোখ কপালে উঠেছে ছোট্ট একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে - ‘কারো কারোশব্দটিকে লেখা হয়েছেকাউর কাউর’/’কারুর কারুর একে কী বলা যেতে পারে ? এভাবে কি বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে বৌদ্ধিক স্তরে প্রতিষ্ঠা লাভের কোনও সম্ভাবনা আছে ? পরিবর্তন আমাদের মেনে নিতেই হবে এর বিরুদ্ধে অন্ত:সারশূন্য আওয়াজ উঠিয়ে কোনও লাভ হবে না আঞ্চলিক ভাষায় সাহিত্য রচনায় এসব চলতে পারে কিন্তু আমরা বরাক-ব্রহ্মপুত্র-গোমতীর মানুষ আমাদের ভাষাই এমন’- এ জাতীয় জাত্যাভিমান আদপে কোনও সুফল প্রদান করবে না জীবন যাপনে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধাকে গ্রহণ করব অথচ অনিচ্ছা, অনাগ্রহ, অক্ষমতাকে ঢাকতে ভাষা যাপনে, সাহিত্য যাপনে শুদ্ধতাকে অস্বীকার, আক্রমণ কিংবা ব্যঙ্গ করব এটা হতে পারে না এতে বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের বৌদ্ধিক ও মান্যতাপ্রাপ্ত ক্ষেত্র থেকে নিরন্তর পিছিয়ে পড়তে হবে আমাদের সুতরাং চিন্তা করতে হবে কীভাবে আমরা বানান সচেতন হতে পারিমনে রাখতে হবে শুদ্ধ বানানের প্রয়োগ উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনার অন্যতম প্রাথমিক শর্ত
প্রকৃত পক্ষে এ এমন কোনও জুজু নয় যে আমরা ভীত হয় থাকব অন্তরের তগিদ আর গরজ থাকলে সহজেই এই ভীতি থেকে আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি অধিকাংশ বানানই পরিবর্তন করা হয়েছে শব্দের উদ্ভব এবং উচ্চারণের প্রতি লক্ষ রেখে তাই সঠিক উচ্চারণ এক্ষেত্রে একটি প্রাথমিক শর্ত না হলেকি’/’কীর মতো বিভ্রান্তি জন্মাতেই পারে বরাক উপত্যকা থেকে প্রকাশিত সম্প্রতি একটি পত্রিকার শারদ সংখ্যায় আমি দেখেছি প্রতিটিকীকিহিসেবে লেখা রয়েছে এই সামান্য অসচেতনতা বৃহত্তর সাহিত্য আঙিনায় লজ্জাকর ভুবনায়নের সংজ্ঞা না মানা লোকেদের বৃহত্তর সাহিত্য আঙিনার বৌদ্ধিক জগতের সঙ্গে একাত্ম হতে গেলে বানান সচেতনতার বাইরে কোনও বিকল্প নেই সঠিক অভিধানের সাহায্য নেওয়ার সামান্য কষ্ট বা ত্যাগ স্বীকার না করে গুগল, এআই বা মান্ধাতার আমলের অথবা বাজারি অভিধানের সাহায্য নিলে বা ‘পশ্চিমবঙ্গের অমুকজায়গা থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিনে বানানটা এভাবে লেখা হয়েছে দেখেছি’ জাতীয় অজুহাতে আখেরে সঠিক বানানসমৃদ্ধ সাহিত্য রচনার অভীপ্সা অথই জলে বিসর্জিত হবে তাই উচ্চারণ, উপযুক্ত অভিধান এবং বানান-সচেতন লেখক/অধ্যাপকদের পরিচালনায় বানান কর্মশালা বা বান্ন-বিষয়ক আলোচনা সভার আয়োজন এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে এটা নিশ্চিত শুদ্ধ বানান শেখা ও ব্যবহার করা এমন কোনও কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয় যদি এ বিষয়ে উৎসাহ উঠে আসে অন্তর থেকে অন্যথা যেমন খুশি লিখে পরিচিতজনদের কাছ থেকে সামাজিক মাধ্যমে বাহ্বাহ্‌’-এর বাইরে প্রাপ্তির ঘরে আখেরে শূন্য বই আর কিছুই লব্ধ হবে না
অজান্তেই কিছু টাইপিং-এর ভুল, ছাপার ভুল কিংবা খেয়ালের অভাবে এবং ‘মানুষ মাত্রই ভুল হয়’ সূত্রে অজ্ঞতাজনিত কোনও কারণে কখনও কিছু শব্দের বানানে ভুল হয়ে যেতেই পারে এটা এমন কোনও বড় কথা নয় তবু এই নিবন্ধে এ জাতীয় কিছু ঘটে থাকলে আমি নি:সংকোচে ক্ষমাপ্রার্থী

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়