Skip to main content

Posts

Showing posts from May, 2024

মননশীলতা ও নান্দনিকতার যুগলবন্দি উৎসব সংখ্যা - ‘মজলিশ সংলাপ’

১৫১ পৃষ্ঠার উৎসব সংখ্যায় যেন উৎকর্ষ আর বিষয় বৈচিত্রে ‘ বড় ধুম লেগেছে হৃদিকমলে ….’ । মলাট ওলটালেই সত্যিকারের উৎসব । কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়ি ধরনের টানাপোড়েন ছেড়ে পড়িমরি করে পড়তে বসাই বুদ্ধিমানের কাজ । পোড় খাওয়া সম্পাদক তথা কবি , সাহিত্যিক তুষারকান্তি সাহা সম্পাদিত মজলিশ ‘ সংলাপ ’ পত্রিকার উৎসব সংখ্যা ২০২৩ , সার্বিক ১৫৫ তম সংখ্যা । গল্প , কবিতা , প্রবন্ধ , নিবন্ধ মায় নভেলেট পর্যন্ত ঠাঁই পেয়েছে সংখ্যাটিতে । এবং ‘ এ বলে আমায় পড় , ও বলে আমায় … ’ টাইপের সব লেখা । প্রথমেই প্রথামতো দুটি পৃষ্ঠাতে সূচিপত্র ও টাইটেল ভার্সো পেজের নিরবচ্ছিন্ন মিশ্রণ । সূচিপত্র পড়তে পড়তেই পাঠক একটা সময় পৌঁছে যাবেন বইচিত্রে । সাকুল্যে বারো লাইনের সম্পাদকীয়তে উৎসবের আমেজ ফুটিয়ে পাঠককে সরাসরি প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে বিষয় সম্ভারে। দুটি শারদীয় নিবন্ধ দিয়ে শ্রী গণেশ হয়েছে লেখালেখি বা পড়াপড়ির। মীনাক্ষি চক্রবর্তী লিখছেন - ‘দুর্গাপূজার লৌকিক অনুষঙ্গ’। শাস্ত্রীয়, পৌরাণিক, লৌকিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গে দুর্গা ও দুর্গাপূজার প্রচলন ও বিবর্তন নিয়ে তত্ত্ব ও তথ্যভিত্তিক নিবন্ধ। মধুমিতা দত্ত তাঁর সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে ব্যতিক্...

করুণ সত্যের বিরুদ্ধে সাহসী উচ্চারণ

‘বৃষ্টিকথা বরাকের গল্প সংকলন’ গ্রন্থে এই শিরোনামে একটি গল্প আছে। উত্তরপূর্বের গল্পবিশ্বে আদিমা মজুমদার এক সার্থক গল্পকার। গল্প তো নয় - যেন অনিয়ম, অনাচার, অত্যাচার, ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামির বিরুদ্ধে এক নিরন্তর সংগ্রাম কথা। তো যে কথাটি হচ্ছিল, সেই গল্পটিকেও অন্তর্ভুক্ত করে এবং সেই গল্পের শিরোনামকেই গ্রন্থনাম হিসেবে নিয়ে সদ্য প্রকাশিত হয়েছে আদিমার চতুর্থ গল্প সংকলন - ‘রুম নম্বর ১১৪’। তাঁর সার্বিক ষষ্ঠ গ্রন্থ। হয়তো গল্পকারের কোনও নস্টালজিয়া থেকে এই গ্রন্থনাম। নচেৎ অন্য গল্পের নামানুসারে ‘পাখিদের ওড়ার গল্প’ কিংবা ‘উইপোকার ঘরবাড়ি’ও হতে পারত, বা অন্য কোনও শিরোনাম।  মোট উনিশটি গল্প সন্নিবিষ্ট হয়েছে আলোচ্য এই গ্রন্থটিতে। শুভঙ্কর চন্দের ভূমিকায় আমরা পেয়ে যাই গ্রন্থের অভ্যন্তরে থাকা গল্পসমূহের অনেকটাই পরিচয় - ‘... কোনো সহায়তা প্রত্যাশায় উত্তোলিত হাত বা রাজনৈতিক-সামাজিক আন্দোলনের আহ্বান বরাবরই আদিমার বন্ধু-হাত খুঁজে পায়। তাঁর নিজের ঘরে-বাইরের এইসব জলকাদা ঘেঁটেই এই বইতে, নার্স প্রশিক্ষণার্থী এবং পেশাদার নার্সের জীবন-মরণোত্তর দেহদান, অ্যালঝাইমার্, লিভ-ইন, লেসবিয়ান সম্পর্ক, সাম্প্রদায়িকতার বিরোধ...

নবতম আঙ্গিকের কাব্য সংকলন - ‘আনন্দ জ্যোৎস্না মেখে’

২০১৯ থেকে ২০২২। পাঠক লক্ষ করে দেখুন এই বিশেষ সময়কাল। শতাব্দীর ভয়ংকরতম কাল। করোনা অতিমারির প্রকোপে কম্পমান এ বিশ্ব। সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস ওঠে জীবনরক্ষার তাগিদে, তখন ও এ ই কঠোর বাস্তব দুনিয়ার বাসিন্দা হয়েও একজন কবি কিন্তু বাস করেন এক স্বতন্ত্র জগতে - যে জগতে বাস্তবের দাপাদাপি নেই, আছে কল্পনা ও মোহাবেশ, আছে এক পরাবাস্তব সৃষ্টিময়তার অনুচ্চারিত আনন্দ উৎসব। এই দুর্বিষহ যাপনকালে কবি জিতেন্দ্র নাথ তাঁর ভাবনাসমূহকে কবিতার অবয়বে মূর্ত করে তুলেহিলেন সচেতনে, সযতনে। শুধুই অতিমারি করোনা নয়, সার্বিক ভাবনার প্রকাশে স্বল্প কথায় সময়কে, আদর্শকে, নিজস্ব জীবনযাপনকে ধরে রেখেছিলেন যেসব কবিতার মাধ্যমে তারই কিছু নির্বাচিত কবিতার সংকলন ‘আনন্দ জ্যোৎস্না মেখে’। সে সময় তো আনন্দও ছিল না, জ্যোৎস্নার লালিত্য উপভোগের মন-মানসিকতাও ছিল না। তবে এ কেমন গ্রন্থনাম ? এখানেই স্বতন্ত্র এক কবি-জীবন। কবিমন খুঁজে পায় হরিষে বিষাদ, বিষাদে হর্ষ। সেইসব হর্ষ-বিষাদ, মনের দুয়ার খুলে ভাবনাকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াসে কবি জিতেন্দ্র নাথের ৭০ পৃষ্ঠার এই পঞ্চম কাব্যগ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে ৫৮ টি কবিতা। রচনা তারিখ ও স্থানের উল্লেখ রয়েছে প্...

বিষয় ভাবনার আধারে কাব্যগ্রন্থ - ‘ঈশান বাংলা’

কবি , লেখকের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ । প্রথম প্রেমের মতোই এর আকর্ষণ , দোলাচল । হৃদমাঝারে প্রথম সন্তান লাভের মতোই টগবগে উত্তেজনা । প্রাপ্তি , অপ্রাপ্তির শঙ্কা , সম্ভাবনা । সব মিলিয়ে এক দুরন্ত পরিঘটনা । ‘ ঈশান বাংলা ’ কবি বিপ্লব গোস্বামীর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ । গ্রাম বরাকের প্রত্যন্ত জনপদে বসে নিরলস কাব্যসাধনায় রত এই কবি আজ উপত্যকায় এক পরিচিত নাম । ৬৪ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের মোট ৫৬ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে সমসংখ্যক কবিতা। একটির বাইরে সব ক’টি কবিতা ছন্দে লিখা। অন্ত্যমিল ছন্দ। বলাই বাহুল্য কবিদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অমন হয়। আসলে ছন্দই তো মানুষের মনকে কবিতার প্রতি আকর্ষিত করে। তাই কবিতা মানেই ছন্দ - এমন একটা প্রাথমিক ধারণা গড়ে ওঠে সুপ্ত মননে। বিপ্লবের কবিতায় কাব্য সুষমা কিংবা কাব্যময়তার চেয়ে বিষয় বৈচিত্র্যের পাল্লা ভারী। কল্পনাকে ছাপিয়ে গেছে বাস্তবের জীবনযাত্রা। তাই বর্ষবরণ থেকে শুরু করে উৎসবাদি, মহান ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলির প্রতিক্রিয়া এসব অনুষঙ্গই প্রকট হয়েছে স্বাভাবিক কারণেই। মাতৃভাষা, মাতৃভূমির প্রতি কবির দুর্নিবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বাঙময়...

গল্পে উন্মোচিত পরিচিত প্রান্তিকতা ‘প্রান্তজন কথা’

এটি তাঁর অষ্টম গ্রন্থ। গল্পকার মিথিলেশ ভট্টাচার্য। অবিভক্ত বাংলার, বিশেষ করে বর্তমান ঈশান বাংলার একমেবাদ্বিতীয়ম সফল ও ধারাবাহিক উৎকর্ষের গল্পকার মিথিলেশ। ৮০ পৃষ্ঠার আলোচ্য গ্রন্থ ‘প্রান্তজন কথা’য় সন্নিবিষ্ট হয়েছে মোট দশটি গল্প। সমাজে খেটে খাওয়া শ্রেণির নিখাদ গরিব মানুষজনদের নিয়ে লেখা টানাপোড়েন আর কষ্টকর জীবন নির্বাহের গল্প। তথাকথিত এলিট কিংবা মধ্যবিত্তরাই যেখানে সমাজের অধিকাংশ ভাগীদার সেখানে এই সব প্রান্তিক মানুষ বা প্রান্তজনদের কথা ক’জনের আর ভাবার সময় কিংবা অবকাশ আছে ? এদের নিয়েই দশটি গল্প, যার রচনাকাল বিগত চল্লিশ বছর আগে থেকে শুরু করে ২০২২ অবধি। ‘বই সম্পর্কে কিছু কথা’ শিরোনামে ভূমিকায় গল্পকার লিখছেন - ‘... গল্পের চরিত্রেরা তৃণমূল স্তরের। ... লেখাজোকার শুরুতেই ওদের ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ জীবনধারা আমাকে এক গভীর আকর্ষণে টানত... অনেক গল্প লিখেছি এবং এখনও লিখছি ওই সর্বহারা মানুষ-মানুষীদের জীবন জীবিকা নিয়ে। ... এই সংকলনে যেসব মানুষ-মানুষীদের নিয়ে গল্প লিখেছি ওদের সকলের সঙ্গে আমার শুধু ওঠাবসাই ছিল না, ওদের কেউ আমার ছোটভাই, তো কেউ আমার ভাইফোঁটা দেওয়া বোন, আবার কেউ আমার রূপগুণমুগ্ধ প্রেমিকাও...

সার্বিক উৎকর্ষের গল্প সংকলন ‘বারকোশ’

বাংলা ছোটগল্পের বিবর্তনের ধারা দীর্ঘ প্রবহমান । ভাষা ও সাহিত্যের যুগোপযোগী রূপবদল এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া । ভৌগোলিক সূত্রে ঈশান বাংলার ছোটোগল্প নির্মাণ ও বিনির্মাণ এই ধারার সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারছে তা আলোচনা সাপেক্ষ । রূপরাজ ভট্টাচার্য যতটা কবি তার চাইতেও বেশি দক্ষতা পরিলক্ষিত হয় তাঁর ছোটোগল্পে । সংখ্যার বিচারে নয় , উৎকর্ষের বিচারধারাকে গুরুত্ব দিয়ে গল্প লিখেন রূপরাজ । ফলত আমাদের নিজস্ব এই গল্পবিশ্বে রূপরাজ যে ক্ষেত্রটি তৈরি করতে পেরেছেন তা অপার বাংলার ধারার সঙ্গে খাপ খেয়ে যায় পুরোপুরি । লেখকের সম্প্রতি প্রকাশিত গল্প সংকলন ‘ বারকোশ ’ এই সত্যটিকেই উদ্ ‌ ঘাটিত করেছে । ১৪৩ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের ১৩১ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে নির্বাচিত পনেরোটি গল্প । এর অধিকাংশই পত্রপত্রিকায় ইতিমধ্যে প্রকাশিত । ভূমিকায় বিশিষ্ট লেখক রণবীর পুরকায়স্থ যে বিশদ আলোচনাটি করেছেন এর পর আর আলোচনার বিশেষ কিছু থেকে থাকে না। প্রথমেই যে কথাটি উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হল গল্পের ভিতরগত চলন, বুনোট ও নির্মাণশৈলী। এই তিনটি হাতিয়ারকে সঙ্গী করে এক ঘোর লাগা বয়নে গল্পসমূহকে উপস্থাপন করেছেন গল্পকার। সরল বয়ান অথচ ভাষা, শ...

কী হবে এই রাঙা জীবনের - আমি জানি না... 'কবিতার চারণভূমি শাদ্বল ১০০'

শাদ্বল - রোজকার সাহিত্য চর্চায় একটি অপ্রচলিত শব্দ, তাই শব্দার্থ লিখে দিতে হয়েছে সম্পাদকীয়তে। কিন্তু আলোচ্য সাময়িকীর জন্য হয়তো এর চেয়ে ভালো নাম আর হতেই পারে না। এর মানে হচ্ছে - শস্পাবৃত ভূমি। অর্থাৎ কচি ঘাসে আবৃত ভূমি। হ্যাঁ, একটা সময় কচি ঘাসেই আবৃত ছিল তাঁর যাপনভূমি, যাপনবেলা। হঠাৎ করেই ছন্দপতন। অনাহূত, অবাঞ্ছিত ঘটনায় ছন্দহীন হয়ে গেল সেই ভূমি, উপড়ে গেল সেই ভূমি থেকে একটি শস্প, একটি উদীয়মান প্রতিভা। সেই থেকে এই শাদ্বল, কবিতার এক নতুনতর চারণভূমি - যেন দিগন্ত বিস্তৃত হয়ে জানান দিচ্ছে - ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই। এক থেকে বহুধাবিস্তৃত হতে হতে অধিকতর প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে সেই হারিয়ে যাওয়া শস্প, সেই অকালে ঝরে যাওয়া কোমলবেলার না-ফোটা পুস্প। কবি তথা শাদ্বল পত্রিকার সম্পাদক (অবৈতনিক) রানা চক্রবর্তীর পুত্র ঋতর্ণবের অকাল প্রয়াণ বদলে দিয়েছে তাঁর যাপনকাল। এই বদলে যাওয়া যাপিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এবং শততম সংখ্যার গরিমা ষো লো আনা বজায় রেখে শতাধিক কবির কবিতায় সম্প্রতি প্রকাশিত হল ‘শাদ্বল-১০০’ বিশেষ সংখ্যা। বর্ষ ১১, সংখ্যা ১। কবিতার এই পরিচিত চারণভূমি থেকে প্রায় ২ ০০ জন কবির কবিতায় পুষ্ট হ য়ে প্রকাশিত ...

শেকল ভাঙা দরজায় রোদ্দুর মাখা সংলাপ…… ‘আহত ঝিনুক’

শেষ থেকে শুরু হোক আলোচনা । গ্রন্থের শেষ প্রচ্ছদে কবি জাহানারা মজুমদারের বিস্তৃত পরিচিতির পাশাপাশি আছে আলোচ্য গ্রন্থ নিয়েও কিছু কথা - ‘ কবি জাহানারার কবিতায় সমাজের নিপীড়িত মানুষের হাহাকার মনকে নাড়া দেয় । মানুষের দুঃখ , কষ্ট , জরা , মৃত্যু কবিকে ব্যথিত করে । নারী পুরুষের বৈষম্যকে তুলে ধরে এক মানবিক পৃথিবীর প্রত্যাশা করেন কবি । মানুষের প্রতি অদম্য ভালোবাসা তাঁকে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া অন্যায়ে গর্জে উঠতে নাড়া দেয় । কবিতার মাধ্যমে তিনি বরাবরই এইসব তুলে ধরার চেষ্টা করেন … । ’ প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ হৃদপিণ্ডের ব্যথা ’ র পর সদ্য প্রকাশিত হল কবির দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ আহত ঝিনুক ’ । প্রথম থেকে দ্বিতীয়তে পৌঁছাতে গিয়ে কবি এক চুলও সরে আসেননি তাঁর বক্তব্য থেকে । একই ধারায় তাঁর একের পর এক কবিতায় ঝরে পড়েছে অন্যায় , অবিচার , বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা , শ্লেষ , প্রতিবাদ । পাশাপাশি প্রত্যাশার শিখরে অবস্থান করেন কবি । এক সুস্থ সুন্দর পৃথিবীর প্রত্যাশা , এক প্রেমবিজড়িত সৌহার্দময় পৃথিবীর প্রত্যাশা । ৯৮ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থে রয়েছে মোট ৯২টি এক পৃষ্ঠার কবিতা । অধিকাংশ কবিতায়ই ধরা আছ...

গৌরবগাথার সমৃদ্ধ আয়োজন ‘বিয়ান’

সিলেট বা শ্রীহট্ট , কবিগুরুর লেখনীতে ‘ সুন্দরী শ্রীভূমি ’ । সেই সিলেট অঞ্চলের ভাষা , আঞ্চলিক বাংলা ভাষা সিলেটি । উত্তরসূরীদের মুখে মুখে আজও প্রবহমান । উত্তরসূরীদেরই এক সম্মিলিত মঞ্চ সর্বভারতীয় শ্রীহট্ট সম্মিলনী ফেডারেশন । সম্প্রতি ‘ সিলেটি সম্মেলন , গুয়াহাটি ’ আয়োজিত চতুর্থ শ্রীহট্ট উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে একটি স্মরণিকা - ‘ বিয়ান ’ । বিয়ান অর্থে সকাল । শিক্ষা , সংস্কৃতি , সাহিত্য , ভক্তি আন্দোলন , বিজ্ঞান ইত্যাদি সর্ববিষয়ে শ্রীহট্টের অবদান সর্বকালীন এবং সর্বজনস্বীকৃত । সংগীত জগতের কৃতি শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরীর স্মৃতিতে উৎসর্গিত এই স্মারকগ্রন্থের প্রচ্ছদে তাই নির্মলেন্দুর প্রতিকৃতির পাশাপাশি রয়েছে একতারা ও ঢোল । প্রতিটি পৃষ্ঠার উপরে অঙ্কিত আছে শ্রীচৈতন্যের ছবি। ৯৮ পৃষ্ঠার স্মারক গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে শ্রীহট্ট সম্বন্ধীয় একাধিক রচনা যা এক গর্বিত অতীতের সাক্ষ্য বহন করে । প্রথমেই রয়েছে এবারের সম্মেলনে সম্মানিত কয়েকজন কৃতি সিলেটির পরিচয় । এঁদের মধ্যে আছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ড . কালীপ্রদীপ চৌধুরী , শিক্ষাবিদ ও পক্ষী বিশেষজ্ঞ প্রফেসর পরিমল ভট্...

সান্ধ্য চায়ের প্রহসন

পথের ধারের সান্ধ্য চায়ের আড্ডা বড্ড প্রিয় আমার, বসে থাকি প্রায়শ একটিমাত্র নিয়ন বাতি, একা কুম্ভ দোকানদার প্রিয় মানুষ দরাজদিল আর সাগর - মায়ার।   বেঞ্চে বেঞ্চে রোজ সন্ধ্যায়, কথায় কথায় মরে যায় কত রাজা, কত মন্ত্রী সান্ত্রি উজির জেগে ওঠে কত নতুন দেশ, আসর ওঠে মেতে কত দেশ যায় গোল্লায়, কত কাল - কত পাত্র, চুমুকে চুমুকে ছলকে ছলকে দমকা তুফান ছুটে আজ যে নেতা কাল সে ফকির ঘোর প্রহসন মাত্র।   একদিন এক সন্ধ্যা বেলায়, নিয়ন বাতির তলায় চায়ের কাপে তুফান উঠেছে বেজায় ছলকে পড়েছে চুমুকের চা, বিষম উঠেছে বিষম কোন অজানার পার হতে আসে কোন সে সুরের তান কোন মিলনের গান। উঠেছিল বেজে হৃদয়তন্ত্রী জুড়ে চায়ের কাপের জলতরঙ্গ বান।   প্রহসন শেষে চোখের পাতায় নেমেছে যেদিন ঘুম সেদিন থেকেই চায়ের দোকানে নেমেছে সন্ধ্যা নিঝুম।

কিচিরমিচির

আমার মা পাখিদের ভাষা বুঝতেন । কাঁঠালের লেজঝোলা হোক কিংবা শিমূলের মগডাল জুড়ে উড়ে - এসে - জুড়ে - বসা সব পাখিদের ভাষা মা বুঝতেন । মায়ের কিছু পোষা পাখিও ছিল , মায়ের কথা বুঝত মা ডাকলেই এসে বসত উঠোন জুড়ে , রান্নাঘরে । আকালের ধন বহুমূল্য তণ্ডুল থেকে কিছু তণ্ডুল , কিছু খুদকুঁড়ো ছড়িয়ে দিতেন মা পাখিরা পরমানন্দে খেয়ে দেয়ে সাজিয়ে রাখা জলের পাত্র থেকে আকণ্ঠ পান করে উড়ে যেত আস্তানায় ‘ অন্য কোথা , অন্য কোনখানে ’ - বনে বা খাঁচায় ।   পাখিরা কথা বলত নিজেদের মাতৃভাষায় সবাই সবার কথা বুঝত , আমরা একটা নাম দিয়েছিলাম সে ভাষার - কিচিরমিচির । মায়ের পোষা পাখিরা কিচিরমিচিরে মগ্ন সারা দিন আদর সোহাগ যত্নআত্তি , খুনশুটি আর ঝগড়াঝাঁটি ।   সব পাখিদেরই একটা মা থাকে , মাতৃভাষা থাকে আমরা মায়ের চারটি পোষা পাখি ছিলাম মায়ের জঠরপিঞ্জর থেকে উদ্ ‌ গত বক্ষপিঞ্জরের ধন আমাদেরও মাতৃভাষা আছে , ভাষার গরিমা আছে আমাদের ইষ্টিকুটুম আছে , টিয়ে ময়না আছে । আমরা আজও গান শুনি , গান শোনাই - মাতৃভাষার গান , স …… ব মাতৃভাষার জয়গান ।

পারাবত সন্ধ্যা

সেই এক পাগলপারা সান্ধ্য ছায়ার শুভ্র ছটা , আপাদকণ্ঠ শ্বেতবসনার ঘুরন্ত কপোত আবাহনে দীর্ঘ খেলানো মুহূর্তগুলির আচ্ছন্নতা বয়ে শৈত - শিহরণে ঝরো ঝরো অঝোর স্বেদবিন্দু ।   কপোল বেয়ে অবাধ্য চুলের শাসন মেনেছে কেউ ? অসহ্য শ্বসন যন্ত্রণায় পুড়ে খাক এ জীবন কে দিয়েছে দিব্যি সেই স্বর্গ - সুষমা যাপনে ? তিল তিল দহনে দগ্ধ যাপন শেষ দহনেও হবে কি শেষ ? এমন দহন পোড়ায় যাপন , পোড়ায় জীবন , পোড়ায় আজীবন জলজ বেহাগ , গগনবিদারী মেঘমল্লার সব ফিরে গেছে হেরো পথ ধরে স্তব্ধ আস্তানায় ।   ললিত সন্ধ্যা জুড়ে তাই রোজ বাজে ইমন বসে সান্ধ্য আসর , পেয়ালায় ঝড় তোলে সুধাময়ী রাত গভীর হয় , ঘুম আসে চোখে মন্দ্রসপ্তকে দ্রিমিদ্রিমি বাজে গভীর রাতের দরবারী কানাড়া … আবারও নতুন ভোর , ভাঙে পারাবত আড়মোড়া ।

বিশ্বদর্শন

সে চোখের দৃষ্টি সেদিন মেপে উঠতে পারিনি কেউ পারেনি । মহাশূন্যের পানে শূন্য উদাস চাউনি অথচ …… ঘিরে থাকা এতগুলো চোখ এতগুলো স্বজন অবয়ব - সব সব দৃষ্টির বাইরে অদৃশ্য । এ কোন মায়া ? পার্থিব মায়া থেকে অন্য এক মায়াসমুদ্দুরে স্বেচ্ছা অবগাহন পর্ব , নাকি বাধ্যবাধকতার সাড়ম্বর আয়োজন ? এ দ্বন্দ্ব , এ ধন্দ অপরিমেয় , অজর অমর আত্মাহুতির আয়োজন ।   আজও খুঁজি সেই কুসুমপথ । বিশ্বদর্শন ? এ পথে ফেরার কথা নেই , একমুখী এ জীবনপথ কুসুম বা কণ্টক , নিজেই আত্মপথিক বাকি সব মিছে মায়া , এ শ্বেতবিশ্বে কোনো কালো নেই , নেই ছায়া পথজোড়া শুধু গুচ্ছ শাদা ফুলের পাপড়ি বিছানো কুসুম - কুহক সমারোহ ।   দৃষ্টি বিহীন খোলা চোখে অনন্ত বিশ্বরূপ এই তো জীবন , বাকি সব ছাই , মিথ্যা মোহ ।