নিয়মিত পত্রিকার সংখ্যাগুলোকে নান্দনিক
তথা অধিক আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যে প্রায়শ এক পরীক্ষা নিরীক্ষার পথে চলতে হয় সম্পাদকদের।
এমনটা পরিলক্ষিত হয় আকছার। এতে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবর্তনের ছোঁয়ায় ফুটে ওঠে
নতুনত্ব এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই নতুনত্বের আকর্ষণে পত্রিকার গুণগত মানের
কেমন তারতম্য ঘটে তার বিচারক একমেবাদ্বিতীয়ম পাঠকবৃন্দ।
বিশ বছরে পা দিয়েছে ‘সৃজনী’। প্রকাশিত হয়েছে অক্টোবর ২০২৩ সংখ্যা। পত্রিকা প্রকাশে বিশ বছর চলা মানে কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পথ চলা বড় সহজ কথা নয়। নেপথ্যের নিরলস যত্ন, লালন ও চর্চার যে শ্রম তা কিন্তু সহজে প্রবেশ করে না সহজ পাঠকের চিন্তনে। এ দায় শুধুই সম্পাদকের। আর এ দায় নিয়েই এবারের সংখ্যায় সম্পাদকীয়ের পরিবর্তে ‘সৃজনী’র শুরুতে দুই ভিন্ন বিষয়ে দুটি গদ্য উপহার দিয়েছেন সম্পাদক মৃদুলা ভট্টাচার্য। এই ব্যতিক্রমের ভালোমন্দ বিচারের ভারও তাই তোলা রইল পাঠকদের জন্য। এটুকু শুধু বলা যায় যে দুটি গদ্যের উপরি পাওনা হল পাঠকদের।
‘উৎসব’ শিরোনামে দুর্গোৎসব নিয়ে দুই পৃষ্ঠার এবং ‘শব্দসন্ধান’ শিরোনামে শব্দভাবনা নিয়ে এক পৃষ্ঠার গদ্য দুটি আর যাই হোক না কেন সুখপাঠ্য হয়েছে নিঃসন্দেহে - নিরেট সত্য কথার বয়ানে।
এ দুটি নিয়ে ৪০ পৃষ্ঠার এই সংখ্যায় সন্নিবিষ্ট হয়েছে মোট ছয়টি গদ্য এবং ২২ জন কবির ২৬টি কবিতা। বার্ষিক সংখ্যা হিসেবে কৃপণতার অভিযোগের আশঙ্কা এড়ানো যায় না। তবে কম স্বাদের বহু পদের পরিবর্তে স্বাদু কয়েক পদই তৃপ্তিকর ভোজনের জন্য যথাযথ - এ কথাও অস্বীকার করা যায় না। এক্ষেত্রে একশো ভাগ কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হয়েছেন কবি সম্পাদক মৃদুলা।
প্রথমেই চোখ রাখা যাক গদ্য বিভাগে। এক বিশিষ্ট শিল্পী মুকুন্দ দেবনাথকে নিয়ে কলম ধরেছেন আরেক বিশিষ্ট শিল্পী বিমলেন্দু সিনহা। স্বভাবতই তত্ত্ব ও তথ্যে সমৃদ্ধ একটি স্মৃতিচারণমূলক নিবন্ধ উপহার পেয়েছেন পাঠকবৃন্দ। শিল্পী মুকুন্দ এবং মানুষ মুকুন্দের এক নিখুঁত সরস চিত্র অঙ্কন করতে সমর্থ হয়েছেন নিবন্ধকার। এসব তথ্য জানার প্রয়োজন রয়েছে নবপর্যায়ের ছাত্রছাত্রী তথা শিল্পীদের। কবি, সাহিত্যিক রূপরাজ ভট্টাচার্য লিখেছেন বিস্তৃত নিবন্ধ ‘বিপ্রতীপ সময়ের কবি করুণাসিন্ধু দে’। কবিতা, বিশেষ করে বরাক ভুবনের কবিতাবিশ্বে রূপরাজ সততই বিশেষ। সুতরাং তাঁর পক্ষেই লেখা সম্ভব এমন সার্বিক একটি নিবন্ধ। বয়ানে, বুনোটে, উদ্ধৃতিতে সমৃদ্ধ এই নিবন্ধের প্রাথমিক পরিচয় পর্ব থেকে দুটি লাইনের উল্লেখ করা প্রয়োজন - ‘বরাকের কবিতা অঙ্গনে এগিয়ে এসেছিল ‘স্বপ্নিল’ ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে; প্রায় ‘কৃত্তিবাস’-এর সম-সময়ে। যা থোড়বড়ি জাতীয় পুরোনো ধ্যান-ধারণাকে খাড়াবড়ি শুদ্ধ বিসর্জন দিয়ে বরাকে প্রথম নিয়ে এল আধুনিকতার চিন্তাপ্রস্থান। আর তারই অগ্রদূত ছিলেন করুণাসিন্ধু দে…।’ ভাষার এমন চমৎকারিত্বে সুখপাঠ্য এই নিবন্ধে আজকের পাঠক পুঙ্খানুপুঙ্খ আবিষ্কার করতে পারবেন কবি করুণাসিন্ধুকে। নিঃসন্দেহে এই সংখ্যার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। একটি অণুগল্প আছে বিশিষ্ট গল্পকার ঝুমুর পাণ্ডের। এক পৃষ্ঠার গল্প ‘ভারতী দেবী পালালেন’। তুলে ধরেছেন করোনাকালীন সময়ের বীভৎসতা আর মানুষের মেকি রূপ। কাজল দেমতার গল্প ‘পিপল গাছের ছায়া’। এক আদর্শের গল্প। জঙ্গলের আদর্শ, বনবাসীর আদর্শ, বীর বিরসা মুণ্ডার দেখানো পথের আদর্শ। জমজমাট বুনোট গল্পের। কিছু ভিন্ন পর্যায়ের শব্দ বা শব্দবন্ধ গল্পে এনেছে পঠনসুখ। ‘গাছবিরিচ’, ‘দুসরা ধাতুতে গড়া’, ‘সপোন দেখা গড়ন’, ‘কোনোদিন টুকুনটা হলেও’, ‘পাগলপারা বাত’, ‘ফজির থেকে সাঞ্জ’, ‘ছুটু বেলালে’ আদি শব্দগুলো বিষয় ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই হয়ে মান বৃদ্ধি করেছে গল্পের।
কবিতা বিভাগে আছে চমকে ওঠা সব কবিদের নাম। লিখেছেন কৃষ্ণা ভট্টাচার্য, সৈয়দ হাসমত জালাল, সমরজিৎ সিনহা, অরূপ পান্তী, ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রীতি আচার্য, বিপ্লব ওরাং, বিজয় কুমার ভট্টাচার্য, অপাংশু দেবনাথ, নবীনকিশোর রায়, অভীককুমার দে, শ্যামলী দেবী, দীপ্তি দেব, মোহাজির হুসেইন চৌধুরী, শৈলেন দাস, শুভব্রত দত্ত, কাব্যশ্রী বক্সি, জিতেন্দ্র নাথ, নীলাদ্রি ভট্টাচার্য, দেবাশিস সায়ন, সমরবিজয় চক্রবর্তী ও মৃদুলা ভট্টাচার্য। কবিরা সবাই যথেষ্ট নামিদামি। সুতরাং আলাদা করে কবিতার বিশ্লেষণের কোনও সুযোগ নেই। তবে বিন্যাস বিভ্রাটে রূপরাজ ভট্টাচার্যের নিবন্ধের শেষ দুই পৃষ্ঠার মধ্যে ছাপা হয়ে গেছে একটি কবিতার পাতা।
যত্নের ছাপ স্পষ্ট হলেও এবং কিছু বানানের আধুনিক রূপ প্রত্যক্ষ করা গেলেও পঙ্ক্তি, শামিল, গুনগুন, লক্ষ, সাযুজ্য, মাধুর্য, গহিন, মুশকিল আদি কিছু শব্দের ভুল রূপ রয়ে গেছে নজরদারির ফাঁক গলে। প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে ভেতরের সম্পূর্ণ ছাপা, শব্দ ও অক্ষর বিন্যাস আদি যথাযথ। উল্লেখনীয় এই সংখ্যার অক্ষরবিন্যাস, অলংকরণ ও প্রচ্ছদ পরিকল্পনার সৌজন্যে খোদ সম্পাদক। সৃজনী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত সংখ্যাটি তাই বিষয় প্রাচুর্যে না হলেও গুণগত মানে জায়গা করে নিতে পেরেছে পাঠক হৃদয়ে, সময়ের মহাফেজখানায়।
বিশ বছরে পা দিয়েছে ‘সৃজনী’। প্রকাশিত হয়েছে অক্টোবর ২০২৩ সংখ্যা। পত্রিকা প্রকাশে বিশ বছর চলা মানে কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পথ চলা বড় সহজ কথা নয়। নেপথ্যের নিরলস যত্ন, লালন ও চর্চার যে শ্রম তা কিন্তু সহজে প্রবেশ করে না সহজ পাঠকের চিন্তনে। এ দায় শুধুই সম্পাদকের। আর এ দায় নিয়েই এবারের সংখ্যায় সম্পাদকীয়ের পরিবর্তে ‘সৃজনী’র শুরুতে দুই ভিন্ন বিষয়ে দুটি গদ্য উপহার দিয়েছেন সম্পাদক মৃদুলা ভট্টাচার্য। এই ব্যতিক্রমের ভালোমন্দ বিচারের ভারও তাই তোলা রইল পাঠকদের জন্য। এটুকু শুধু বলা যায় যে দুটি গদ্যের উপরি পাওনা হল পাঠকদের।
‘উৎসব’ শিরোনামে দুর্গোৎসব নিয়ে দুই পৃষ্ঠার এবং ‘শব্দসন্ধান’ শিরোনামে শব্দভাবনা নিয়ে এক পৃষ্ঠার গদ্য দুটি আর যাই হোক না কেন সুখপাঠ্য হয়েছে নিঃসন্দেহে - নিরেট সত্য কথার বয়ানে।
এ দুটি নিয়ে ৪০ পৃষ্ঠার এই সংখ্যায় সন্নিবিষ্ট হয়েছে মোট ছয়টি গদ্য এবং ২২ জন কবির ২৬টি কবিতা। বার্ষিক সংখ্যা হিসেবে কৃপণতার অভিযোগের আশঙ্কা এড়ানো যায় না। তবে কম স্বাদের বহু পদের পরিবর্তে স্বাদু কয়েক পদই তৃপ্তিকর ভোজনের জন্য যথাযথ - এ কথাও অস্বীকার করা যায় না। এক্ষেত্রে একশো ভাগ কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হয়েছেন কবি সম্পাদক মৃদুলা।
প্রথমেই চোখ রাখা যাক গদ্য বিভাগে। এক বিশিষ্ট শিল্পী মুকুন্দ দেবনাথকে নিয়ে কলম ধরেছেন আরেক বিশিষ্ট শিল্পী বিমলেন্দু সিনহা। স্বভাবতই তত্ত্ব ও তথ্যে সমৃদ্ধ একটি স্মৃতিচারণমূলক নিবন্ধ উপহার পেয়েছেন পাঠকবৃন্দ। শিল্পী মুকুন্দ এবং মানুষ মুকুন্দের এক নিখুঁত সরস চিত্র অঙ্কন করতে সমর্থ হয়েছেন নিবন্ধকার। এসব তথ্য জানার প্রয়োজন রয়েছে নবপর্যায়ের ছাত্রছাত্রী তথা শিল্পীদের। কবি, সাহিত্যিক রূপরাজ ভট্টাচার্য লিখেছেন বিস্তৃত নিবন্ধ ‘বিপ্রতীপ সময়ের কবি করুণাসিন্ধু দে’। কবিতা, বিশেষ করে বরাক ভুবনের কবিতাবিশ্বে রূপরাজ সততই বিশেষ। সুতরাং তাঁর পক্ষেই লেখা সম্ভব এমন সার্বিক একটি নিবন্ধ। বয়ানে, বুনোটে, উদ্ধৃতিতে সমৃদ্ধ এই নিবন্ধের প্রাথমিক পরিচয় পর্ব থেকে দুটি লাইনের উল্লেখ করা প্রয়োজন - ‘বরাকের কবিতা অঙ্গনে এগিয়ে এসেছিল ‘স্বপ্নিল’ ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে; প্রায় ‘কৃত্তিবাস’-এর সম-সময়ে। যা থোড়বড়ি জাতীয় পুরোনো ধ্যান-ধারণাকে খাড়াবড়ি শুদ্ধ বিসর্জন দিয়ে বরাকে প্রথম নিয়ে এল আধুনিকতার চিন্তাপ্রস্থান। আর তারই অগ্রদূত ছিলেন করুণাসিন্ধু দে…।’ ভাষার এমন চমৎকারিত্বে সুখপাঠ্য এই নিবন্ধে আজকের পাঠক পুঙ্খানুপুঙ্খ আবিষ্কার করতে পারবেন কবি করুণাসিন্ধুকে। নিঃসন্দেহে এই সংখ্যার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। একটি অণুগল্প আছে বিশিষ্ট গল্পকার ঝুমুর পাণ্ডের। এক পৃষ্ঠার গল্প ‘ভারতী দেবী পালালেন’। তুলে ধরেছেন করোনাকালীন সময়ের বীভৎসতা আর মানুষের মেকি রূপ। কাজল দেমতার গল্প ‘পিপল গাছের ছায়া’। এক আদর্শের গল্প। জঙ্গলের আদর্শ, বনবাসীর আদর্শ, বীর বিরসা মুণ্ডার দেখানো পথের আদর্শ। জমজমাট বুনোট গল্পের। কিছু ভিন্ন পর্যায়ের শব্দ বা শব্দবন্ধ গল্পে এনেছে পঠনসুখ। ‘গাছবিরিচ’, ‘দুসরা ধাতুতে গড়া’, ‘সপোন দেখা গড়ন’, ‘কোনোদিন টুকুনটা হলেও’, ‘পাগলপারা বাত’, ‘ফজির থেকে সাঞ্জ’, ‘ছুটু বেলালে’ আদি শব্দগুলো বিষয় ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই হয়ে মান বৃদ্ধি করেছে গল্পের।
কবিতা বিভাগে আছে চমকে ওঠা সব কবিদের নাম। লিখেছেন কৃষ্ণা ভট্টাচার্য, সৈয়দ হাসমত জালাল, সমরজিৎ সিনহা, অরূপ পান্তী, ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রীতি আচার্য, বিপ্লব ওরাং, বিজয় কুমার ভট্টাচার্য, অপাংশু দেবনাথ, নবীনকিশোর রায়, অভীককুমার দে, শ্যামলী দেবী, দীপ্তি দেব, মোহাজির হুসেইন চৌধুরী, শৈলেন দাস, শুভব্রত দত্ত, কাব্যশ্রী বক্সি, জিতেন্দ্র নাথ, নীলাদ্রি ভট্টাচার্য, দেবাশিস সায়ন, সমরবিজয় চক্রবর্তী ও মৃদুলা ভট্টাচার্য। কবিরা সবাই যথেষ্ট নামিদামি। সুতরাং আলাদা করে কবিতার বিশ্লেষণের কোনও সুযোগ নেই। তবে বিন্যাস বিভ্রাটে রূপরাজ ভট্টাচার্যের নিবন্ধের শেষ দুই পৃষ্ঠার মধ্যে ছাপা হয়ে গেছে একটি কবিতার পাতা।
যত্নের ছাপ স্পষ্ট হলেও এবং কিছু বানানের আধুনিক রূপ প্রত্যক্ষ করা গেলেও পঙ্ক্তি, শামিল, গুনগুন, লক্ষ, সাযুজ্য, মাধুর্য, গহিন, মুশকিল আদি কিছু শব্দের ভুল রূপ রয়ে গেছে নজরদারির ফাঁক গলে। প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে ভেতরের সম্পূর্ণ ছাপা, শব্দ ও অক্ষর বিন্যাস আদি যথাযথ। উল্লেখনীয় এই সংখ্যার অক্ষরবিন্যাস, অলংকরণ ও প্রচ্ছদ পরিকল্পনার সৌজন্যে খোদ সম্পাদক। সৃজনী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত সংখ্যাটি তাই বিষয় প্রাচুর্যে না হলেও গুণগত মানে জায়গা করে নিতে পেরেছে পাঠক হৃদয়ে, সময়ের মহাফেজখানায়।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
মূল্য - ৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৮৫৯১৭৬৮২০
যোগাযোগ - ৯৮৫৯১৭৬৮২০
Comments
Post a Comment