নিক্তি ধরে বছরের
নির্দিষ্ট সময়েই প্রকাশিত হল ছোটপত্রিকা ‘সীমান্তরশ্মি’র নবম সংখ্যা - শ্রীভূমি বইমেলা সংখ্যা, ডিসেম্বর
২০২৪। তিনের এক অর্থাৎ বছরে নিয়মিত তিনটির মধ্যে
এই পত্রিকা এক অলিখিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে কালসীমার, অপর দুটি পত্রিকার ধারাবাহিকতার অঙ্গ হয়ে। বলাই
বাহুল্য প্রতিটি পত্রিকারই সম্পাদক হচ্ছেন লেখক, কবি নারায়ণ মোদক
এবং প্রতিটি পত্রিকারই প্রকাশস্থান হচ্ছে সাবেক করিমগঞ্জ, অধুনা
শ্রীভূমি।
৬০ পৃষ্ঠার আলোচ্য সংখ্যাটিতে রয়েছে ৫২টি কবিতা, একটি অণুগল্প ও একটি গদ্য-কবিতা। বরাবরের মতোই পত্রিকার সম্পাদকীয়তে রয়েছে কিছু প্রাসঙ্গিক বয়ান যার সম্যক উদ্ধৃতি আলোচনায়ও প্রাসঙ্গিক - ‘সবাই যে একইভাবে চিন্তা করবে, সে তো হবার নয়। প্রতিটি ব্যক্তি তাঁর চেতনাবোধ, ভালোমন্দ একদম নিজস্ব ঢঙে এগিয়ে নিয়ে পথ চলতে থাকে। আমরা বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদি ভাষায় স্বীকৃতি হিসেবে ভাষা গৌরব সপ্তাহ উদ্যাপন করলাম। আমরা আমাদের ভাষা নিয়ে গর্ববোধ করি। কেউ কেউ বলে থাকেন আমার ভাষা অতি প্রাচীন। আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস নিয়ে বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত। এটি তো অনেক আগেই স্বীকৃত হবার ছিল। বলে থাকেন যদিও কিন্তু নিজে কিংবা নিজের সন্তানকে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষিত করে তুলতে তখন বাংলা বিদ্যালয়ের দিকে ফিরেও তাকান না। বাংলার পীঠস্থান বলে যে প্রদেশের যাঁরা বুক ঠুকেন সেখানেই হাজার হাজার বিদ্যালয় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ধ্রুপদি ভাষার স্বীকৃতি পাওয়ার আনন্দে উল্লসিত হওয়ার অধিকার তখনই আমাদের জন্মাবে যখন মাতৃভাষায় নিজের সন্তানদের শিক্ষা দিতে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করব...।’ - মোক্ষম সম্পাদকীয়।
কবিতা বিভাগে বিশেষোল্লেখে রাখা যায় একগুচ্ছ কবিতা। ভাবে, বিষয়ে, শৈলীতে বৈচিত্রময় - এক পৃষ্ঠার মধ্যে সীমিত এইসব কবিতা লিখেছেন জয়শ্রী ভট্টাচার্য, শিখা দাশগুপ্ত, শিপ্রা শর্মা (মহন্ত), বিমলেন্দু চক্রবর্তী, চান্দ্রেয়ী দেব, সুবল চক্রবর্তী, দেবলীনা সেনগুপ্ত, রাজকুমার ধর, সুদীপ ভট্টাচার্য, অকেলা মধুশ্রী ডি, বাহারুল ইসলাম মজুমদার, প্রগতি দে চৌধুরী, শান্তনু মজুমদার, সুচরিতা সিংহ (বেবী), কমলিকা মজুমদার, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, গোপালচন্দ্র দাস, নারায়ণ মোদক, প্রতিমা শুক্লবৈদ্য, দীপক হোমচৌধুরী ও ড. কস্তুরী হোমচৌধুরী। শেষোক্ত কবির কবিতা থেকে কিছু পঙ্ক্তি -
...আমাকে পুকুর না করে নদীর মতো
সহজ ভাবে এঁকেবেঁকে চলতে দাও।
চলার পথে বাঁকে বাঁকে ভালোবাসার ‘বকুল ফুল’
কুড়াতে গিয়ে যে যা বলে বলতে দাও -
আমাকে সৃষ্টির হৃদয়-যমুনায়
অবগাহন করতে দাও,
পারাবারকে ভালোবেসে আমাকে ডুবতে দাও
আমাকে নদীর বহমানতা দাও।
আমায় মোহনা দাও,
আমাকে আমার মতো চলতে দাও,
আমাকে কবিতার অলৌকিক জগতে বাঁচতে দাও।
এছাড়াও রয়েছে যাঁদের কবিতা তাঁরা হলেন - ড. গীতা সাহা, মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম, শতদল আচার্য, পরিমল কর্মকার, গীতাঞ্জলী রায়, ঋতা চন্দ, শংকরী চক্রবর্তী, ভারতী বনিক, অনুপ কুমার বণিক, সৌরভ চক্রবর্তী, শুক্লা মিশ্র, জয়িতা চক্রবর্তী, ধ্রুবজ্যোতি দাস, ডালিয়া সিংহ, সুখেন দাস, বন্দনা সেনগুপ্ত, সুমি দাস, মণিকা বড়ুয়া, জহর দেবনাথ, জয়ন্তী দত্ত, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, শিবানী গুপ্ত, অনামিকা শর্মা, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, অরূপ কুমার ভুঞা, সৌমিত্র পাল, গৌতম চৌধুরী, সমীরণ চক্রবর্তী, গীতা মুখার্জী, ড. শ্রাবণী সরকার ও নির্মাল্য দাস।
আশুতোষ দাসের কবিতা ‘আকাশে তাকাও’ একটি উৎকর্ষ রচনা যদিও একে একাধারে গদ্যকবিতা অথবা মুক্ত গদ্য হিসেবেও অভিহিত করা যেতে পারে। ছন্দা দামের অণুগল্প ‘চিন্ময়ী’। গোছানো, সুপাঠ্য।
একটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকলে পত্রিকা প্রকাশের পথে এক ধারাবাহিক কর্মপদ্ধতির সৃষ্টি হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। ফলে গুণাবলির পাশাপাশি ভুলত্রুটিও একই ধারায় প্রবাহিত হতে থাকে। এমন আভাস পরিলক্ষিত হয় বানানের ক্ষেত্রে। ছাপাখানা, প্রুফ রিডার এবং সর্বোপরি সম্পাদকীয় দপ্তর এর দায় এড়াতে পারেন না। লেখালেখির ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের নিজস্ব অভিধানও এর জন্য দায়ী থাকলেও সবার শেষে প্রকাশনা গোষ্ঠীর নজরদারি একান্তই আবশ্যক। সম্পাদকীয় থেকে শুরু করে একাধিক রচনায় এমন ত্রুটি ধরা পড়েছে। একই শব্দ ভিন্ন কবিতায় ভিন্ন বানানে লেখা হয়েছে। পরবর্তীতে এক্ষেত্রে তীক্ষ্ণ নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। পত্রিকা গোষ্ঠীর একটি নির্দিষ্ট বানানবিধি গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদশিল্পী বা প্রচ্ছদভাবনার নেপথ্যে থাকা মানুষটির নামের জায়গাটি খালিই থেকে গেল শেষ পর্যন্ত। ছাপার মান ভালো হয়নি, পৃষ্ঠায় কালির দাগ এসেছে উপর থেকে নীচে। ফলে সরল পঠন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। এসব ত্রুটি কাটিয়ে ওঠার জন্য যত্নবান হতে হবে বইকী।
এর বাইরে ‘সীমান্তরশ্মি’ বরাবরই এক নিমগ্ন নির্মোহ গরজের প্রতীক। উন্নত মানের কবিতা চয়নের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সংখ্যাসমূহকে নিশ্চিতই পিছনে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছে এবারের নবম সংখ্যাটি। তবে ছোটপত্রিকার দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা মেনে এবারও কিছু নতুন কবির কবিতা সংযোজিত হয়েছে এবং এসব ক্ষেত্রে সার্বিক মান নিয়ে কিছুটা হলেও আপস মনোভাব রক্ষা করেই চলতে হয় সম্পাদকদের। এটাও অনস্বীকার্য। সব মিলিয়ে ধারাবাহিকতার এক নিরলস নিদর্শন আলোচ্য পত্রিকা-সংখ্যাটি যা উৎসর্গ করা হয়েছে ‘বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক প্রয়াত বিজয় কুমার ভট্টাচার্য’কে।
৬০ পৃষ্ঠার আলোচ্য সংখ্যাটিতে রয়েছে ৫২টি কবিতা, একটি অণুগল্প ও একটি গদ্য-কবিতা। বরাবরের মতোই পত্রিকার সম্পাদকীয়তে রয়েছে কিছু প্রাসঙ্গিক বয়ান যার সম্যক উদ্ধৃতি আলোচনায়ও প্রাসঙ্গিক - ‘সবাই যে একইভাবে চিন্তা করবে, সে তো হবার নয়। প্রতিটি ব্যক্তি তাঁর চেতনাবোধ, ভালোমন্দ একদম নিজস্ব ঢঙে এগিয়ে নিয়ে পথ চলতে থাকে। আমরা বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদি ভাষায় স্বীকৃতি হিসেবে ভাষা গৌরব সপ্তাহ উদ্যাপন করলাম। আমরা আমাদের ভাষা নিয়ে গর্ববোধ করি। কেউ কেউ বলে থাকেন আমার ভাষা অতি প্রাচীন। আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস নিয়ে বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত। এটি তো অনেক আগেই স্বীকৃত হবার ছিল। বলে থাকেন যদিও কিন্তু নিজে কিংবা নিজের সন্তানকে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষিত করে তুলতে তখন বাংলা বিদ্যালয়ের দিকে ফিরেও তাকান না। বাংলার পীঠস্থান বলে যে প্রদেশের যাঁরা বুক ঠুকেন সেখানেই হাজার হাজার বিদ্যালয় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ধ্রুপদি ভাষার স্বীকৃতি পাওয়ার আনন্দে উল্লসিত হওয়ার অধিকার তখনই আমাদের জন্মাবে যখন মাতৃভাষায় নিজের সন্তানদের শিক্ষা দিতে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করব...।’ - মোক্ষম সম্পাদকীয়।
কবিতা বিভাগে বিশেষোল্লেখে রাখা যায় একগুচ্ছ কবিতা। ভাবে, বিষয়ে, শৈলীতে বৈচিত্রময় - এক পৃষ্ঠার মধ্যে সীমিত এইসব কবিতা লিখেছেন জয়শ্রী ভট্টাচার্য, শিখা দাশগুপ্ত, শিপ্রা শর্মা (মহন্ত), বিমলেন্দু চক্রবর্তী, চান্দ্রেয়ী দেব, সুবল চক্রবর্তী, দেবলীনা সেনগুপ্ত, রাজকুমার ধর, সুদীপ ভট্টাচার্য, অকেলা মধুশ্রী ডি, বাহারুল ইসলাম মজুমদার, প্রগতি দে চৌধুরী, শান্তনু মজুমদার, সুচরিতা সিংহ (বেবী), কমলিকা মজুমদার, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, গোপালচন্দ্র দাস, নারায়ণ মোদক, প্রতিমা শুক্লবৈদ্য, দীপক হোমচৌধুরী ও ড. কস্তুরী হোমচৌধুরী। শেষোক্ত কবির কবিতা থেকে কিছু পঙ্ক্তি -
...আমাকে পুকুর না করে নদীর মতো
সহজ ভাবে এঁকেবেঁকে চলতে দাও।
চলার পথে বাঁকে বাঁকে ভালোবাসার ‘বকুল ফুল’
কুড়াতে গিয়ে যে যা বলে বলতে দাও -
আমাকে সৃষ্টির হৃদয়-যমুনায়
অবগাহন করতে দাও,
পারাবারকে ভালোবেসে আমাকে ডুবতে দাও
আমাকে নদীর বহমানতা দাও।
আমায় মোহনা দাও,
আমাকে আমার মতো চলতে দাও,
আমাকে কবিতার অলৌকিক জগতে বাঁচতে দাও।
এছাড়াও রয়েছে যাঁদের কবিতা তাঁরা হলেন - ড. গীতা সাহা, মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম, শতদল আচার্য, পরিমল কর্মকার, গীতাঞ্জলী রায়, ঋতা চন্দ, শংকরী চক্রবর্তী, ভারতী বনিক, অনুপ কুমার বণিক, সৌরভ চক্রবর্তী, শুক্লা মিশ্র, জয়িতা চক্রবর্তী, ধ্রুবজ্যোতি দাস, ডালিয়া সিংহ, সুখেন দাস, বন্দনা সেনগুপ্ত, সুমি দাস, মণিকা বড়ুয়া, জহর দেবনাথ, জয়ন্তী দত্ত, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, শিবানী গুপ্ত, অনামিকা শর্মা, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, অরূপ কুমার ভুঞা, সৌমিত্র পাল, গৌতম চৌধুরী, সমীরণ চক্রবর্তী, গীতা মুখার্জী, ড. শ্রাবণী সরকার ও নির্মাল্য দাস।
আশুতোষ দাসের কবিতা ‘আকাশে তাকাও’ একটি উৎকর্ষ রচনা যদিও একে একাধারে গদ্যকবিতা অথবা মুক্ত গদ্য হিসেবেও অভিহিত করা যেতে পারে। ছন্দা দামের অণুগল্প ‘চিন্ময়ী’। গোছানো, সুপাঠ্য।
একটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকলে পত্রিকা প্রকাশের পথে এক ধারাবাহিক কর্মপদ্ধতির সৃষ্টি হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। ফলে গুণাবলির পাশাপাশি ভুলত্রুটিও একই ধারায় প্রবাহিত হতে থাকে। এমন আভাস পরিলক্ষিত হয় বানানের ক্ষেত্রে। ছাপাখানা, প্রুফ রিডার এবং সর্বোপরি সম্পাদকীয় দপ্তর এর দায় এড়াতে পারেন না। লেখালেখির ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের নিজস্ব অভিধানও এর জন্য দায়ী থাকলেও সবার শেষে প্রকাশনা গোষ্ঠীর নজরদারি একান্তই আবশ্যক। সম্পাদকীয় থেকে শুরু করে একাধিক রচনায় এমন ত্রুটি ধরা পড়েছে। একই শব্দ ভিন্ন কবিতায় ভিন্ন বানানে লেখা হয়েছে। পরবর্তীতে এক্ষেত্রে তীক্ষ্ণ নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে। পত্রিকা গোষ্ঠীর একটি নির্দিষ্ট বানানবিধি গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদশিল্পী বা প্রচ্ছদভাবনার নেপথ্যে থাকা মানুষটির নামের জায়গাটি খালিই থেকে গেল শেষ পর্যন্ত। ছাপার মান ভালো হয়নি, পৃষ্ঠায় কালির দাগ এসেছে উপর থেকে নীচে। ফলে সরল পঠন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। এসব ত্রুটি কাটিয়ে ওঠার জন্য যত্নবান হতে হবে বইকী।
এর বাইরে ‘সীমান্তরশ্মি’ বরাবরই এক নিমগ্ন নির্মোহ গরজের প্রতীক। উন্নত মানের কবিতা চয়নের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী সংখ্যাসমূহকে নিশ্চিতই পিছনে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছে এবারের নবম সংখ্যাটি। তবে ছোটপত্রিকার দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা মেনে এবারও কিছু নতুন কবির কবিতা সংযোজিত হয়েছে এবং এসব ক্ষেত্রে সার্বিক মান নিয়ে কিছুটা হলেও আপস মনোভাব রক্ষা করেই চলতে হয় সম্পাদকদের। এটাও অনস্বীকার্য। সব মিলিয়ে ধারাবাহিকতার এক নিরলস নিদর্শন আলোচ্য পত্রিকা-সংখ্যাটি যা উৎসর্গ করা হয়েছে ‘বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক প্রয়াত বিজয় কুমার ভট্টাচার্য’কে।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭৬০৬৯
Comments
Post a Comment