Skip to main content

সম্ভারে, বৈচিত্রে নান্দনিক শারদীয় সংখ্যা ‘সংযোগ‘ - ২০২৪


প্রকাশিত হতে হতে অনেকটাই দেরি হলেও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে নিয়মিত হিসেবে এই পত্রিকার প্রকাশ এতদঞ্চলের সাহিত্য পরিমণ্ডলে নিশ্চিতভাবেই বয়ে এনেছে এক সুখ ও সন্তুষ্টির বার্তা অন্যথা দুএকটির বাইরে অধিকাংশ পত্রিকাই ইতোমধ্যে অনিয়মিতের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল  
বাংলা সাহিত্য সভা, অসম-এর মুখপত্র তথা সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে রাজ্যিক পর্যায়ে প্রকাশিতসংযোগপত্রিকার শারদীয় সংখ্যা ২০২৪ ধারে ও ভারে পূর্ববর্তী সংখ্যার মতোই সাহিত্যপিপাসু পাঠকের দরবারে স্থান লাভ করতে সক্ষম হবে নিঃসন্দেহে সম্পাদকীয় পাতায় বিলম্বিত প্রকাশের কথাটি উল্লেখও করেছেন সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র দাস। এছাড়া প্রকাশক সংস্থা, বাংলা সাহিত্য সভার উদ্দেশ্য ও কর্মোদ্যোগের খতিয়ানও তুলে ধরা হয়েছে বিস্তৃতভাবে।
গদ্য ও পদ্যের যথাযথ সংমিশ্রণের পরেও বলা যেতে পারে গদ্য বিভাগের চাইতে পদ্য বিভাগের পাল্লা ভারী হয়েছে আলোচ্য সংখ্যায়। প্রথমেই ‘বিশেষ গদ্য’ বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৎকালীন অধ্যাপক তথা বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী, সংগীত শিল্পী, প্রাবন্ধিক ও কবি প্রয়াত সুভাষ দে’র অপ্রকাশিত রচনা ‘রবীন্দ্রসৃষ্টি পরিক্রমা অথবা হস্তী দর্শন’। দীর্ঘ ৩২ পৃষ্ঠাব্যাপী এই রচনা প্রকৃতার্থেই এক পরিক্রমা। লেখক ছিলেন প্রকৃত অর্থে একজন রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ। তাঁর বহু সৃষ্টিকর্মের সঙ্গে উত্তরপূর্বের পাঠকমহল সুবিশেষ পরিচিত। এই দীর্ঘ নিবন্ধে তিনি সংগীত ও সাহিত্যকে প্রেক্ষিত করে রবীন্দ্রসৃষ্ট গ্রন্থ, কবিতা ও সামূহিক সৃষ্টির উপর লিপিবদ্ধ করেছেন এক গভীর প্রজ্ঞাসঞ্জাত আলোকপাত তথা বিশ্লেষণ। লিখনশৈলীতে, তত্ত্বে, তথ্যে পরিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ এই রচনা নিঃসন্দেহে সংখ্যাটির শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
‘গদ্য’ বিভাগে রয়েছে পাঁচটি রচনা। খগেনচন্দ্র দাসের ‘যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা’ শারদীয় সংখ্যার মঙ্গলাচরণ স্বরূপ একটি উৎকৃষ্ট রচনা। অপরাপর শারদীয় সংখ্যাসমূহের অন্তর্গত গদ্যের এক বহুল প্রচলিত শিরোনাম যদিও প্রকৃতই এক ভিন্নধর্মী বিশ্লেষণ ও বাস্তব প্রেক্ষিতে এক প্রাসঙ্গিক উপস্থাপন। এরপর বাংলা সাহিত্যসভার সাম্প্রতিক কৃতিত্ব ও অর্জন বিষয়ক একটি রচনা ব্যক্তিগত গদ্যের ধাঁচে লিখেছেন শিশির সেনগুপ্ত। অসিত চক্রবর্তী লিখেছেন ‘বাংলা পঞ্জিকা : হিন্দু কালগণনার এক আঞ্চলিক ধারা। ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে সেকাল থেকে একালের পঞ্জিকার ইতিহাসাশ্রিত সাতকাহন। ‘পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও নারী শিক্ষা’ - লিখেছেন নির্মলেন্দু চট্টোপাধ্যায়। শিরোনামানুযায়ী বিন্যস্ত বিভাগনাম সম্বলিত একটি বিস্তৃত রচনা। সুদেষ্ণা দেবরায় চন্দের গদ্য ‘উৎসবের দিনগুলো’ ঘটনা, দুর্ঘটনা, ভক্তি ও উদ্‌যাপনে, দুর্গোৎসবের আবহে ব্যক্তিগত অনুভব ও মানবতার সাম্প্রতিক পতন সম্পর্কিত আন্তরিক আলোকন।
গল্প বিভাগে রয়েছে মোট ছয়টি গল্প। মদনগোপাল গোস্বামীর ‘আজব বৃক্ষ’ দুই পৃষ্ঠার একটি গভীর ব্যঞ্জনাময় গল্প। সমরবিজয় চক্রবর্তীর গল্প ‘ভুবন ফিরল, ট্র্যাসি ফিরল না’। ইংরেজি সাহিত্যের কিছু গল্পের আবহে একটি চমৎকার মৌলিক গল্প। ‘অপেক্ষা’ - লিখেছেন রীতা চক্রবর্তী (লিপি)। কঠোর বাস্তবের প্রেক্ষিতে এবং দুঃখসুখের পালাবদলের আবহে একটি সুন্দর, গোছানো গল্প। বিমলেন্দু চক্রবর্তীর গল্প ‘প্রত্যাবর্তন’। অহংকার ও আভিজাত্যের খোলস খসে পড়ার গল্প। জীবন সায়াহ্নে সব একাকার হয়ে যাওয়ার নিগূঢ় তত্ত্বকথা গল্পের মাধ্যমে পরিস্ফুট হয়েছে যথাযথ বুনোট ও সংলাপে। গল্প ‘মায়ের টান’ লিখেছেন নিবেদিতা চক্রবর্তী। গর্ভধারিণীর সঙ্গে সন্তানের নাড়িছেঁড়া সম্পর্কের এক অনবদ্য প্রকাশ। গল্পটি আরোও বিস্তৃত হতে পারত হয়তো। শর্মিলী দেব কানুনগোর গল্প ‘ঝরা পাতা’ অসাধারণ বুনোটের একটি সার্থক ছোটগল্প। আংশিক থ্রিলারধর্মী বলে অভিহিত করা যেতে পারে। তবে পুনঃপ্রকাশিত যদিও তার উল্লেখ নেই কেন বোঝা গেল না। সব মিলিয়ে একটি উপভোগ্য গল্প বিভাগ।
রয়েছে একগুচ্ছ কবিতা। নানা স্বাদের, নানা আঙ্গিকের। বিশেষোল্লেখে রাখা যেতে পারে তুষারকান্তি সাহা, জয়া ঘটক, শান্তনু রায় চৌধুরি, শিখা সেনগুপ্ত, শাশ্বতী ঘোষ দস্তিদার, মোহিত চন্দ ও প্রদীপকুমার ভট্টাচার্যের কবিতাকে। এছাড়াও রয়েছে যাঁদের কবিতা তাঁরা হলেন সুতপা চক্রবর্তী, উমা ভৌমিক, রতীশ দাস, মনোজকান্তি ধর, বিশ্বজিৎ দেব, মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, অজিত পাল, শৈলেন দাস, সংহিতা দত্ত চৌধুরী, শেলী দত্ত, বিশ্বজিৎ নাগ, পীযূষকান্তি সাহা, নিকিতা সাহা ও বাউলা সঞ্জয়। ‘মুক্ত গদ্য’ বিভাগে প্রশান্ত চক্রবর্তীর ছয় পর্বে লেখা তিন পৃষ্ঠার কবিতা ‘জান্তব’ গভীর অর্থবহ তথা বাস্তব প্রেক্ষিতে কাব্যগুণসম্পন্ন একটি শ্লেষাত্মক, সুপাঠ্য কবিতা।
কিছু বানান ও ছাপার বিভ্রাট থাকলেও সংখ্যায় তা নিতান্তই নগণ্য। কয়েকটি রচনায় ‘র’ ও ‘ড়’-এর পারস্পরিক স্থানচ্যুতি লক্ষ করা গেছে। এর বাইরে সম্ভারে, বাক্য/পঙ্‌ক্তি বিন্যাসে যথাযথ পাঠযোগ্য হয়ে উঠেছে পত্রিকা। নামলিপি ও প্রাসঙ্গিক তথা নান্দনিক প্রচ্ছদের সৌজন্যে গৌতম দত্ত। সব মিলিয়ে একটি শোভনসুন্দর ও পঠনসুখের পত্রিকা - ‘সংযোগ’, দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যা।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৯৫৪৭৫৯৮০৩ 

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...