Skip to main content

বরাক ২০২০ - ২য়

লিখেছিলাম - কবির শহর শিলচর। স্বভাবতই এবারের একদিবসীয় শিলচর ম্যাচের প্রথম অভারেই অর্থাৎ সকালেই আমার সারাক্ষণের ছায়াসঙ্গী তথা শহর শিলচরের জনপ্রিয় সামাজিক ব্যক্তি পীযূষ দেবরায় কে সঙ্গে করে কবি সান্নিধ্যে শুরু হলো দিনভর দৌড়ঝাঁপ। বিশিষ্ট কবি সুশান্ত ভট্টাচার্যের আবাসগৃহটিই আমার কাছে নস্টালজিক। গুরুচরণ কলেজে উঠে যাওয়ার পথের মুখেই ছবির মতো সাজানো কাব্যনীড়। আমার কলেজ জীবনের 'আসা যাওয়ার পথের ধারে' এই ঘরের সামনে দিয়ে ছিল নিত্যদিনের পথ মাড়ানো। মেন গেট দিয়ে ঢুকতেই উঠোন ভরা শেষ শরতের ঝরা শিউলি পেরিয়ে পোর্টিকোর সদর দরজায় সদাহাস্য চিরনবীন অগ্রজকবি সুশান্ত-দা।পম্পা বৌদির বদান্যতায় চা মিষ্টি সহযোগে জম্পেশ হলো আড্ডা। সুশান্ত-দা দিলেন তাঁর সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ BLUE HORIZON এবং ছিমছাম ছোট পত্রিকা শারদীয়া বালার্ক।

এক ঘন্টার জমজমাট আড্ডা শেষে বাইরে বেরিয়েই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সরাসরি মুখোমুখি আত্মীয়সম তরুণ কবি নীলাদ্রি ভট্টাচার্যর সঙ্গে। আবার একপ্রস্থ আলোচনা। এই মুহূর্তে আমার কাছে নীলাদ্রি হলো এ অঞ্চলের সবচাইতে সফল কবি যার কবিতার শৈলী আমাকে আকৃষ্ট করে নিরন্তর। নীলাদ্রি আমার হাতে তুলে দিল তার সম্পাদনায় সর্বশেষ প্রকাশিত কবিতা পত্রিকা 'শব্দ পাতার নৌকো'। এই সংখ্যায় রয়েছে আমারও একটি কবিতা।
পরবর্তী পর্বে পীযূষ চলে গেল কর্মক্ষেত্রে আর আমি আত্মীয় সান্নিধ্যে।
সন্ধে তখন প্রায় সাতটা। অকুস্থল বিশিষ্ট গল্পকার মঞ্জরী রায়-এর বাসগৃহ। সান্ধ্য আড্ডায় একে একে উপস্থিত কবি ও গল্পকার রবিশংকর ভট্টাচার্য, কবি শৈলেন দাস এবং কথাসংস্কৃতিকার মৌপিয়া চৌধুরী। উপরি পাওনা মঞ্জরী-দির কন্যা বৃষ্টি। দেড় ঘন্টার আড্ডাসভায় কথায় কথায় উঠে এল অবাধ যত প্রসঙ্গ। শেষ পর্বে প্রথমেই স্বরচিত কবিতা পড়ে শোনালেন শৈলেন দাস ও রবিশংকর-দা। এরপর আমি পাঠ করলাম আমার কবিতা 'রক্তস্নাত উত্তরাধিকার'। স্বরচিত অণুগল্প পাঠ করলেন মৌপিয়া এবং দুটি ছোটগল্পের স্বকৃত আলোচনা পাঠ করলো বৃষ্টি। এই বয়সে ছোটগল্পের আলোচনা ? অসাধারণ। নিশ্চিত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। সেই কামনাই রইল। শেষে স্বরচিত একটি গল্প পাঠ করলেন এই সময়ের বিশিষ্ট গল্পকার মঞ্জরী রায়। পাঠের মাধ্যমে যে রচনাগুলোর যথার্থ প্রাণসঞ্চার হয় সেই কথাটি প্রমাণিত হলো আরোও একবার। প্রতিটি কবিতা, প্রতিটি গল্প যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছিল হালকা হিমের এই সান্ধ্য আসরে।
এবার কিছু অন্তরের ধন, কিছু আপন সৃষ্টির আদান-প্ৰদান পর্ব। শৈলেন দিলেন তাঁর সম্পাদিত 'প্রতাপ' পত্রিকার সদ্য প্রকাশিত সংখ্যাটি। এতেও রয়েছে আমার একটি কবিতা। মঞ্জরী-দি দিলেন তাঁর সম্পাদিত 'বরাক নন্দিনী' পত্রিকার সাম্প্রতিক শারদীয়া সংখ্যা সহ এ যাবৎ প্রকাশিত সব ক'টি সংখ্যা এবং তাঁর ছোটগল্প সংকলন' হালিচারা'। প্রসঙ্গত শারদীয়া বরাক নন্দিনীতেও রয়েছে আমার দু'টি কবিতা। বরাক নন্দিনী পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় এভাবে আমাকে সন্নিবিষ্ট করায় আমি আপ্লুত। অন্তরের উজাড় করা কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ রইল পত্রিকা কর্তৃপক্ষের প্রতি। এরপর আমিও সবার হাতে তুলে দিলাম আমার সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ 'জল রঙ জীবন কথা' এবং রবিশংকর-দা তুলে দিলেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'রূপনগরে আমি'। সবার শেষে স্মরণীয় কবি তথা ঘটনাচক্রে আমার কলেজ জীবনের শিক্ষাগুরু শক্তিপদ ব্রহ্মচারীর একটি কবিতা মুখস্থ শোনালেন রবিশংকর-দা।
চা পর্বে মঞ্জরী-দির বিশাল খাদ্য সম্ভারের আয়োজন তথা গোটা অনুষ্ঠান সুচারু ভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল যারা সেই বৃষ্টি ও ঋককে অশেষ ধন্যবাদ আবারও।
সাহিত্য সভা শেষ হয়ে বেরোতে বেরোতে প্রায় রাত ন'টা। স্মৃতি বিজড়িত তৎকালীন 'দেবদূত' সিনেমা হলের সামনে তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে অকৃত্রিম বন্ধু পীযূষ। গভীর রাতে আবার চললো গভীর আলোচনা। এ যেন কখনো শেষ হবার নয়। কিন্তু বাস্তবই শেষ কথা বলে। তাই রাত প্রায় দশটায় ম্যাচশেষে ডেরায় ফেরা।
বিভিন্ন কারণে ইচ্ছে থাকলেও দেখা হলো না অনেকের সাথে। চন্দ্রিমা-দি, শতদল, রূপরাজ স্যর, সুদীপ্তা সেনগুপ্ত দিদি, মমতা, শান্তা-সুমন-মঞ্জু, নীলেন্দু, টিটু, জয়া, গার্গী এবং আরোও আরোও অনেকেই।
ছোট বোন মিঠু সহ রাজু ও মামন সফরটাকে সুখকর করতে যা করার সব করলো।
এই মুহূর্তে ফেরত যাত্রায় স্মৃতি নিয়ে বসে আছি বাসে আবারো পেরিয়ে বরাক।

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...

শুদ্ধ বানানচর্চার প্রয়োজনীয়তা ও সচেতনতা

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যচর্চার পরিসরকে কেউ কেউ অভিহিত করেন তৃতীয় ভুবন বলে , কেউ আবার বলেন ঈশান বাংলা । অনেকেই আবার এই জাতীয় ভুবনায়নকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন - সাহিত্যের কোনও ভুবন হয় না । সাহিত্যকে ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা যায় না । কারও ব্যক্তিগত অভিমতের পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কিছুই থাকতে পারে না । যে যেমন ভাবতে বা বলতেই পারেন । কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করতে গেলে দেখা যায় বাংলার এই যে অখণ্ড বিশ্বভুবন সেখানে কিন্তু কয়েকটি স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে । আঞ্চলিক ভাষায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও মান্য বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই দেখব যে বাংলাদেশের বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলার মধ্যে শব্দরূপ তথা গৃহীত বানানের ক্ষেত্রেও বহু তারতম্য রয়েছে । সংলাপ বা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মান্য বাংলারও ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায় । যেমন পানি / জল , গোসল / স্নান , নাস্তা / প্রাত : রাশ ইত্যাদি । সেসবের উৎস সন্ধানে না গিয়ে শুধু এটাই বলার যে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা এক অমোঘ পর্যায় । বিহার / ঝাড়খণ্ডের বাংলা আর নিউইয়র্কের বাংলা এক হলেও সাহিত্যে তা...