Skip to main content

উৎকর্ষে ভাস্বর - শরৎ ২০২৪ সংখ্যা ‘মজলিশ সংলাপ’


আসলে একটি পূজা সংখ্যা বা শারদীয় সংখ্যাই যদিও একে অভিহিত করা হয়েছেশরৎ ২০২৪সংখ্যা হিসেবে সম্ভবত প্রকাশে কিছু বিলম্বের কারণেই ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে নিয়মিত প্রকাশিতমজলিশ সংকাপ’-এর এটি ১৫৭তম সংখ্যা শারদীয় বলেই প্রকাশিত হয়েছে বর্ধিত কলেবরে, গুচ্ছ গদ্য-পদ্য-প্রবন্ধে ভরপুর হয়ে - অন্তত ছোট পত্রিকা বা লিটল্ম্যাগাজিনের হিসেবে তো বটেই
সংলাপ’-এ সততই উত্তর-পূর্বের পাশাপাশি ঈশান-বহির্ভূত কবি লেখকদের উপস্থিতি বিদ্যমান এবার যেহেতু শারদীয় তাই স্বাভাবিক ভাবেই ঘটেনি ব্যত্যয় একগুচ্ছ কবিতার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে গল্প, নভেলেট, মুক্ত গদ্য, প্রবন্ধ আদি। সম্পাদকীয়তে স্বাভাবিক ছন্দেই এসেছে প্রতিবেশী অঞ্চলের ধর্মীয় সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ। তবে পাশাপাশি ব্যতিক্রমী হয়ে এসেছে প্রতিবাদ ও শুভদিনের প্রত্যয় - ‘...সময় আমাদের হাতের মুঠোয় নয়। তবু প্রতিবাদী নির্ঘোষে এই দুঃসহ বর্তমানকে জয় করে এক সদর্থক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাই হবে সময়ের আহ্বান। জাগ্রত হোক শুভবুদ্ধি, জয় হোক মানবতার। জয়তু শরৎ, জয়তু অভয়া।’
কবিতার পৃষ্ঠাগুলো আলাদা করে গদ্যপর্যায় ধরে এগোলে বিভাগ অনুযায়ী প্রবন্ধ বিভাগে প্রথমেই মঙ্গলাচরণের আদলে এসেছে রূপরাজ ভট্টাচার্যের প্রবন্ধ ‘চিরন্তনী মায়ের কথা’। একটি ভিন্নধর্মী রচনা। শরৎ কিংবা শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষঙ্গিক জিছু প্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা তথা বিশ্লেষণ করেছেন লেখক সুচারু লেখনীর সহায়তায়। একটি সুপাঠ্য নিবন্ধ। মাম্পি গুপ্ত লিখেছেন নিবন্ধ ‘দেবী দুর্গা ও দুর্গোৎসব’। বর্ণিত হয়েছে শিরোনামভিত্তিক তথ্যাদির আবশ্যিক উল্লেখ। শেষ নিবন্ধ ‘মহানগরীতে জলসংকট ও কিছু কথা’। লেখক অশোক সরকার তুলে ধরেছেন গুয়াহাটি মহানগরীর নতুন এক সংকটের কথা যা এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী এক মহাসংকট হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ‘বিশেষ রচনা’ বিভাগে মধুবন চক্রবর্তী লিখেছেন ‘বাঙালি সমাজে বিয়ের গান’। শিরোনাম অনুযায়ী অনেকটাই লিখলেও আরও অনেক যেন রয়ে গেছে অনুল্লেখিত। আসলে বিষয়টাই যে বিশাল। ‘সফরনামা’ বিভাগে রয়েছে দুটি রচনা। মীনাক্ষী চক্রবর্তীর ‘হাত বাড়ালেই হাফলং’ এবং শোভনা ভট্টাচার্যের ‘শৈল শহরের ইতিকথা’ দুটি রচনাই হার্দিক। একাধারে ইতিহাস এবং মনস্তাত্ত্বিক ব্যাকুলতার উপস্থাপন।
সঞ্জয় গুপ্তের নভেলেট ‘বন্দুকবাজ’ অ্যাকশন থ্রিলারের আদলে একটি জমজমাট রচনা। অপরাধ জগতের অন্য একটি দিক। সব দিক সামলে পরিপাটি চলন লক্ষ করা গেছে। গল্প বিভাগে রয়েছে আটটি গল্প। অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের গল্প ‘হোটেল ব্লু মুন’ সংলাপে, চলনে সুখপাঠ্য একটি গল্প। শ্যামল ভট্টাচার্যের ‘অমলতাসের ঘ্রাণ’ একটি সাহিত্যগুণসম্পন্ন ভিন্ন রসের গল্প। মন মানসিকতার গভীর বিশ্লেষণ। ‘জীবন যখন’ - লিখেছেন বিমল গঙ্গোপাধ্যায়। প্রেম ও জীবনদর্শনের প্রেক্ষিতে এক তাত্ত্বিক গল্প। সুপাঠ্য। সজল পালের ‘করোনার ক্যানভাসে’ ব্যতিক্রমী ভাবনার গল্প। কোভিডকালের আবহে উঠে আসা এক ভিন্ন চিত্রের নিটোল উপস্থাপন। ‘হেলপার মাসি ও ফেসবুক’ - আদিমা মজুমদারের গল্প। বিষয়ে, বুনোটে উৎকর্ষ ধরে রেখেছে সরল, সাবলীল লিখনশৈলীতে। ঋতা চন্দের গল্প ‘প্রতীকের প্রেরণা’। প্রেম-অপ্রেমের এক টানটান জমজমাট গল্প। ‘সন্তান-সন্ততি’ মিথিলেশ ভট্টাচার্যের গল্প। মিথিলেশ সততই অনুর্বর জমিতে ফসল ফলাতে সিদ্ধহস্ত। আপাতচোখে সাধারণ জীবনযাপনের ভিতরটাকে নিংড়ে উঠে আসে মিথিলেশের অসাধারণ গল্প। মানসিকতা, চিত্তবৈকল্য, নৈমিত্তিক যাপনের ভিতর থেকে উঠে এসেছে এক অভাবিত আদর্শের, এক সুপ্ত কামনার গল্প। অভিজিৎ মিত্র লিকেছেন গল্প ‘চোর’। ভিন্নধর্মী প্লটে প্রেম ও বাস্তবের উল্লেখ সহ এক আদর্শের গল্প।
মদনগোপাল গোস্বামী মূলত রম্যরচনাকার হিসেবেই খ্যাত। সেই ধারায় আরও একটি চমৎকার রচনা ‘গলাবাজ’। বিভাগ-নাম ‘রস-কষ’। ‘ব্যক্তিগত রচনা’ বিভাগে পূর্ণেন্দুকান্তি দাসের ‘ঝরা পাতার দোলা’ একটি জীবনকথা। ‘অনুবাদ সাহিত্য’ বিভাগে সম্পাদক তুষারকান্তি সাহা অনুবাদ করেছেন অন্বেষা ফুকনের অসমিয়া গল্প। শিরোনাম ‘আন্দোলিত দস্তাবাজ’। সাবলীল অনুবাদে মুনশিয়ানার ছাপ স্পষ্ট। গদ্যে পদ্যে প্রকৃতি প্রেমের বর্ণনা ‘স্বগতোক্তি’ বিভাগে অমৃতা মাইতির রচনা ‘মাটি আমার অঙ্গীকার’। একই আঙ্গিকে ‘শেষের পাতা’য় বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর রচনা ‘জল ছলছল কথা’ জল সংকটের ফলে আসন্ন ভয়াবহ জীবনের সতর্কবাণী।
পদ্য বিষয়ে রয়েছে পাঁচ পাঁচটি বিভাগ। প্রতিটি কবিতাই সুলিখিত, সুখপাঠ্য ও সুচয়িত। ‘দীর্ঘ কবিতা’ বিভাগে গোপাল চক্রবর্তী লিখেছেন সাত পৃষ্ঠাব্যাপী কবিতা ‘আইডেন্টিটি’। অনাবিল, অনবদ্য। শৈলেন সাহার ‘রূপান্তর’ও দেড় পৃষ্ঠার কবিতা। গুচ্ছ কবিতা লিখেছেন প্রাণজি বসাক, তপনকুমার দাস ও শান্তনু সরকার। ‘অসমিয়া কবিতা’ বিভাগে হরেকৃষ্ণ ডেকা, কিশোর মনোজিৎ বরা ও নির্মল কোচ-এর অবিতা অনুবাদ করেছেন সত্যজিৎ চৌধুরী। ‘ছড়ার জাদুঘর’ বিভাগে রয়েছে গদাধর সরকারের দুটি ছড়া’।
ছয়টি পর্যায়ে ‘কবিতার বারান্দায়’ কবিতার আলো ছড়িয়েছেন ত্রিপুরা থেকে সন্তকবি মিলনকান্তি দত্ত। এছাড়া এই বিভাগে রয়েছে যাঁদের এক বা একাধিক কবিতা তাঁরা হলেন - স্বাতীলেখা রায়, রত্নদীপ দেব, চিরঞ্জীব হালদার, সুশীল মণ্ডল, নীলাদ্রি ভট্টাচার্য, শ্যামলী কর ভাওয়াল, মাহবুবা করিম, মুন চক্রবর্তী, রীতা চক্রবর্তী (লিপি), মন্টু দাস, অলকা গোস্বামী, নবীনকিশোর রায়, বিশ্বজিৎ নাগ, শ্যামলী বর্ধন, বাউলা সঞ্জয়, শেখ আবদুল ইমাম, বিমলেন্দু ভৌমিক, শেখ আবদুল মান্নান, গীতাঞ্জলি রায়, মধুমিতা দত্ত, পার্থসারথি দত্ত, রাজীব ঘোষ, সুদীপ ভট্টাচার্য, সূর্য নন্দী ও বিপুল চক্রবর্তী।
কাগজের মান তথা অক্ষর ও শব্দ বিন্যাস যথাযথ। দু-একটি ভুলের বাইরে আধুনিক বানান অনুসৃত হয়েছে সঠিকভাবে যদিও ছাপার বিভ্রাট পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি। প্রচ্ছদছবির সৌজন্যে চিরশিল্পী পার্থসারথি দত্ত। সব মিলিয়ে বরাবরের মতোই ‘মজলিশ সংলাপ’ একটি উন্নত মানের পত্রিকা হিসেবে বজায় রাখতে পেরেছে ধারাবাহিকতা।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ২০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৮৬৪০৬৬৯৯৪ 

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...