Skip to main content

বিষয়ে, বৈচিত্র্যে সংগ্রহযোগ্য ২৯/৩০ যুগ্ম সংখ্যা ‘সেবা’


যথাসময়ে, অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর আসামের করিমগঞ্জ থেকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ নাগরিক দিবসে প্রকাশিত হল বরিষ্ঠ নাগরিকদের প্রতি নিবেদিতসেবাপত্রিকার পঞ্চদশ বর্ষ, ২৯/৩০ যুগ্ম সংখ্যা এখন এই ষাণ্মাসিক পত্রিকার যুগ্ম সংখ্যাই প্রকাশিত হয় ফলে স্বভাবতইভারেযথেষ্ট ওজনদার হয়ে ওঠে পত্রিকাটি যুগ্ম সংখ্যার নামে একই পরিমাণ লেখালেখি সন্নিবিষ্ট করে পাঠকদের বঞ্চিত করেন না অভিজ্ঞ সম্পাদক অপর্ণা দেব সম্পাদকমণ্ডলীতে এছাড়াও রয়েছেন প্রবালকান্তি সেন, অনুপকুমার বণিক, বনানী চৌধুরী।   
ধারেকেমন হল এ সংখ্যাসেবাদেখে নেওয়া যাক এবার একই সংস্থা দ্বারা পরিচালিত বৃদ্ধাবাসবেলাভূমির বছরজোড়া যাবতীয় কর্মকাণ্ডের গুচ্ছ ছবি তথা পৃষ্ঠাজোড়া প্রতিবেদন জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের প্রতি সংস্থাটির দায়বদ্ধতা তথা গরজের পরিচায়ক এ ছাড়াও রয়েছে দেশ বিদেশের বহু অনুষ্ঠানেসেবাপত্রিকার অংশগ্রহণের বহু ছবি সম্পাদকীয় বিন্যস্ত হয়েছে দুভাগে - ‘চোদ্দ বছরে বেলাভূমিপনেরো বছরে সেবা বিস্তৃত প্রতিবেদন ভেতরের পাতায় রয়েছে দেশ বিদেশের কবি সাহিত্যিকদের বিশাল সম্ভার পরিসরের অভাবে প্রতিটি লেখা নিয়ে আলাদা মন্তব্য সম্ভব নয় প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, স্মৃতিচারণ রয়েছে একাধিক তবে এবারের সংখ্যায় গল্পের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম পাশাপাশি লেখক কবিদের ক্ষেত্রে কোলকাতার পাল্লা ভারী বোধ হয়েছে অধিকাংশ কবি লেখকদের নামের পাশে ছবি ও স্থাননামের উল্লেখ প্রশংসনীয়
প্রবন্ধ, গল্প বা কবিতা - প্রায় সবকিছুতেই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ভাবে এসেছে বার্ধক্যের অনুষঙ্গ সব মিলিয়ে রয়েছে নিখাদ বার্ধক্যের উপর লিখা ছয়টি নিবন্ধ, অন্যান্য নিবন্ধের সংখ্যা তিন, গল্প - পাঁচ, স্মৃতিচারণ - দশ, ভ্রমণ - দুই, প্রতিবেদন - দুই, অনুবাদ গল্প - দুই, তেরো জন কবির চোদ্দটি কবিতা, আহরণ - এক, আলাপচারিতা - এক এবং দুটি লেখকনাম বিহীন রচনা
বিশেষোল্লেখে রাখতেই হবে ‘পথের কথা’য় প্রণবানন্দ দাশ-এর পুনঃপ্রকাশিত নিবন্ধ ‘মাকে শেষ দেখা হয়নি, এখন প্রায়শ্চিত্ত করছেন শফিকুল’, চন্দ্রা মুখোপাধ্যায়ের ‘পশ্চিম আলোয় মায়ের সুর’, শ্যামলী কর ভাওয়ালের ‘কথা’, তপন মহন্তের অনুবাদ গল্প, মৃন্ময় রায়ের ‘ভোরের আলো’ এবং হুমায়ুন আহমেদে-এর ‘আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই’। কথায়, বুনোটে এক একটি অবশ্যপাঠ্য নিবন্ধ যা গুণমানে বহুলাংশে সমৃদ্ধ করেছে সংখ্যাটিকে।
সম্পাদক অপর্ণা দেব-এর লেখা ‘চিহ্নমেলায় উন্মোচিত হয় সেবা পত্রিকা’ একটি বিস্তৃত এবং সুপাঠ্য প্রতিবেদন। মৃদুলকান্তি দে’র ‘চন্দ্রাভিযান’ ভাষার কৌলিন্য ও বক্তব্যের সৌজন্যতায় সমৃদ্ধ একটি চমৎকার গল্প। বাকি গল্পগুলোও চমৎকার। প্রতিভা সরকারের ‘পুত্রার্থ’ গল্পটি নিরেট ভালোলাগা একটি গল্প যদিও শেষটায় গল্পের চলন খানিকটা ব্যাহত হয়েছে বলে মনে হতে পারে। দীপেন্দু দাস-এর গল্প ‘এক যে ছিল’ও অনাবিল চলনের গল্প। মাঝে এবং শেষ লাইনে এক অজানা ‘আমি’র উপস্থিতি সহজ পাঠে বোধগম্য হবার নয়। কবিতা বিভাগে বিশেষোল্লেখের দাবি রাখে সেলিম মোস্তাফা, আরণ্যক বসু, তীর্থঙ্কর দাশ পুরকায়স্থের কবিতাবিপ্লব ওরাং-এর ছিলোমিলো কবিতাও বিশেষ।
এছাড়া যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হল এবারের সংখ্যা তাঁরা হলেন - প্রবন্ধ ও স্মৃতিচারণ বিভাগে তপোজ্যোতি ভট্টাচার্য, দেবলীনা রায়, শ্যামশ্রী দাশগুপ্ত, পূর্ণেন্দু রায়চৌধুরী, অহনা বিশ্বাস, কৃষ্ণা মালিক, নিয়তি রায় বর্মন, দেবব্রত দেব, রূপান্বিতা দে, ফাল্গুনি মুখার্জি ও পরন্তপ বসু। গল্প বিভাগে - রণবীর পুরকায়স্থ, সঞ্জয় গুপ্ত (অনুবাদ গল্প), জয়তী রায়, চৈতালী সান্যাল। ভ্রমণ কাহিনি লিখেছেন মেঘমালা দে মহন্ত ও সুনীতি দেবনাথ। দুটিই চমৎকার। কবিতা বিভাগে - কিরণশঙ্কর রায়, শুভ্রা গাঙ্গুলি ভট্টাচার্য, মুজিব ইরম, করুণাকান্তি দাশ, নাসরীন গীতি, অজয় সান্যাল, জহর দেবনাথ, শরদিন্দু চক্রবর্তী ও অপাংশু দেবনাথ। সুদীপ্তা দে চৌধুরীর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তৃতীয় ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন ও গ্রন্থমেলা ২০২৩।
শেষের দিকে গত সংখ্যা ‘সেবা’র উপর পত্রিকায় প্রকাশিত আলোচনাটি ক্ষুদ্র হরফযুক্ত ছবি আকারে দেওয়া হয়েছে যা পাঠের অযোগ্য। টেক্সট হিসেবে পুরোটা লিখে দিতে পারলে পাঠোপযুক্ত হতো। সূচিপত্রে লেখালেখির বিভাগগুলোকে বিন্যস্ত করতে পারলে পাঠকবান্ধব হয়ে ওঠে পত্রিকা। এর বাইরে মানস ভট্টাচার্যের অনবদ্য প্রচ্ছদ ও প্রায় একশো ভাগ শুদ্ধ বানান সমৃদ্ধ পুরো সংখ্যাটিই ধারে ও ভারে এক সংগ্রহযোগ্য সংখ্যা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে নিঃসন্দেহে। সম্পাদনায় যত্ন ও পরিশ্রমের ছাপ সুস্পষ্ট।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

 

মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫৫৯৬৭২০

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...

শুদ্ধ বানানচর্চার প্রয়োজনীয়তা ও সচেতনতা

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যচর্চার পরিসরকে কেউ কেউ অভিহিত করেন তৃতীয় ভুবন বলে , কেউ আবার বলেন ঈশান বাংলা । অনেকেই আবার এই জাতীয় ভুবনায়নকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন - সাহিত্যের কোনও ভুবন হয় না । সাহিত্যকে ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা যায় না । কারও ব্যক্তিগত অভিমতের পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কিছুই থাকতে পারে না । যে যেমন ভাবতে বা বলতেই পারেন । কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করতে গেলে দেখা যায় বাংলার এই যে অখণ্ড বিশ্বভুবন সেখানে কিন্তু কয়েকটি স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে । আঞ্চলিক ভাষায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও মান্য বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই দেখব যে বাংলাদেশের বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলার মধ্যে শব্দরূপ তথা গৃহীত বানানের ক্ষেত্রেও বহু তারতম্য রয়েছে । সংলাপ বা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মান্য বাংলারও ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায় । যেমন পানি / জল , গোসল / স্নান , নাস্তা / প্রাত : রাশ ইত্যাদি । সেসবের উৎস সন্ধানে না গিয়ে শুধু এটাই বলার যে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা এক অমোঘ পর্যায় । বিহার / ঝাড়খণ্ডের বাংলা আর নিউইয়র্কের বাংলা এক হলেও সাহিত্যে তা...