Skip to main content

বর্ধিত কলেবরে প্রকাশিত শারদীয় সংখ্যা ‘তৃতীয় ভুবনের সাহিত্য’


সাহিত্যে ভুবনায়ন কতটা সংগত এ প্রসঙ্গে না গিয়ে বলা যায় বাংলাদেশ আর ঝাড়খণ্ডের বাংলা হুবহু এক নয়, উত্তর-পূর্ব ভারত আর অস্ট্রেলিয়ার বাংলাও হুবহু এক নয় সুতরাং ভুবনায়নকে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই সেই সূত্র ধরে প্রতি বছরের মতোই যথানিয়মে, অর্থাৎ পুজোর আগেই করিমগঞ্জ থেকে উন্মোচিত হল কবি, ঔপন্যাসিক নারায়ণ মোদক সম্পাদিততৃতীয় ভুবনের সাহিত্যপত্রিকা - বর্ধিত কলেবরে এই ৯ম সংখ্যাটি অতীতের যাবতীয় রেকর্ড ভেঙে এবার পৃষ্ঠাসংখ্যা ২৭৪-এ গিয়ে শেষ হয়েছে কবি-লেখকের সূচিতে বেশ কিছু নতুন সংযোজন ঘটেছে আবার বাদও গেছে কিছু নিয়মিত নাম সেমি-হার্ড কভারে বরাবরের মতোই নান্দনিক প্রচ্ছদের এই সংখ্যার সৌজন্যে গৌতম চক্রবর্তী (ভোলা) ব্যতিক্রমী আঙ্গিকে পত্রিকার এবারের এই সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছেস্বাধীনতা পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত অত্যাচারিত হিন্দুদের প্রতি সমবেদনায়হিন্দুশব্দের সাহসী উচ্চারণ সাহিত্য পরিমণ্ডলে এক বিরল উচ্চারণ এই ব্যতিক্রমী ধারাকে বজায় রেখেই বলিষ্ঠ একটি সম্পাদকীয়, দলিল হিসেবে এই সংখ্যার এক সম্পদ হয়ে রইল কিছু কথা সম্পাদকীয় থেকে - ‘…আমরা এমন একটি সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যখন মন মানসিকতা বিভিন্ন ভাবে অস্থির, বিচলিত সব সময় কুঁকড়ে থাকে এই বুঝি আমাদের উপর রাজনৈতিক, ধার্মিক পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বিদ্রুপ করে ওঠে সৃষ্টিশীল প্রাচীন একটি ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র একতার অভাবে আক্রান্ত হওয়ার ভীতি মনকে বিভ্রান্ত করে রাখে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী তার পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, তার সুখদু:খ কিংবা অত্যাচারিত হওয়া, বাস্তুচ্যুত হওয়ার যে ক্ষত বহন করে চলেছে, সে তার উত্তরপুরুষকে প্রতিকারের জন্য তৈরি করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় ব্যতিক্রম আমরা হিন্দু বাঙালির কিছু লোক একটু তাকান, আমাদের পূর্বপুরুষদের দেশ সেখান থেকে বিতাড়িত, বাস্তুচ্যুত সেখান থেকে নিঃস্ব হয়ে এসেছিলেন যারা প্রতিশ্রুতির আবেগে রয়ে গিয়েছিলেন তাদের বর্তমান অবস্থা নারী অপহরণ, জমি বাড়ি দখল, মন্দির দেবতা ভাঙচুরকিছু করণীয়, কিছু প্রত্যাশার কথা দিয়ে সজ্জিত হয়েছে সম্পাদকীয়
বরাবরের মতোই একগুচ্ছ লেখক, কবির সাহিত্য সম্ভারে পরিপুষ্ট এবারের সংখ্যাও আলাদা করে আলোচনার পরিসর নেই তাই নামোল্লেখেই সারতে হবে দায় সূচিপত্রে বিভাগ-বিন্যাস থাকলে পাঠক ও আলোচকের সুবিধা হয় যদিও একই ব্যক্তির গদ্য ও পদ্য উভয় রচনা সন্নিবিষ্ট থাকায় তা সম্ভব নয় কবিতার পাঠশেষে যেসব কবির কবিতাকে বিশেষোল্লেখে রাখতে হয় তাঁদের মধ্যে আছেন জয়শ্রী ভট্টাচার্য, সুদীপ ভট্টাচার্য, সুবল চক্রবর্তী, গীতাঞ্জলি রায়, দেবলীনা সেনগুপ্ত, ছন্দা দাম, সমীরণ চক্রবর্তী (গুচ্ছ ছড়া), ডালিয়া সিংহ, জাহানারা মজুমদার, মনিকা বড়ুয়া (গুচ্ছ কবিতা), ধ্রুবজ্যোতি দাস, বন্দনা সেনগুপ্ত (দীর্ঘ কবিতা), শতদল আচার্য (দীর্ঘ কবিতা) ও নারায়ণ মোদক এর বাইরেও ভালো কবিতা লিখেছেন শিখা দাশগুপ্ত, আশুতোষ দাস, শঙ্করী চক্রবর্তী, ঋতা চন্দ, রাজকুমার ধর, প্রতিমা শুক্লবৈদ্য, অনুপকুমার বনিক, জয়িতা চক্রবর্তী, সৌমিত্র পাল, সুমি দাস, জয়ন্তী দত্ত, শুক্লা মিশ্র, গীতা মুখার্জি, ডা: প্রদীপ কুমার দে, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, চান্দ্রেয়ী দেব, বাহারুল ইসলাম, শিনানী গুপ্ত, সুচরিতা সিংহ, জয়ন্তী কর্মকার, পরিমল কর্মকার ও অনিন্দিতা চক্রবর্তী
গদ্য বিভাগে আত্মকথা বা স্মৃতিকথামূলক সুখপাঠ্য নিবন্ধ লিখেছেন অনামিকা শর্মা, শ্রাবণী সরকার ও মাশুক আহমেদ অণুগল্প, ছোটগল্প রচনায় যাঁরা বিশেষোল্লেখে আছেন তাঁরা হলেন শান্তনু মজুমদার, গীতাঞ্জলি রায়, বিমলেন্দু চক্রবর্তী, কমলিকা মহুমদার, শিপ্রা শর্মা ও জয়ন্তী দত্ত মীনাক্ষী চক্রবর্তীর গল্পের শিরোনাম গল্পময় হয়নি অন্যথায় এক যাপন কথার বাস্তব গল্প আদিমা মজুমদারের গল্প সততই মাটির গন্ধ থাকা গভীর বোধসঞ্জাত গল্প তবে একই গল্প একাধিক জায়গায় পাঠানোর ভুল মাঝে মাঝেই করে থাকেন এখানেও তাই হয়েছে জয়িতা চক্রবর্তী লিখেছেন শুদ্ধ বানানসম্বলিত এক উৎকৃষ্ট অণুগল্প শিবানী গুপ্তের ঝরঝরে গদ্যঅবেলার রোদ্দুর বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষা শহীদ সুদেষ্ণা সিংহকে নিয়ে সুচরিতা সিংহের প্রতিবেদন যথাযথ তবে তার অনুবাদ গল্পে শব্দ ও বাক্যবিন্যাসসঞ্জিত কিছু ত্রুটি লক্ষ করা গেছে
নিবন্ধ লিখেছেন গীতা সাহা, কস্তুরী হোমচৌধুরী, অরূপ কুমার ভুঁইয়া, জহর দেবনাথ, গোপাল চন্দ্র দাস, নির্মাল্য দাশ, সন্তোষ কুমার দত্ত, গীতা মুখার্জি সব কটি নিবন্ধই সুলিখিত এবং তথ্যাদিসম্বলিত শেষ পাতে পায়েসের মতো একটি অসাধারণ গল্প লিখেছেন গৌতম চৌধুরী বড়গল্পও বলা চলে ব্যতিক্রমী প্লট তবে কিছু প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন আলাদা চিহ্নের মাধ্যমে বিন্যস্ত করলে ভালো হতো তাছাড়া গল্পের প্রতিটি প্রশ্নবোধক বা বিস্ময়সূচক বাক্যেকীশব্দগুলিকিহিসেবে ছাপা হয়েছে
সম্পাদনার গভীর দায়িত্ব যথাসম্ভব পালন করেছেন সম্পাদক নারায়ণ মোদক তথা সহকারী সম্পাদক ড. গীতা সাহা ও গৌতম চৌধুরী ভবিষ্যতে আমন্ত্রিত হিসেবে তৃতীয় ভুবনের আরোও কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত তথা বর্ষীয়ান লেখক কবির লেখা সংযোজনের প্রচেষ্টা হাতে নেওয়া যেতে পারে এতে আখেরে ঋদ্ধ হবে নবীন প্রজন্ম ছাপার মান মোটামুটি চলনসই ছাপা বা বানান ভুলের সংখ্যা যৎসামান্য সব মিলিয়ে শারদীয় উৎসবের মতোই এক বিশাল বার্ষিক সাহিত্য-আয়োজন

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ২০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭৬০৬৯ 

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়