Skip to main content

শ্রীরামচন্দ্র ভগবান

মানুষ হাতের আঙুলে নানা ধরণের রত্নসম্বলিত আংটি পরে কেন ? কবচ মাদুলি তাগা, কবজিতে মন্ত্রঃপূত সুতো কেন পরে ?

এ প্রশ্নের উত্তর দু'ভাগে দেওয়া যেতে পারে। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সাধারণত মানসিক ভাবে অতৃপ্ত এবং অসন্তুষ্ট থাকেন। খুব খুঁতখুঁতে ধরণের হয়ে থাকেন। ছোটখাটো ব্যাপারেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের 'আছে'টা যত বাড়তে থাকে সেই সুবাদে 'নেই'টাও বাড়তেই থাকে। আর এই সুযোগে রত্ন ব্যবসায়ী জ্যোতিষীদের খপ্পরে পড়ে একের পর এক রত্ন ধারণ করে আঙুলের শোভা বর্ধন করে যান।
অন্যদিকে যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য কম তাঁরা অনেক কষ্টে একটি বা দু'টি রত্ন ধারণ করে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে থাকেন। বলাই বাহুল্য এসব কিছুই কোনও কাজে আসে না বলে আমার ধারণা। এসব হচ্ছে সোজা ভাষায় মগজ ধোলাই এর ফল।
দীন দরিদ্র যাঁরা তাঁদের ব্যাপারটা পুরোই ভিন্ন। রত্ন এবং জ্যোতিষী দুইই তাঁদের অধরা। সেক্ষেত্রে সেই কবচ মাদুলিই ভরসা।
আরেকটি দিকও আছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে আধুনিক জীবন যাত্রায় অভ্যস্ত মানুষও একটা সময় যখন সব পথ রুদ্ধ হয়ে যায় তখন যাবতীয় আধুনিকতাকে বিসর্জন দিয়ে নিজের কিংবা প্রিয় জনের আশু বিপদকে দূরে সরিয়ে রাখার অভীপ্সায় এসবের শরণাপন্ন হন বাধ্য হয়েই। উদাহরণ - টিংকু ডেকার ক্যান্সার চিকিৎসা।
সব শেষে তাঁরা - যাঁদের জীবন ধারণেরই কোনও ঠিকানা নেই। দু'বেলা দু'মুঠো অন্নের সংস্থানই যাঁদের দুঃস্বপ্ন বৈ কিছু নয় তাঁরা। তাঁদের ভরসা শুধু এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বর, ভগবান, আল্লাহ।
এই শেষোক্ত পর্যায়টি আমি পেরিয়ে এসেছি আমার শৈশবে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান - তিনটিই ছিল নড়বড়ে। দিনের পর দিন ধরে মেরামত না হওয়া জীর্ণ বাসস্থান। বড়দের মুখে শুনতাম - ভাঙাচোরা ঘর, খোদায় রক্ষা কর। ঝড়ের রাতে দেশভাগের বলি অভাগিনী মা আমার প্রাণপণে আওড়াতেন আকুল প্রার্থনা - রক্ষা করো হে মধুসূদন।
শিশু হৃদয় আমার তখন থেকেই দেখে আসছি বিপদে সত্যি সত্যিই রক্ষা করে গেছেন মধুসূদন। সেই ট্র্যাডিশন আজও চলছে সমানে। আজও দুঃখবেলায় আমাকে পথ দেখান আমার ঈশ্বর, আমার মধুসূদন, আমার গুরু মহারাজ। এ এক বিশ্বাসের কথা। বিশ্বাসে মেলায় কৃষ্ণ তর্কে বহুদূর। আমার মতো কোটি কোটি ভারতবাসীর একান্ত ভরসার, বিশ্বাসের স্থল এই কৃষ্ণ মধুসূদন। শ্রীরামচন্দ্র ভগবান।
আমার মতো অনেকেই আছেন যাঁদের অতীত আমারই ধারণার সুতোয় বাঁধা। কিন্তু আজ অতি শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে অনেকেই এটা স্বীকার করতে দ্বিধাগ্রস্ত হন, লজ্জিত অনুভব করেন। পাছে এলিট সমাজে ব্যাকডেটেড বলে অভিহিত হয়ে পড়েন। বেদ, উপনিষদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ভারত সত্ত্বাকে জনসমক্ষে স্বীকৃতি দিতে কুণ্ঠা বোধ করেন পাছে সাম্প্রদায়িক আখ্যায় ভূষিত হন। কিন্তু এঁরা বুঝতে চান না যে সাম্প্রদায়িক শব্দটির অর্থই আলাদা। নিজের ভাষাকে, ধর্মকে ভালোবাসাটা সাম্প্রদায়িকতা হতে পারে না। নিজের ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতিকে ভালোবেসেও পরধর্ম, পরভাষা, পরসংস্কৃতিকে মর্যাদা দেওয়াটাই হলো প্রকৃত অসাম্প্রদায়িকতা।
আজ এক যুগসন্ধিক্ষণে ভারত আত্মার মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রের বহু প্রতীক্ষিত মন্দির নির্মাণের শুভ মুহূর্তে আমি প্রার্থনা জানাই হে মধুসূদন, আজ এই মহামারী দুর্যোগের বিপদ থেকে তুমি রক্ষা করো জাতি ভাষা বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে দেশের আপামর মানুষকে, সমগ্র ভারতবাসীকে।
জয় শ্রীরাম।

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...

শুদ্ধ বানানচর্চার প্রয়োজনীয়তা ও সচেতনতা

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যচর্চার পরিসরকে কেউ কেউ অভিহিত করেন তৃতীয় ভুবন বলে , কেউ আবার বলেন ঈশান বাংলা । অনেকেই আবার এই জাতীয় ভুবনায়নকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন - সাহিত্যের কোনও ভুবন হয় না । সাহিত্যকে ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা যায় না । কারও ব্যক্তিগত অভিমতের পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কিছুই থাকতে পারে না । যে যেমন ভাবতে বা বলতেই পারেন । কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করতে গেলে দেখা যায় বাংলার এই যে অখণ্ড বিশ্বভুবন সেখানে কিন্তু কয়েকটি স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে । আঞ্চলিক ভাষায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও মান্য বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই দেখব যে বাংলাদেশের বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলার মধ্যে শব্দরূপ তথা গৃহীত বানানের ক্ষেত্রেও বহু তারতম্য রয়েছে । সংলাপ বা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মান্য বাংলারও ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায় । যেমন পানি / জল , গোসল / স্নান , নাস্তা / প্রাত : রাশ ইত্যাদি । সেসবের উৎস সন্ধানে না গিয়ে শুধু এটাই বলার যে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা এক অমোঘ পর্যায় । বিহার / ঝাড়খণ্ডের বাংলা আর নিউইয়র্কের বাংলা এক হলেও সাহিত্যে তা...